ফয়সালা

Sohel Lehos এর ছবি
লিখেছেন Sohel Lehos [অতিথি] (তারিখ: রবি, ০৯/০১/২০২২ - ১:৩০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

তার নাম রফিক। পাশের যে জন তারও নাম রফিক। একই বাসায় তাদের বাস। তারা ঘরবন্ধু।

তবে তাদের ভেতর বেজায় মালিন্য। তাদের চলে নিত্য নৈমত্তিক বিরতিহীন বচসা। হাতাহাতি। তবুও কোন এক কারণে তারা ভাগাভাগি করে থাকে। বাড়ি বদলায় না। এই একটা জায়গায় তাদের অকথিত বোঝাপড়া।

রোজকারের মতো সেদিনও চলছে তাদের নিরন্তর বাহাস।

এক রফিকঃ শালা কুত্তা কোথাকার! মাত্র তেরো বছরের মেয়ে! তেরো!! কিভাবে পারলি??
অন্য রফিকঃ চুপ শালা! চুপ! একদম চুপ! তাতে তোর কি রে! আমি তোর খাই না পরি?
এক রফিকঃ তুই মানুষ না। তুই জানোয়ার।
অন্য রফিকঃ হ্যাঁ, আমি জানোয়ার।
এক রফিকঃ তুই ইতরেরও নীচের ইতর। মরে যাস না কেন?

অন্য রফিক চুপ থাকে।

এক রফিকঃ আহারে! মাছুম বাচ্চা! তোকে আমি পুলিশে দেব...

কথা শেষ হবার আগেই অন্য রফিক ঝাঁপিয়ে পড়ে এক রফিকের উপর। চলে ঘুষোঘুষি। খামচিতে চামড়া ছিলে আসে এক রফিকের। ঘুষি খেয়ে ঠোঁটের কোণে রক্ত বেড়িয়ে আসে অন্য রফিকের। অধা ঘন্টা ধস্তাধস্তির পর তারা শান্ত হয়।

হাঁপাতে হাঁপাতে অন্য রফিক ভাবে-শালাকে শেষ করে দিতে হবে। আজ রাতেই।

চামড়া ছিলে যাওয়া গালে হাত বুলাতে বুলাতে এক রফিক ভাবে- সুযোগ পেলেই থানায় যেতে হবে। কিন্তু হারামজাদাটা বাসা থেকে বের হয় না। তাকেও বের হতে দেয় না।

সেদিন রাত। ছুরি হাতে এক রফিকের ঘরের দিকে এগিয়ে যায় অন্য রফিক। ঘরের আলো নেভানো। পর্দার ফাঁক দিয়ে গড়িয়ে আসা ম্লান আলোয় এক রফিকের মুখ খানা দেখা যায়। বিছানায় গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।

ঝোপের ভেতর ওত পেতে থাকা কোন বাঘের মতো এক রফিকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে অন্য রফিক।

ঠিক তখন দরজায় জোরে কড়া নাড়ার শব্দ হয়। এক দল লোক বাইরে থেকে চিৎকার করে বলে- "পুলিশ! দরজা খোলেন। পুলিশ!"

ক্ষতবিক্ষত একটা লাশ বিছানায় পড়ে থাকে। মৃত্যুর পর এক রফিক আর অন্য রফিক মিলেমিশে শুধু রফিক হয়ে যায়।


মন্তব্য

Sumayer Khan এর ছবি

অনেক দিন পর আপনার লেখা পড়লাম।নিয়মিত লিখেন না কেন আর? গল্পে কই যেন একটু মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের ঘৃণার সাথে বসবাস গল্পের মিল পেলাম, যদিও প্রেক্ষাপট ভিন্ন।
শুভ কামনা রইল।

Sohel Lehos এর ছবি

নানারকম ব্যাক্তিগত ঝামেলার কারণে আজকাল আর লেখালেখি করা হয় না তেমন। দেখি আস্তে আস্তে আবার শুরু করব। জাফর ইকবালের গল্পটা পড়া হয়নি। এই লেখাটা এক মুহুর্তের ভাবনা থেকে লেখা। অনেক দিন কিছু লেখা হয়না। তাই লেখা আর কি। যাহোক ভাল থাকবেন। শুভেচ্ছা।

সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল হাসি

সোহেল ইমাম এর ছবি

চলুক

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

Sohel Lehos এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেকদিন পর সচলায়তনে এসে দেখি আপনার লেখা, সোহেল লেহস। ভালো লাগলো পড়তে। তবে কি জানেন, আমার দেখা সবচে কৃপণ লেখকদের একজন আপনি। কী হয় গল্পগুলো আরেক্টু বড় হলে? আবার এই নিয়ে বেশি বেশি বলতেও ভয় পাই। কে জানে, হয়তো পরবর্তী গল্পটার কোমরে বেল্ট চেপে ধরে বলে বসবেন, 'দিব্যি ফিট করেছে, হু হু'। ভাইরে, গল্প বলে কি এরা মানুষ না? এদের কি এক আধবার বুক ভরে শ্বাস নিতে নেই!

-- মোখলেস হোসেন

Sohel Lehos এর ছবি

কেমন আছেন? নানারকম ঝামেলার কারণে আগের মতো আর লেখা হয় না। তবে চেষ্টা করছি আরো লেখার। আসলে কৃপণ না- আমার গল্পগুলো অণুগল্প। অণুগল্প কেমন হবে তার একটা ছক কাটা আছে আমার মাথার ভেতর। সেই ছকে লেখি বলেই লেখাগুলো ছোট হয়। মেদভুড়ি শুধু মানুষের জন্য নয় অণুগল্পের জন্যও খুব খারাপ খাইছে গল্প পড়েন বলে অনেক খুশি হই। কমেন্ট করেন বলে আরও বেশি খুশি হই দেঁতো হাসি ধন্যবাদ!

সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।