এতোদিন ধরে ইতিহাস বলতে আমরা কেবল মানব সভ্যতার ইতিহাসকে বুঝতাম। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় সবকিছুর মত ইতিহাস সম্বন্ধনীয় এই ধারণাতেও পরিবর্তন এসেছে। ডারউইন যখন প্রাকৃতিক নির্বাচনের ধারণা দিলেন তখন পৃথিবীর জীবকূলের ইতিহাস রচনার চেষ্টা শুরু করলেন অনেকে। এই চেষ্টায় অবশ্য বিজ্ঞানীরাই অংশ নিয়েছিলেন। আধুনিক বিজ্ঞানের যাত্রা শুরুর পর থেকেই ইতিহাস এক ধাপ এক ধাপ করে এগোচ্ছে। আর এই ইতিহাস রচনা করছেন বিজ্ঞানীরা। ইতিহাস একেবারে চরম পর্যায়ে পৌঁছায় মহা বিস্ফোরণের ধারণা প্রদানের মাধ্যমে। কারণ এই ধারণার মাধ্যমে মহাবিশ্বের ইতিহাস রচনায় ব্রতী হই আমরা। এ ধরণের ইতিহাসের একটা নতুন নাম দেয়া যেতে পারে। বিজ্ঞানের মাধ্যমে ইতিহাস রচনা করা হচ্ছে বলে একে বৈজ্ঞানিক ইতিহাস বলা যেতে পারে। বিজ্ঞানের সাথে দর্শনের মিশেলে যেমন বৈজ্ঞানিক দর্শনের সৃষ্টি হয়, এটাও অনেকটা সেরকম। কিন্তু আবার ভেবে দেখলাম জীবকূলের ইতিহাস বা এ ধরণের ইতিহাসকে বৈজ্ঞানিক ইতিহাস বললেও মহাবিশ্বের ইতিহাসকে বোধহয় মহাজাগতিক ইতিহাস বলা অধিক যুক্তিসঙ্গত হবে। মহাজাগতিক ইতিহাস রচনার এই প্রচেষ্টায় মানুষের সবচেয়ে বড় অর্জন হল একটা চমৎকার সংকেতের সন্ধান লাভ। সেই সংকেতের নাম "মহাজাগতিক অণুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ" ইংরেজিতে যাকে বলা হয় "কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন" বা সিএমবিআর।
মানবজাতির ইতিহাস মানুষকেই লিখতে হয়েছে। আর মহাজাগতিক ইতিহাস নিয়ে ভাবতে গিয়ে এই মাত্র একটা নতুন চিন্তা মাথায় আসলো। যার ইতিহাস তাকেই রচনা করতে হয়। এই সূত্র মেনে মহাবিশ্ব নিজেই তার ইতিহাস রচনা করে গেছে। মানুষের সাধ্য নেই সে ইতিহাস রচনা করবার। সে কেবল রচিত ইতিহাসের ভাষা বোঝার চেষ্টা করতে পারে। এই প্রচেষ্টায় অনেকদূর এগিয়ে গেছি আমরা। পটভূমি বিকিরণকে সেই মহাজাগতিক ইতিহাসের ভাষার বর্ণমালা হিসেবে আখ্যায়িত করা যেতে পারে। প্রাচীন মিশরীয় লিপি লেখা হয়েছিল হায়ারোগ্লিফিক বর্ণে। বর্ণ পেয়ে যাবার পর লেখার মর্মার্থ উদ্ধার করতে আমাদের খুব বেশি সময় লাগেনি। পটভূমি বিকিরণ যেহেতু পাওয়া গেছে, মহাবিশ্বের ইতিহাস জানতেও তাই বেশি দেরী হবে না। অচিরেই হয়তো বিজ্ঞানীরা সুনিশ্চিত তথ্যে ভরা বিশাল ভলিউমের ইতিহাস গ্রন্থ লিখে ফেলবেন। আমাদের জানা দরকার, এই পটভূমি বিকিরণটা কি এবং কি কারণে একে ইতিহাস লিখনের চাবিকাঠি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
অধিকাংশ বিজ্ঞানীই এ ব্যাপারে একমত যে, একটি মহা বিস্ফোরণের মাধ্যমে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছে। সুতরাং তখন থেকেই ইতিহাসের শুরু। তবে প্রাক্ইতিহাস তো থেকেই যায়। তাই মহা বিস্ফোরণের আগের যুগটাকে (যুগ বলা কি ঠিক হচ্ছে?) বলা হয় অগাস্টাইনীয় যুগ। এই নামটা অবশ্য জর্জ গামফের প্রস্তাব করা। খ্রিস্টান যাজক সেন্ট অগাস্টাইন মহা বিস্ফোরণের আগের যুগটাকে কেবল ঈশ্বরের জন্য নির্দিষ্ট বলে উল্লেখ করেছিলেন। সে কথা চিন্তা করেই গামফ এমন নামের প্রস্তাব করেন। অবশ্য এ নিয়ে কোন বৈজ্ঞানিক গবেষণার পরিবেশ এখনও সৃষ্টি হয়নি। তাই ইতিহাসের শুরুটা মহা বিস্ফোরণের পর থেকেই। বিস্ফোরণের সময় কি হয়েছিল তাও আমরা ভাবতে পারি না, কারণ স্থান-কালেরই সৃষ্টি হয়েছে মহাবিস্ফোরণের ১০ই-৪৩ (১০ টু দ্য পাওয়ার -৪৩) সেকেন্ড পর। এরপর থেকে মহাবিশ্বের ইতিহাসকে বিভিন্ন যুগে ভাগ করা হয়েছে। সভ্যতার ইতিহাসে যেমন, গ্রিক যুগ, রোমান যুগ, মুসলিম যুগ, মধ্যযুগ তেমনই মহাবিশ্বের ইতিহাসে রয়েছে বিভিন্ন ইপক। মহা বিস্ফোরণের পরের ১০ই-৪৩ সেকেন্ড পর্যন্ত যুগটা হল প্লাংক ইপক। এর পর থেকে গ্র্যান্ড ইউনিফিকেশন ইপক, হেড্রন ইপক, লেপ্টন ইপক, ফোটন ইপক ইত্যাদি বিভিন্ন যুগকে সংজ্ঞায়িত করেছেন বিজ্ঞানীরা। এর মধ্যে ফোটন ইপকটা নিয়ে বলবো এখানে। কারণ এই যুগেই পটভূমি বিকিরণের সৃষ্টি হয়।
ভৌত বিশ্বতত্ত্বে ফোটন ইপক বলতে এমন একটা যুগকে বোঝানো হয় যখন মহাবিশ্বে ফোটন বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছিল, অর্থাৎ মহাবিশ্বের মোট শক্তির অধিকাংশই সরবরাহ করেছিল ফোটন। মহা বিস্ফোরণের মাত্র তিন সেকেন্ড পরই এই যুগের শুরু। প্রথম কয়েক মিনিটে নিউক্লীয় সংশ্লেষণ নামে একটা বিশেষ প্রক্রিয়ায় পরমাণুর কেন্দ্রিন (নিউক্লিয়াস) গঠিত হয়। এরপর দীর্ঘকাল মহাবিশ্বের উপাদান ছিল কেবল পরমাণু কেন্দ্রিন, ইলেকট্রন ও ফোটন। এ সময় মহাবিশ্বের ঘনত্ব ও তাপমাত্রা ছিল অনেক বেশি। এই ফোটন যুগের আরেকটা বড় বৈশিষ্ট্য ছিল অনচ্ছতা। ইংরেজিতে একে অপাসিটি বলে যার একটি প্রতিশব্দ হতে পারে অসচ্ছ। তাপমাত্রা অনেক বেশি হওয়ায় নিউক্লিয়াস ও ইলেকট্রন একত্রিত হতে পারছিল না আর ফোটনগুলো মুক্ত ইলেকট্রন থেকে অবিরাম প্রতিফলিত হচ্ছিলো। এই অবিরাম বিচ্ছুরণই ছিল অনচ্ছতার কারণ। পরাক্রমশালী রোমান যুগের যেমন পতন ঘটেছিলো, তেমনই অবসান ঘটে এই ফোটন যুগের। কিভাবে অবসানটা ঘটেছিল সেটিই আমাদের আলোচনার মূল বিষয়।
উত্তপ্ত-ঘন মহাবিশ্বে বিভিন্ন ধরণের কণার পাশাপাশি ছিল প্রতিকণা। ইলেকট্রন এক ধরণের কণা, এমনকি পরমাণু কেন্দ্রিনও বিভিন্ন কণা দিয়ে গঠিত। প্রতিটি কণার বিপরীতে যে প্রতিকণা ছিল সেগুলো বর্তমানে খুঁজে পাওয়া যায় না। ধারণা করা হয় তাপ ও শক্তি অনেক বেশী হলে কণা-প্রতিকণা জোড়ায় জোড়ায় তৈরী হয়। আদি মহাবিশ্বে যে পরিমাণ তাপ ও শক্তি ছিল তার কারণেই কণা-প্রতিকণা জোড় অবিরাম সৃষ্টি হচ্ছিলো। অবশ্য সৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথে আবার সেগুলোর পূর্ণবিলয় ঘটছিলো যাকে জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় এনিহিলেশন বলা হয়। এক কথায়, একেবারে প্রাথমিক মহাবিশ্বে কণা-প্রতিকণা জোড়া অবিরাম সৃষ্টি ও পূর্ণবিলয়প্রাপ্ত হচ্ছিল। পূর্ণবিলয়ের কারণে বিশুদ্ধ শক্তির সৃষ্টি হয়। বিশুদ্ধ শক্তি মানেই ফোটন যে ফোটন নিয়ে আমরা এতোক্ষণ আলোচনা করছিলাম। প্রথম যুগে সৃষ্টি আর পূর্ণবিলয়ের চরম লীলা যখন চলছিলো তখন প্রতিটি পূর্ণবিলয়ের কারণেই ফোটন সৃষ্টি হচ্ছিলো। কিন্তু এই অবস্থা চিরস্থায়ী ছিল না। মহাবিশ্ব ক্রমান্বয়ে প্রসারিত ও শীতল হতে থাকে। এর ফলে অনেকগুলো কণা-প্রতিকণা জোড়ই শেষবারের মত ধ্বংস হয়, কিন্তু তা থেকে নতুন জোড় সৃষ্টি হচ্ছিলো না। তখনই ফোটন যুগের বিদায় ঘন্টা বাজতে শুরু করে।
মহা বিস্ফোরণের ৩৮০,০০০ বছর পরে তাপমাত্রা ও ঘনত্ব এতোটা কমে যায় যে, তার মাধ্যমে নতুন কণা-প্রতিকণা জোড় সৃষ্টি হওয়া সম্ভব ছিল না। শক্তি বলতে তো ফোটনকেই বোঝায়। প্রতিটি বিলয়ের মাধ্যমে যেমন ফোটন সৃষ্টি হয় তেমনই পুনরায় কণা-প্রতিকণা জোড় সৃষ্টির সময় ফোটন শোষিত হয়। কোন এক অজ্ঞাত কারণে সেই বিশ্বে প্রতিকণার তুলনায় কণার পরিমাণ এক বিলিয়ন ভাগের এক ভাগ বেশি ছিল। অর্থাৎ প্রতিকণার সংখ্যা এক বিলিয়ন হলে কণার সংখ্যা ছিল এক বিলিয়ন এক টি। ধরি, এক বিলিয়ন প্রতিকণা এক বিলিয়ন কণার সাথে মিলে বিলয়প্রাপ্ত হল এবং প্রতিটি বিলয়ের জন্য একটি করে মোট এক বিলিয়ন ফোটন উৎপন্ন হল। তাহলে বাকি থাকল, একটি কণা এবং এক বিলিয়ন ফোটন। ধরে নেয়ার দরকার নেই। তখন এ ধরণের একটি ঘটনাই ঘটেছিল। ফলে প্রতিটি কণার পাশাপাশি ফোটনের পরিমাণ ছিল এক বিলিয়ন। সব প্রতিকণা শেষ হয়ে যাওয়ায় পূর্ণবিলয়ের আর কোন অবকাশ ছিল না এবং সেই অবস্থাই হয়ে গেল চিরস্থায়ী। মহাবিশ্ব এখনও সেই অবস্থায় আছে। এভাবেই ফোটন যুগের অবসান ঘটেছিল।
এর পর প্রায় সব ইলেকট্রন কেন্দ্রিনের সাথে মিলে পরমাণু তৈরী করে। আগেই বলেছিলাম মুক্ত ইলেকট্রন থেকে ফোটনের প্রতিফলনের কারণেই অনচ্ছতার সৃষ্টি হয়। কিন্তু মুক্ত ইলেকট্রন না থাকায় অনচ্ছতাও থাকলো না। মহাবিশ্ব হয়ে গেল একেবারে স্বচ্ছ। এই অবাধ স্বচ্ছতা পেয়ে ফোটনগুলো পুরো মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়লো। প্রথম দিকে ফোটনের তাপমাত্রা ছিল প্রায় ৩০০০ ডিগ্রি কেলভিন। সেই ফোটনগুলো এখনও টিকে আছে। সব দিক থেকে এক রকম থাকলেও মহাবিশ্বের প্রসারণের কারণে তাদের তাপমাত্রা কমে গেছে। বর্তমানে এই তাপমাত্রার পরিমাণ প্রায় ২.৭ ডিগ্রি কেলভিন। তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় এর তরঙ্গদৈর্ঘ্যও পরিবর্তিত হয়েছে। বর্তমানে তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রায় ১.৯ মিলিমিটার যা অণুতরঙ্গ তথা মাইক্রোওয়েভ হিসেবে চিহ্নিত হয়। বুঝতেই পারছেন এই ফোটনগুলোর বর্তমান নাম কি? হাঁ, মহাজাগতিক অণুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ। পটভূমি বলা হচ্ছে কারণ সব দিকে সমানভাবে এগুলো বিস্তৃত এবং সকল দিক থেকে একই হারে এই তরঙ্গ পাওয়া যায়। এই হল সারকথা।
এতোক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন কেন মহাবিশ্বের ইতিহাসের ভাষার বর্ণমালা হয়ে উঠেছে পটভূমি বিকিরণ। কারণটা খুবই সোজা, এরা সেই সময় থেকে কোনভাবেই বিবর্তিত হয়নি। তাই এগুলো পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে মহাবিশ্বের সেই আদি উত্তপ্ত-ঘন অবস্থার ধারণা লাভ সম্ভব। সেই সাথে এদের তাপমাত্রার পরিবর্তন লক্ষ্য করে মহাবিশ্বের প্রসারণের বিভিন্ন পর্যায় সম্বন্ধেও ধারণা লাভ করা সম্ভব। ইতোমধ্যে পটভূমি বিকিরণ আমাদের তিনটি বিষয়ে একেবারে পরিষ্কার করে দিয়েছে: প্রথমত, মহা বিস্ফোরণের মাধ্যমে মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছিল, দ্বিতীয়ত, আদি মহাবিশ্ব ছিল অতি উত্তপ্ত-ঘন ও তাতে তাপীয় সাম্যাবস্থা বিরাজ করছিল এবং তৃতীয়ত কণা-প্রতিকণার পূর্ণবিলয়ের শেষে এক পর্যায়ে পরমাণুর সৃষ্টি হয়েছিল। ১৯৬৫ সালে আরনো অ্যালান পেনজিয়াস ও রবার্ট উড্রো উইলসন এই পটভূমি বিকিরণ আবিষ্কার করেন। এর আগে জর্জ গামফ এ বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। সেই হিসেবে বলা যায় ১৯৬৫ সাল থেকে মানুষ মহাজাগতিক ইতিহাসের স্বাদ পেতে শুরু করেছে। এডওয়ার্ড গিবনের "ডিক্লাইন অ্যান্ড ফল অফ দ্য রোমান এম্পায়ার" আর বেশিদিন বোধহয় ইতিহাসের সেরা গ্রন্থের মর্যাদায় থাকতে পারলো না। অচিরেই মহাজাগতিক ইতিহাসের আদ্যোপান্ত জেনে ফেলবো আমরা। সেই দিনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।
মন্তব্য
সচল হওয়ার পর এটা প্রথম লেখা। প্রথমেই সচল করার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। প্রথম পোস্টটা এমন একটা বিষয়ে দিয়েছি যা গতকাল পর্যন্তও পরিষ্কার বুঝতাম না। এখন পর্যন্ত আমি যা বুঝেছি সবাইকে ততটা বোঝাতে পারলে ধন্য হব।
ও, নামটাও "মুহাম্মদ" থেকে "শিক্ষানবিস" করে ফেলেছি। যা নিয়ে লিখছি তার উপর শিক্ষাগত কোন অধিকার নেই আমার। তাই বিদ্যুতের মিস্ত্রী হলেও বিজ্ঞানের শিক্ষানবিস হিসেবে পরিচয় দিতে বেশি আগ্রহী।
---------------------------------
মুহাম্মদ
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
আপনার লেখাটা পড়ে আগ্রহ বেড়ে গেলো.... অপেক্ষায় থাকলাম আমিও।
রাকিব হাসনাত সুমন
সুন্দর করে উপস্থাপন করার জন্য ধন্যবাদ।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
স্বাগতম মুহাম্মদ (শিক্ষানবিস)। আপনার নামে কোন আসে যায় না, লেখা দেখেই বুঝা যায় কার লেখা।..
আমাদের প্রযুক্তি-তে কিছুদিন আগে আপনার একটি লেখা পড়েছি...সচলায়তনে আজ প্রথম পড়লাম...ভালো লাগলো...আশা করি নিয়মিত আপনার লেখা পাবো।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
খুঁজে যাই শেকড়ের সন্ধান…
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ব্যাক্তিগত ব্লগ | আমার ছবিঘর
ধন্যবাদ।
আমার নিয়মিত লেখার ইচ্ছা আছে।
---------------------------------
মুহাম্মদ
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
অভিনন্দন মুহাম্মদ (শিক্ষানবিস)।
কি মাঝি? ডরাইলা?
যাক,আপনি মুহাম্মদ বিড়ালের আত্মীয় না হলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
ইউক্রেনে জন্ম নেওয়া বরেন্য বিজ্ঞানী গেওর্গি ইভানভিতস গামফ এর অন্ত্যনামের বানান আপনি ঠিকই লিখেছেন, কিন্তু আমি খুব ছোটবেলাতে বাবার কাছ থেকে তাঁর "One, two, three,..., infinity" বইটা উপহার পেয়ে পড়ে এত মুগ্ধ হয়েছিলাম যে তাঁর নামের আপাত উচ্চারন গ্যামো এখনো ব্যবহার করি।
লন্ডনে একবার গ্যামোর এক জনপ্রিয় বক্তৃতা শুনবার সৌভাগ্য হয়েছিল। তার নাম ছিল " 4 degree kelvin" , কারণ তখনকার উপাত্ত অনুসারে মহাবিশ্বের ফোটনের তাপমাত্রা তাই মনে হচ্ছিল। COBE উপগ্রহ যন্ত্রপাতি দিয়ে এখন এই তাপমাত্রা নির্ভুল্ভাবে ( ২ লক্ষ ভাগের একভাগ ভুল থাকতে পারে) 2.725K বোঝা গিয়েছে।
আজ পর্যন্ত যত কৃষ্ণবস্তুর বর্ণালী বিশ্লেষণ করা হয়েছে , তার মধ্যে এটি তাত্বিক ফলাফলের সবচেয়ে কাছাকাছি। 1.9 mm তরংগ দৈর্ঘ হল সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ফোটনের জন্য প্রযোজ্য, ভীনের সুত্রে যা ব্যবহার হয়। আসলে সব দৈর্ঘের তরংগই কম বেশি আছে।
পেঞ্জিয়াস , উইলসন CMB আবিষ্কারের জন্য ১৯৭৮ সালে নোবেল পান। COBE থেকে কৃষ্ণবস্তুর বর্ণালীতে হুবহু মিল দিতে পারায় জন ম্যাথার ও জর্জ স্মুট ২০০৬ সালে এই পুরস্কার পান। সত্যি বিস্ময়কার কাজ।
আপনার মন্তব্য পড়ে খুব ভালো লাগলো। এই ৪ঠা মার্চ গামফের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী ছিল। আসলে তাকে নিয়েই সচল হিসেবে প্রথম ব্লগটা পোস্ট করার ইচ্ছা ছিলো। কিন্তু তার জীবন ও কর্ম আরেকবার ঝালিয়ে নিতে গিয়ে দেখলাম, সিএমবিআর সম্বন্ধে আমার ধারণা এখনও পরিষ্কার নয়। তাই অবশেষে এটি নিয়ে লেখা। গামফকে নিয়েও লেখার ইচ্ছা আছে।
উচ্চারণের ব্যাপারে আমি অবশ্য পুরো ঠিক থাকতে পারিনি। ইংরেজি আর রুশ উচ্চারণ মিলিয়ে করেছি জর্জ গামফ। আসলে যুক্তরাষ্ট্রেই অধিকাংশ গবেষণা কাজ করেছেন বলে তার ইংরেজি উচ্চারণটাই বেশী ব্যবহৃত হয়। ইংরেজি উইকিপিডিয়ার আইপিএ থেকে দেখলাম আমেরিকাতেও তার উচ্চারণ গ্যামফ করা হয়। সত্য কি-না নিশ্চিত নই। তাই মার্কিন উচ্চারণই রাখলাম, কেবল সেখানে বহুল ব্যবহৃত অ্যা বাদ দিয়ে আ করে দিলাম। বাংলা উইকিপিডিয়াতে তার নামের বানান কিভাবে লেখা হবে তা নিয়ে এখন পর্যন্ত স্থির কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। [url=http://bn.wikipedia.org/wiki/জর্জ_গ্যামফ]সেখানের নিবন্ধটা[/url] দেখতে পারেন।
আপনার মন্তব্য থেকে অনেকগুলো বিষয় জানলাম। গামফের এই বইটা পড়া হয়নি।
---------------------------------
মুহাম্মদ
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
(বিপ্লব)
---------------------------------
এসো খেলি নতুন এক খেলা
দু'দলের হেরে যাবার প্রতিযোগিতা...
মাঝেমাঝে যখন এরকম লেখা পড়ি
তখন আমার প্রায়ই একটা প্রশ্ন মাথায় আসে
বিজ্ঞানকে অত কাছে রেখে আমরা কেন স্কুলে ধর্মীয় ইতিহাস অথবা সৃষ্টিতত্ত্ব পড়ি শুরুতেই?
বিষয়টা যদি এমন হতো যে- সব শিশুরাই সব কিছুই বিজ্ঞান ভিত্তিক শিখবে
তার পর বড়ো হয়ে বাছাই করবে ধর্মশিক্ষা
আর তখন যদি কেউ বিজ্ঞান বাদ দিয়ে ধর্মের তত্ত্বগুলো গ্রহণ করতে চায় তাহলে সেটা হবে তার নিজস্ব ব্যাপার।
কিন্তু শুরু থেকেই ধর্মীয় বিশ্বাসগুলো মাথায় ঢুকে যাবার ফলে পরবর্তীতে অনেকের পক্ষেই আর বৈজ্ঞনিক ব্যাখ্যাগুলো গ্রহণ করার মানসিকতা থাকে না।
এই লেখাটা যিনি লিখেছেন তাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
_ ক্যামেলিয়া আলম
সমাজ ব্যবস্থাই শিক্ষা পদ্ধতি প্রণয়ন করে। তাই সমাজ যেমন শিক্ষাও তেমনই হয়ে থাকে। ভবিষ্যতে যদি কখনও সম্পূর্ণ বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজের উৎপত্তি হয় তাহলে শিক্ষাও তেমন হয়ে যাবে।
---------------------------------
মুহাম্মদ
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
বরাবরের মতোই ভালো
---------------------------------
চোখের পাতায় হাত রেখে ওরা আমাকে স্বপ্ন দেখার যন্ত্রণা দেয়।
আমি ক্যামেলিয়া আলমের সাথে ১০০% ভাগ একমত।
এক সময় এক কমিটির সভাপতি হিসাবে সু্যোগ পেয়েছিলাম স্কুল/কলেজ সিলেবাস সম্পর্কে সরকারকে প্রস্তাব দেবার। বলেছিলাম - ধর্ম শিক্ষা প্রাতিষ্ঠানিক এবং বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত না। তখনকার সরকার শোনে নি। পরে মনিরুজ্জামান মিয়াঁ, শামসের আলী গং-এর শিক্ষা কমিশন ধর্ম আরো বাড়িয়ে বিজ্ঞানকে মার্জিনালাইজড করে নতুন একমুখী (মাদ্রাসামুখী?) শিক্ষার সপক্ষে রিপোর্ট দিলেন। সেটা প্রবল প্রতিবাদের মুখে কার্যকর হয়নি, তবে বাতিলও হয় নি এখনো।
বজলুর রহমান সাহেব,
আপনি জ্যান্ত আছেন দেখে ভাল লাগল। আপনাকে আমি সদ্য প্রয়াত সংবাদ সম্পাদকের সাথে গুলিয়ে ফেলেছিলাম
হায় হায় এইসব কি কথা...
=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=
বুকের মধ্যে আস্ত একটা নদী নিয়ে ঘুরি
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
অনেকদিন সচলে আসা হয় নি। ভাল লেখা পড়লে সত্যই ভাল লাগে। ভাল লাগল শিক্ষানবিসের (মুহম্মদের) প্রাঞ্জল লেখাটি পড়ে। ক্যামেলিয়া আর বজলুর রহমানের মন্তব্য-এর সাথে একমত পোষন করি।
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
আপনার মন্তব্যের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ভালো লেগেছে জেনে প্রীত হলাম।
---------------------------------
মুহাম্মদ
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
নতুন মন্তব্য করুন