বেদী

Sohel Lehos এর ছবি
লিখেছেন Sohel Lehos [অতিথি] (তারিখ: বিষ্যুদ, ১২/০৯/২০১৯ - ১:২২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আগ্নেয়গিরির মতো ধীরালয়ে মুখ থেকে এক রাশ ধোয়া উদগিরণ করে গম্ভীর গলায় আব্দুর রাজ্জাক বললেন,"আরেকটা কথা রাসেল... ।"

টাকার ব্যাগ হাতে নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছিল রাসেল। ঘুরে দাঁড়িয়ে সে বলল,"জ্বি, স্যার।"

ডেস্কের উপর কাঁচের গ্লাসে গলে যাওয়া বরফে মিলেমিশে হুইস্কির রঙ হয়েছে হাল্কা বাদামি। তাতে হাতে ধরা চুরুট খানা ডুবিয়ে দিলেন আব্দুর রাজ্জাক। ছ্যাঁত করে শব্দ হলো।

"আমি একটা খেলা খেলছি।" বললেন আব্দুর রাজ্জাক।

"কি খেলা স্যার?"

"আমি নয়নকেও ছয় লাখ টাকা দিয়েছি।"

এক মুহুর্ত চুপ থেকে রাসেল বললো,"ও কি এখন আমাকে খুঁজছে?"

"হ্যাঁ৷"

"বেয়াদবি মাফ করবেন...কাজটা কেন করলেন স্যার?"

ডেস্ক থেকে একটা বল পেন তুলে নিয়ে অযাথাই কিছুক্ষণ আংগুলে ঘোরালেন আব্দুর রাজ্জাক। তারপর বললেন,"আব্দুল্লাহ উপন্যাসটা পড়েছো?"

"না, স্যার। আমি বই পড়ি না।"

"অসুবিধা নেই। যাহোক, এক ঘরে কখনো দুই পীর থাকতে নেই। তোমরা দুই জনেই তোমাদের কাজে সেরা। আমার শত্রু অনেক। আমি চাই না তোমাকে কিংবা নয়নকে কেউ আমার বিরুদ্ধে ব্যাবহার করুক। মাঠে তোমাদের দুইজনের মধ্যে শুধু একজন থাকলে আমার চিন্তা খানিকটা কমে। তোমাদের দুইজনের মধ্যে যে টিকে যাবে তাকেই আমি পাার্মানেন্ট করে নেবো। বুঝলে কিছু?"

"জ্বি,স্যার।"

"এবার যেতে পার।"

গাজী বিল্ডিং থেকে বেড়িয়ে আসার সময় দ্রুত চারদিকে চোখ বোলালো রাসেল। তার মাথার দাম নির্ধারিত হয়ে গেছে। ছয় লাখ। সুতরাং আরো সাবধানে থাকতে হবে।

সিএনজিতে উঠে মোসাদ্দেককে ফোন করল সে। ওপাশ থেকে মোসাদ্দেকের ফ্যাসফ্যাসে গলা শোনা গেল।

"হ্যালো।"

"মোসাদ্দেক..."

এক মুহুর্ত কোন সাড়া পাওয়া গেল না। রাসেল ধমকে উঠে বলল,"মোসাদ্দেক!"

ফ্যাসফ্যাসে গলায় মোসাদ্দেক এবার বলল,"রাসেল ভাই...সরি ভাই... অনেক রাইত কইরা ঘুমাইছি। মাত্র উঠছি। বলেন ভাই।"

"আমার ইনফরমেশন লাগবে।"

"জ্বি ভাই, বলেন।"

"নয়নের একটা মেয়ে আছে না?"

আবার মুহুর্ত খানেক নীরবতা।

"কোন নয়ন? জিগাতলার নয়ন?"

"হ্যাঁ।"

" হ, ভাই। এই রকম কিছু একটা শুনছি।"

"ওর মেয়ের হদীস বের করো। আজ রাতের মধ্যেই।"

"ভাই, সময়টা বেসম্ভব অল্প হইয়া গেল। আর তার যে সত্যিসত্যি একটা মাইয়া আছে সেইটাও শিওর না।"

"মোসাদ্দেক..."

"জ্বি, ভাই?"

"আজ রাতের মধ্যেই হদীস চাই।"

ফোন কেটে দিল রাসেল। ফার্মগেটে যাচ্ছে সে। সেখানে ফরহাদের ডেরা। জরুরী মিটিংএ বসতে হবে।

রাসেল এবং নয়ন দুজনই পেশাদার খুনী। খুনের ব্যাপারে সিদ্ধহস্ত এবং নির্মম। দুজনের আলাদা বাহিনী আছে।

ফরহাদের ডেরায় তাকে পাওয়া গেল না। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ। যে টং দোকানে চা খায় ফরহাদ সেখানে জিজ্ঞাস করেও লাভ হল না। তারা কিছু বলতে পারল না।

এক কাপ চায়ের জন্য ভেতরটা আকুলি বিকুলি করছিল রাসেলের। কিন্তু সময় খারাপ। বিশেষ করে ফরহাদের ডেরার আশেপাশে থাকাটাই এখন নিরাপদ না। নয়ন প্রথমে তাকে এখানেই খুঁজবে।কোমরে হাত দিয়ে লুকানো অস্ত্রটার পরশ নিল সে।

ইচ্ছা করলে কয়েকজনকে ফোন দিয়ে ফরহাদের খবর বের করা যায়। কিন্তু সেটাও নিরাপদ নয় এখন। একমাত্র ফরহাদকেই নিজের জীবন দিয়ে বিশ্বাস করে রাসেল। ফার্মগেট থেকে মহাখালী চলে এল সে। এমন সময় অচেনা নম্বর থেকে ফোন এল।

"হ্যালো।"

ওপাশে থেকে চিঁচিঁ করে কেউ বলল,"ভাইইইইইই..."

"ফরহাদ?"

ধস্তাধস্তির মতো শব্দ পাওয়া গেল। রাসেল চিৎকার করে বলল,"ফরহাদ?"

এবার যার গলা ভেসে এলো সে ফরহাদ নয়। ঠান্ডা গলায় সে জিজ্ঞাস করল,"রাসেল নাকি?"

রাসেল বলল,"আপনি কে?"

"রাসেল, আমি নয়ন। তোমার ফরহাদের অবস্থাতো তেমন ভালো না। সাইড থেইকা শুধু একটা বিচি কাইটা বের করছি। তাতেই বাচ্চা পোলাপানের মতো কাইন্দা কাইট্টা অস্থির।"

দাঁতে দাঁত পিষে রাসেল বলল,"ওকে ছেড়ে দাও নয়ন। আমার সাথে তোমার বোঝাপড়া। আসো দেখা করি।"

নয়ন বললো,"অবশ্যই দেখা করবো। কই দেখা করতে চাও?"

"লোকেশন পরে ফোন করে জানাচ্ছি।"

"তাড়াতাড়ি জানাইও। বিকাল পাঁচটার মধ্যে ফরহাইদ্দার আরেকটা ডিম কাটুম। আর্জেন্ট ব্যাপার বুঝতেই পারতেছ।"

মহাখালীতে মোসাদ্দেককে তার মেসেই পেল রাসেল। খালি গায়ে হাটু পর্যন্ত লুংগি তুলে চা খাচ্ছিল সে। ঘরে ঢুকে এক লাথিতে তাকে মেঝেতে ফেলে দিল রাসেল। তার হাত থেকে চায়ের কাপ ছিটকে দেয়ালে লেগে টুকরো টুকরো হয়ে গেল।

কুকুরের মতো কেউকেউ করে মোসাদ্দেক বলল,"ভাই...ভাইগো...আমি কি করছি...।"

চুলের মুঠি ধরে হ্যাচকা টানে তাকে মেঝেতে বসিয়ে দিয়ে রাসেল বলল,"তোর রাত পার হয়ে গেছে। নয়নের মেয়ের খোঁজ দে। এখুনি। এই মুহুর্তে।"
--------------------------------------------------------------------------------------------

রাসেল গল্প শোনাচ্ছিল,"এক দেশে ছিল এক রাজা আর এক রানী..."

তাকে থামিয়ে দিয়ে বিন্নি বললো,"শুধু একটা রানী? তিনটা রানী না?"

কলাবাগানে পাওয়া গেছে নয়নের মেয়েকে। এক ভাড়া বাসায় কাজের বুয়া দেখা শোনা করে তাকে। কাজের বুয়ার হাত মুখ বেঁধে রান্না ঘরে আটকে রেখেছে রাসেল

রাসেল বললো,"না, শুধু একটাই রানী।"

"তারপর...।"

এমন সময় দরজায় কলিং বেল বেজে উঠল। এক হাতে বিন্নিকে জড়িয়ে ধরে কোমর থেকে পিস্তল বের করল রাসেল।

সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। ঘরের বাতি ইচ্ছে করেই নিভিয়ে রেখেছে রাসেল। নয়নকে ফোন দিয়েছে। এখানেই তাদের দেখা হবার কথা।

দরজা খোলার শব্দ হল। বাইরে থেকে চিৎকার করে নয়ন বলল,"উল্টা পালটা কিছু কইরো না রাসেল। কিছু করলে এখান থেইকা জীবিত বাইর হইতে পারবা না।"

রাসেল বলল,"উল্টা পালটা তুমিও কিছু করো না নয়ন। বিন্নি আমার সাথেই আছে।"

বাবার গলা শুনে বিন্নি চিৎকার করে বলল,"আব্বু, রাসেল আংকেল আমাকে অনেকগুলো গল্প শুনিয়েছে।"

ঘরে ঢুকতে ঢুকতে নয়ন বলল,"তাই মা?"

রাসেলের সাথে আরো চারজন ঢুকলো ঘরে। সবার হাত পেছনে রাখা। বোঝাই যাচ্ছে তাদের হাতে অস্ত্র। তাদের মধ্যে মোসাদ্দেককেও দেখা গেল।

নয়ন বলল,"রাসেল, বুঝতেই পারতেছো এই মুহুর্তে আমরা দুইজনই হইলাম বলীর পাঠা। আবার আমরা দুইজনেই পুরোহিত। কিন্তু পূজার সময় হইলেই একমাত্র ভাগ্য নির্ধারণ করব কে পুরোহিত আর কে পাঠা। আসো সমঝোতা করি।"

রাসেল বললো,"কি সমঝোতা?"

নয়ন বলল,"আমি মোদাব্বের আলি সাবের সাথে কথা কইছি।"

"কোন মোদাব্বের? লাঠি লীগের সেক্রেটারি?"

"হ। হেয় অফার করছে বারো লাখ। রাজ্জাক সাবের লাশ ফেলাইয়া দিতে হইবো। কিন্তু জানোইতো রাজ্জাক সাবের সিক্রিউটি...কামটা একমাত্র আমরা দুইজনেই করতে পারুম।"

রাসেল বললো,"তোমাকে বিশ্বাস করবো কিভাবে?"

"বিশ্বাস না কইরা উপায় নাই রাসেল সাব। এছাড়া তোমার কোলে আমার মাইয়া বইসা আছে। বুঝতেই পারতেছ বিষয়ডা সিরিয়াস...।"

নয়নের কথা শেষ হবার আগেই টাশটাশ করে একরাশ গুলির শব্দ হলো।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------

মেঝেতে রক্তের নদীর উপর তিনটা লাশ পড়ে আছে- রাসেল, নয়ন আর বিন্নি। কোমরে পিস্তল গুজে রেখে কাকে যেন ফোন করল মোসাদ্দেক,"হ্যালো স্যার...। কাজ শেষ। বারো লাখ রেডি রাখেন। আমি আসতেছি...।"


মন্তব্য

Aaynamoti এর ছবি

আপনার গল্পের(অধিকাংশ) শেষ মোচড়গুলো সম্পর্কে পাঠক এখন যথেষ্ট সচেতন।
যে কারণে গল্পটা পড়ে যতটা নড়েচড়ে বসে বাহ্ বলার কথা, ততটা যেন বলা যাচ্ছে না।
অন্যভাবে কিছু গল্প আসুক না ভাই।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।