দুর্গন্ধে মা’র কাছে যাওয়া যায় না। দাঁত মুখ খিঁচে দরজায় দাঁড়িয়ে শফিক জিজ্ঞাস করল, “আমি বাইরে যাইতাছি। তোমার কিছু লাগব?”
সফুরা বেগমের গলার নীচ থেকে পুরো শরীর প্যারালাইজড। খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে তার সব কিছু করে দিতে হয়। পেশাপ-পায়খানা তার বিছানাতেই হয়ে যায়। প্রচুর টাকা দিয়ে বয়স্ক মত এক কাজের মহিলা রাখা হয়েছে। সেও একদিন আসেতো দুইদিন আসে না। এ ব্যাপারে তাকে কিছু বলাও যায় না। কিছু বললেই কাজ ছেড়ে দেবার হুমকি দেয়। চেঁচিয়ে বলে,”বুইড়া মাইনষের গু-মুত আমি পরিষ্কার করমু না। আল্লাগো আল্লা কি গন্নের গন্ন…ওয়াক থুঃ!”
শফিকের বাবা মইনুদ্দিন আদুরে গলায় বুয়াকে বলেন,”আরে রাগ কর ক্যান? তোমার সময় সুযোগ মতন আইবা। এক টাইমে আইলেই হইল।”
এই বাজারে সাধারণ কাজের বুয়াই যেখানে আকাশের চাঁদ সেখানে একজন প্যারালাইজড মানুষের নোংরা পরিষ্কার করে দেবার জন্য কাওকে পাওয়াটা প্রায় অসম্ভব এক ব্যাপার। গতকাল কাজের বুয়া আসেনি। আজ আসবে কিনা কে জানে। বুয়া’র মোবাইল নাম্বারটা শফিকের ফোনে সেইভ করা নেই। থাকলে কল দেয়া যেত।
শফিককে দেখে সফুরা বেগম মলিন হেসে বলেন,”একটু কাছে আয় বাপ।”
“আমার তাড়া আছে। একটা মাল ডেলিভারি দিতে এয়ারপোর্ট যামু।”
“একটু কাছে আয়না।”
বিরক্ত হয়ে শফিক বলল,”ধুর! তোমাকে জিজ্ঞাস করাটাই ভুল হইছে।”
বাসা থেকে বেরিয়ে আসে শফিক। এয়ারপোর্টে যেতে হবে। হাতে টিফিন ক্যারিয়ার। সেখানে ডাল-ভাত ছাড়াও ছোট একটা প্যাকেট আছে। দুই নাম্বারি জিনিস কিছু হবে। শফিক পরিষ্কার জানে না। জামান ভাই এয়ারপোর্টে লোকের নাম বলে দিয়েছেন। ডেলিভারি বাবদ পাঁচ হাজার টাকা পেয়েছে শফিক।
ডেলিভারি শেষে খিলক্ষেতে লতিফা'র ডেরায় যাবার সময় বাস থেকে বাবাকে দেখতে পেল শফিক। রাস্তার অপর পাশে আখের রস কিনে খাচ্ছিলেন।
শফিকের বাবা মইনুদ্দিন নানা রকম ধান্ধা করে টাকা পয়সা রোজগার করেন। এখন ধরেছেন পাথরের কাজ। সাধারণ পাথর নয়। দামী পাথর- চুনি, পোখরাজ… এই ধরণের আর কি। ব্যাবসায়ীরা ভাগ্যের আশায় এগুলো আংটিতে পরে। মইনুদ্দিন সেগুলো যোগাড় করেন। তার পাথরগুলোও বেশিরভাগ সময় দুই নাম্বারি হয়। মইনুদ্দিন ধুরন্ধর লোক। কথার চালে যখন তখন সিমেন্টের টুকরাও হীরা বলে চালিয়ে দিতে পারেন।
লতিফা নখে রং মাখছিল। শফিককে দেখে মাথা না উঠিয়েই বলল,”ফোন না দিয়াই আইলেন যে?”
“তুমি কি শেখ হাসিনা? ফোন না দিয়া আসা যাইব না?”
খিলখিল করে হেসে লতিফা বলে,”কি যে কন? লগে কাস্টমার থাকলে আপনেরে টাইম দিতাম ক্যামনে?”
বিছানার উপর এক হাজার টাকার একটা নোট ফেলে শফিক বলল,”পানির ব্যাবস্থা কর।”
নোটটার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে নেইল পালিশ লাগাতে লাগাতে লতিফা বলল,”পানি ঘরেই আছে। খাড়ান আইনা দিতাছি।”
জামার বোতাম ঢিলা করতে করতে বিছানায় বসে শফিক। দুটো গ্লাস আর আধা ভরা বোতল নিয়ে এসে লতিফা বলল,”বরফ নাই। সারাদিন কারেন্ট আছিল না।”
বোতলের দিকে তাকিয়ে শফিক জিজ্ঞেস করে,” বিদেশী জিনিশ কই পাইলা?”
“একজন দিছে।”
“কে? অন্য কাস্টমার?”
“হ।"
“তোমার বালের পানি খামু না।”
“চ্যাতেন ক্যান? ভাল জিনিশ। আমেরিকা থেইক্কা নাকি আনছে। আমি খাইছি।”
“বিদেশী মুত তুমি খাও।”
ধাক্কা দিয়ে বোতল মেঝেতে ফেলে দিল শফিক। আমেরিকার জিনিশ বলেই হয়ত বোতলটা ভাঙল না। গড়িয়ে বিছানার নীচে চলে গেল।
খিলখিল করে হেসে লতিফা বলে,”ছুট পোলাপাইনের মত কাম দেখলে হাসি আসে। খাড়ান দেশি জিনিশ আইন্না দেই।”
ঘণ্টা খানেক পর শফিকের বুকের নীচে শুয়ে গল্প করছিল লতিফা।
“বুঝলেন, আমার কাছে এক বেডা আসে মাঝে মইদ্দে। এক্কেরে আপনের মতন।”
কোমর ওঠা নামায় সুন্দর এক ছন্দ তুলছিল শফিক। দেশি জিনিশ খুব দ্রুত ধরে। লতিফার বকবকানির দিকে তার খেয়াল নেই।
“হেও সেকেন্ডের মইদ্দে ছ্যাঁত কইরা উঠে।”
“হুম।" কোমরের গতি বৃদ্ধি পায় শফিকের।
“আমারে অনেক আদর করে।”
“হুম।" জোড়ে শ্বাস ফেলে শফিক।
“হেয় দেখতেও আপনের মতন।”
“হুম।" কোমরের গতির সাথে পাল্লা দিয়ে ঝরে শফিকের দেহের ঘাম।
“তয় ধরেন বয়স অনেক। আমার বাপের বয়সী।”
“হুম।" অন্তর্দহ ইঞ্জিনের পিস্টনের মত ওঠা নামা করে শফিকের কোমর।
“বুড়া হইলে কি হইব বেডার কোমরের জোর অনেক। উফ মাগোঃ…। ”
লতিফার গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দেয় শফিক,”করনের সময় চুপ থাকতে পারস না খানকির ঘরের খানকি!”
উঠে দাঁড়িয়ে কোমরে প্যান্ট টেনে তুলে শফিক। তার মুড নষ্ট হয়ে গেছে। মানিব্যাগ থেকে আরেকটি হাজার টাকার নোট লতিফার শরীরে ছুঁড়ে মেরে দিয়ে দরজার দিয়ে বেরিয়ে আসার সময় ধাক্কা লেগে হুরমুরিয়ে বয়স্ক এক লোকের উপর গিয়ে পড়ল শফিক।
নিজেকে কোনমতে সামলে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতেই তারমুখ থেকে আর্তনাদ বেরিয়ে এল,”বাবা!"
মন্তব্য
গল্পের শেষটা কেমন যেন ম্যাড়মেড়ে, বড়ই ক্লিশে। সুখপাঠ্য সন্দেহ নেই, তবে গল্পটির প্রতি সুবিচার করেননি আপনি।
---মোখলেস হোসেন।
মোখলেস হোসেন, আপনার মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনি আগেও আমার অন্য একটি গল্পতে (গেডানকেন ট্রাভেল- ১টি অবৈজ্ঞানিক কল্পাহিনী) খুব গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন। সময়ের অভাবে তার উত্তর দিতে পারিনি। আপনার মত পাঠকের মতামত আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ।
যাহোক, গল্পের শেষটা কি খুব কমন হয়ে গেছে? এধরণের ফিনিশিং কি প্রায়ই চোখে পড়ে? "তবে গল্পটির প্রতি সুবিচার করেননি আপনি।" - এটা কেন মনে হল বলবেন কি?
আবারও অসংখ্য ধন্যবাদ।
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
এরকম ফিনিশিং প্রায়শই চোখে পড়ে না। কারণ পরিণত লেখকেরা এই ধরনের ফিনিশিং এড়িয়ে চলেন। এই ধরনের ফিনিশিং আমরা দেখতে পেতাম আশির দশকে পাড়া মহল্লা থেকে প্রকাশিত একুশের সংকলন গুলোতে। যেমন গল্পের শেষে "তারপরই ঘুম ভেঙ্গে গেলো, জেগে দেখি আমি রয়েছি আমার ঘরেই। আসলে ওটা স্বপ্ন ছিল"। এভাবে সহজেই একটি গল্পের শেষ টানা যায়, কিন্তু তাতে গল্পের প্রতি, পাঠকের প্রতি সুবিচার করা হয়না। আপনার গল্পে দারুণ একটি সম্ভাবনা থাকলেও সেই গল্পটি আমরা পাইনি। আপনি ভালো লেখেন, তবে গল্প বলার চেয়ে, গল্প শেষ করার দিকে একটা ঝোঁক আপনার রয়েছে বলে আমি মনে করি। মন মতো একটা সমাপ্তি খুঁজে পাওয়া সহজ নয়, ক্ষেত্র বিশেষে এটি দারুণ ক্লান্তিকরও বটে। কিন্তু প্রতিভার সাথে পরিশ্রমের ওই সংমিশ্রণটা না থাকলে হালিম শাহ হয়েই কেটে যায় একটা জীবন। হালিম শাহ কে জানেন তো? নির্মাণ স্কুলের সেরা খেলোয়াড়দের নিয়ে একটা দল করা হয়েছিলো, সে অনেক কাল আগের কথা। হালিম শাহ ছিলেন অধিনায়ক। যেমন খেলোয়াড়, তেমনই নেতা। তারপর কোথায় হারিয়ে গেলেন!
লিখে চলুন সোহেল লেহস। আমরা গল্পটা শুনতে চাই।
------মোখলেস হোসেন।
ভালোই এগোচ্ছিল। আপানার গল্প বলার ধরণ সহজ, মার ভালো লাগে। কিন্তু একটু শিক্ষামূলক ঈশপের গল্প ধরণের হয়ে গেল না সমাপ্তি হিসেবে?
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। শেষটা কি বেশ কমন হয়ে গেছে? আসলে অণুগল্প লিখতে চেষ্টা করছি আজকাল। অণুগল্প হিসাবে ধরতে গেলে এই গল্পটাতে কিছু সমস্যা আছে। কিছু মেদ ছেঁটে দিতে হবে। অলসতার দরুন সেটা করা হয়নি।
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
ভালো লেগেছে| আর দু-ভাবে শেষ করলেও আমার ভালো লাগত ১) ...একটা আর্তনাদ বেরিয়ে এলো | শেষ| ২) ধাক্কা খেয়ে কেউ কারোর দিকে না তাকিয়ে চলে গেল|
মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। শুভেচ্ছা।
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
অনেকদিন পর গল্প পড়া হলো। আপনার লেখা ভালো লাগে সবসময় তবে এবার গল্পের মাঝখান থেকেই বোঝা যাচ্ছিলো আরেকজন খদ্দের কে হতে পারে, সেক্ষেত্রে অন্যভাবে গল্প শেষ হলে বেশি ভালো লাগত।
...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”
আপনার বলার ধরণটা বরাবরের মতো সাবলীল।
সবার মন্তব্য পড়ে মনে হচ্ছে,
এই প্যারাটা না থাকলেই যেনো বেশ হতো। মানে আমরা শুধু ধাক্কা নিতে অভ্যস্ত, যেটা এই বাক্যেই পাওয়া যেতো,
শুভ কামনা।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আপনার কথাগুলো ভেবে দেখি। কেমন আছেন?
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
-আমার তাড়া আছে।
-তোমাকে জিজ্ঞেস করাটাই.. সংলাপ দুটি বাকি লেখার সাথে যাচ্ছে না। লেখায় মশলা আছে অনেক দম একটু যেন কম কম।
নতুন মন্তব্য করুন