চৈত্রের এক পিচ গলা দুপুরে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে দাড়িয়েছিল সুমন্ত। তার চোখের সামনেই কংক্রিটের শাপলা ফুলটা ধীরে ধীরে ঘোরা শুরু করল। ডানে বামে তাকিয়ে সে দেখল এই অদ্ভুত ঘটানা আর কারোই নজরে আসছে না। সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত।
ব্যাপার কি খাতিয়ে দেখার জন্য রাস্তা পেরিয়ে শাপলা ফুলটার কাছে এসে দাড়াল সুমন্ত। ফুলটার ঘুর্ণন গতি তখন আরও বেড়েছে। প্রায় নিঃশব্দে ঘূর্ণায়মান বিশাল বস্তুটার ঘূর্ণনে সৃষ্ট বাতাসের ধাক্কা টের পাচ্ছে সে।
ফুলটা ঘুরতে ঘুরতে মাটি ছেড়ে হাত তিনেক বাতাসে ভেসে উঠল। তার উঠে আসার স্থানে তখন গভীর এক ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। সেখান থেকে ভীষন মায়াময় এক কন্ঠ সুমন্তকে ডাকতে লাগল,"সুমন্ত...ও সুমন্ত...।"
মোহগ্রস্থ সুমন্ত বিড়বিড় করে বলল,"কে...কে ডাকে..."
"আমাকে চিনতে পারছো না সুমন্ত?"
"না...কে?"
"আমি সুমন্ত...আমি......"
কে কিংবা কি বুঝে উঠার আগেই সিমেন্টের বিশাল শাপল ফুলটা ঘুরতে ঘুরতে আকাশে মিলিয়ে গেল।
সুমন্ত কি মনে করে লাফ দিয়ে এক বেবি ট্যাক্সিতে উঠে চিৎকার করে বলল,"শাহাবাগ দোয়েল চত্বরে চলেন৷"
ড্রাইভার বলল,"আড়াইশো লাগব।"
সুমন্ত তাকে তাড়া দিয়ে বলল,"ভাড়া নিয়া চিন্তা করবেন না। আপনি টান দেন।"
বেবিট্যাক্সি বাতাসের বেগে টান লাগায়।
দোয়েল চত্বরে এসে পৌছাতে না পৌছাতেই শো শো আওয়াজ তুলে বিশাল দোয়েল পাখির মূর্তি দুটি উড়ে গেল৷ চারদিকে গাড়ির হট্টগোল। অথচ কারো নজরেই এলো না। সুমন্ত তাকাতেই বেবিট্যাক্সি চালক হতবিহ্বল গলায় বলল,"ভাই, এইডা কি হইল?"
"জানি না ভাই....এসব কি হচ্ছে....শুধু আমি আর আপনিই দেখলাম। আর কেউ দেখল না।"
চালকের হতবিহ্বলতা তখনো কাটেনি। ঘোর লাগা গলায় সে বলল,"কেম্নে সম্ভব ভাই! নিজ চউক্ষে দেখলাম।"
সুমন্ত বলল,"জানিনা। চলেন ঢাকা ইউনিভার্সিটি যাই। ওই খানে অপরাজেয় বাংলা আছে।"
বিনা বাক্যব্যায়ে বেবিট্যাক্সি ছুটে চলল ক্যাম্পাসের দিকে। সেখানেও একই বিস্ময় অপেক্ষা করছিল তাদের জন্য। কংক্রিটের বন্দুক আর গ্রেনেডের ব্যাগ পড়ে আছে রাস্তায়। অথচ মুর্তিগুলো নেই।
মাথা চুল্কে সুমন্ত বলল,"ভাই, সবতো শেষ হয়ে যাচ্ছে। গাজীপুর চৌরাস্তায় যাবেন?"
বেবিট্যাক্সি চালক বলল,"হ যামু।"
সুমন্ত বলল,"ভাড়া নিয়া চিন্তা করবেন না৷"
দৃঢ় গলায় বেবি চালক বলল,"ওইটা নিয়া আপ্নের চিন্তা করন লাগবো না ভাই।"
ভটভট শব্দ তুলে দুই স্ট্রোকের ইঞ্জিন সর্বশক্তিতে ছুটে চলে চৌরাস্তার দিকে৷
মন্তব্য
খুব ভালো একটা গল্প লিখেছেন সোহেল লেহস। অনেক বছর হয়ে গেলো দেশে যাই না। দেশে কি এখনো বেবি ট্যাক্সি আছে?
---মোখলেস হোসেন
মোখলেস হোসেন, বেবি ট্যাক্সি অবশ্যই আছে। শুধু তার নাম বদলে হয়েছে সিএনজি। ওই নামটা ব্যাবহার করা ভুল। কারণ সেগুলো সিএনজি চালিত বেবি ট্যাক্সিই। যাহোক গল্প ভাল লেগেছে শুনে খুশি হলাম। ধন্যবাদ!
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
ইংরেজি তর্জমায় একটা জাপানি গল্প পড়েছিলাম যে এক বিকালে টাইফুনের পরে এক লোক দেখে বিরাট গর্ত। তলা দেখা যায়না। সে চিক্কুর দিল হেই কিডা রে বাইরায় আয়। কোন আওয়াজ নাই। সে তখন একটা নুড়ি ফেলল গভীরতা মাপার জন্য। তবু কোন আওয়াজ নাই, এতই গভীর!
এর পরে সেই গর্তের খবরে মানুষ জড়ো হয়ে এইটা ফেলে ঐটা ফেলে, আর সব টুপ করে হজম হয়ে যায়। শহরের লোক সেইখানে ময়লা ফেলা শুরু করল গাড়ি ভর্তি করে, ছোটখাট ময়লা থেকে পারমাণবিক বর্জ্য সবই ডাঁই করা হল। শহরটা খুবই পরিষ্কার আর চকচকে হয়ে উঠল এইভাবে।
বহু বছর পরে একদিন আরেক লোক সেই শহরে রাস্তায় কাজ করতে করতে শোনে মাথার উপর আকাশ থেকে কে হেঁকে বলল "হেই কিডা রে বাইরায় আয়", আর তার কয়েক সেকেন্ড পরে একটা নুড়ি তার পাশে এসে পড়ল। গল্পটা সেইখানেই শেষ। আমার খুব প্রিয় গল্প।
আপনার গল্প পড়তে পড়তে সেইটার কথা আবার মনে পড়ল। আপনাকে ধন্যবাদ।
..................................................................
#Banshibir.
জাপানিজ গল্পটা কিন্তু মারাত্মক! গল্প পড়া এবং মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ!
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
জাপানী গল্পটা কার লেখা? কী নাম? ঠিকঠাক ঠিকুজী না দিলে আপনাকে সাত দিনের ফাঁসি আর তিন মাসের জেল দেয়া হবে। সোহেলের গল্পটা ধাক্কা দেবার জন্য যথেষ্ট, আর আপনার জাপানী গল্প আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেলো।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
জেলজরিমানার ভয়ে খুঁজে বের করতে হইল গল্পের ঠিকুজি। গল্পের নাম “H-ey, come on ou-t”, লেখক শিনিচি হোশি। এইখানে পুরা গল্প আছে দেখলাম।
গপখান এরম আপনারে ভাসায় নিয়ে যাবে বুঝলে উপরে স্পয়লার না দিয়া গপের লিঙ্কটাই দিয়া দিতাম। দুঃখিত
গল্পটা দুইটা কারণে আমার অতিপ্রিয়। একঃ গল্পের আচানক প্লট। এবং তারচেয়েও বড় কারণ দুইঃ অসাধারণ এন্ডিং। এই গল্পটা অনেকভাবেই শেষ হইতে পারত, "তারপর একদিন আরেকটা গর্ত হাজির হল আর সবকিছু পড়ে যেতে থাকল" টাইপ এন্ডিং হলেও গল্পটা ভালই হত। কিন্তু ঠিক "হেই বাইরায় আয়" আর নুড়ির পতন দিয়ে শেষ করা একটা অসাধারন সমাপ্তি হইছে। আমি প্রথম যখন গল্পটা পড়ি শেষ করে মনে মনে কইছিলাম হোলি শিট!! পাঠককে এইরকম কানে ধইরা ঝাঁকুনি দেওয়া গল্প বড় ভাল লাগে।
..................................................................
#Banshibir.
যে পত্রিকা/বইয়ের কপি দিলেন সেই পত্রিকা/বইয়ের নাম জানতে মন চায়। পাদটীকার ধারণাটা ভালো লেগেছে। আমি আসলে কোন গল্প/উপন্যাস/চলচ্চিত্রের স্পয়লারে 'ক্ষতিগ্রস্থ' বোধ করি না। যদি করতাম তাহলে 'তোতা কাহিনী' এক হাজার বার পড়তাম না বা 'হীরক রাজার দেশে' একশ' বার দেখতাম না। যে ধাক্কা মারার ক্ষমতা ধরে সে এক লক্ষতম বারেও ধাক্কা মারতে পারে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
"যে ধাক্কা মারার ক্ষমতা ধরে সে এক লক্ষতম বারেও ধাক্কা মারতে পারে।" - হক কথা। স্পয়লার একটি ভ্রান্ত ধারমা মাত্র।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
পত্রিকা/বইয়ের খবর কৈতার্লামনা। কয়েক বছর আগে অন্তর্জালেই কোথাও গল্পটা পড়ি, পড়ার পরে আমার যে কথা আটকায় গেছিল আর মুখ হাঁ হয়ে গেছিল এর পরের কথা ভেবে, সেইটা এখনো বিলক্ষণ মনে আছে! কালকে আপনার জেলজরিমানার ভয়ে আবার ঢুঁড়ে বের করলাম গল্পটা...
..................................................................
#Banshibir.
এই হৈল বইয়ের খবর - The Best Japanese Science Fiction Stories
by John L. Apostolou (Editor), Martin H. Greenberg (Editor), Kōbō Abe, Ryo Hanmura, 星新一, Takashi Ishikawa, Morio Kita, Sakyo Komatsu , Tensei Kono, Taku Mayumura, Yasutaka Tsutsui, Tetsu Yano.
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
বইয়ের খবরের জন্য
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
বাঃ!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
ধন্যবাদ
১। আপনার সাম্প্রতিক গল্পগুলোর মধ্যে এটা আমার কাছে 'বেস্ট' লেগেছে।
২। গল্প গল্পই, তবু কিছু তথ্য বিভ্রাট একটু চোখে লাগে। এই প্রকার গল্পে তথ্যগুলোকে নিখুঁত হতে হয় যাতে পাঠক তার অকাট্যতায় কিছু বোঝার আগে গল্পের জাদুতে ঢুকে পড়েন। তথ্য বিভ্রাটগুলো নিয়ে বলি, এগুলো গ্রহন করা বা না করা আপনার ইচ্ছা।
যে আমলে ঢাকায় দুই স্ট্রোকের অটোরিক্শা চলতো সে আমলে তাকে 'বেবিট্যাক্সি' বলা হতো। দুই স্ট্রোক নিষিদ্ধ হবার পর এর নাম হয়েছে 'সিএনজি'। বেবিট্যাক্সির আমল দূরে থাক, সিএনজির আমলেও শাপলা চত্ত্বর থেকে দোয়েল চত্ত্বরের ভাড়া আড়াইশো টাকা নয়। এখানে সংখ্যাবাচক শব্দ উল্লেখ না করে 'বেবিট্যাক্সিওয়ালা অস্বাভাবিক বেশি ভাড়া হাঁকলো' ধরনের কিছু বলা যেতো। দোয়েল চত্ত্বর শাহ্বাগে নয়। ওখানে যেতে কেউ 'শাহ্বাগ' বলেও না।
৩। মতিঝিলের শাপলা চত্ত্বরের শাপলা ফুল উড়ে যেতে দেখলে সুমন্ত প্রথমে ভেবে দেখতে পারতো কাছেই বিমান অফিসের সামনের 'বক চত্ত্বর'-এর বকগুলো শূন্যে ডানা মেললো কিনা। ঐ আমলে শাহ্বাগে 'মিশুক' ছিল, শিশু একাডেমির সামনে 'দুরন্ত' ছিল। মিশুক লাফিয়ে লাফিয়ে সুন্দরবন রওনা হতে পারতো, আর দুরন্ত লাঠি দিয়ে সাইকেলের চাকা চালাতে চালাতে ঢাকা ছাড়তে পারতো।।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
১) গল্প ভাল লেগেছে জেনে খুশি হলাম। ধন্যবাদ!
২) আপনার উল্লেখিত তথ্য বিভ্রাটগুলো গল্প লেখার সময়েই কিছুটা ভেবেছি। জানতাম যে ভুল লিখছি। দীর্ঘ দিন দেশের বাইরে থাকা্র কারণে এসব ব্যাপারে আইডিয়া দুর্বল আমার। আপনার সাজেশন মনে রাখলাম। ঠিক করে নেব।
৩) বক চত্বরের বক ডানা মেলে দিয়েছে এটা আমি প্রথমে লিখেছিলাম। পরে বাদ দিয়ে দিয়েছি গল্প বড় হয়ে যেতে পারে চিন্তা করে। আর "মিশুক" এবং "দুরন্ত" এই দুইটার কথা মনেই ছিলনা। যাহোক আইডিয়া দেবার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
তুখোড় গল্প ভাই!
অনেক ধন্যবাদ!
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
গল্পের ভাষা প্রাঞ্জল। তবে গল্পটির রহস্যময়তা আমাকে ধন্ধের মাঝে ফেলে দিয়েছে। গল্পটি কি রাজনৈতিক?
--স্নেহাশিস রায়।
কিছুটা রাজনৈতিকতো অবশ্যই। কিছু মানুষ বাংলাদেশের ভাস্কর্যগুলো ধবংস করে ফেলতে চায়। সেটাকে মাথায় রেখেই লেখা। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
চমৎকার
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
নতুন মন্তব্য করুন