যত দূর দৃষ্টি যায় শুধু ধূ ধূ বিরান ভূমি। তাতে যত্রতত্র দ্বীপের মত ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রোদে পুড়ে খাক হওয়া দুর্বাঘাস। এই এলাকায় কতকাল ধরে বৃষ্টি হয় না কে জানে। হাল্কা বাতাসেই ধূলি ঝড় উঠে।
এর ভেতরেই পাতাবিহীন এক নাম না জানা রুগ্ন গাছ দাঁড়িয়ে আছে। গাছের কংকালসার ছায়ায় মুখ থুবড়ে পড়ে ছিল তার চাইতেও জীর্ণ এক সিংহ। তার পেছনের এক পা ক্ষত-বিক্ষত। অতীতের কোন এক যুদ্ধে সেখান থেকে এক খাবলা মাংস কামড়ে নিয়ে গেছে তারই কোন এক সতীর্থ। ক্ষত জুড়ে কুরুক্ষেত্র বাঁধিয়েছে অসভ্য মাছির দল। তাদেরকে তাড়ানোর মত শক্তি কিংবা উৎসাহ কোনটিই ছিল না হাড্ডিসার প্রবীণ পশুরাজের। এক ছিলিম শ্বাসের জন্যই তার চলছে প্রাণান্তকর সংগ্রাম। কতকাল তার পেটে দানা পড়েনি তাইবা কে জানে।
গনগনে সূর্যকে পিছু রেখে আকাশে চক্কর দিচ্ছিল এক শকুন। তার দৃষ্টি নিবদ্ধ নীচে পড়ে থাকা প্রায়মৃত সিংহের দিকে। অধীর আগ্রহে সময় গুনছিল সে। তার পেটেও দানা পড়েনি বহুকাল।
এদিকে নাম না জানা বৃক্ষের মগডালে বসে বেজায় বিরক্তি নিয়ে কান চুল্কাচ্ছিলেন মৃত্যুদূত। খবর পেয়ে প্রাণ হরণ করতে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু মাটি কামড়ে এখনো পড়ে আছে সিংহটি। তার প্রাণ বের করে নেবার সংকেত উপর থেকে এখনো আসেনি।
আরও ঘন্টা তিনেক সিংহটিকে মাটিতে অনড় পড়ে থাকতে দেখে অধৈর্য হয়ে আকাশ থেকে খোনা গলায় শকুনটি মৃত্যু দূতকে শুধায়,"আর কতক্ষণ হুজুর?"
মৃত্যুদূত উদাস হয়ে দূর দিগন্তের দিকে তাকিয়ে থাকেন। উত্তর নেন না। আরও ঘন্টা তিনেক পেরিয়ে যায়।
গত ছয় ঘন্টায় শ্বাস নেবার জন্য হলেও নড়াচড়া করতে দেখা যায়নি সিংহটিকে। ক্ষুধা তৃষ্ণায় ব্যাকুল হয়ে আকাশ থেকে নেমে আসে শকুনটি। সিংহরাজের ওমন করুণভাবে পড়ে থাকাই বলে দিচ্ছে এই মুহুর্তে তার বেঁচে থাকা কিংবা মরে যাওয়ায় কোন পার্থক্য নেই।
অতি সন্তর্পণে এগিয়ে গিয়ে সিংহের পশ্চাত দিকের মাংসে ঠোট দিয়ে ঘাই মারে শকুনটি। সিংহ স্থবির পড়ে থাকে। সাহস পেয়ে আরো এগিয়ে যায় শকুন। খুট খুট করে ঠোকর কাটে আরও দু'বার। সিংহরাজ অনড়। ন্যাড়া বৃক্ষের মগডাল থেকে আড় চোখে তাকান মৃত্যুদূত।
নব উৎসাহে সিংহের পেটের দিকে এগিয়ে যায় শকুনটি। পেটে সুস্বাদু নরম মাংস। ঠোট বিঁধানো সহজ। মাথা উঁচিয়ে এক টুকরো মাংস খাবলে তুলে আনার জন্য প্রস্তুত হতেই বিদ্যুতগতিতে সিংহটির থাবা নেমে এল তার উপর। মুহুর্তেই মট করে ঘাড় মটকে গেল শকুনটির। চেটেপুটে খেয়ে উঠে দাড়াল পশুরাজ। অনেকদিন পর পেটে দানা পড়ায় বল ফিরে পেয়েছে। কাঁপতে কাঁপতে পূব দিকে রওয়ানা হল সে।
শকুনের আত্মা বগলদাবা করে আকাশের দিকে উড়াল দিলেন মৃত্যুদূত। উড়ে যেতে যেতে দূরে মিলিয়ে যাওয়া সিংহটির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তিনি বললেন,"বিধাতার মতিগতি বোঝা কার সাধ্যি!"
মন্তব্য
ভাল লেগেছে। সহজ সরল নিটোল।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
অনেক ধন্যবাদ!
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
গল্প ভালো লেগেছে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
গল্প ভাল লেগে জেনে খুশি হলাম। ধন্যবাদ!
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
চমৎকার বর্ণনা ভঙ্গি। খুউব ভালো লেগেছে পড়ে। লেখার(বেশির ভাগ) শেষে, একখান টুইষ্টের ঝোঁক থাকে আপনার। এটা কী আপনি পরিকল্পিতভাবেই দিয়ে থাকেন, নাকি স্বতঃস্ফূর্তভাবেই এসে যায়, ভ্রাত? গল্প লেখার অপচেষ্টায় রত হইয়াছি(বলেন, ইয়াখোদাঈশ্বরভগবানপ্রভুমাইলর্ড বাঁচাও!) ইদানিং...জানার কৌতূহলে প্রশ্ন করলেম। বর্ণনা, গল্পের আবহ, ইত্যাদি নিয়ন্ত্রনে রেখে এভাবে গল্পের সমাপ্তি টানা শেখা গেলে ভর্তি হতেম। আপনার পেটে সেরকম চিন্তা থাকলে আওয়াজ দেবেন। গল্পের চেয়ে মন্তব্য বড় হইয়া গেলু দেখি!
গল্প ভাল লেগেছে জেনে আমারও ভালো লাগলো। ধন্যবাদ! গল্পের শেষের ট্যুইস্টটা বেশিরভাগ সময়ই পূর্ব পরিকল্পিত থাকে। আমার কাছে অণুগল্পে ট্যুইস্ট থাকাটা বাঞ্চনীয়। সাধারণত গল্পের প্লট নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার সময় কখন কোথায় ট্যুইস্ট দেয়া যায় সেটা নিয়ে ভাবি। অনেক সময় ভাবতে ভাবতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ট্যুইস্ট চলে আসে। অণুগল্প কিভাবে লিখতে হবে কিংবা অণুগল্পের বৈশিষ্ট কি হওয়া উচিত সেটা নিয়ে আমার একটা আলোচনামূলক লেখা আছে। পরবর্তীতে লেখাটা সচলায়তনে দেব। দেখতে পারেন। মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
কটঠিন প্রোফাইল পিকচার কিন্তু।
..................................................................
#Banshibir.
হে হে হে, ডাইন হাতে পোজ দিয়া বাম হাত দিয়া সেলফি তুলছি। পারবেননি এমন সেলফি তুলতে??
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
গল্পটা দারুন লাগলো ভাই।
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
অনেক ধন্যবাদ ব্রাদার!
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
নতুন মন্তব্য করুন