বিছানায় ছড়িয়ে থাকা গোলাপের পাপড়ির উপর গোলাপি কাতান পরে সদ্য ফোঁটা কোন গোলাপের মতন ঘোমটা টেনে বসে আছে গোলাপি। অতি সাধারণ সাজে কি অসাধারণই না তাকে লাগছে। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে জহিরুল। ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে লজ্জা পেয়ে গোলাপি জিজ্ঞাস করে, "কি দেখ?”
এ যেন রাজ্জাক-শাবানা অভিনীত আশির দশকের কোন সিনেমার দৃশ্য। মুচকি হেসে জহিরুল বলে,”তোমাকে দেখি।”
গোলাপি মেয়েটা অনেক লাজুক। অতি সামান্য কথাতেই সে আরো লজ্জায় লাল হয়। এই মোবাইল ফোন, ফেসবুক, ভাইবার, স্কাইপ, আর টুইটারের যুগে যে এমন মেয়ে থাকতে পারে তা কল্পনা করতেও কষ্ট হয়। নিজেকে বেশ সৌভাগ্যবান মনে হয় জহিরুলের। কত সাধনার পর এই পাওয়া!
গোলাপি তার শান্ত মিষ্টি গলায় বলে,”আমার ক্ষুধা পেয়েছে। সেই দুপুরে খেয়েছিলাম।”
ব্যস্ত হয়ে উঠে দাড়াতে দাঁড়াতে জহিরুল বলে, “কি খাবে? আমি নিয়ে আসছি।”
গোলাপি ঠোঁট কামড়ে বলে, “যা পাও নিয়ে এসো। অনেক রাত হয়েছে। তাড়াতাড়ি ফিরে এসো প্লিজ।”
“যাবো আর আসবো। তুমি দরজা লাগিয়ে বসে থাক।” রুম থেকে ছুটে বেরিয়ে যায় জহিরুল।
কাওকে না বলেই বিয়েটা করতে হল। আসলে এই বিয়েতে কেউই রাজী ছিল না। কোন এক অজানা কারণে গোলাপির ফ্যামিলি জহিরুলের সাথে গোলাপির বিয়ে দিতে নারাজ। জিজ্ঞাস করলে পরিষ্কার করে কিছু বলে না।
গোলাপিদের দেশের বাড়ি চট্টগ্রামে। জহিরুলদের লালমনিরহাট। গোলাপির বাবা চিটাগং এর ছেলে ছাড়া নাকি কোন সম্বন্ধই করবেন না। কোনমতেই তাকে বোঝানো গেল না। এছাড়া ছোটবেলায় কি এক অপারেশনের কারণে গোলাপির সন্তান হবার সম্ভাবনা নেই। খুশিমনে জহিরুল সেটা মেনে নিয়েছে। কিন্তু গোলাপির বাবা ধণুকের মতন বেঁকে আছেন।
আর জহিরুলের পরিবারের সমস্যা আবার বাচ্চা কাচ্চা নিয়েই। বাবা মা’র একমাত্র সন্তান জহিরুল। ছেলের সন্তান না থাকলে বংশের বাতি জ্বালাবে কে? গোলাপির বাচ্চা হবে না ব্যাপারটা নিজের পরিবারের কাছে চেপে যেতে চেয়েছিল জহিরুল। সন্তান থাকা না থাকায় জহিরুলের কিছু যায় আসে না। কিন্তু গোলাপির চাপচাপিতে বাধ্য হয়ে বলতে হল। কোন কিছুই গোপন রাখতে চায়নি গোলাপি। ঘটনা শুনে জহিরুলের বাবা কানে তুলো দিলেন। এই ব্যাপারে আর কোন কথা শুনতেই তিনি নারাজ।
সোশিয়ালজির ক্লাসে তাকে প্রথম দেখেছিল জহিরুল। কাওকে দেখে যে এমন অনুভূতি হতে পারে জানা ছিল না তার। মনে হচ্ছিল কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ট্রেন তার বুক এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়ে তীব্র গতিতে চলে গেল অজানা কোন দিকে।
প্রচন্ড রকম চাপা মেয়ে গোলাপি। তার সাথে সামান্য কথা বলতেই দীর্ঘ সময় লেগে গিয়েছিল জহিরুলের। আস্তে আস্তে সহজ হয়েছে গোলাপি। ভাবা যায় প্রেমের দুই বছরে দুইবারও গোলাপির হাত ধরা হয়নি? অবশ্য তাতেই কিবা আসে যায়? গোলাপি তার শুধুই তার- শুধু এই ভাবনা টুকুই তাকে যে মানসিক প্রশান্তি এনে দেয় সেটাই বা কম কি?
মোড়ের রেস্টুরেন্টটা খোলা পাওয়া গেল। বাসি তেহারি ছাড়া আর কিছুই নেই। তাই নিয়ে ছুটতে ছুটতে ভাড়া করা হোটেল রুমে ফিরে এল জহিরুল। গোলাপি এর মধ্যে শাড়ি ছেড়ে সেলোয়ার কামিজ পড়ে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়েছে। তার সতেজ ত্বক থেকে হলুদ এক আভা বের হচ্ছিল।
জহিরুল হতাশ গলায় বলল, “তেহারি ছাড়া আর কিছু পেলাম না।”
মিষ্টি হেসে গোলাপি বলল,”চিন্তা করো না। আমার ক্ষুধা মরে গিয়েছে। এখন আর কিছু খাব না।”
“তাই বলে একদম খালি পেটে থাকবে?”
“হু। কিছু হবে না। সকালে উঠে তোমার তেহারি খাব। চল শুয়ে পড়ি...”
গোলাপির কথা শেষ হবার আগেই তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেল জহিরুল। বাঘের থাবায় আটকে থাকা হরিণ শাবকের মত থরথরিয়ে কেঁপে উঠল গোলাপি। জহিরুল থামে না। অস্ফুট গলায় গোলাপি বলে, “বাতি নিভিয়ে দাও…প্লিজ... “
অন্ধকার রুমে কার্ণিশে ঝোলানো চল্লিশ ওয়াটের বাতিটা থেকে মৃদু আলো জানালায় এসে উঁকি দিচ্ছিল। সেলোয়ারের ফিতায় হাত পৌঁছানো মাত্রই হু হু করে কেঁদে উঠল গোলাপি।
শক্ত করে জড়িয়ে ধরে জহিরুল জিজ্ঞাস করল,”কি হয়েছে গোলাপি?”
ফোঁপাতে ফোঁপাতে গোলাপি বলল,”তুমি আমাকে ভালবাস?”
“এতদিনে এই কথা জিজ্ঞাস করছ গোলাপি? তুমি জান না?”
“সব সময় ভালবাসবে?”
“যত দিন বেঁচে থাকব।”
"আমাকে ছেড়ে যাবে নাতো?"
"মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আছি তোমার সাথে।"
গোলাপির কোমর থেকে সেলোয়ার খসে গিয়ে যখন মেঝেতে আছড়ে পড়ল তখন পর্দার ফাঁক দিয়ে গড়িয়ে আসা মৃদু আলোয় দেখা গেল গোলাপির দুই ঊরুর সন্ধিক্ষণ থেকে উত্থিত এক পুরুষালি অঙ্গ তিরতিরিয়ে কাঁপছে।
মন্তব্য
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
গল্পটা পড়া শেষ করে উপরে রম্য ট্যাগ আছে কিনা দেখে নিলাম। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষজনের ভালবাসার অধিকারের ব্যাপারটা ইদানীং বেশ আলোচিত। আমি ১০০ ভাগ সমর্থন করি অধিকারকে। কিন্তু এই গল্পে জহিরুল প্রতারণার শিকার কারণ সে গোলাপির নারী সত্তাকেই ভালবেসেছে এবং এর জন্য নিজের পরিবার, সন্তানের আকাঙ্খা সবকিছুকে বিসর্জন দিতে সে রাজী ছিল। প্রকৃত ভালবাসা কখনো প্রতারণার আশ্রয় নিতে পারেনা।
গল্প পড়ার জন্য ধন্যবাদ। প্রকৃত ভালবাসা অবশ্যই প্রতারণার আশ্রয় নেয় না। জহিরুল গোলাপিকে ভালবেসেছে। কিন্তু গোলাপি সমাজের ভয়ে হয়তো ব্যপারটা চেপে গেছে। তৃতীয় লিঙ্গের ব্যপারে আমাদের সমাজ অনেক নিষ্ঠুর।
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
আমার কাছে প্রেম এবং কাম পৃথিবীর অন্যতম রহস্যময় বিষয়।প্রেমকে কত পবিত্র ও কামকে কুৎসিত বলে মনে হয়;অথচ এটি একটি অন্যটির পরিপূরক।আমার মতে,মানুষের জৈবিক চাহিদা বলে কিছু না থাকলে দারুণ হতো;তাহলে প্রেমের পবিত্রতাটি অক্ষুণ্ণ থাকতো।
সপ্তগঙ্গা
গল্প পড়ার জন্য ধন্যবাদ। কাম কুৎসিত হতে পারে না। কামের প্রয়োজনেই প্রেম-ভালবাসার সৃষ্টি। প্রেম-ভালবাসার জন্য কামের সৃষ্টি হয়নি। পৃথিবীতে টিকে থাকার জন্য কামের প্রয়োজন। জৈবিক চাহিদা নিশ্চিত করণ এবং সম্পর্ক স্থিতিশীল করার জন্য প্রকৃতি প্রেম-ভালবাসার জন্ম দিয়েছে।
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
মেহ
কি?
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
ছোট লেখায় চমকটা ভালো হয়। কিন্তু ভাবনাটা থাকেই। মেয়েটা কি ছেলেটাকে বলতে পারতোনা। যে দ্বিধা, অসম্ভব আশা আর শঙ্কা তার মনে খেলে গিয়েছিল তার সাথে তীব্র আকর্ষনের অপ্রতিরোধ্য স্রোত মেয়েটার মুখ চেপে ধরেছিল বলতে দেয়নি সেসবের জন্য একটু আফসোস হয়। গল্পটা দ্বিতীয়বার পড়ার সময় গোলাপির পরিবারের আপত্তি, পিতার আপত্তি পাচ্ছি। গোলাপির দিক থেকে তেমন কোন ইঙ্গিতের কথা পাচ্ছিনা। হয়তো সম্পর্কটা সহজে হয়নি এই তথ্যে গোলাপির একটা প্রতিরোধও ছিল কিন্তু জহিরুলের চাপেই শেষমেষ একটা অসম্ভব স্বপ্নে বিভোর হয়েই এ বিয়েতে রাজি হয়েছে। কিন্তু এসব নেই, হয়তো ছোট রচনা বলেই।
এই জায়গায় কেবল সেই না বলা কথা গুলো কান্নার স্বরে আসলো। হয়তো আরো একটু ইঙ্গিত আসতে পারতো, হতে পারে কয়েকটা শব্দ মাত্র যোগ করেই। কিন্তু ছোট রচনা বলেই বোধহয় চমকটাই থাকলো।
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
সোহেল ইমাম, আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আসলে ছোট গল্পের পরিসরে অনেক কিছুই বৃত্তান্ত লেখার অবকাশ নেই। অনেক কিছুই বলা যেত, হতে পারত, ঘটতে পারত। কিন্তু ছোট গল্পে বলেই বলা যায় না, হতে পারে না, এবং ঘটে না। আপনাকে আবারও ধন্যবাদ
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
আমিও একমত যে, গল্পটা দ্বিতীয়বার পড়ার সময় গোলাপির পরিবারের আপত্তি, পিতার আপত্তি পাচ্ছি। গোলাপির দিক থেকে তেমন কোন ইঙ্গিতের কথা পাচ্ছিনা। হয়তো সম্পর্কটা সহজে হয়নি এই তথ্যে গোলাপির একটা প্রতিরোধও ছিল কিন্তু জহিরুলের চাপেই শেষমেষ একটা অসম্ভব স্বপ্নে বিভোর হয়েই এ বিয়েতে রাজি হয়েছে। কিন্তু এসব নেই, হয়তো ছোট রচনা বলেই।
মিজানুর রহমান রানা
www.chandpurreport.com
গল্প পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। সম্পর্ক সহজ হয়নি এই কারণেই কিনা জানি না তবে আপনাকে গোলাপির সাইকোলজিটাও চিন্তা করতে হবে। বাংলাদেশের মত পরিবেশে একজন ট্র্যান্সজেন্ডারের ভবিষ্যৎ কি? তাদেরওতো মন-প্রেম-ভালবাসা আছে। একজন ছেলে প্রচন্ডভাবে তাকে চাচ্ছে। গোলাপি এখানে দুর্বল হয়ে পড়বে সেটাই স্বাভাবিক।
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
নতুন মন্তব্য করুন