চোখ

Sohel Lehos এর ছবি
লিখেছেন Sohel Lehos [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ১৩/০৩/২০১৫ - ৭:৫০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


নেপাল থেকে ফিরে এসে একটা চিঠি পেলাম। এয়ার মেইলের খামে হৃষ্টপুষ্ট পেট মোটা চিঠি। প্রেরকের ঠিকানার জায়গায় লেখা রয়েছে- আব্দুল বাতেন মিয়া। বাতেন ভিলা। পুটকি বাড়ি। ঠাকুরগাঁও। পুটকি বাড়ি বলে যে কোন জায়গার নাম থাকতে পারে তা আমার জানা ছিল না। আর আব্দুল বাতেন মিয়া নামেও কাওকে আমি চিনি না।

আমি টিভির জন্য প্যাকেজ নাটক বানাই। মধ্যবিত্ত জীবনের টান পোড়েন নিয়ে কিছু নাটক বানিয়ে বেশ সনাম কুড়িয়েছি। লোকজন আমাকে চিনতে শুরু করেছে। মিথ্যা ঠিকানা সম্বলিত উড়ো চিঠি পাঠিয়ে কেউ রসিকতা করতে চাইলে আমি অবাক হব না। অনেক কিসিমের মানুষ আজকাল আমার দুয়ারে এসে ধর্ণা দেয়। নাটকে সুযোগ দেয়ার জন্য চ্যাংরা ছেলেমেয়ে থেকে শুরু করে খালাম্মা গোছের মহিলারা এসেও ব্যাপক কচলা কচলি শুরু করেন। খ্যাতির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে খ্যাতির বিড়ম্বনা। নেপালে স্যুটিং থেকে ফিরে এসে বেশ ক্লান্ত আমি। পরে পড়ব বলে ডেস্কের উপর রেখে দিয়েও কি মনে করে চিঠিটা খুললাম।

রুল টানা হলুদ কাগজের দুই পাতার চিঠি। মোলায়েম কিন্তু ভারী কাগজ। যে কালিতে লেখা হয়েছে তা খুবই ঝকঝকে। বোঝাই যাচ্ছে বিদেশী কাগজ এবং কলম ব্যাবহার করা হয়েছে। সাথে কিছু ছবি, ব্র্যাক ব্যাংকের একটি চেক এবং হানিফের এয়ার কন্ডিশন্ড বাসের টিকেট। চেক এবং টিকেট আমার নামে ইস্যু করা। চেকে এমাউন্টের জায়গায় লেখা রয়েছে বিশ হাজার টাকা মাত্র। ছবির সংখ্যা তিনটি। ছবিগুলো রাতে তোলা হয়েছে। অল্প পাওয়ারের বাতি আলোর বদলে ঘর আধার করে রেখেছে বেশি। পুরো ঘরে আবছা চেয়ার-টেবিল এবং বিছানার কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে। অচেনা লোকজনের কাছ থেকে বাসের টিকেট, চেক, আর অদ্ভুত ছবি সম্বলিত চিঠি আসায় অবাক না হয়ে পারলাম না। স্বাভাবিকভাবেই বেশ কৌতুহল জাগল।

চিঠি ইংরেজীতে লেখা। হাতের লেখা বেশ এলোমেলো। তবে ইংরেজী নির্ভুল। লেখা থেকে সহজেই অনুমেয় লেখক ইংরেজীতে ভাল দক্ষতা রাখেন। চিঠিটাকে বাংলা করলে মোটামুটি এমন দাঁড়ায়-

ফেব্রুয়ারী ১৪, ২০১১

প্রিয় আকরাম হোসেন,

আশা করি ভাল আছেন। আপনি আমাকে চিনবেন না। আমার নাম আব্দুল বাতেন মিয়া। এক সময় এক্সপোর্ট-ইম্পোর্টের ব্যাবসা করতাম। শারীরিক অসুস্থতার কারণে ব্যাবসা ছেড়ে দিয়েছি। কর্মজীবনে খাটাখাটি করে প্রচুর টাকা পয়সা আমি করেছি। বাকি জীবন শুয়ে বসে বহাল তবিয়তেই কাটিয়ে দিতে পারব।

যে কারণে আপনার কাছে লেখা সে বিষয়ে আসা যাক। আপনি গত বছর দেশের দৈনিক পত্রিকা গুলোতে একটি বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন। সেখানে অতিপ্রাকৃত, ভূত-প্রেত এই জাতীয় জিনিষ কেউ সত্যি প্রমান করতে পারলে তাকে নগদ এক লক্ষ টাকা পুরুষ্কার দেয়ার ঘোষণা করেছিলেন। আমি জানি না কেউ এর মধ্যে এসব বিষয়ে প্রমান নিয়ে আপনার কাছে হাজির হয়েছে কিনা। অবশ্য হাজির হলেও কিছু আসে যায় না। আমি আপনার পুরুষ্কারের ব্যাপারে আগ্রহী নই। আগেই বলেছি টাকা পয়সা আমার যথেষ্ট পরিমানেই আছে। আমি শুধু আপনাকে একটি জিনিষ দেখাতে চাই। ঘটনার বৃত্তান্ত বর্ণনা এখানে দিতে চাচ্ছি না। আপনি যেহেতু এসব ব্যাপারে আগ্রহী আপনার ব্যাস্ততার মাঝে সময় করে কি আপনি আমার এখানে একটু ঘুরে যাবেন? আপনাকে আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি আপনি হতাশ হবেন না।

এই চিঠির সাথে আমি তিনটি ছবি পাঠিয়েছি। যদি ভাল করে লক্ষ্য করেন তাহলে দেখবেন বিছানার পাশের টেবিলের নীচে একজোড়া চোখ। আপনাকে যা দেখাতে চাই তা এই চোখ সম্পর্কিত। আমি ছবিগুলো পাঠালাম কারণ আমি চাই আপনি ছবিগুলো ভাল করে পর্যবেক্ষণ করুন। ছবি এ ব্যাপারে আপনাকে অগ্রীম কিছু ধারণা দেবে। আমি জানি আপনি বিচক্ষণ মানুষ। আপনি মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়েই আসবেন।

আপনার মনে হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে কেন যেচে পরে আপনাকে এখানে আনতে চাইছি। আসলে এখানে যা ঘটছে তার ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই। কোন এক পত্রিকায় আপনার এক সাক্ষাৎকার পরে আমি জেনেছি এই ব্যাপারে আপনার বিস্তর পড়ালেখা আছে। এসব বিষয়ে আপনি অনেক খোঁজ খবরও রাখেন। আমার ধারণা এর ব্যাখ্যা আর কেউ না পারুক আপনি পারবেন।

চিঠির সাথে আপনার জন্য রাউন্ড ট্রিপ বাস টিকেট পাঠালাম। আপনাকে যাহেতু আমি ডেকে আনছি সেহেতু এটা আমার দায়িত্বের মধ্যে পরে। এছাড়া আপনার হাত খরচের জন্য বিশ হাজার টাকার একটি চেকও সাথে থাকছে। আপনার সময় মূল্যবান আমি জানি। সামান্য হাত খরচ হিসেবে যদি আপনি টাকাটা গ্রহণ করেন আমি অত্যন্ত আনন্দিত হব। চিঠির সাথে আমার মোবাইল ফোন নাম্বার দিচ্ছি। আসার আগে জানাবেন। আমি বাস স্টপে গাড়ি পাঠিয়ে দেব।

ভাল থাকুন। শীঘ্রই আপনার কাছ থেকে শোনার অপেক্ষায় থাকলাম।

আপনার একান্তই,
আব্দুল বাতেন মিয়া।
বাতেন ভিলা। পুটকি বাড়ি। ঠাকুর গাঁও।
মোবাইলঃ ০১৭১ ৪৪৭ ২১৫২ এবং ০১৯১৭ ০০৩৭৪১

বছর দেড়েক আগে পত্রিকায় নিয়মিত দেয়া বিজ্ঞাপনটার কথা আমার মনে পড়ল। ভূত-প্রেত সম্পর্কে ছোট বেলা থেকেই আমার বিস্তর আগ্রহ ছিল। এ ব্যাপারে যখন যা পেয়েছি পড়েছি। খোঁজ খবর নিয়েছি। আমার কাছে মনে হয়েছে সত্যিকারের ভূত প্রেত বলে কিছু নেই। আমরা যা ব্যাখ্যা করতে পারি না তাকেই আমরা ভূত বলে আখ্যা দেই। যা এই মুহুর্তে ব্যাখ্যাতীত তার কোন ব্যাখ্যা হয়তো ভবিষ্যতে থাকবে। এক সময় রোগ বালাইকেও খারাপ জিনিষের আছর বলে ধরা হত। যাহোক এই ব্যাপারে একটা এক্সপেরিমেন্ট করে দেখতে চাইছিলাম আমি। তাই পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া। বেশ সাড়া পেয়েছিলাম। কিন্তু তদন্ত করে দেখা গেল বেশির ভাগ সময় মানুষ ভুল দেখেছে কিংবা শুনেছে। অথবা যাকে ভূত বলা হচ্ছে তার অন্য কোন ব্যাখ্যা আছে। সহজ সরল ব্যাখ্যা। সমস্যা হল ভয় পেলে সহজ সরল জিনিষগুলোই ভূত হয়ে আমাদের চোখে ধরা দেয়।

আমি নিজে একজন সাইকিয়াট্রিস্ট। এক সময় প্র্যাক্টিস করতাম। অনেকটা হুমায়ুন আহমেদের মত (তিনি কেমিস্ট্রি'র অধ্যাপক ছিলেন) নাটক আর মিডিয়া'র দিকে ঝুঁকে পড়ায় সাইকিয়াট্রি ছেড়ে দিয়েছি। অনেকেই নিজ চোখে ভূত দেখেছেন বলে দাবী করেন। স্বচক্ষে দেখা মানেই যে নির্ভুল দেখা তা নয়। ব্যাপারটা আমি ভাল করেই বুঝি। অনেকের কাছ থেকে বিশ্বাসযোগ্য অনেক বিবরণ শোনার পর সরেজমিনে তদন্ত করতে গিয়ে দেখেছি যে পুরোটাই চোখের ভুল কিংবা মনের ভুল। ভীত মানুষ এমন অনেক কিছু দেখে যা বাস্তবে কখনো ঘটেনি। যাকে হেল্যুসিনেশনও বলা যেতে পারে।

পত্রিকায় দেয়া বিজ্ঞাপনটার কথা আমি প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। বাতেন সাহেব ছবিতে চোখের কথা উল্লেখ করেছেন। ছবিগুলো আবার দেখলাম। প্রায় অন্ধকারে তোলা ছবি। কারও শোবার ঘর হবে হয়তো। বিছানার পাশে চেয়ারের মতন মনে হল। সে চেয়ারে বসে থাকা ঝাপসা অবয়ব। সেখানে কোন চোখ কিংবা চোখের প্রতিকৃতি দেখতে পেলাম না। ছবি সহ চিঠিখানা ডেস্কের ড্রয়ারে রেখে দিলাম।

সামনে কোরবানির ঈদ। টিভি চ্যানেলগুলোতে আমার প্রায় নয়টার মত নাটক যাবে। অনেককেই কথা দিয়ে রেখেছি। আমার দম ফেলার মত সময় নেই। গভীর রাত পর্যন্ত নানা লোকেশনে শুটিং চলে। দিনে ঘন্টা দুয়েক ঘুমাইতো ঘুমাই না। চোখের নীচে কোল বালিশের মত ফুলে গেল। রাত জেগে জেগে চেহারা হয়ে গেল কঠিন গাজা খোরের মত। তবে ভালোয় ভালোয় সব নাটকের শুটিং শেষ করতে পারলাম।

ঈদের পর মাস দুয়েকের জন্য হাত খালি। দিনের চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে আঠারো ঘন্টাই ঘুমিয়ে কাটাই। বাকি ছয় ঘন্টাও ঘুমিয়ে কাটাতে পারলে ভাল লাগত। কিন্তু আমার ঘুমের সাথে পেটের গভীর সম্পর্ক আছে। পেট খালি থাকলে চোখের পাতা আপনা আপনি খুলে যায়। পেট পূজো করতে ঘুম থেকে উঠা মাত্রই নানা জায়গা থেকে আবার ফোন কলা আসা শুরু করে। আমার ঘুম কখন ভাঙ্গে সে খবর কল দাতাগন কোত্থেকে পান খোদা মালুম। কিছু কলের উত্তর না দিলেই নয়।

একদিন কি কারণে যেন ড্রয়ার ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে বাতেন সাহেবের চিঠিটা সামনে চলে এল। এর কথা আমি বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম। শুয়ে থাকতে থাকতে পিঠে শেকড় গজিয়ে উঠছিল। সিদ্ধান্ত নিলাম ব্যাপারটা তলিয়ে দেখব। দিনাজপুরে সদরে আমার এক বাল্যবন্ধু থাকে। পুলিস সুপার। নাম শরীফ মৃধা। অনেক দিন ধরে ওর ওখানে বেড়িয়ে আসার জন্য গেজাচ্ছে। শরীফকে ফোন লাগালাম। ওপাশ থেকে স্বভাব সুলভ বাজখাই পুলিশি গলায় শরীফ বলল,

কে?

শরীফকে ফোন দিয়ে কোন দিন 'হ্যালো' বলতে শুনিনি। গলার স্বর যথা সম্ভব মোটা করে বললাম,

তোর বাপ।

ওপাশে খানিকক্ষণ নিরবতা। তারপর মৃদু খস খস শব্দ। মুহুর্ত তিনেক পর হুঙ্কার দিয়ে শরীফ বলল,

চড়াইয়া চাপার সব কয়টা দাঁত ফালায়া দিমু হারামি কোনখানকার। এতদিন কই ছিলি? ফোন দেই পাই না কেন?

শালা ব্যাপক ধুরন্ধর। বুঝে ফেলেছে। হাসতে হাসতে বললাম,

কেমন আছিস?

ভাল না।

কেন? ভাল না কেন? উপড়ি আয় কমে গেছে?

আরে ধুর! তা না।

তাহলে?

শাহরুখ খানের শরীর খারাপ। সারাদিন পাতলা হাগে। তারমধ্যে জ্বর।

শরীফের একমাত্র ছেলে শাহরুখ। বয়স দুইয়ের কাছাকাছি। হিন্দি সিনেমার নায়ক শাহরুখ খানের অন্ধ ভক্ত শরীফ। ছেলে হওয়া মাত্রই আকিকা করে ছেলের নাম শাহরুখ করে ফেলল। তার বাসায় এক টিয়া পাখি আছে। তার নামও শাহরুখ। বাডা শাহরুখ। বয়সে বড় বলে ছেলে হবার পর টিয়া পাখির নামের আগে বাডা বসিয়ে দিয়েছে শরীফ। বললাম,

ডাক্তার দেখাসনি?

দেখাইছি। স্যালাইন, এন্টিবায়োটিক আর কি জানি দিছে। আর দুইদিন খাওয়াব। এর মধ্যে না কমলে ডাক্তার ব্যাটাকে থানায় আইন্না কঠিন ডলা দিব।

আমি আঁতকে উঠে বললাম,

বলিস কি?

উদাস গলায় শরীফ বলল,

হ। আজকে নিয়া চারদিন হয় পোলারে দাওয়াই দিতাছি। হাগা কমনের নাম নাই। হোউরের পুত ডাক্তার অস্ট্রিয়া না ফস্ট্রিয়া কই থেক্কা জানি ডিগ্রী নিয়া আইছে। এফ সি পি এস ওর হোগা দিয়া ভরমু ঠিক করছি।

ছেলেকে নিজের জানের থেকেও বেশি ভালবাসে শরীফ। মুখে যা বলে সেটা সে করবেই। বললাম,

একটু ধৈর্য ধর। ঠিক হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।

আর ধৈর্য! তা তোর কি খবর? নাটক কেমন করতাছছ? তোর নাটক দেখমু দেখমু করি দৈনিক। কিন্তু টাইম পাইতাছি না।

বললাম,

নাটক ভালই চলছে। ঈদে অনেকগুলা গিয়েছে। এখন একটু স্লো। সামনের মাসে আবার ধরব।

শরীফ বলল,

তাইলে এই ফাঁক দিয়া আমার এইখানে চাক ঘুরনা দিয়া যা। সফুরা তোর কথা দৈনিক জিগায়। তর সব নাটক নাকি সে দেখে। তর বিরাট ফ্যান। কয় মোস্তফা ফারুকী নাকি মারুকী ওইযে আরেক ব্যাটা নাটক বানায়, হেয় নাকি তোর বালটারও সমান না।

শরীফের বলার ভঙ্গীতে না হেসে পারলাম না। সফুরা শরীফের স্ত্রী। আমার ছোট বোনের ক্লাস মেট। অসম্ভব রকম ভাল একটি মেয়ে। বললাম,

সফুরা তোকে এভাবে বলেছে?

না এমনে কয় নাই। কিন্ত তোর নাটকের বিরাট ভক্ত। যাউকগা, বেড়াইয়া যা। সফুরা খুশি হইব।

বললাম,

আসলে এই জন্যই তোকে ফোন দিয়েছি। ভাবলাম হাতে নাটক ফাটক নাই। এই ফাঁকে তোর ওখান থেকে ঘুরে আসি। কিন্তু শাহরুখকে নিয়ে নিশ্চয় তোদের উপর দিয়ে অনেক ধকল যাচ্ছে।

আরে ধুর বাল। শাহরুখের দৈনিকই পেট খারাপ থাকে। ওইটা কোন ব্যাপার না। আয় তুই।

তোদের অসুবিধা হবে নাতো?

রেগে গিয়ে শরীফ হুঙ্কার দিয়ে বলল,

থাপ্পড় চিনস? নাকি চিনাইতে হইব?

শরীফের সাথে কথা শেষে বাতেন সাহেবকে ফোন লাগালাম। বেশ কিছুক্ষণ রিং হবার পর ফোন ধরল কেউ। ওপাশ থেকে শুধু ফোঁসফোঁস শব্দ আসতে লাগল। বললাম,

হ্যালো।

কোন উত্তর নেই। ফোঁসফোঁসানি আরো বেড়ে গেল। আমি আরও দুই তিন বার "হ্যালো হ্যালো" করার পর ফ্যাসফ্যাসে গলা শোনা গেল,

আকরাম সাহেব?

খানিকটা অবাক হয়ে বললাম,

জ্বী, আমি আকরাম। বাতেন সাহেব বলছেন?

ফোন আবার চুপ হয়ে গেল। ভাবলাম লাইন কেটেই গেল কিনা। দীর্ঘ বিরতি দিয়ে ওপাশ থেকে উত্তর আসল,

জ্বী, আমি বাতেন মিয়া। কেমন আছেন আকরাম সাহেব?

বললাম,

আমি ভাল আছি। আপনার কি অবস্থা? বুঝলেন কি করে আমি ফোন দিয়েছি? আমার এই নাম্বার গুটি কতক লোক ছাড়া আর কারও জানার কথা না।

কথপোকথনের সময় স্বাভাবিক বিরতিতে অন্য পক্ষের রেসপন্স না পেলে অস্বস্তি লাগে। ত্রিশ সেকেন্ডের মত ফোঁসফোঁস শব্দ করে বাতেন মিয়া বললেন,

কিছু মনে করবেন না। আমার হাঁপানি আছে। শীতকালে হাঁপানির টান বেশি উঠে। আজকে টান বেশি উঠেছে।

এতটুকু বলে আবার চুপ করে গেলেন বাতেন মিয়া। আমি বললাম,

আজকে তাহলে থাক। আমি পরে আরেক দিন ফোন দেই?

মনে হল শ্বাস নেবার জন্য বাতেন সাহেব রীতিমত কুস্তি লড়ছেন। ওপাশ থেকে শুধু ফোঁসফোঁস শব্দ আসতে লাগল। টানা মিনিট দেড়েক ফোঁসফোঁসানি শোনার পর যখন ফোন রেখেই দেব কিনা ভাবছি তখন গোখরা সাপের মতন হিসহিসিয়ে বাতেন সাহেব বললেন,

আরেক দিন ফোন দিলেও আমাকে এই একই অবস্থায় পাবেন আকরাম সাহেব। জীবনের করুন কিছু সময় কাটাচ্ছি। আর বেশিদিন হয়তো টিকব না। যাহোক আপনার প্রথম প্রশ্নের উত্তর এর মধ্যেই পেয়ে গেছেন। আমার অবস্থা ভাল না। গত দশ বছর অবস্থা শুধু খারাপ থেকে খারাপতর হচ্ছে। আর দ্বিতীয় প্রশ্নের উওর হল আপনার ফোন ধরে কেন জানি মনে হয়েছে যে আপনিই ফোন দিয়েছেন। তাই আপনাকে সম্বোধন করেছি।

বলে চুপ করলেন বাতেন সাহেব। চিঠিতে নিজের শারীরিক অবস্থার কথা উল্লেখ করেছিলেন। অবস্থা যে বেশি সুবিধের নয় সেটা তার কথা থেকেই বোঝা যাচ্ছে। ফোন দিয়ে এখন মনে হচ্ছে কোন এক ঝামেলায় জড়াতে যাচ্ছি। কেন জানি খুব অস্বস্তি করতে লাগল। কিছুক্ষণ জিড়িয়ে নিয়ে বাতেন সাহেব বললেন,

আমার একবার মনে হয়েছিল আপনি আমার সাথে যোগযোগই করবেন না। আপনি সেলিব্রেটি ব্যাস্ত মানুষ। আপনার সময় কোথায়? ফোন দিয়েছেন খুব খুশি হয়েছি আকরাম সাহেব। খুব।

আসলে এসব ব্যাপারে আমার ছোট বেলা থেকেই অনেক আগ্রহ। ভূত-প্রেত...অশরীরী যাই বলেন ব্যাপারগুলো শুনলে এখনও আমার রক্তের ভেতর চিনচিন করে। আপনার চিঠি পেয়ে তাই ইগনোর করতে পারিনি।

যোগাযোগ করে ভালই করেছেন আকরাম সাহেব। আমি পোড় খাওয়া কঠিন মানুষ। জীবনে অনেক কিছু দেখেছি। কিন্তু এই রকম আগে কখনও দেখি নাই। আপনি নিরাশ হবেন না। কবে আসছেন?

বাতেন সাহেবকে কোন কথা দেয়া ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারছি না। আহেতুক কোন রকম ঝামেলায় জড়াতে চাচ্ছি না। বললাম,

আপনাকে বলেছি এসব ব্যাপারে আমার বিস্তর আগ্রহ। এক্সাক্টলি কবে আসব সেটা এখুনি বলতে পারছি না। তবে আসার আগে আপনাকে অবশ্যই ফোন দেব। আর আপনার পাঠানো টিকেট আর টাকাটা আমি নিতে পারছি না। দয়া করে জোড়াজুড়ি করবেন না। আমি নিজে ড্রাইভ করে আসব।

অনেকক্ষণ চুপ থেকে বাতেন সাহেব বললেন,

আপনার যা মর্জি। আসলে আপনাকে অপমান কিংবা ঐ জাতীয় কিছু করতে চাইনি। আপনাকে যেহেতু আমি ডেকে নিয়ে আসছি তাই ভেবেছিলাম আপনার সুবিধা অসুবিধা দেখা আমার দায়িত্ব। যাহোক মনে কষ্ট দিয়ে থাকলে নিজ গুণে ক্ষমা করে দেবেন।

বললাম,

আমি কিছু মনে করিনি। ভাল থাকবেন। আবার কথা হবে।

ফোন রেখে দিলাম।

তার পরের শুক্রবার দিনাজপুরের উদ্দেশে রওয়ানা দিলাম। মোহাম্মদপুরে নিজের কেনা তিন বেডরুমের এক ফ্লাটে থাকি আমি। ছুটা কাজের বুয়া এসে রান্না করে দিয়ে যায়। বাসার কেয়ারটেকার মতিন আমার খুবই দূর সম্পর্কের কেমন যেন চাচতো ভাই হয়। তাকে সব বুঝিয়ে দিয়ে বেরিয়ে পরলাম।

সাভার আর টাংগাইলে দুবার জ্যামে পরে ঘন্টা চারেকের মত সময় নষ্ট হল। দিনাজপুর যেতে যেতে প্রায় গভীর রাত হয়ে গেল। দরজার কড়া নাড়তে খুলে দিল সফুরা। তারপর আমার পায়ের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। সফুরারা তিন বোন। পা ছুঁয়ে সালাম করার ব্যাপারে এরা প্রায় গোল্ড মেডেল প্রাপ্ত। একবার পা ধরলে সহজেই ছাড়তে চায় না। চেঁচিয়ে ঊঠে বললাম,

আরে...আরে...পা ছাড়। নয়তো পারা দিয়ে চ্যাপ্টা করে ফেলব।

হাত থেকে ব্যাগ নিতে নিতে সফুরা বলল,

এত দেরি হল যে?

বললাম,

আর বলিস না। রাস্তায় বিশাল জ্যাম। শরীফ কোথায়?

এতক্ষণতো বাসায় ছিল। একটু আগে বের হয়েছে। এখুনি চলে আসবে বলেছে। তুমি গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নাও।

সফুরা তোয়ালে এনে দিল। বাথরুমে গরম পানি দেয়া ছিল। গোসল করার পর দীর্ঘ জার্নির ক্লান্তি খানিকটা কমল। বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখি শরীফ বাসায় ফিরেছে। সফুরার উপর কি নিয়ে যেন চেঁচাচ্ছে। আমাকে দেখে দুই হাত বাড়িয়ে দিয়ে হিন্দীতে বলল,

আজা মেরে বাহো মে জান। কত দিন দেখি না।

কোলাকোলি করে খেতে বসে গেলাম। রাস্তায় এক ট্রাভেল স্টপে থেমে সেই কখন খেয়েছিলাম। বেশ ক্ষিধে পেয়েছিল। ডাইনিং টেবিলে ইঞ্চি খানেক জায়গাও খালি নেই। কত পদের রান্না করেছে সফুরা! ওর হাতের রান্নাও চমৎকার। শার্টের হাতা ভাঁজ করে টেবিলের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম।

খাওয়া শেষে বসার ঘরে বসে শরীফ আর আমি পান চিবুচ্ছি। শাহরুখ খান এতক্ষণ ঘুমাচ্ছিল। বাবার গলার স্বরে ঘুম থেকে উঠে গিয়ে 'বাবা...বাবা...' বলে চিৎকার জুড়ে দিল। সফুরা এসে শাহরুখকে দিয়ে গেল। ছেলে দেখতে বাবার কার্বন কপি। কুটকুটে কালো। শরীফের কোলে বসে টুকটুক করে শাহরুখ বলল,

বাবা নুনু।

বলে হাত দিয়ে নিজের নুনুখানা টানতে লাগল শাহরুখ। শরীফ জিব কেটে বলল,

ছিঃ বাবা! ধরে না। সরম!

আমার দিকে দাঁত কেলিয়ে হেসে শরীফ বলল,

দেখছছ পোলা এখনই কত বড় বজ্জাত হইছে?

হেসে বললাম,

বাপ কা বেটা।

এক সাথে বড় হয়েছি আমরা। ছোট বেলায় তুখড় রকম বদ ছিল শরীফ। শুকনো লিকলিকে কালো শরীরে আর সব কিছুর অভাব থাকলেও ভিটামিন ছিল অফুরান্ত। কারও গাছের আম, কারও পেয়ারা, আবার কারও ডাব চুরি করে দেহ ভিটামিনে টইটম্বুর করে ফেলেছিল সে।

গল্প করতে করতে বাতেন সাহেবের প্রসঙ্গ তুললাম। বাতেন মিয়া সম্পর্কে খুব অল্পই জানে শরীফ। বলল লোক লাগিয়ে খবর নিবে। দীর্ঘ যাত্রা বেশ ক্লান্ত ছিলাম বলে সফুরা আমাকে বেশি রাত জাগতে দিল না। শীত শেষ হব হব করছে। ঢাকায় তেমন ঠান্ডা না পড়লেও দিনাজপুরে এখনও ভালই শীত। লেপের নিচে গিয়ে ঢুকতেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম।

তারপর দিনই বাতেন সাহেবকে আবার ফোন লাগালাম। জানালাম দুদিন পরেই তার ওখানে যাচ্ছি। খোঁজ নিয়ে শরীফ জানালো সম্ভাব্য সব ধরণের অবৈধ ব্যাবসা করে প্রচুর টাকা পয়শার মালিক হয়েছেন বাতেন সাহেব। গত দশ বছর ধরে অসুস্থ। বেপথে কামানো টাকা এখন শরীরের পেছনে ব্যায় করে তার টাকার পাহাড় টিলা থেকে নেমে ছোটখাট ঢিবিতে পরিণত হবার পথে।

দুদিন পর বাতেন মিয়ার বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা দিলাম। শরীফ সাথে আসতে চাইছিল। শাহরুখের শরীর ভাল না বলে আমি নিজেই ওকে আসতে দিলাম না। শরীফ আমাকে সাবধান থাকতে বলল। সফুরাকে কথা দিয়ে আসলাম বাতেন মিয়ার বাড়ি দিন চারেক থেকেই আবার চলে আসব ওদের এখানে।

পুটকি বাড়ি পৌছাতে ঘন্টা দেড়েক লাগল। শরীফ যাবার পথ বাতলে দিয়েছিল। রাস্তায় তেমন কোন অসুবিধা হল না। পথে থেমে জিজ্ঞাস করতেই বাতেন ভিলা দেখিয়ে দিল এক রিক্সাওয়ালা। উঁচু দেয়াল দেয়া বিশাল এক লোহার দরজার সামনে এসে থামলাম। দরজার পাশে মার্বেল পাথরে খোদাই করে লেখা বাতেন ভিলা। হর্ণ বাজাতেই গেটের পাশের ছোট দরজা খুলে চাপা ভাঙ্গা, টেকো মাথা, আর শকুনের ঠোঁটের মত তীক্ষ্ণ নাক ওয়ালা ভীষণ লিকলিকে শরীরের এক লোক বেরিয়ে এল। জানালার কাঁচ নামিয়ে পরিচয় দিলাম। সালাম ঠুকে রবিউল বডির লোকটা নাকি গলায় বলল,

স্যার, সোজা ভিতরে যান। রাস্তার শেষ মাথায় আসল বাড়ি। সাজেদ স্যার আপনের জন্য ওয়েট করতেছেন।

গেটের দারোয়ানের বেশ দুর্বল শরীর। দেখে মনে হয় আজন্ম কঠিন রক্ত আমাশায় বেশ কষ্ট পেয়েছে। আমি লক্ষ্য করে দেখেছি বাড়ির গেটের সাথে গেটের দারোয়ানের স্বাস্থ্যের গভীর একটা সম্পর্ক থাকে। যে বাড়ির গেট যত বড় সে বাড়ির দারোয়ানের স্বাস্থ্য ততই দুর্বল। বেচারা দারোয়ান কুতে মুতে অনেক কষ্ট করে বিশাল লোহার গেট খুলে দিল। আমি ভিতরে ঢুকে গেলাম।

ছিমছাম পিচের রাস্তা। দু'ধারে বিশাল পরিণত দেবদারুর সারি। অনেক জায়গা নিয়ে বাড়ি করা হয়েছে। সুন্দর বাঁধানো পুকুর দেখলাম। পুকুরের চার ধারে নারিকেল গাছ। খুব মনোরম পরিবেশ। দূর থেকে বাড়ি দেখা গেল। ইউরোপিয়ান স্টাইলের বিশাল দোতলা বাড়ি। বাড়ির সামনে এসে থামতেই লম্বা মতন শ্যামলা সুদর্শন এক ছেলে বের হয়ে এল। গাড়ি থেকে নামতেই হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

মিস্টার আকরাম আমি সাজেদ হোসেন। বাতেন এন্টারপ্রাইজের দেখভাল করি। ম্যানাজার বলতে পারেন আর কি।

হাত মিলাতে মিলাতে বললাম,

নাইস মিটিং ইউ।

নাইস মিটিং ইউ টু।

সাজেদের পেছন পেছন ঘিয়া পাঞ্জাবী গায়ে বয়স্ক এক লোক এসে দাঁড়িয়েছিল। তাকে উদ্দেশ্য করে সাজেদ বলল,

চাচামিয়া, উনার ব্যাগগুলা রুমে দিয়া আসেন।

ব্যাগ বলতে আমার সাথে শুধু একটা ট্রাভেল ব্যাগ ছিল। বললাম,

লাগবে না। আমি নিজেই নিতে পারব।

লোকটা "স্যার...স্যার...দেন আমারে দেন" বলে জোড় করে হাত থেকে ব্যাগখানা ছুটিয়ে নিল। সাজেদ বলল,

আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন।

রাতে খেতে বসেছি। খাবার টেবিলে শুধু আমি আর সাজেদ। খেতে খেতে সাজেদ বলল,

কিছু মনে করবেন না। স্যারের শরীরটা আজকে খুবই খারাপ। আপনার সাথে দেখা করতে পারছেন না বলে তার মন খারাপ।

বললাম,

আমি কিছু মনে করিনি। আছিতো কয়েকদিন। এর মধ্যে উনি ভালো ফিল করবেন আশা করি। মন খারাপ করার কিছু নেই।

খাওয়া শেষে সাজেদের সাথে গল্প হল কিছুক্ষণ। খুব ছোট বেলা থেকেই এই বাড়িতে আছে সাজেদ। তার বাবা বাতেন সাহেবের খুব বিশ্বস্ত কর্মচারী ছিলেন। অল্প বয়সে অনাথ হয়েছে সে। বাবার এপ্লাস্টিক এনেমিয়া হয়েছিল। রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরী হত না। বতেন সাহেব তার অনেক চিকিৎসা করিয়েছিলেন। লাভ হয়নি। সাজেদের বাবা একদিন হুট করে মরে গেলেন। আর সাজেদের মা'র ঘটনা আরও সংক্ষিপ্ত। সাজেদকে জন্মদিতে গিয়ে ইহধাম ত্যাগ করেছিলেন তিনি। এক সময় কথায় কথায় সেই অতি প্রাকৃত চোখ জোড়ার প্রসঙ্গ উঠল। সাজেদ বলল,

আমি ইংরেজীতে মাস্টার্স করেছি। নানা বিষয়েও প্রচুর পড়ালেখা করেছি। ভূত প্রেতে আমার বিশ্বাস নেই। কিন্তু আপনাকে কি বলব... এখানে যা ঘটছে সেটার কোন ব্যাখ্যা আমি খুঁজে পাই না।

আমি নড়েচড়ে বসে বললাম,

খুলে বলুন।

এই বাড়িতে যখন তখন একজোড়া চোখ দেখা যায়। শুধু চোখ। কোন দেহ নেই। বাতাসে ভেসে বেড়ানো এক জোড়া চোখ। প্রায় সবাই এই চোখ দেখেছে।

জিজ্ঞাস করলাম,

মেয়েলী চোখ নাকি ছেলে?

সাজেদ বলল,

মেয়েলী চোখ। কাজল দেয়া টানা টানা চোখ। চোখের পাতা পড়ে না। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। রক্তহিম করা চাহনি।

বললাম,

তাকিয়ে থাকা ছাড়া চোখের আর কোন কার্যকলাপ কি লক্ষ্য করেছেন?

সাজেদ বলল,

জ্বী না।

বললাম,

দিনের কোন বিশেষ সময়ে কি চোখের দেখা মেলে?

সাজেদ বলল,

বিশেষ কোন সময় না। সকালেও দেখা যায় আবার রাতেও দেখা যায়।

বললাম,

ইন্টারেস্টিং ব্যাপার।

কিছু মানুষ আছে যারা নতুন জায়গায় ঘুমাতে পারে না। কোথাও বেড়াতে গেলে প্রথম কিছু রাত এরা বিছানায় ওপাশ এপাশ করে কাটিয়ে পার করে। আমার ব্যাপার সম্পূর্নই উল্টো। নতুন জায়গায় এসে আমার ভাল ঘুম হয়। নিজের রুমে এসে বিছানায় শোয়া মাত্রই ঘুমিয়ে পড়লাম।

ঘুম ভাঙ্গল তারপর দিন দুপুরে। বিছানা থেকে উঠতে গিয়ে মনে হল বিছানার সাথে আমার মাথা কেউ ওয়েল্ডিং করে লাগিয়ে দিয়েছে। মাথা চক্কর দিয়ে উঠল। বমি বমি ভাব হল। বিছানায় আরও ঘন্টা খানেক পড়ে থাকার পর হাচরে পাঁচরে উঠে বাথরুমে গিয়ে মাথায় পানি ঢাললাম। একটু ভাল লাগল। ব্যাপার কি বুঝলাম না। বলা নেই কওয়া নেই শরীরের একি হাল! গতকাল রাতেওতো বহাল তবিয়তেই ছিলাম।

রুম থেকে বের হয়ে বসার ঘরের দিকে আসতে সেই চাচাজানের সাথে দেখা হল। লোকটার নাম বারেক মিয়া। বললাম,

চাচামিয়া এক কাপ বিষাক্ত কড়া দেখে চা খাওয়াতে পারবেন?

বারেক মিয়া বলল,

পারব না কেন? অবশ্যই পারব স্যার। সাজেদ স্যার আপনার জন্য অনেকক্ষণ বইসা ছিলেন। আপনে ঘুমাইতেছেন দেইখা ডিস্টাপ করেন নাই।

বললাম,

ওহ আচ্ছা। কই তিনি?

বারেক মিয়া বলল,

স্যার একটু আগে বের হইছেন। কই গেছেন বইলা যান নাই।

বললাম,

ওহ আচ্ছা ঠিক আছে। এখন কষ্ট করে এক কাপ চা দিন। আমি বাগানে বসব।

বারেক মিয়া বলল,

স্যার, নাস্তা কি বাগানেই দেব?

বললাম,

নাস্তা খাব না চাচা মিয়া। শুধু চা হলেই চলবে।

বারেক মিয়া বললা,

স্যারের কি শরীর খারাপ? কেমন যেন লাগতেছে।

বললাম,

শরীর ঠিকই আছে। এখন কড়া দেখে এক খান চা লাগান চাচামিয়া।

জ্বী, আইচ্ছা স্যার।

বাগানে এসে বসলাম। চারদিকে নানা রকম ফলের গাছ। দূর থেকে একটা কোকিল ডাকতে লাগল। বসন্ত এসে পড়েছে। আকাশে কার্পাস তুলা সদৃশ সাদা মেঘ উড়ে যাচ্ছে। চারদিকে সূর্যের নরম রোদ। এমন সময় বুকের গহীন থেকে উঠে আসা কোন দীর্ঘ শ্বাসের মত এক ঝলক বাতাস বয়ে গেল। সিগারেট মাত্র হাতে নিয়েছি বারেক মিয়া চা নিয়ে এল। র চা। চুমুক দিয়ে বারেক মিয়া কে বললাম,

চা ফার্স্ট ক্লাস হয়েছে চাচা মিয়া।

পান খাওয়া ময়লা দাঁত বের করে বারেক মিয়া হাত কচলাতে লাগল। আমি চোখের প্রসঙ্গ তুললাম,

চাচা মিয়া, সাজেদ সাহেবের কাছে শুনলাম এই বাড়িতে নাকি এক জোড়া ভূতের চোখ দেখা যায়?

হ স্যার। কথা সত্য। পেত্তুনি চোখ। দেখলে কইলজা ঠান্ডা হইয়া যায়।

আপনি দেখছেন?

হ। সরমের কথা তারপরও কই। হেইদিন পেট ভইরা খিচুড়ি খাইছিলাম। রাইতে শুইতে যামু ওমনি পেটের মইদ্দে দিল মোচড়। দৌড়াইয়া পায়খায়নায় মাত্র ঢুকছি। দেহি জ্বলজ্বল কইরা তাকাইয়া আছে।

আপনি কি করলেন?

কি আর করুম? চিক্কুর দিয়া বাইর হইয়া আসছি। এই ঘটনা পর থেইক্কা একটানা দুই সপ্তাহ আমার পাইখানা বন্ধ আছিল। ডাক্তার দেখাইছি পরে ঠিক হইছে।

চিন্তার বিষয়।

চা শেষ করে হাটতে বের হলাম। চারদিকে পাখির কল কাকলীতে কান ঝালা পালা হয়ে যাবার যোগাড়। চড়ুই, শালিক, ফিঙ্গে - এছাড়াও নাম না জানা রঙ বেরঙের পাখি। মাথা আস্তে আস্তে পরিষ্কার হয়ে আসছে। যদিও সূক্ষ্ম চিনচিনে একটা ব্যাথা রয়েই গেল। হাটতে হাটতে বাড়ির পেছন দিকটায় চলে এলাম। এদিকে বেশ জঙ্গলা। প্রচুর ঝোপ ঝাড় চোখে পড়ল। বাড়ির সামনের দিকে ল্যান্ডস্কেপ যত যত্নে বড় হয়েছে বাড়ির পেছনটায় তা বড় হয়েছে তার থেকেও বেশি অযত্নে। বাড়ির পেছনে আসতে নিষেধ করেছিল সাজেদ। এদিকটায় নাকি সাপ খোপের আখড়া। "পেত্তুনি চোখ" এর কথা ভাবতে ভাবতে কখন জঙ্গলের ভেতরে ঢুকে পড়েছিলাম বুঝতে পারিনি। হঠাৎ সুক্ষ্ম কান্নার শব্দ পেলাম। প্রথমে মনে হল কোন পাখির ডাক কিংবা বেড়ালের ডাকও হতে পারে। তাই তেমন কেয়ার করিনি। কিন্তু এক সময় মনে হল এ সত্যি সত্যি কান্নার শব্দ। ভাল করে কান পেতে শোনার পর আন্দাজে কান্নার উৎসের দিকে হাঁটা ধরলাম।

বেশ বড়সর এক ঝোপের কাছাকাছি আসতে কান্নার শব্দ তীব্র হল। মনে হল ঝোপের ঠিক ভেতরেই শব্দের উৎপত্তি। মাথা উঁচিয়ে ঝোপের চারপাশটা ভাল করে দেখার চেষ্টা করলাম। ব্যাপারটা নিয়ে এত মগ্ন হয়ে গিয়েছিলাম যে কখন সাজেদ পেছনে এসে দাড়িয়েছে টের পাইনি।

আপনাকে এদিকটায় আসতে নিষেধ করেছিলাম।

সাজেদের ঠান্ডা গলা শুনে চমকে পেছনে তাকালাম। মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে আছে সাজেদ। বললাম,

ভূত চক্ষুর কথা ভাবতে ভাবতে কখন এদিকটায় চলে এসেছি বুঝতে পারিনি। এখান থেকে কান্নার মত শব্দ পাচ্ছিলাম। আপনি পেয়েছেন?

গম্ভীর গলায় সাজেদ বলল,

না পাইনি।

বললাম,

আমি পাচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিল করুণ সুরে কেউ কাঁদছিল।

সাজেদ বলল,

বুঝতে পেরেছি। কোন সাপ হয়তো ব্যাঙ ধরেছে। সাপ যখন ব্যাঙ চেপে ধরে তখন ব্যাঙ এভাবে কাঁদে। আগেই বলেছি এদিকে সাপ খোপের আখড়া। ভুলেও এদিকে আর আসবেন না। চলুন বাড়ি চলুন।

বাতেন ভিলায় দ্বিতীয় রাতেও কোন দেহবিহীন চক্ষু ভূতের দেখা মিলল না। অসুস্থতার দরুন বাতেন মিয়ারও দেখা পেলাম না। তারপরের দিন ঠিক একই ভাবে ঘুম ভাঙ্গল। মনে হচ্ছিল মাথা ছিঁড়ে ঘাড় থেকে পড়ে যাবে। বাথরুমে এসে বমিও করলাম একবার। ঘটনার আগা মাথা কিছুই বুঝলাম না। দিনাজপুরে যে কয়দিন ছিলাম তখনও শরীর ভাল ছিল। বাম হাত আর বাজুর সংযোগ স্থলে হাতের নীচের পিঠে দেখালম কয়েকটা ফুটো। জায়গাটা লাল হয়ে আছে। ইঞ্জেকশনের সুঁই ফোটালে যেমন হয় আর কি।

সারাদিন বিশেষ কিছুই ঘটল না। ভূত চক্ষু আমার চোখের আড়ালেই থেকে গেল। সন্ধ্যা বেলায় বারেক মিয়া এসে বলল,

স্যার, বড় সাব আপনের সাথে দেখা করবেন। আমার সাথে আসেন।

বারেক মিয়ার সাথে দোতলা গেলাম। মঝের দিকের এক রুমে নিয়ে এসে বারেক মিয়া বলল,

যান ভিতরে যান।

ভারি পর্দা সরিয়ে ভিতরে ঢুকলাম। স্যাভলন আর বিদ্ঘুটে একটা গন্ধ নাকে এসে ধাক্কা দিল। অনেক কষ্টে বমি চাপলাম। রুমের ভেতরে ডিম লাইট জ্বালানো। বিশাল রুমে সে আলো থাকা না থাকায় কোন পার্থক্য তৈরী করবে না। রুমের মাঝ খানে উঁচু পালঙ্ক। তাতে মশারী টানানো। কমফোর্টারের নীচে শুয়ে ছিলেন বাতেন মিয়া। আমি ঢুকতেই ফ্যাসফ্যাসে গলায় বললেন,

আমাকে ক্ষমা করবেন আকরাম সাহেব। আজ তিন দিন হয়ে যায় আপনি এসেছেন আর দেখা করলাম আজ।

বললাম,

আপনার শরীর ভাল না। আমি কিছু মনে করিনি।

বাতেন মিয়া বললেন,

আর শরীর! কবে মরব তার দিন গুনি। আপনি বসুন।

বিছানার পাশে চেয়ার পাতা। বসলাম। বাতেন মিয়াকে দেখার চেষ্টা করলাম। রুমের ভেতর স্বল্প আলো এবং মশারী টানানো থাকায় তাকে ভাল করে দেখতে পেলাম না। বাতেন মিয়া বোধ হয় বুঝতে পেরে বললেন,

আমার চেহারা না দেখাই ভাল আকরাম সাহেব। মৃত মানুষের মুখ আর আমার মুখের সাথে এখন আর কোন পার্থক্য নেই। আমাকে এখন জিন্দা লাশই বলতে পারেন।

এটুকু বলে হাঁপাতে লাগলেন বাতেন সাহেব। কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিয়ে বলতে শুরু করলেন,

শরীরের নীচের অংশ পচে গেছে। বাম পায়ের বুড়া আঙুল দিয়ে শুরু হয়েছিল। তারপর আস্তে আস্তে উপরের দিকে ঊঠেছে। সব ধরণের ডাক্তার দেখিয়েছি। বিদেশে গিয়েছি কয়েকবার। বাম পা কেটে ফেলেও দিয়েছি। লাভ হয়নি। কেউ থামাতে পারেনি। কোন ঔষধেও কাজ করেনি। কেউ বলতেও পারেনা কেন এমন হচ্ছে। হোমিওপ্যাথি, কবিরাজ কিছুই বাদ দেইনি। এক তান্ত্রিক এর কথা মত সতী যুবতী মেয়ের রক্তও খেয়ে দেখেছি। কাজ হয়নি তবে শরীরের যন্ত্রণা একটু কমেছিল হা হা হা হা হা হা...

বিকারগ্রস্থ মানুষের মত হাসতে লাগলেন বাতেন মিয়া। পরিবেশের কারণেই কিনা জানিনা, আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল।

......বুঝলেন আকরাম সাহেব আমি চির কুমার। বঊ-বাচ্চা নাই। এক দিক দিয়ে ভালই হয়েছে। আমার জন্য আমি ছাড়া আর কাওকে কষ্ট করতে হচ্ছে না। যাহোক অনেক প্যাচাল পারলাম। তা জায়গা কেমন লাগছে আপনার?

বললাম,

জায়গা ভাল লেগেছে। সুন্দর জায়গা।

বাতেন মিয়া বললেন,

চোখের দেখা পেয়েছেন?

বললাম,

এখনও পাইনি।

বাতেন মিয়া বলল,

পাবেন। শীঘ্রই পাবেন। সবাই তার দেখা পেয়েছে।

হঠাৎ করে বাতেন মিয়ার শ্বাস কষ্ট শুরু হল। তার মুখ থেকে ঘড় ঘড় শব্দ আসতে লাগল। শব্দ পেয়ে বারেক মিয়া দৌড়ে এল। অক্সিজেনের খোঁজে বিছানায় পড়ে ডাঙ্গায় উঠে আসা মাছের মত তড়পাতে লাগলেন বাতেন সাহেব। হতচকিত হয়ে আমি কি করব বুঝতে পারলাম না। বারেক মিয়া তার মুখে ইনহেলার গুঁজে দিল। আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পড়লেন বাতেন সাহেব। আমি আমার রুমে চলে এলাম।

এক কাপ র' চা খেয়ে শুতে গেলাম। এই বাড়িতে আজ আমার তৃতীয় রাত। যে উদ্দেশে এখানে আসা তার দেখা এখনও মেলেনি। একবার মনে হল আগের অন্য সব ঘটনাগুলোর মতন এটাও অতিরঞ্জিত। ভুল দেখা মানুষের জন্ম সূত্রে প্রাপ্ত চারিত্রিক বৈশিষ্টগুলোর একটি। ভুল দেখা এবং মানুষের কল্পনা শক্তি এই দুইয়ে মিলে যার জন্ম তার নামই ভূত। শুধু একজন নয় এলাকা শুদ্ধ মানুষও ভুল দেখতে, করতে, কিংবা বুঝতে পারে। যাকে বলা হয় ম্যাস হিস্টেরিয়া।

এসব ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না। গভীর রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেল। মাথার পাশে মোবাইল ফোন রাখা ছিল। সময় দেখতে গিয়ে দেখলাম চার্জ শেষ। চারদিকে পিন পতন নিরবতা। ডিম লাইটের মৃদু আলোতে সব কিছু কেমন অদ্ভুত দেখাচ্ছে। পাশ ফিরে শুতে গিয়ে আমার হার্ট এটাকের মত হল। ভাবলেশহীন এক জোড়া চোখ এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ছিটকে উঠে বসতেই চোখ জোড়া হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। সে রাতে আর ঘুম হল না।

সকালের দিকে বাইরে বের হলাম। চারদিক হাল্কা কুয়াশা। বাতাসে কেমন কাঠ পোড়া গন্ধ। শ্বাস নিতে বেশ আরাম লাগছে। বাড়ির এক পাশে আসতেই সাজেদকে দেখলাম কেমন ব্যাস্ততার সাথে পেছনের জঙ্গলের ভেতর ঢুকে গেল। কি মনে করে আমিও সেদিকে এগিয়ে গেলাম।

বনের ভেতর দিয়ে সাজেদকে দেখলাম সেদিনকার সেই ঝোপের দিকে যেতে। ঝোপটার কাছে আসতেই তাকে আর দেখ গেল না। বেমালুম হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। ঝোপের চারপাশ দিয়ে জঙ্গলা গাছপালা। হেটে অন্যপাশেই যেতেই ঝোপের ভেতর দরজা দেখা গেল। ভাল করে লক্ষ্য না করলে বোঝা যায়না। দরজা অর্ধেক খোলাই ছিল। ঢুকতে গিয়ে সাজেদের গলার স্বর শুনলাম। সাথে এক মেয়ের কান্নার শব্দ। ভেতরে ঢুকতে গিয়েও ঢুকলাম না। এই ঝোপের পাশে এসেই সেদিন সাজেদের ধমক খেতে হয়েছিল। এ কোন গুরুতর ঘটনার অংশ হতে পারে ভেবে দরজার পাশেই দাঁড়িয়ে থাকলাম। ভেতর থেকে কথপোকথন ভেসে আসছিল।

সাজেদঃ বললামতো আর কয়েকটা দিন। তারপর ছেড়ে দেব।

মেয়েঃ ভাইগো...আমারে ছাইড়া দেন...আমার এই খানে ভয় লাগে।

সাজেদঃ ভয়ের কিছু নাই।

(কয়েক মিনিট নিরবতা)

মেয়েঃ ভাই...ভাই আইজ পারুম না ভাই। আমার মাসিক চলতেছে।

সাজেদঃ ওইটা কোন ব্যাপার না।

মেয়েটার কোঁকানি শুনলাম। আমি আর দাড়ালাম না।

একজোড়া অশরীরী চোখ আমাকে যতটা না নাড়া দিয়েছিলে এ ব্যাপারটা আমাকে তোলপার করল তার থেকেও বেশি। একটি মেয়েকে কেন জঙ্গলের মধ্যে আটকে রাখা হয়েছে? বাতেন সাহেব কি এ ব্যাপারে অবগত আছেন? প্রশ্নগুলো মাথার ভেতর ঘুরপাক খেতে লাগল।

বিকেলে সাজেদের সাথে বাগানে চা খেতে বসেছি। সাজেদ সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। চোখের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করল। বললাম,

গতকাল রাতে দেখেছি।

সাজেদ বলল,

কি মনে হল আপনার কাছে?

বললাম,

কিছু মনে হয়নি। কিছু মনে হবার মত দীর্ঘ সময় দেখতে পাইনি। তার আগেই হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে।

সাজেদ বলল,

একবার যখন দেখেছেন। আরও দেখবেন।

আমি "হুমম" বলে চুপ করে গেলাম। কথা বলতে ইচ্ছা করছিল না।

তারপর দিন সকালে আমি ঝোপটার কাছে গেলাম। মেয়েটার ব্যাপারে খোঁজ নেয়া দরকার। বাইরে থেকে দরজা চাপানো ছিল। দরজা খুলতেই বদ্ধ জমাট একটা গন্ধ এসে নাকে ধাক্কা দিল। দরজার কাছ থেকে সিড়ি নিচে নেমে গেছে। সিড়ি বেয়ে নিচে আসতেই খোলা একটা রুম। ভেতরে হারিকেন ধরানো। হারিকেনের তেল বোধ হয় ফুরিয়ে এসেছে। সলতেয় সিগেরেটে ধরানো আগুনের মত এক ফোটা আগুন নিভু নিভু করছে। পরিষ্কার করে কিছুই দেখা যায় না। মেয়েটা রুমের এক কোনায় বসে ছিল। আমার শব্দ পেয়ে ধড়ফড় করে ঊঠে বসে বলল,

কে ওই খানে? কে? কথা কয় না কেন?

খুব সুরেলা মিষ্টি কন্ঠ মেয়েটির। কন্ঠ শুনে মনে হল মেয়েটির বয়স ষোল কিংবা সতেরর বেশি হবে না। বললাম,

আমার নাম আকরাম।

মেয়েটি বলল,

আপনে কে?

বললাম,

আমাকে চিনবেন না। আমি বাতেন সাহেবের মেহমান। ঢাকা থেকে বেড়াতে এসেছি। গতকাল ভুল করে এখানে চলে এসেছিলাম। তখন সাজেদ সাহেবকে এখানে ঢুকতে দেখেছিলাম। আপনি এখানে কেন?

মেয়েটি আমাকে বাইরের লোক বুঝতে পেরে শব্দ করে কেঁদে উঠে বলল,

ভাই আমারে এইখানে আইন্না আটকাইয়া রাখছে। আমারে ছাইড়া দ্যান...ভাইগো আমারে ছাইড়া দেন...।

বললাম,

আপনাকে অবশ্যই ছেড়ে দেবার ব্যাবস্থা করব আপনি। কিন্তু আপনি পালিয়ে যাবার চেষ্টা করেন না কেন?

মেয়েটি বলল,

কেমনে পালামু? পায় শিকল বান্দা।

বলে মেয়েটি পা নেড়ে শব্দ করল। অন্ধকারে বুঝতে পারিনি। শব্দ শুনে বুঝলাম। বললাম,

ঠিক আছে আমি ব্যাবস্থা করছি। আমি বাতেন সাহেবকে বলব আপনাকে ছেড়ে দিতে।

মেয়েটা এবার চিৎকার করে উঠে বলল,

হেরা আমারে ছাড়ব না ভাই। হেগো আমার রক্ত দরকার। তিন চারদিন পর পর আমার শরিল থেইক্কা রক্ত নিয়া যায়।

চিন্তিত হয়ে বললাম,

দাড়াও তাহলে অন্য ব্যাবস্থা করব। তুমি চিন্তা কর না। তোমার সাথে যে আমার দেখা হয়েছে সেটা সাজেদ কে জানিও না।

এমন সময় পেছন থেকে সাজেদের গলা শোনা গেল,

জানাতে হবে না। আমি জেনে গেছি। আপনিতো খুব গোঁয়ার লোক। আপনাকে না বলেছিলাম এদিকে না আসতে?

সাজেদের দিকে ঘুরতে যাবো তার আগেই কানের পেছনে শক্ত কিছু একটার আঘাত পেলাম। পৃথিবী দুলে উঠল। আমি জ্ঞান হারালাম।

যখন জ্ঞান ফিরল তখন আমি মেঝেতে পড়ে আছি। ঘরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। হাচরে পাঁচরে উঠে বসলাম। মাথা ঝিম ঝিম করছে। বমি বমি ভাব হচ্ছে। ঘরের অন্য প্রান্ত থেকে মেয়েটি বলল,

ভাইজানের কি জ্ঞান ফিরছে?

কানের পাশে মাথার পেছন দিকটায় তীব্র ব্যথা অনুভব করলাম। হাত দিতেই রক্তে ভিজে গেল আঙ্গুল। ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলাম।। মেয়েটা বলল,

আপনেরে মনে কয় অনেক জোড়ে মারছিল।

বললাম,

হ্যাঁ। মাথা ফেটে গেছে।

রক্ত গড়িয়ে নীচের দিকে নামায় ঘাড়ের কাছটায় শার্ট ভিজে গেছে। উঠে দাঁড়াতে গিয়ে মাথা ঘুরে উঠল। বসে পড়লাম। পা নাড়াতে গিয়ে দেখি পায়ে শিকল বাঁধা। শিকল ধরে অযথাই দুই তিনবার টানলাম। মেয়েটি বলল,

শিকল টাইনা লাভ নাই ভাইজান। ভাল কইরাই বানছে।

বললাম,

তোমার নাম কি?

মেয়েটি বলল,

রাফেজা।

বলালাম,

কত দিন ধরে তোমাকে এখানে আটকে রেখেছে রাফেজা?

রাফেজা বলল,

হিসাব রাখি নাই ভাইজান। দুই তিন মাসতো হই বই।

বললাম,

তা এখানে এলে কি করে?

রাফেজা বলল,

বারেক চাচায় গ্রাম থেইক্কা কাজ দেওনের নাম কইরা এইখানে আনছিল। আনার পরে কয় বাড়ির বড় সাবের নাকি রক্ত নাই। তার রক্তের গুরুপ আর আমার গুরুপ নাকি এক। তাই রক্ত দিতে হইব। ইঞ্জেশন দিয়া রক্ত নিছে। পরথম পরথম কিছু কই নাই। কিন্তু দৈনিক কেমনে রক্ত দেই? আমার মাথা ঘুরায়। তাই রক্ত দিমু না বইলা কান্না কাটি করছিলাম। এরপর এইখানে আইন্না আটকাইয়া রাখছে। বাড়িতে অনেক কিসিমের মানুষ আহে। হেরা মনে হয় চায় নাই কেউ আমারে দেখুক।

বললাম,

বুঝতে পারছি।

বাতেন মিয়ার সতী মেয়ের রক্ত পানের কথা মনে পড়ল। এই তাহলে সেই সতী মেয়ে? সাজেদ যে ইতিমধ্যে সতী মেয়ের সতীত্ব কেড়ে নিয়েছে তা বোধ হয় বাতেন মিয়ার জানা নেই। এমন সময় বাইরে কথা বার্তার শব্দ পাওয়া গেল। একটু পর হারিকেন নিয়ে সাজেদ আর বারেক মিয়া নিচে নেমে এল। আমার মুখের কাছে হারিকেন তুলে ধরে সাজেদ বলল,

কেমন লাগছে আকরাম সাহেব?

আমি দাঁতে দাঁত পিষে বললাম,

কাজটা ভাল করছেন না মিঃ সাজেদ। এজন্য আপনাদেরকে ভুগতে হবে।

আমার কথা শুনে হা হা হা করে এক চট হেসে নিল সাজদ। বলল,

ভাল না মন্দ কাজ করছি সেটা আপনার কাছ থেকে জানতে চাচ্ছি না। আজকে থেকে আপনার স্থায়ী আবাস হচ্ছে মাটির নীচে এই ঘরে।

বললাম,

আমার চেনা জানা অনেক লোক আছে মিঃ সাজেদ। ঘটনা বেশিদিন চেপে রাখতে পারবেন না।

সাজেদ বলল,

ঘটনা চেপে রাখতে পারব কি পারব না সেটা নিয়ে আপনাকে দুশ্চিন্তা না করলেও চলবে। কেন যে আমার কথা শুনলেন না আকরাম সাহেব? আপনাকে এই অবস্থায় রাখতে আমার আসলে এক দিক দিয়ে খারাপই লাগছে।

বললাম,

বাতেন সাহেব কে কি জবাব দেবেন? তিনি নিশ্চইয়ই আমার ব্যাপারে জানতে চাইবেন।

আমি আন্দাজে ঢিল ছুড়লাম এই ভেবে যে সাজেদের সমস্ত কর্ম কান্ডের ব্যাপারে বাতেন মিয়া সম্পূর্ণ অবগত নাও থাকতে পারেন। সাজেদ শব্দ করে আবারও হাসল। বলল,

স্যার এই ব্যপারে জানবেন না সেটা কেন মনে হল আকরাম সাহেব? তিনি সব জানেন। অ্যাজ এ ম্যাটার অফ ফ্যাক্ট, আপনার রক্ত তার কাছে খুবই সুস্বাদু লেগেছে। অনেকটা ড্রাই রেড ওয়াইনের মত আর কি। আমি নিজেও একটু চেখে দেখেছিলাম হা হা হা...

অবাক হয়ে বললাম,

কি বলছেন আপনি?

সাজেদ বলল,

অবাক হচ্ছেন? অবাক হবার কিছু নেই। নতুন ফ্লেভার ট্রাই করতে চাচ্ছিলেন বাতেন সাহেব। আপনাকে দুবার ড্রাগ দেয়া হয়েছিল। আপনি ঘুমিয়ে বেহুঁশ হয়েছিলেন। তখন আপনার রক্ত বের করে নেয়া হয়েছে।

প্রচন্ড মাথা ব্যাথা আর বমি বমি ভাব নিয়ে সকালে ঘুম ভাঙ্গার রহস্য এবার বুঝতে পারলাম। সাজেদ বলল,

যাহোক, আপনাকে এই অবস্থায় রাখতে হচ্ছে সেজন্য অনেকটা আপনিই দায়ী। সরি, আমার কিছু করার নেই। আপনাকে ছেড়ে দিলে ব্যপারটা জানা জানি হয়ে যাবে।

সাজেদ আর বারেক মিয়া চলে গেল। যাবার সময় মনে হল দরজায় তালা দিয়ে গেল এবার। চারদিকে মৃত্যুপুরীর নিস্তব্ধতা নেমে এল। রাফেজা ভয়ার্ত কন্ঠে বলল,

ভাইজান, ভয় লাগে।

বললাম,

ভয়ের কিছু নেই রাফেজা। আমি আছি।

রাফেজা বলল,

ভাইজান, এইখানে ভূতের যাওয়া আসা আছে। আমি রোজ রাইতে হেগো শব্দ পাই।

বললাম,

ভূত কিছু করবে না। আমি আছি।

মাথার পেছনে হাত দিয়ে দেখলাম রক্ত পড়া এখনও থামেনি। তীব্র ব্যাথার কারণে জায়গাটা ছোঁয়া যাচ্ছে না। মাথা ঘুরাচ্ছিল এতক্ষণ। এবার মনে হল আবার যেকোন সময় জ্ঞান হারাব। আস্তে আস্তে মেঝেতে শুয়ে পড়লাম। এক সময় মনে হল অনেক দূর থেকে রাফেজা ডাকছে,"ভাইজান...ভাইজান..."। জ্ঞান হারালাম আমি।

১০

জ্ঞান ফিরে চোখ মেলতেই দেখি সাদা কাপড়ের বিছানায় শুয়ে আছি। সফুরা মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আমাকে তাকাতে দেখে বলল,

কেমন লাগছে ভাইয়া?

বললাম,

ভাল। কই আমি?

সফুরা বলল,

তুমি এখন ঢাকায়। স্কয়ার হাসপাতালে। এক সপ্তাহ ধরে অজ্ঞান ছিলে।

একটু পড়েই শরীফ এল। আমাকে চোখ মেলতে দেখে বলল,

কি রে কি অবস্থা?

আমি হাসলাম। শরীফ বলল,

তুই যে এখনও বাইচা আছছ সে জন্য শুকুর আল হামদুলিল্লাহ।

জিজ্ঞাস করলাম,

আমাকে পেলি কি করে?

শরীফ বলল,

সে এক বিরাট ইতিহাস। তোরে দুইদিন ফোন দিয়া না পাইয়া চিন্তায় পইড়া গেছিলাম। পরে লোক পাঠাইয়া খবর নিছি। যারে পাঠাইছিলাম সে আইসা বলল বাতেন ভিলা থেইক্কা নাকি কইছে তুই ঢাকা চইলা গেছছ। কিন্তু ওই বাড়িতে এক কামের বুয়া আছে। তারে জানি কেমনে আমার সোর্সে চেনে। বুয়া কইল তোর গাড়ি নাকি অহনো সেই বাড়ির ভেতরে রাখা। ঘটনা খারাপ বুঝতে পাইরা গেটের দারোয়ানরে ধইরা আইন্না জোড়ে কয়েকটা ডলা দিছি মাত্র ফড়ফড় কইরা সব কইয়া দিছে। বাতেন মিয়া ছাড়া সব কয়টারে জেলে ঢুকাইছি।

জিজ্ঞাস করলাম,

বাতেন মিয়া কে ছেড়ে দিলি কি মনে করে?

হাসতে হাসতে শরীফ বলল,

ব্যাটায়তো জিন্দা লাশ। দুই দিন পর এমনিতেই মরব। ব্যাটারে থানায় ঢুক্কাইয়া থানা ঘান্ধা করতে চাই নাই।

হঠাৎ রাফেজার কথা মনে পরল। জিজ্ঞাস করলাম,

আমার সাথে একটা মেয়ে ছিল না? তার কি হয়েছে?

শরীফ বলল,

তারে তার দেশের বাড়ি পাঠাইয়া দিছি। যাহোক তুই অহন ঘুমা। বারি দিয়া তোর মাথা গুড়া কইরা দিছিল। তোর মাথায় অপারেশন করছে। আমরাতো ভাবছিলাম তুই বাচবি না। কিছু লাগলে কইছ।

কথা বলতে আমার আসলেই কষ্ট হচ্ছিল। সফুরা আর শরীফ বের হয়ে যাচ্ছিল কিন্তু কি মনে হতেই বিছানার পাশে টেবিল থেকে একটা খাম তুলে এনে শরীফ বলল,

মাইয়াটা, রাফেজা না কি জানি নাম, তোরে এইটা দিছে।

এনভেলোপটা খুলতেই একটা ছবি বের হয়ে গেল। তের-চৌদ্দ বছরের অসম্ভব সুন্দর একটা মেয়ে। মাথার চুল বেনী করা। চোখের দিকে তাকাতেই বড়সর একটা ধাক্কা খেলাম। এই সেই ভূতড়ে চোখ। টানাটানা কাজল কালো চোখ। মাটির নীচে ঘরটায় অন্ধকার ছিল বলে রাফেজার চোখ দেখতে পাইনি আমি। জিজ্ঞাস করলাম,

এটা কার ছবি?

ছবি হাতে নিয়ে শরীফ বলল,

কেন? এইটাতো সেই মাইয়াটার ছবি।

বললাম,

তোকে সেই ভূতুড়ে চোখের কথা বলেছিলাম না যেটা দেখার জন্য আমার বাতেন মিয়া বাড়িতে যাওয়া?

শরীফ বলল,

হ।

বললাম,

এই সেই চোখ। মাটির নীচে অন্ধকার ঘরে আটকে রেখেছিল বলে মেয়েটার চেহারা কখনোই পরিষ্কার দেখতে পাইনি। কিন্তু এই মেয়ের চোখ জোড়াই আমার রুমে ভেসে থাকতে দেখেছিলাম।

শরীফ কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,

কি কছ? এই মাইয়ারতো চোখই নাই।

বললাম,

মানে?

শরীফ বলল,

হের সৎ বাপ বছর দুই আগে গরম তেল ছুইড়া মারছিল চোখের মদ্দে। চোখ গইলা গেছিল দুইটাই। এখন চোখের জায়গায় ফাঁকা।

কেমন যেন মাথা ঘুরাচ্ছিল। আমি চোখ বুজলাম।


মন্তব্য

তিথীডোর এর ছবি

ভাইরে, আপনি তো বানান-টাইপো নিয়ে আবার পুরোনো ফেইজে ফিরে গেছেন। কিছু হৈলো! মন খারাপ

অধমের চোখে পড়া বিশাল সাইজের (বিনয় নয়, আসলেই বিশাল) সংশোধনী লিস্ট মেসেজে পাঠালাম। এখানে দিয়ে মাতবরির দায়ে লোকের গাইল খেতে চাই না।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

অতিথি লেখক এর ছবি

সাত সক্কালে উঠে এইরকম একটা গল্প! চলুক

দেবদ্যুতি

Sohel Lehos এর ছবি

দেবদ্যুতি, লেখা পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ হাসি

সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল হাসি

Sohel Lehos এর ছবি

ধুর বানান ফানান আমি জানি না। অভ্র যেমনে কইছে আমি সেমনে লেখছি। তারপরও এত ভুল কেমনে হয়!! চিন্তিত আপনের মেসেজওতো দেখতেছি না চিন্তিত

সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল হাসি

তিথীডোর এর ছবি

বার্তা চেক করুন। নাহলে এখানে লিস্ট ঝুলিয়ে যাবো, অগত্যা।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

Sohel Lehos এর ছবি

তিথীডোর, আপনার বার্তা এখনও দেখতে পাচ্ছি না। লিস্ট এখানেই দিয়ে দিন। আমি বানান ঠিক করে দেব খাইছে

সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল হাসি

তিথীডোর এর ছবি

কাওকে >কাউকে
টান পোড়েন > টানাপোড়েন
সনাম > সুনাম
চ্যাংরা > চ্যাংড়া
ব্যাবহার > ব্যবহার
এমাউন্টের > অ্যামাউন্ট
আধার >আঁধার
ব্যাবসা > ব্যবসা
প্রমান >প্রমাণ
পুরুষ্কার > পুরস্কার
পরিমানে > পরিমাণে
ব্যাস্ততার > ব্যস্ততার
যেচে পরে > পড়ে আপনাকে এখানে আনতে চাইছি।
যাহেতু > যেহেতু
দায়িত্বের মধ্যে পরে > পড়ে
মুহুর্তে > মুহূর্তে
অনেকটা হুমায়ুন আহমেদের মত > মতো
গাজা > গাঁজা খোরের মত > মতো
আবার ফোন কলা > কল আসা শুরু করে
আমার ঘুম কখন ভাঙ্গে > ভাঙে সে খবর কল দাতাগন > গণ কোত্থেকে পান
কি > কী কারণে
ঘাটাঘাটি > ঘাঁটাঘাটি
গেজাচ্ছে > গেঁজাচ্ছে
বাজখাই > বাজখাঁই
উপড়ি > উপরি
কথপোকথনের > কথোপকথন
করুন > করুণ
উওর > উত্তর
জিড়িয়ে > জিরিয়ে
যোগযোগই > যোগাযোগ
ব্যাস্ত > ব্যস্ত মানুষ
আহেতুক > অহেতুক
জোড়াজুড়ি > জোরাজুরি
চাচতো >চাচাতো
বেরিয়ে পর > পড়লাম।
পারা > পাড়া দিয়ে
কোলাকোলি > কোলাকুলি
কুটকুটে > কুচকুচে কালো
তুখড় > তুখোড়
ধরণের > ধরনের
টাকা পয়শা>সার
ব্যায় >ব্যয়
চাপা ভাঙ্গা >ভাঙা
ম্যানাজার >ম্যানেজার
জোড় >জোর করে
এনেমিয়া > অ্যানিমিয়া হয়েছিল
বতেন > বাতেন সাহেব
ঘুম ভাঙ্গল > ভাঙলো তারপর > তারপরের দিন দুপুরে
হাচরে পাঁচরে >হাঁচড়ে পাচড়ে
সরমের > শরমের
পায়খায়না > পায়খানায়
হাটতে > হাঁটতে
ফিঙ্গে > ফিঙে
জঙ্গলা > জঙলা/জংলা
দাড়িয়েছে > দাঁড়িয়েছে
দেখালম >দেখলাম
বঊ >বউ-বাচ্চা
প্যাচাল পারলাম > প্যাঁচাল পাড়লাম
ডাঙ্গায় >ডাঙায়
ম্যাস >মাস হিস্টেরিয়া।
হার্ট এটাকের > অ্যাটাকের মত > মতো হল> হলো
নাড়া দিয়েছিলে >ছিলো
তোলপার করল >তোলপাড় করলো
কি > কী মনে হল >হলো আপনার কাছে?
সিড়ি >সিঁড়ি
এক ফোটা >ফোঁটা
ষোল কিংবা সতেরর > সতেরোর
জোড়ে >জোরে
হা হা হা করে এক চট > চোট হেসে নিল সাজদ >সাজেদ
ঢিল ছুড়লাম >ছুঁড়লাম
বারি > বাড়ি দিয়া তোর মাথা গুড়া > গুঁড়া কইরা দিছিল
বাচবি > বাঁচবি না
ভূতড়ে >ভূতুড়ে চোখ
মনে পরল >পড়লো।

দিলাম।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

কি সর্বনাশ! তিথীডোর আপনাকে বাহবা দিতে হয়! এত পরিশ্রমী আপনি। স্যালুট! আমি তো পারিনা এমন করে শুধরে দিতে, ক্লান্তি আর অক্ষমতা ভোগায় খুব। সাধুবাদ।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

Sohel Lehos এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ তিথীডোর!

সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল হাসি

Sohel Lehos এর ছবি

সুলতানা সাদিয়া, লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ। সময়ের অভাবে আগের মত লেখালেখি হচ্ছে না। মানুষখেকো লেখাটা আপাতত ফেলে রেখেছি। দেখি কিছুদিন পর আবার ওটাতে হাত দেব।

সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল হাসি

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

বানান ফানান! তিথীডোরের মতো বন্ধু পাশে পাচ্ছেন, পোস্ট বক্স ঝেড়ে ফেলুন।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

Sohel Lehos এর ছবি

সুলতানা সাদিয়া, আপনাকে দেয়া জবাব উপরে চলে গেছে চিন্তিত

সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল হাসি

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

প্লটটা চমৎকার। সাবলীলভাবে লিখে গেছেন বোঝা যাচ্ছে। বেশ টান টান আগ্রহ ধরে রেখেছেন শেষ অবধি। তিথীডোরের লিস্টি মোতাবেক বাকি মিষ্টিটুকু লেখায় জুড়ে যাবে আশা করছি। অনেকদিন পরে এলেন কিন্তু। মানুষখেকো লেখাটার কি অবস্থা?

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

মেঘলা মানুষ এর ছবি

লেখা ভালো লাগলো। আপনার কিছু কিছু লেখায় আমি হুমায়ূনের একটা ঘ্রাণ পাই; আমার ভালোই লাগে পড়তে আরাম হয়।
রহস্য-রোমাঞ্চ মিশেলে ভালো হয়েছে রান্নাটা!

শুভেচ্ছা হাসি

Sohel Lehos এর ছবি

মেঘলা মানুষ, লেখা ভাল লেগেছে জেনে খুশি হলাম। হুমায়ূন আহমেদ আমার প্রিয় লেখকদের একজন। ইচ্ছা করেই নিজের লেখায় তার ঘ্রাণ ঢুকিয়ে দেই দেঁতো হাসি পড়ে আরাম পাচ্ছেন জেনে ভাল লাগল হাসি

সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল হাসি

Sohel Lehos এর ছবি

রান্না ভাল লেগেছে জেনে খুবই আনন্দিত হলাম। হাড়ি ভর্তি করে লিখছি। চিন্তা কইরেন না, পেট ভইরা খান।

সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল হাসি

মাসুদ সজীব এর ছবি

আপনার অন্য লেখাগুলো থেকে বেশ খানিকটা দুর্বল মনে হলো। যখন-ই পুলিশ অফিসার কে গল্পে হাজির করা হলো তখন-ই আমার মতো পাপী পাঠক অনুমান করে ফেললো বাতেন সাহেবের বাড়িতে গিয়ে আকরাম সাহেব বিপদে পড়ছেন। ফলে গল্পটি ভৌতিক থেকে গোয়েন্দার দিকে মোড় নিলো। ভৌতিক গল্প দেখে নড়াচড়া বসা বিফলে গেল ওঁয়া ওঁয়া

গল্পে বিশেষ করে ডায়লগে হুমায়ুন প্রভাব বেশি পরিলক্ষিত হলো। আশা করি এটি কাটিয়ে উঠবেন। এবং পরের বার শুধু ভৌতিক গল্প লিখে কাঁপিয়ে দিবেন নিশ্চয় চোখ টিপি । ভালোথাকুন, শুভেচ্ছা নিরন্তর হাসি

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

Sohel Lehos এর ছবি

মাসুদ সজীব, কোন দিক দিয়ে লেখা দুর্বল মনে হচ্ছে? লেখার ধরণ/ভঙ্গী, বুনন, প্লট নাকি অন্যকিছু (বানানে আমি বিশাল দুর্বল সেটাতো প্রাচীন ইতিহাস)? খুলে বললে আমার জন্য ভাল হত। লেখার নায়ক ভূতের গোয়েন্দা। ভূত খুঁজে বেড়ানো তার শখের কাজ। তাই লেখা ভৌতিক থেকে গোয়েন্দার দিকে মোড় নিয়েছে খাইছে

আমি লেখি নিজের মত করে। কিন্তু মাঝেমধ্যে হুমায়ূন আহমেদের প্রভাব পরিলক্ষিত হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কাজটা ইচ্ছাকৃত। প্রিয় লেখকের স্টাইল ধার নিতে ভাল লাগে হাসি লেখালেখিতে যেহেতু আমি এখনও ছোট্ট বাবু সেহেতু একটু আধটূ ধার নেয়া দোষের কিছু না। বড় হয়ে শুধু নিজের স্টাইলেই লিখব খাইছে

লেখালেখি নিয়ে চলছে আমার নিরন্তর গবেষণা। শীঘ্রই দুনিয়া কাঁপানো ভয়ের গল্প নিয়ে হাজির হব আপনাদের মাঝে দেঁতো হাসি গল্প পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ রে ভাই।

সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল হাসি

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

শেষটা পছন্দ হয়নি। শুধু দুটো চোখের ধারনাটা ভালো, কিন্তু সেইটার ব্যাখ্যা/রহস্যটা ভালো লাগেনি। তাড়াহুড়া করে শেষ করা নাকি? প্রথম অংশটুকু ভালো ছিল।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

Sohel Lehos এর ছবি

অনার্য সঙ্গীত, তাড়াহুড়া করা আমার স্বভাবের অংশ। এজন্যই অনেক কিছু শুরু করিতো শেষ করতে পারি না কিংবা কোনমতে শেষ করলেও শেষটা ভাল হয় না।

গল্প পড়ার জন্য ধন্যবাদ!

সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল হাসি

হাসিব এর ছবি

ডায়লগ লেখার কিছু নিয়ম আছে। যেকোন একটা উপন্যাস খুলে দেখে নেন। হাইফেন, কোট ইত্যাদি ব্যবহার করলে পোস্টের সাইজটাও কম হতো অনেক।

Sohel Lehos এর ছবি

হাসিব, ডায়লগ লেখার নিয়ম অবশ্যই আছে। আমি সেই নিয়ম মানিনি। আমি আমার মত করে লিখেছি। আপনার কি পড়তে অসুবিধা হয়েছে কিংবা বিরক্তি লেগেছে? পড়তে অসুবিধা হয়ে থাকলে দুঃখিত। আমি চরম অলস। নিয়ম মানতে অনেক কষ্ট হয়। আমার এই স্টাইলের লেখা পড়তে পড়তে হয়তো এক সময় অভ্যস্ত হয়ে যাবেন। তখন আর কষ্ট লাগবে না। আই প্রমিজ দেঁতো হাসি

সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল হাসি

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

আপনার লেখা সাবলীল, ব্লগ হিসেবে বেশ বড় গল্প, তবুও একটানে পড়ে ফেলা গেল। গল্পটায় টুইস্ট রাখতে চেয়েছিলেন কিনা জানি না, কিছু জায়গায় টুইস্ট সেই হিসেবে আগেই কিছুটা আন্দাজ করা গেছে। রহস্য গল্পের সব রহস্য ভাঙতে হবে এমন কোনো কথা নেই, সেই হিসেবে চোখের ব্যাপারটা খোলাসা না করায় বা অতিরিক্ত না টানায় গল্পের কোনো ক্ষতিবৃদ্ধি হয়নি বলেই আমার মনে হচ্ছে।

গল্পের আঙ্গিক আর ভাষায় হুমায়ূনীয় ছাপ বেশ স্পষ্ট, সেটা কি ইচ্ছাকৃত নাকি অনিচ্ছাকৃত? আপনার সাবলীল বর্ণনা আপনার নিজস্ব ভাষাভঙ্গিতে লেখার চেষ্টা করলে আমরা পাঠক হিসেবে আরও সমৃদ্ধ হব নিশ্চয়ই।

ভালো থাকুন।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

Sohel Lehos এর ছবি

ত্রিমাত্রিক কবি, মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। টুইস্টতো কিছু রাখতেই চেয়েছিলাম। হয়তো অতটা সফল হতে পারিনি। লিখতে লিখতে আশা করি হাত আরও পাকবে। তখন জিলাপির প্যাচের মতন টুইস্ট থাকবে দেঁতো হাসি

লেখায় হুমায়ূন আহমেদের প্রভাব ইচ্ছাকৃত। আমার কিছু লেখায় এটা পাবেন। বেশিরভাগ সময় নিজের মত করেই লেখি। মাঝেমধ্যে প্রিয় লেখকের ছায়া লেখার ভেতর ঢুকিয়ে দেই। যখন সিরিয়াসলি লেখালেখি শুরু করব তখন পুরোটা নিজের মত করেই হবে। কথা দিচ্ছি হাসি

সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

১ম থেকে টানা মধ্যের পরের অংশ পর্যন্ত খুব ভাল লেগেছে । ডুবে ছিলাম । শেষ সমাপ্তিটা সাদামাটা মনে হলো। আপনার লেখা পড়ি ভালও লাগে। চলুক তবে।
-------------
রাধাকান্ত

মরুদ্যান এর ছবি

পড়ছি আর সাথে সাথেই কমেন্টাচ্ছিঃ

একজন লোক যার প্যারানরমাল ব্যাপারে অনেক পড়াশুনা সে শুধু প্যাকেজ নাটক বানায় তাও এক সাথে নয়টা, জিনিস টা হজম হল না। হুমায়ুন আহমেদ কিন্তু শুধু প্যাকেজ নাটক বানাতেন না, এর চেয়ে অনেক বেশি কিছু করতেন। তবে যদি এমন হত যে আকরাম সাহেব নিজেকে হুমায়ুনের মত বড়সড় কিছু ভেবে আত্মপ্রশ্নস্তিতে ভুগছেন তাহলে ঠিক ছিল। কিন্তু আপনার বাকি গল্পের আকরাম সাহেবের প্রোফাইলের সাথে এই ব্যাপারটা যায়না, তাই এরকম ভেবে নিতে পারলাম না।

বাতেন সাহেবের গং (যারা মানুষের রক্ত খাওয়ার মত ভয়ংকর কাজ কারবার করে) একটা ভূতুড়ে চোখ দেখে ভয় পেল। কূলকিনারা না পেয়ে সমাধান করতে ডাকল একজন সেলিব্রিটিকে। তারপর তারই রক্ত খাওয়া শুরু করল। খুন করার সিদ্ধান্ত নিতেও সময় লাগল না। সারাজীবন অবৈধ ব্যবসা করা একজন মানুষ এত ভোদাই হওয়ার কথা না। তার উপর আকরাম সেলিব্রিটি আর তার এখানে আসার কথা কারো না কারো জানার কথাই, লোকে খোঁজ খবর করতোই। বাতেন সাহেব তেমন ক্ষমতাধর কেউও না, তাই প্রভাব খাটিয়ে ধামা চাপা দিবে সে আশাও গুড়েবালি। পুরাই খাপ ছাড়া ব্যাপার স্যাপার।

হঠাৎ শরীর খারাপ, হাতে সুঁইয়ের দাগ চিনতে পেরেও আকরামের কোন ভ্রুক্ষেপ নাই, এই লোক কিভাবে রহস্য সমাধান করবে?

একি কথা খাটে যখন সাজেদ ব্যাঙের কান্নার শব্দ জাতীয় ভুং ভাং দেওয়ার পরেও আকরামের কোন রিয়্যাকশন দেখিনা। অন্তঃত 'ব্যাটা নিশ্চয়ই কিছু লুকাচ্ছে' টাইপ একটা স্বগতোক্তি দরকার ছিল।

আকরামের ভাবলেশহীনতা বিরক্তির পর্যায়ে চলে গেল এখানে

হেরা আমারে ছাড়ব না ভাই। হেগো আমার রক্ত দরকার। তিন চারদিন পর পর আমার শরিল থেইক্কা রক্ত নিয়া যায়। চিন্তিত হয়ে বললাম, দাড়াও তাহলে অন্য ব্যাবস্থা করব।

শুধুই চিন্তিত? আরেকটু বেশি রিয়্যাকশন কি আসার কথা না? আসলে এখানে আমরা অভিনয় দেখতে পাচ্ছিনা, তাই লেখকের মনে হয় দায়িত্বের মধ্যে পড়ে এই সূক্ষ্ম ব্যাপারগুলো বুঝিয়ে দেয়ার, ডায়লগ অথবা কোন বর্ণনার মাধ্যমে।

আকরাম আগের দিন সন্দেহ করার পরেও তার পরের দিন লুকানো ঘরের দরজায় কোন তালা নাই। এরকম ওভার কনফিডেন্ট বোকা ভিলেন পাওয়া এই দুনিয়ায় কঠিন।

রাফেজার দুই বছর আগের নষ্ট হওয়া চোখ সে কিডন্যাপ হওয়ার পরপর ঘুরাঘুরি শুরু করেছে, জিনিস টা বেশ মজার। স্কেয়ারি মুভি সিরিজে এরকম কমেডি হরর কাহিনী থাকে।

প্লটে এত ফাঁক মনে হওয়াতে গল্পটা উপভোগ করতে পারিনি।

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।