চৈত্রের ভয়াবহ গরমে দাঁড়িয়ে নায়াগ্রা জলপ্রপাতের মত কুলকুল করে ঘামছিল মাহতাবুদ্দিন। কোথাও বাতাসের একফোঁটা গন্ধ নেই। তার বদলে মানুষের ঘাম, পচে যাওয়া ডাবের চোকলা, নর্দমার নোংরা, পেটের গভীর থেকে তুলে আনা কোন কুকুরের উগরানো বমি, বুক চিরে দেয়া গাড়ির বিকট হর্ণ, রিক্সার টুনটুন, হাত-পা কাটা ভিখারির চিৎকার, আর রাস্তায় থ্যাতলে পরে থাকা কাঁঠালের উপর অসভ্য মাছির ভন ভন শব্দে গুলিস্তান পরিণত হয়েছে ছোট্ট এক টুকরা হাবিয়া দোযখে। বাসের দেখা নেই।
ঘণ্টা খানেক ধরে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছে মাহতাবুদ্দিন। সে একা নয়। আরো অনেকেই। নিশ্চিত শনির আখড়ায় জ্যামে আটকে আছে বাস। গত পাঁচ মিনিট ধরে মাহাতাবুদ্দিনের কাছে মনে হচ্ছে সে মারা যাবার পথে। মৃত্যু অতি সন্নিকট। তার পৃথিবী দুলছিল। গলা শুকিয়ে সাহারা মরুভূমি হয়েছে অনেক কাল আগেই। আধা ঘণ্টা আগে পেশাপ চেপে পেট ফেটে যাচ্ছিল তার। এখন সে পেশাপের বেগও আর নেই। পেটের ভেতরেই নিশ্চিত শুকিয়ে গেছে পেশাপ। মাহাতাবুদ্দিনের হাতে ছালার ব্যাগে দশ কেজি আখের গুড়। সেই ফজরের ওয়াক্তে গ্রামের বাড়ি থেকে বের হয়েছিল আদমজী বোনের বাড়ি যাবে বলে।
অনন্তকাল পরে দূরে বাসের দেখা মিলল। বল্লার চাকে ঢিল পড়ার মত ভীরের মধ্যে হই হুল্লোড় শুরু হল। ব্যাগ নিয়ে শিকার ধরার জন্য চিতা বাঘের মত ভঙ্গি নিল মাহতাবুদ্দিন। বাস এসে থামার আগেই মানুষের কিল ঘুসি আর কনুই এর ধাক্কায় বাসের দরজা পর্যন্ত পৌছানোর আগেই গাড়ি ছেড়ে দিল। বাস চলে যাচ্ছে। দশ কেজি ভারি ব্যাগ নিয়ে প্রাণপণে দৌড়ুচ্ছে মাহাতাবুদ্দিন। এই বুঝি বাস মিস হল ভেবে বাসের হাতলের উদ্দেশ্যে পানিতে ডুবে থাকা মাছের দিকে চিল যেমন তীর গতিতে ছুটে যায় ঠিক সেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ল। আধা ইঞ্চির জন্য হাতলটা ধরা হলনা।
বাসের নিচে মাহাতাবুদ্দিনের মাথাটা পট করে কদবেলের মত ফেটে যাবার আগে তার মনে হল- আহারে এভাবে জীবনের কত সুযোগই না হাত ছাড়া হয়ে গেছে!
মন্তব্য
উপস্থাপনা ভালো লেগেছে। আমরা অনেকেই এভাবে বাসে উঠেছি, উঠবো। সবাই নিরাপদে থাকুক
হ্যাঁ, সবাই নিরাপদ থাকুক। ধন্যবাদ!
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
শক্ত বাঁধুনির লেখা - নির্মম ছবি -
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
ধন্যবাদ! কেমন আছেন?
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”
আপনার লেখার স্টাইল খুব সুন্দর। ভালো লেগেছে গল্প।
অ.টঃ আপনার প্রোফাইল ছবিটা কেমন বিকর্ষণ করে। এমন সুন্দর করে যিনি লিখতে পারেন তার একটা সুন্দর প্রোফাইল ছবি চাই। কিছু মনে করবেন না আশা করি।
শায়লা
গল্প ভাল লেগেছে জেনে আমারও ভাল লাগল। ধন্যবাদ!
আমার প্রোফাইল ছবি বিকর্ষণ করে এইটা আগে কেউ বলে নাই। আকর্ষন করে এই রকম একটা ছবি এখুনি দিতেছি দাঁড়ান।
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
ভালো ছিল।
কিন্তু কিছু জায়গায় খটকা লাগলো। প্রথমদিকে মনে হচ্ছিল মাহাতাবুদ্দিন এ শহরের কোন নৈমিত্তিক বাস বাদুর। শনির আখরায় বাস আটকে থাকে এটা তার রোজকার জানা কথা। কিন্তু গ্রাম থেকে বোনের বাসায় আসা একজনের সাথে কি এটা মানায়? তাও আবার সাথে দশকেজি গুড়!! ঢাকা শহরে বোনেরা দশকেজি গুড় দিয়ে কি করে বড় জানতে ইচ্ছে হয়।
দশ কেজি গুড় দিয়ে কি করে সেটা আমারও জানার অনেক খায়েশ। ভেবেছিলাম মাহাতাবুদ্দিনকে জিজ্ঞাস করব, কিন্তু ব্যাটা তারা আগেই পটল তুলল
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
কি আর করি, ফ্রিজে জমে। হঠাৎ একদিন দুই মায়ের যেকোন একজন এসে বলে, সেই যে গুড় পাঠাইসি মা কি করছিস?/বউমা কি করছো?
গলার আক্ষেপ ঝেড়ে মায়েরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আর তখন মোয়াটা, পিঠাটা তবু জোটে মায়েদের কল্যানে।
অনেকদিন পর ফিরে আসাটা ভাল হয়েছে ভাই।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
ধন্যবাদ সাদিয়া! কেমন আছেন?
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
নতুন মন্তব্য করুন