বুধবার দিবাগত রাত ১টায় খলিল মিয়াকে ফাঁসিতে ঝুলানো হলো। ফাঁসির দড়িতে কিছুক্ষণ তিড়িংবিড়িং করে নড়াচড়া করার পর খলিল মিয়ার দেহখানা নিথর হয়ে রইল।
নিয়ম অনুযায়ী আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর তার দেহ দড়ি থেকে নামিয়ে এনে মেঝেতে শোয়ানো হয়েছে। মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য ডাক্তার স্টেথোস্কোপ হাতে এগিয়ে এলেন।
ফাঁসির আগে কালো কাপড়ে খলিল মিয়ার মাথা ঢেকে দেয়া হয়েছিল। মাথা থেকে কাপড় সরাতেই দেখা গেল খলিল মিয়া পিটপিট করে তাকাচ্ছে।
সবাইকে হতবাক করে দিয়ে সে চিঁচিঁ করে বলল,"ও ভাই, আমিতো মরি নাই।"
টেনে হিঁচড়ে খলিল মিয়াকে দ্রুত আবার ফাঁসি কাষ্ঠে উঠানো হলো। দ্বিতীয়বারের মত ফাঁসিতে ঝুলানো হলো তাকে।
ফাঁসির দড়িতে আবার কিছুক্ষণ ডাঙ্গায় তোলা মাছের মত তিড়িংবিড়িং করার পর চুপ মেরে গেল খলিল মিয়া। উপস্থিত পুলিশদের একজন চিৎকার করে,"খলিল মিয়া...ও খলিল মিয়া..." বলে ডাকল। খলিল মিয়ার কোন সাড়া পাওয়া গেল না।
তারও বেশ কিছুক্ষণ পর খলিল মিয়াকে নামিয়ে এনে আবার মেঝেতে শোয়ানো হয়েছে। তার মাথা থেকে কাপড় সরানো হলো।
আগের থেকেও দুর্বল গলায় চিঁচিঁ করে খলিল মিয়া বলল,"ঘাড়ডায় দুক্কু পাইছিগো ভাই।"
খলিল মিয়াকে ফাঁসিত ঝুলানো সেদিনের মত ভেস্তে গেল।
এই ঘটনার পর তাকে নিয়ে বেজায় হইচই পড়ে গেল। এই আশ্চর্যজনক ঘটনা পত্রিকায় ফলাও করে ছাপা হতে লাগল। জেলের ভেতর খলিল মিয়া রাতারাতি বিখ্যাত বনে গেছে। সবাই তার দিকে সম্মানের চোখে তাকায়।
মাস তিনেক পর বিশেষ বিবেচনায় তার শাস্তি কমিয়ে এনে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করলেন বিচারক। খলিল মিয়া এখন বিকাল বেলায় জেলের বাগানে সবজীর চাষ করে।
সেদিন কাজ শেষে টিউবয়েলে হাত মুখ ধুচ্ছিল খলিল মিয়া। সব সময়ের মত তাকে জটলা করে ঘিরে রেখেছে অন্যান্য কয়েদীরা।
বহুবার জিজ্ঞাস করা প্রশ্নই আবার করে এক কয়েদী,"ও খলিল ভাই, তোমারে যখন দড়িতে ঝুলাইলো তখন তুমি কি করছিলা?"
হাত ধুতেধুতে গম্ভীর গলায় খলিল বলে,"চোখ মুইঞ্জা আছিলাম।"
"ব্যাথা লাগে নাই?"
"লাগছে। তয় বেশি না।"
"ঘাড় মটকাইলো না ক্যান তোমার?" প্রশ্ন করে আরেক কয়েদী।
পা ধুতেধুতে খলিল বলে,"আমি কেমনে কমু? আমি চোখ মুইঞ্জা মনে মনে খালি কইছি আমি মরমু না। আইজ আমি মরমু না।"
কয়েদীদের মধ্যে মৃদু গুঞ্জন উঠে। একজন বলে,"হেয় মরতে চায় নাই দেইখাই মরে নাই। আল্লার লগে হের কানেকশন আছে।"
"হ...হ...ঠিক..." ভিড়ের মধ্যে আবার গুঞ্জন উঠে।
কানা কদ্দুস কড়ে আঙ্গুল দিয়ে কান চুল্কাতে চুল্কাতে বলে,"তোমার ঘাড়ে দড়ির দাগডা আবার দেখি খলিল মিয়া।"
মুখ ধুতেধুতে খলিল বলে,"এক জিনিস আর কত দেখামু ভাই?"
"আরে দেখাও না।"
"হ...হ...দেখাও...আমরা দেখমু...।" সবাই এক সাথে বলে উঠে।
মুখ থেকে পানি ঝেড়ে গায়ের ফতুয়া দুই হাতে মাথার উপরের দিকে উঠাতে গিয়ে কি করে যেন ভারসাম্য হারিয়ে পা পিছলে পড়ল খলিল মিয়া। কংক্রিটের শক্ত মেঝেতে মাথা ঠুকে গিয়ে শুধু "থ্যাচ" করে একটা ভোতা শব্দ হল।
এবার কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই মারা গেল খলিল মিয়া।
মন্তব্য
মাতার উপ্রে দিয়া গেল ক্যা???
হাসুম না কান্দুম বুঝতাছি না
-বৃদ্ধ কিশোর
দুইটাই করতে পারেন। দুইবার ফাসি দিয়েও যে মরেনি সে সামান্য পিছলে পড়ে মরে গেছে এটাই গল্পের মূল বক্তব্য
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
বনফুল (বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়)-এর অণুগল্প পড়ার মত চলছে।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
আপাতত অণুগল্পই চলবে। ধন্যবাদ
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
আমার নামে কেউ একজন একটা একাউন্ট খুলে আপনার এই গল্পটা ফেসবুকে পোস্ট করেছে। https://www.facebook.com/mokhles.hossain.180/timeline?lst=633878464%3A100033788770750%3A1550524750
এই লিংকে গেলে আইডিটা যদি না পান, তাহলে আমার নাম Mokhles Hossain লিখে সার্চ দিতে পারেন। একটা পোস্ট আছে ওয়ালে। আপনার এই গল্পটা।
এবার যা বলবো তা আপনার ভালো লাগবে। গল্পটা ওই টাইমলাইনে পড়েই আমার মনে হলো এটা সোহেল লেহসের লেখা। আগে পড়িনি, কিন্তু আপনার সিগনেচার ঠিক ঠিক বোঝা যায়।
---মোখলেস হোসেন
হা হা হা...একিবস্থা!! প্রোফাইলে যে ছবি দিছে ওইটা আপনি নাকি? আর লেখার স্টাইল দেখেই যে বুঝে ফেলেছেন এটা আমার লেখা জানতে পেরে নিজেকে "ইস্পিশাল" মনে হচ্ছে
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
হা হা হা। ইস্পিশাল তো বটেই। ওই ছবিটা আমার ছিলো না। প্রোফাইলটা সম্ভবত ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে দিয়েছে।
---মোখলেস হোসেন
নতুন মন্তব্য করুন