কি অসাধারণ নীল আকাশ! এর মধ্যেই একগুচ্ছ শুভ্র মেঘ ভেসে আছে। দেখতে অবিকল তিন্নির মতন। মুখের কোণে হাসি ফুটে উঠল সাজ্জাদের। মেঘতো আসলে বহুরুপী। যে যা ভেবে নেবে ঠিক তাই দেখতে হবে মেঘ। তিন্নি যেমন।
আকাশটা আরো এগিয়ে এল। তার ভেতর দিয়ে এক ঝাঁক পাখি উড়ে গেল। একটানা বর্ষায় নতুন পানি এসেছে। স্বচ্ছ। টলটলে। সবকিছু পরিষ্কার দেখা যায়। আয়নার মতো।
তিন্নি বলেছিল সে নাকি সাজ্জাদকে আয়নার মতো পড়তে পারে। আসলেই পারে। সাজ্জাদকে মুখ ফুটে কিছু বলতে হত না। তিন্নি বুঝে নিত।
আকাশটা আরেকটু এগিয়ে এল। এত পরিষ্কার ঝকঝকে আকাশ কি কোন কালে দেখেছে সে? সাজ্জাদ মনে করতে পারে না। তিন্নিকে ভালবেসে ফেলার পর আর আকাশ দেখার সুযোগ হয়নি তার। দিনরাত সর্বক্ষণ শুধু একজনকে নিয়ে ভেবে কাটিয়ে দিলে আকাশ দেখার ফুরসত থাকে না।
আকাশটা প্রায় কাছে চলে এসেছে। আজ আকাশ ছোঁবে সাজ্জাদ। কেমন হবে সে অনুভুতি? প্রথম যেদিন তিন্নিকে ছুঁয়েছিল তার মতো? আকাশ ছোঁয়া আর তিন্নিকে ছোঁয়া সে কি এক হতে পারে? হতেও পারে। এর আগেতো কখনও আকাশ ছুঁয়ে দেখা হয়নি। আকাশ ছুঁয়ে দেখার তীব্র উত্তেজনায় থরথর করে কাঁপছে সাজ্জাদ।
মানুষ কেন এত বোকা হয়? বিশ্বাস ভেঙ্গে পৃথিবীতে কেউ কি কখনও কাউকে ঠকাতে পেরেছে? বোকা মেয়ে! প্রথম যেদিন তিন্নির সাথে দেখা হয়েছিল সেদিনের কথা মনে পড়ল সাজ্জাদের।
রিক্সার ভাড়া দেবার জন্য ভাংতি ছিলনা তার। সাজ্জাদ পাশে দাঁড়িয়েই সিগারেট ফুঁকছিল। রিক্সা থেকে নেমে এসে সাজ্জাদকে জিজ্ঞাস করেছিল,"আপনার কাছে বিশ টাকা হবে?"
টাকা বের করে দিয়েছিল সাজ্জাদ। "আপনাকে পরে দিয়ে দেব" বলেই হাটা ধরেছিল তিন্নি। ফিরেও তাকায়নি। ঠিকানা-ফোন নম্বর কিছুই নেয়নি।
তারপরের সপ্তাহ ঠিক তার সামনেই রিক্সা থেকে নেমে টাকাটা ফিরিয়ে দিয়ে সে বলেছিল,"আপনি দৈনিক এখানে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফোঁকেন। আমি লক্ষ্য করেছি। তাই সেদিন আপনার নাম ঠিকানা নেইনি। জানতাম আপনাকে এখানেই পাব"।
ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের মোড়ের দোকানে দাঁড়িয়ে দৈনিক সিগারেট ফোঁকে সাজ্জাদ।
হাতের নাগালে চলে এসেছে আকাশ। ঘন্টায় প্রায় একশ মাইল গতিতে আকাশে আঘাত করল সে। আকাশ ভেঙ্গে লক্ষ কোটি টুকরায় ভাগ হয়ে ছিটকে গেল চারদিকে।
মাথা নীচু করে ব্রিজ থেকে ঝাপ দিয়েছিল সাজ্জাদ। বর্ষার টলটলে স্বচ্ছ পানিতে তলিয়ে গেল সে।
মন্তব্য
দারুন লাগল গল্পটা!
ধন্যবাদ!
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
আপনার আর সব গল্পের তুলনায় এই গল্পটি কেমন যেন মলিন মনে হোলো।
---মোখলেস হোসেন
সব গল্পই যদি অমলিন করে লেখতে পারতাম তাহলেতো লেখক হিসাবে ধন্য হয়ে যেতাম। গল্প পড়ার জন্য ধন্যবাদ
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
আমি সমালোচক না, সাধারণ পাঠক। সাধারণ আম পাঠকের সার্টিফিকেট কোন কাজে হয়ত লাগে না। তাও বলছি:
আকাশ কাছে চলে আসা (আকাশের প্রতোবিম্বের দিকে এগিয়ে যাওয়া), তারপর সেটা আঘাত করে ভেঙে ফেলা -সব মিলিয়ে আমার খুব ভালো লেগেছে অণুগল্পটা।
শুভেচ্ছা
গল্পটা সাধারণ পাঠকদের জন্যই লেখা। সমালোচকদের জন্য নয়
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
চলুক।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
নতুন মন্তব্য করুন