বস্তুত, অমায়িত গহ্বরেষ্ঠ কক্ষে আলোকোজ্জ্বল পর্দায় দর্শকসমক্ষে আসিবার পূর্বেই চলচ্ছবিটি ব্যবসায়সফল। উহার নির্মাণ এবং প্রচারণা তথা এতদসংক্রান্ত সকল ব্যয়ভারের অংক এতাবৎ নির্মিত ভারতীয় এবং সম্ভবত উপমহাদেশীয় সকল চলচ্চিত্রের দুরন্ত কল্পনা ছাপাইয়া গিয়াছে এবং তাহা সার্ধশত হইতে পাদোন দ্বিশতক ক্রোড়ের মাঝামাঝি হইতে পারে বলিয়া দৃশ্য ও শ্রাব্যমাধ্যমসমূহ শ্রবণেন্দ্রিয় ঝালাপালা করিয়া ফেলিয়াছে। সম্ভবত উক্ত গণমাধ্যমসমূহের কর্পোরেট কর্তাগণ শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষেও গলদেশের বিলাইতি ফাঁসটি কিঞ্চিৎ বায়ুবান্ধব করিয়া থাকিবেন। আর, আমাদিগের মতো আম আদমিগণ অত্যধিক আনন্দে ও শ্রদ্ধায় আপ্লুত ও রোমাঞ্চকলেবর হইয়া উক্ত আসন্ন চলচ্ছবিসংক্রান্ত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সংবাদও পরম ভক্তিভরে পাঠ করিয়া ইহকালের সংসারবেদনা দূর ও পরকালের যথাবিহিত স্থান নিশ্চিত করিয়াছি। এতাদৃশ মহাবৈশ্বিক ব্যয়ভারও সম্পূর্ণই উঠিয়া আসিয়াছে কারণ, পশ্চাদপটের একটি ব্যক্তি। চলচ্ছবিটির দূরদর্শনপ্রচারস্বত্ব, সঙ্গীতসত্ব, প্রদর্শনসত্ব, আন্ডর্জালে ইউটিউবে এবং অন্যত্র বিজ্ঞাপনসত্ব ইত্যাদি বিক্রয় করিয়া প্রযোজক মহোদয়ার বিলক্ষণ সুখে নিদ্রা যাইবার কথা, কিন্তু, পশ্চাদপটের সেই মহান গ্লিটারেটি, তাঁহার 'অমর' স্বামীর আহারনিদ্রা এন্ড্রোমিডার কাছাকাছি পলায়নের উপক্রম করিয়াছিলো।
কী করেন নাই তিনি?
ছবি সফল করিবার নিমিত্তে স্বদেশেবিদেশে রেকর্ডসংখ্যক প্রিন্ট প্রেরণ, এমনকি রাজ কাপুরের পর রাশিয়ায় দ্বিতীয়বারের মতো ভারতীয় চলচ্ছবি মুক্তিপ্রদান; ক্ষুদ্র পর্দায় একাধিক বাস্তবতাভিত্তিক ['রিয়েলিটি শো'] ও অন্য অনুষ্ঠানে উপস্থিতি; ছবিটির উপর ভিত্তি করিয়া করদূরভাষ- ও ভিডিও গেম অবমুক্তকরণ; ইউটিউবে নিজস্ব চ্যানেলে ছবিটির প্রাথমিক দর্শন হইতে সঙ্গীতের তথা 'ছম্মক ছল্লো' নৃত্যের রেশমাত্র উপস্থাপন; নয়টি আলাদা পণ্যের বিজ্ঞাপনে নায়কের ফিল্মি চরিত্রে উপস্থাপন এবং সেসব পণ্যের নিমিত্তে তাঁহার আলাদা আলাদা করিয়া শুটিংকরণ; স্বদেশেবিদেশে নানা ঝটিকাসফর; খলনায়কের 'অবতার'টি শেষসময় অবধি গণমাধ্যমের কাছ হইতে গোপনকরণ; এমনকি সর্বশেষ ভারতের নয়ডায় বুদ্ধ রেসিং সার্কিটের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় কিছু এফ-ওয়ান রেসিং যানের সম্মুখে ছবির নায়কের ঝলমলায়িত নীলাম্বর 'কুল লুক'ঋদ্ধ স্থিরচিত্র স্থাপন-সবই তাঁহাকে ভারতের ব্যবসায় জগতে অসূয়াবিদ্ধ 'মার্কেটিং গুরু' উপাধি প্রাপ্তিতে সহায়তা করিয়াছে।
তাহার পরেও যখন তাঁহাকে এসব লইয়া প্রশ্ন করা হইয়াছে, তিনি অর্বুদ মুদ্রার স্মিতহাস্যে শুধু বলিয়াছেন, "ইহা কোন ব্যাপারই নহে। নিজের ছবির প্রচারণা সবাই করে।"
ইহা তো ছবির বহিরঙ্গের ব্যাপার। কালিদাস হইলে বলিতেন, "এহ বাহ্য!"
ছবিটির ভেতরেও আকর্ষণীয় বিস্ফোরণের মালমশলা নেহাৎ স্বল্পমাত্রায় স্থাপন করা হয় নাই।
বিরাট বাজেটের ছবি বিধায় চক্ষুতে ধন্ধ লাগাইবার মতো কতো কিছুই যে আনা হইয়াছে সারা বিশ্ব সন্ধান করিয়া তাহার গণনা করে কে! ব্যবসাসফল পরিচালক [দুর্জনেরা কহে, নিমিত্তমাত্র এবং নায়কের হাতের পুত্তলিকাবৎ]; অগণিত ডিজিটাল কারিগরিপূর্ণ দৃশ্য [হলিউডের সহিত তুল্যমূল্য বলিয়া প্রচারিত, যদিও বাস্তবে "মা কী হইয়াছেন" তাহা ভাবিবার]; নায়কের সর্বশেষ বিরাট ব্যবসায়সফল চলচ্ছবির খলনায়ক এবং সঙ্গীত পরিচালক নিয়োগ; ভারতের সাম্প্রতিকতম তিনটি সর্বাধিক আয়কারী চলচ্ছবির নায়িকা সংযোজন; ইয়াংকিরাষ্ট্রের উদীয়মান জনপ্রিয় গায়কের গায়নক্ষমতা ব্যবহার; বলিউডি বিগ বি-র ব্যারিটোন ব্যবহার; দক্ষিণী দেবপ্রতিম অভিনেতার সর্বশেষ অভিনীত যন্ত্রমানবীয় চরিত্রটির প্রয়োগ; দেশেবিদেশে নানান স্থানে শুটিং-কী নাই উহাতে। শুনিয়াছিলাম, লেডি গাগা নামক তুমুল জনচিত্তাকর্ষী গায়িকার গীত একটি গানও নাকি সংযোজন করিবার আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত হয় নাই! কে বলে ঈশ্বর নাই!!
বলাবাহুল্য, চলচ্ছবিটির নাম 'রা-ওয়ান'। ভারতের বহুলপ্রচারিত অপচরিত্র রাবণের সাথে ইহার নামের সাদৃশ্য কাকতালীয় নহে। খলচরিত্রের নামে চলচ্চিত্রের নাম রাখাটিও ভারতে নতুন নহে, 'গজনী' দ্রষ্টব্য। এবং, নায়কের নাম 'জি-ওয়ান', তথা হিন্দি উচ্চারণে 'জীবন' হওয়াটিও আকর্ষণ বাড়ায় বৈকি।
ত্রিমাত্রিক চলচ্ছবি দর্শনের সৌভাগ্য কখনোই হয় নাই। দ্বিবর্ণিল উপনেত্রযোগে পাঁচ মিনিটের একটি ক্ষুদ্র অংশ দেখিয়াছিলাম মাত্র। অভিজ্ঞতা সুখকর। মনে হইতেছিল পর্দাস্থিত প্রাগৈতিহাসিক ডাইনোসর পর্দা হইতে বাহির হইয়া দ্রুতবেগে সমীপবর্তী হইতেছে। তাই, উক্ত চলচ্ছিবিটি ত্রিমাত্রিক পর্দায় দর্শনের আশায় আনন্দিত হইলাম।
ছবিটি সম্পর্কে ইহার আগেই পড়িয়াছি এবং দৃশ্যমাধ্যমের কল্যাণে দর্শকের মিশ্র প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে অবগত হইয়াছি। কিন্তু, সমগ্র চলচ্ছবি দর্শন করিয়া প্রতিক্রিয়া হইলো অবিমিশ্র। তাহাই বলি।
নায়ক দক্ষিণী একটি চরিত্র হিসাবে উপস্থাপিত যে পুত্রের নিকট শ্রদ্ধা আকর্ষণের মানসে কত কিছুই যে করে, তাহার সীমা নাই। পেশায় সে ভিডিও গেম ডেভেলপার। কিন্তু, তাহার রসবোধ অনন্য এবং সেই সঙ্গে মানানসই তাহার বীরত্ব। পুত্রের সমক্ষে স্ত্রীর সাথে সে 'কন্ডোম' সংক্রান্ত দক্ষিণভারতীয় শব্দের পানিংময় রসিকতা করে ['কঞ্জম কঞ্জম']। পুত্রের কাছে বীর সাজিবার মানসে সে নতুন একটি ভিডিও গেম তৈরি করে যেখানে খলনায়কই সর্বশক্তিমান। কিন্তু, খলনায়কটি পর্দা ছাড়িয়া বাস্তবে রূপপরিগ্রহ করে [যেখানে গঞ্জিকাসেবনের প্রাঙ্ভাগ এবং অন্ত্যভাগ ছবি সমাপ্তির সহিতই]। বাকি অংশটি সম্পর্কে অনেকেই বলিয়াছেন এবং নিজের চোখেই দেখিলাম কিভাবে কাহিনিহীন ভিত্তিহীন বোধহীন চিত্রনাট্য জনতাকে কতকিছুর মোড়কে গলাধঃকরণ করাইবার প্রয়াস চলিয়াছে।
চলচ্ছবির পদে পদে অযৌক্তিকতা মূর্তিমান রূপ পরিগ্রহ করিয়াছে।
গেমিং ল্যাবে শাহরুখের সঙ্গীর মৃতদেহ একাধিক দিন ধরিয়া পড়িয়া থাকে, কেহই জানে না। শাহরুখের প্রতিরূপ প্রচুর অলংকারাদিশোভিত এক পাংকের দেহ হইতে অলংকারাদি ছিনতাই করিয়া নিজের দেহসজ্জা করিয়া সম্ভবত সমপ্রেমী কাস্টমস অফিসারের আন্তরিক তাপমাত্রা ও উত্তেজনা বৃদ্ধি করে অকারণেই অথচ আসল শাহরুখের পাসপোর্টের আলোকচিত্রটির সহিত তাহার সাদৃশ্য সুস্পষ্ট। রজনীকান্ত যন্ত্রমানব সাজিয়া চকচকে সুবেশ ধারণ করিয়া ছত্রপতি শিবাজি আন্তর্জাতিক হাওয়াই আড্ডার বহিরঙ্গণে চৌম্বকীয় বাহন লইয়া হাজির হন এবং তাঁহার তথ্যভাণ্ডারে জি-ওয়নের তথ্য সঞ্চিত থাকে। কারিনা ও তৎপুত্রকে রক্ষার মানসে জি-ওয়ন উর্ফ জীবন বীরবজ্রাঙ্গবলীবৎ তাহাদের গৃহশীর্ষে অবস্থান করিয়া মর্কটাবলোকনে রত থাকে, কিন্তু কারিনার রূপধারণ করিয়া রা-ওয়ন নামক দুষ্ট চরিত্রটি তাহার পাশে দাঁড়াইয়া নৃত্যরত এবং তাহার গললগ্ন হইলেও সে তাহা অনুধাবন করিতে পারে না। অহো, হাঁপাইয়া উঠিলাম! কত আর বিবৃত করি!
পাশ্চাত্যের হলিউড নামক ম্লেচ্ছরাজ্যের টার্মিনেটর, স্পাইডার ম্যান, আয়রন ম্যান, সুপারম্যান ইত্যাদি কত ছবি হইতে যে কত দৃশ্য সুচারুরূপে আনীত হইয়াছে, তাহার সংখ্যা নিরূপণ করে কে? বস্তুত, কোন ছবি হইতে কী গৃহীত হইয়াছে, ইহা নির্ধারণ করাই একখানা অভিনব গেস গেম হইতে পারে।
ছবিতে হাস্যরস সৃষ্টির আপ্রাণ চেষ্টা করা হইয়াছে। পিতৃরূপী দক্ষিণ ভারতীয় শাহরুখ (যিনি নুডলসের সহিত অসংস্কৃতভাবে দধি মিশ্রিত করিয়া ভক্ষণ করেন), মাতৃরূপী উত্তর ভারতীয় কারিনা (যিনি কটুকাটব্য লইয়া নারীবাদী দৃষ্টিতে গবেষণা করিয়া থাকেন), ভারতে কারিনার প্রতিবেশী সতীশ কৌশিক (যিনি 'পাওয়ার ইয়োগা' ব্যক্তিজীবনে প্রয়োগ করিবার ব্যর্থ চেষ্টা চালান), এমনকি শিশু শিল্পী আরমান বর্মা (যে মায়ের সাথে শেষদিকে 'কন্ডম' রসিকতা কর্তন করে)-সবাই কষায় রসিকতা প্রদানের আপ্রাণ প্রয়াস করিয়াছে।
শোভা দে ক্ষেপিয়া গিয়া তাঁহার পক্ষে যতদূর সম্ভব কর্কশ বাক্যে খানসাহেবকে সম্বোধন করিয়া বলিয়াছেন তিনি কি আশা করেন যে তিনি যাহাই উপস্থাপন করিবেন, জনতা তাহাই ভক্ষণ করিবে? তা, সবাই না করিলেও অনেকে যে করিয়াছে, তাহার প্রমাণ প্রথম সপ্তাহান্তে সমগ্র বিশ্বে উক্ত ছবির ১৭০ কোটি ভারতীয় মুদ্রার উপার্জন।
সমগ্র ছবিতে এক শাহরুখ খানের কিছু অভিনয়দক্ষতা ছাড়া বস্তুত কিছু নাই এবং তাহাও যথেষ্ট সীমিত পর্যায়ের। কারিনা কাপুর বস্তুত শো-পিস ছাড়া কিছুই নহেন এবং নিতান্তই স্তিমিত।
শাহরুখ খান নিজের পুত্রসন্তানের কাছে বীর সাজিতে চাহিয়াছেন এবং তাহার মাশুল দিলো দেশবিদেশের আপামর জনতা, আমি তো কোন ছার! কিন্তু, অনেকের কাছেই তিনি বিশাল একটি মূল্যবান সং হিসাবেই প্রতিভাত হইলেন। বিশেষত, তাঁহার গড্ডলপ্রবাহময় অসংবেদনশীল দক্ষিণ ভারতীয় চরিত্রের উপস্থাপন উক্ত স্থানের কাহাকে কাহাকে আহতই করিয়াছে। কিন্তু, কাহার সাধ্য রোধে নব্যযুবা শাহরুখের গতি। সাধে কবি আফসোস করিয়াছেন, ডনকো পাকড়না সির্ফ মুশকিলহি নহিঁ, নামুমকিন হ্যায়।
ত্রিমাত্রিক চলচ্ছবি প্রদর্শনীর পর বিশেষ উপনেত্রটি ফিরাইয়া দিয়া আফসোস হইলো। রাখিতে দিলে বিনিময়মূল্যের কিছুটা উসুল হইতো।
ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানীতে 'রা-ওয়ান' দেখে যে ইয়ে হলো, তার সবটা না হলেও কিছুটা উপশম হলো এর পূর্বতন রাজধানীতে আরেক নতুন বাংলা ছবি দেখে। নগরীর দক্ষিণপ্রান্তের বিশাল বিপণীকেন্দ্রে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত প্রেক্ষাগৃহে ছবি দেখতে গিয়ে দর্শকে প্রায় পূর্ণ ঘরটি দেখে একটু অবাকই হয়েছিলাম। অবশ্য, সম্প্রতি দেশে বিশাল এক দৈনিকের পদত্যাগকারী সম্পাদককে সস্ত্রীক সেখানে দেখে একটু মজাই পেয়েছি। তার কিছুক্ষণ আগে দেশের এক অভিনেতা দম্পতিকে সস্ত্রীক দোকান থেকে বেরুতে দেখেছি, সঙ্গে তাঁদের অভিনেত্রী কন্যাও ছিলেন। শুনেছি এই বিপণীকেন্দ্রে নগরীর ছোট ও বড়পর্দার নানা সেলিব্রেটিদের প্রায়ই পাদুকাধূলি পড়ে সন্ধ্যেয়। নারীহৃদয়ে ঢেউ তোলা এক তরুণ নায়ক এবং ঠিক-কার-হৃদয়ে-ঝড়তোলা-জানি-না এক বিগততারুণ্য প্রতিভাবান পরিচালক পেছনের বিশাল আকাশঝাড়ন দালানে থাকেন।
ছবির পরিচালক তরুণ, অর্থনীতির স্নাতক এবং চলচ্চিত্র নামের সর্বনাশী সুন্দরীর প্রেমে জীবনযৌবন বিসর্জন দিয়ে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েছেন লাইট-ক্যামেরা-সাউন্ড-এ্যাকশনের বানভাসি প্রেমে। প্রথম ছবিতেই দেখিয়ে দিয়েছেন যে নিছক স্বপ্নবিলাস সম্বল করে তিনি সেলুলয়েডসমুদ্রে ভাসতে আসেন নি। সত্যজিৎ আপসোস করেছিলেন যে, চলচ্চিত্রের ইতিহাসে বাণিজ্যিক ও শৈল্পিক সাফল্যময় ছবি একেবারে নেই এমন নয়, সেরা নজির চ্যাপলিন। কিন্তু এই তরুণ তুর্কি সত্যজিতকে ধ্রুবতারা করে, অথচ নিজস্ব শৈলী ও শিল্পিত ঢঙে শিল্পও গড়েছেন ছবিতে আর তুলনায় উচ্চতর ধনিকশ্রেণীর দৃষ্টিও আকর্ষণ করে বক্স আপিসে সাড়াও জাগিয়েছেন দিব্যি।
সার্থকনামা সত্যিই সৃজিত মুখোপাধ্যায়।
চিনছেন না তো! দেখুন তো সেলের স্মৃতিতে আছে কি না "আমাকে আমার মতো থাকতে" দেওয়ার আকুল সুরেলা আকুতি? মনের খাতায় 'অটোগ্রাফ'টা চিনতে পারছেন তো এবার?
প্রথম ছবিতে সত্যজিতের 'নায়ক' নিয়ে নতুন নিরীক্ষার পর দ্বিতীয় এই দুর্দান্তিসিমো দুশমনময় ছবিটি মূলত থ্রিলারধর্মী, যে-ঝুঁকি প্রতিশ্রুতিশীল পরিচালকেরা নেন না নিয়ত। মনে রাখতে হবে, এমনকি সত্যজিতেরও চতুর্দশতম ছবি ছিলো চিড়িয়াখানা (১৯৬৭)। এবং এটা তাঁর পছন্দের ছবির একটা ছিলো না এবং তিনি বিশ্বাস করতেন না গোয়েন্দা গল্প থেকে ভালো ছবি বানানো সম্ভব! মারি সিটনকে একটু অম্লরসাত্মক ভঙ্গিতে তিনি জানাচ্ছিলেন যে, তিনি এটা পরিচালনার জন্যে ১৯৬৮ সালে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পেয়েছেন।
এটা অবশ্য ঘরানার দিক থেকে ক্রাইমথ্রিলার বা রোমহর্ষক গল্পের ছবি, ঠিক গোইন্দাগল্প নহে। গল্প গড়ে তোলার কৌশল এবং বলার ভঙ্গিতে সৃজিতের দক্ষতা অনস্বীকার্য। তিনি ওতে পাশাপাশি শিল্পময়তাও গুঁজে দিয়েছেন। খুব যত্নের সাথেই তিনি তৈরি করেন তাঁর ছবির পরিবেশ, পারিপার্শ্বিক এবং অনুষঙ্গ। কিন্তু, তাঁর শ্রমের কর্কশতা চোখে পড়ে যায় যেন। যাঁরা তাঁর প্রথম ছবি দেখেছেন তাঁরা শুরুর ক্রেডিট টাইটেল দৃশ্যময়তার শিল্পায়ন লক্ষ্য করেছেন নিশ্চয়। যদি করে না থাকেন তবে আবারো দেখে নিতে পারেন, পরিচিত অনেকেরই হার্ডডিস্কে থাকার কথা। পারলে ফারাহ আখতারের 'ম্যঁয় হুঁ না'-র সাথেও মিলিয়ে নিতে পারেন তফাৎটা বোঝার জন্যে।
সৃজিত 'অতর' ফিল্মের ভক্ত। সত্যজিৎপ্রেমিক হওয়া ছাড়াও ছবির গল্প, চিত্রনাট্য, সংলাপ, পরিচালনা, সব তিনি নিজের হাতেই রাখেন। কখনো কখনো লিখে বসেন ছবির গানও। কিন্তু, পোসেনজিৎকে তিনি ভুলেন না কখনোই। বিশ্বজিৎতনয়ও, যিনি নিজের কাঁধে চড়িয়ে বাংলা চলচ্চিত্র শিল্প ঘুরিয়ে এনেছেন বালিগঞ্জ থেকে নিমতলা থেকে মুর্শিদাবাদ থেকে কেওড়াতলা থেকে সাউথ সিটি, ঘোষণা দিয়েছেন তিনি আর জনতাজনার্দনের নিম্নবর্গীয় 'পোসেনজিৎ'-এর মোড়কে পড়ে থাকবেন না। এমনকি, আগেকার মধুর যত কাজকম্মোকে 'ভুল' আখ্যা দিয়ে এখন থেকে ঠিক পথে থাকার অঙ্গীকারও ব্যক্ত করেছেন।
যাক, নিশ্চয় ছবির গপ্পোটা সম্পর্কে কিছু জেনে ফেলেছেন।
সংক্ষেপে সারি।
কলকাতায় একের পর এক খুন হয়েই যাচ্ছে যেন এক ধারাবাহী খুনীর হাতে। প্রতিবার খুনের পর সে ভাগ্যহত হত ব্যক্তির পাশে ফেলে যাচ্ছে কম্পিউটারে কম্পোজ করা কিছু কবিতার পংক্তি। শুরু হয় সুকুমারের "আয় তোর মুণ্ডুটা দেখি/আয় দেখি ফুটোস্কোপ দিয়ে" থেকে আর এমনিভাবে চলতেই থাকে। ওহ, বিটিডব্লিউ, কাব্যমালায় কিন্তু খুনের মোডাস অপারেন্ডিরও উল্লেখ থাকে সূক্ষ্মভাবে। মোডাস অপারেন্ডি জানতে গুগল করুন, উইকিতেও পাবেন। সবই আইটিরাজ্য আজকাল। খুনটা কিন্তু বেশ নৃশংসভাবেই করা হচ্ছে।
পুলিশ তটস্থ। পুলিশের উঠতি কর্মকর্তা পরমব্রতও বিব্রত হয় এবং তার উপরওলা রাজেশ শর্মা তার ওপর ঠিক নির্ভর করতে পারে না। মাথা গুলিয়ে যাওয়ায় তার সাথে লিভ-টুগেদার করা রায়মার সাথে চটাচটি হয় এবং রায়মা মায়ের কাছে চলে আসে। রাজেশ শর্মা তাকে পরামর্শ দেয় তারই এক বরখাস্ত হয়ে-যাওয়া কিন্তু দক্ষ ব্যাচমেট এবং সিরিয়াল কিলার পাকড়াওয়ে সিদ্ধহস্ত প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সাহায্য নেওয়ার। বরখাস্ত প্রসেনজিৎ নিজের ঘরে বসে বসে আধো আঁধারে মদ গেলেন, সম্ভবত পরিচালকই টাকা যোগান, এবং পরমব্রতকে যাচ্ছেতাই অপমান করে তার বড়কর্তাকে আসতে বলেন। এরপর নানা শর্তসাপেক্ষে তিনি আবারো ঢোকেন পুলিশবাহিনীতে।
এরমধ্যে আমরা ফাঁকে-ফোঁকড়ে দেখতে থাকি গৌতম ঘোষের চরিত্রটি। তিনি প্রায় বস্তিবাসী, যদিও তাঁর নিজের চাকর আছে। তিনি একদা হাংরি জেনারেশন নামে কিছু এংরি কবিগোত্রের মিত্র ছিলেন এবং এখনো তিনি এংরিই যথেষ্ট। কিছুটা সময় আর চারপাশের ওপর, বেশিরভাগটা তাঁর কবিতা ছাপা না হওয়ার ব্যর্থতার মনোকষ্টে।
তিনিও স্বপ্ন দেখেন আর দশজন কবির মতোই তাঁর কবিতা ছাপা হবে পত্রিকায়, বই বের করবেন তিনি বইমেলায়। তাঁর বইয়ের প্রুফ দেখবেন রবীন্দ্রনাথ, এই আশাবাণীও তিনি তারস্বরে ছবির প্রায় প্রথম থেকেই ঘোষণা করেন। ছবিতে তাঁর নামও নিবারণ চক্রবর্তী, নিশ্চয় সবাই 'শেষের কবিতা' পড়েছেন। এতো পূর্ণাঙ্গ কোন চরিত্রে গৌতম ঘোষের অভিনয় দেখার সুযোগ আমার এর আগে হয় নি এবং আমি তাঁর অভিনয় দর্শনে রীতিমত শ্রদ্ধাবিষ্ট। সৃজিত জানেন বটে কাকে কোথায় নিতে হবে, অন্তত এই ক্ষেত্রে।
"বক্সঅফিসে খিস্তিমাত করলো" এই ছবিটা, এটা পড়েছিলাম আনন্দবাজারে এক দর্শক প্রতিক্রিয়ায়। বেশ মজাই লেগেছিলো কথাটা আর দেখতে গিয়ে এর সার্থকতা উপলব্ধি করলাম সবিরামভাবে। ফোরলেটার ওয়ার্ডের বন্যার শুরু পুলিশ অফসর পরমব্রতের মুখে এবং বিস্ময়করভাবে সেটা তার ডোমেস্টিক গার্লফ্রেন্ড রায়মার প্রতি মেজাজ হারিয়ে। "আমার সাথে ইংরেজি োদাবে না" শুনে দর্শকমহলে যে সরব হর্ষপুলক, সেটা মাঝেমাঝেই উচ্চকিত হয়ে উঠেছে বিশেষত প্রসেনজিতের মুখের কাঁচা খিস্তিতে। বাংলা ছবি সাবালক হয়েছিলো অনেক আগেই, কিন্তু এমনিভাবে মুখের টাটকা ভাষা ছবিতে ধরে দেওয়ার এই অনভিজাত ভঙ্গিটার সাহসও দর্শকের আকর্ষণ অনেকগুণ বাড়াতে সাহায্য করেছে, ধারণা করি। আমি ছবিটা মুক্তি পাওয়ার বেশ কয়েক হপ্তা পরেই দেখতে গিয়েছিলাম। রবীন্দ্রপ্রেমীরা ধুতির কোঁচা রাগেক্ষোভে ছিঁড়েও ফেলতে পারেন বলে গুজব শুনেছি, দুষ্টলোকেদের প্রচারণাই হবে।
যাক, এদিকে তো প্রসেনজিৎ আর পরমব্রত মহোৎসাহে খেটে মরছে খুনীর সন্ধানে। ওহহো, বলি নি বুঝি, খুনের পাশে স্বাক্ষর হিসেবে রেখে-যাওয়া সবকটা কবিতার কবির জীবনের (বা, মরণের ) একটা তথ্য হিসেব করে খুনের আগাম একটা সম্ভাব্য তারিখও বের করে ফেলে অনুসন্ধানী যুগলেরা। ছবির নামটাই যে 'বাইশে শ্রাবণ'। এদিকে রায়মা যে টিভি চ্যানেলে কাজ করে তাতে তার কত্তা তের পর্বের একটা ধারাবাহিক তুলে আনতে চান যেটা হবে সিরিয়াল কিলারদের নিয়ে। বারোটা ইতিহাস থেকে আর শেষটা একজন বর্তমানের ধারাবাহী খুনীর সাক্ষাৎকার। গবেষণায় সেই শেষজনকে খুঁজতে গিয়ে রায়মা আর পরমব্রতের সন্ধান একই বিন্দুতে গিয়ে প্রায় মেশে।
তারপর, আত্মহত্যা সন্দেহভাজনের।
কিন্তু, মনে হবে আপনার, বড্ড চোখে-পড়া হয়ে গেলো যেন জিনিসটা। প্রথম থেকে যেন বোঝাই যাচ্ছিলো, কখনো কখনো অনেকটা চোখে-আঙুল দেওয়ার ভঙ্গিতে, কে হতে পারে অপরাধী। পরিচালক যেন অনেকটা গায়ের ওপরেই ছুঁড়ে দিয়েছেন আগাথা ক্রিস্টির এ্যান্টিথিসিস হয়ে, ঠিক জমতে গিয়েও যেন জমলো না প্লটটা। আপনি বিড়বিড় করবেন মনে মনে, ব্যাটা কি ইংরেজি হুডানিট গপ্পো-টপ্পো পড়ে না নাকি? অন্তত, ডন ব্রাউন পড়লেও তো...
কিন্তু, পিকচার আভি ভি বাকি হ্যায় মেরে দোস্ত! সৃজিতের কাজ অতোটা কাঁচা নাও হতে পারে, আফট্রল মুখুজ্যে বাড়ির ছেলেটা দিল্লিতে পড়াশুনো করেছে।
শেষ সিকোয়েন্সটার জন্যে অপেক্ষা করুন। সব রহস্য ঠিক উন্মোচিত হয় নি এখনো। প্রসেনজিতের পরিবারকে আবছা দেখা গেছে এবং তাদের করুণ পরিণতি, কিন্তু বিশদ হয় নি তো সবটা। প্রসেনজিত তার যে চাকরটাকে বারবার গালিগালাজ করে, কোথায় সে? তাকে পুরো ছবিতে একটিবারের জন্যেও দেখা গেলো না কেন? ছবির নামকরণের যথার্থতা মিলছে না কেন?
শেষটা হয়তো টানটান স্নায়ুক্ষয়ী শেষ-হয়ে-হইলো-না-শেষ হলিউডি ছবি হতে পারতো, কিন্তু পরিচালক মানুষের ভেতরকার বেদনা, হাহাকার, প্রতিশোধপ্রবণতা তুলে এনেছেন। গৌতম ঘোষের চরিত্রের মাধ্যমে কিছুটা বুড়ি ছুঁয়ে গেছেন তিনি সমাজের অবক্ষয়ী প্রবণতা এবং গভীরতর অসুখ তুলে ধরার, কিন্তু শেষাবধি লাল স্লোগান দিয়ে খতমের রাজনীতি না করে বুর্জোয়া ব্যক্তিগত প্রবণতাই মুখ্য করেছেন। এবং ব্যক্তি মানুষই দাঁড়িয়েছে তাঁর দর্শন ও ছবির কেন্দ্রে। চেনা দুঃখ অধরা সুখ চেনা আলো অচেনা অন্ধকারের আবেগে মুড়ে তিনি ছবি শেষ করেন। পরমব্রতের অন্তিম হাহাকার মানুষের শ্রদ্ধার আর ভালোবাসার-মানুষকে। অপরাধ ও শাস্তির অন্যরূপ দেখি আমরা দস্তয়েফস্কির ওপারে।মন ভরে কিছুটা কম, কারণ থ্রিলার পড়তে গিয়ে হঠাৎ শেষে ক্লাসিকের পাতা ঢুকে পড়লে কিছুটা সুর কেটে যায় বটে।
ব্যক্তিগত অভিমত, ছবিটা অন্তত একটা শট আগেই শেষ করা যেতো। আর অনুভূতি, পরিচালকের পরিশ্রমের ও যত্নের নকশাটা যেন চোখে লাগে। যাকে বলে ঠিক 'সিমলেস' নয়। তবে, পরমব্রত ও রাইমার অন্তরঙ্গ মুহূর্তগুলো বেশ কেয়ারফুলি কেয়ারলেস ভঙ্গিতে চিত্রায়িত। কিভাবে এসব দৃশ্য বাংলা ছবিতেও আনা যায় তার একটা ভালো টিউটোরিয়েল হতে পারে সিকোয়েন্সটা। আরেকটা চরিত্র এই ছবিতে নিজগুণে ভাস্বর, তার নাম কলকাতা। কলকাতার পথ-ঘাট, পার্ক, বস্তি, রেডলাইট এরিয়া, গলিঘুঁজি, এমনকি কবরস্তানও দারুণ সঙ্গত করেছে ছবিতে। হ্যাটস অফ, কলকাতা!
"আমাকে আমার মতো"খ্যাত অনুপম রায়ের সঙ্গীতায়োজন প্রাণল ও নতুনত্বের ছোঁয়ায় উজ্জ্বল, যদিও কেন যেন মনে হয়েছে 'অটোগ্রাফ'-এর সাংগীতিক প্রসাদগুণের কিছুটা অভাব রয়েছে। শ্রীজাত গৌতমের কবিতাগুলো লিখে দিয়েছেন, বেশ ঝাঁঝালো কাব্যময়, রিয়েল এংরি!
শেষ করছি ছবির একটা গান দিয়ে, কথাগুলো আক্ষরিক অর্থে নেবেন না, বেশ পুরুষতান্ত্রিক হয়ে যেতে পারে।
পু: 'রা-ওয়ান'-এর প্রেক্ষাগৃহের শব্দটা বেশ ভালো ছিলো। আর আঁধার বিরাট ঘরে আগ্নেয়াস্ত্রের শব্দ কতো বিরাটভাবে ফেটে পড়ে, তা শোনার জন্যে বড় পর্দাতেই দেখতে এবং শুনতে হবে 'বাইশে শ্রাবণ'। শেষ খবর পাওয়া অবধি, দুটোই বোধহয় এখনো চলছেএএএএএএ...
মন্তব্য
পড়া শুরু করেছিলাম ৩২ দাঁত নিয়া, শেষ করে গুনে দেখি দাঁত আছে ১২ টা।
জটিল লেখা, জটিল হিউমার।
আপনার "উত্তরাধুনিক লেখালেখির সহজ কৌশল, বা, উত্তরাধুনিক লেখা এতোই সহজ!" লেখাটি আমার পড়া সেরা রম্য লেখার একটি।
আরে আরে আরে আরে...এই চোখে দেখি কারে।
যাঁর রম্যলেখনীর ক্ষুরধার দানে অনেকের গাল কেটে যায় এবং চোখ শালীনতার ঝলসানিতে হয়ে যায় অন্ধ, সেই চ্রমুদাস আমার দায়সারা লেখার প্রশংসা করছেন! নিজেকে তো লেখকদের লেখক মনে হচ্ছে!! মাইরি বলছি, লেখার সময় আপনার কথা মনে পড়ছিলো একাধিকবার। পাশাপাশি জানাই, আপনার সৌভাগ্য দেখে আমি মাঝেসাঝে বেশ ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়তাম। একবার রসিকতা করতে গিয়ে যা প্রশংসাধন্য হয়েছিলাম, বাপ্রে, ভাবলেও আনন্দে ঘুম আসে না। আর আপনি দিনের পর দিন ভদ্রনম্রশালীনতামণ্ডিত যা সব দিয়ে লোকেদের হাত্তালি কুড়ুচ্ছেন বারবার!
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!
(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)
সম্ভবত লিখে মজা পেয়েছেন। পড়ে কি ততোটা মজা পাওয়া গেছে? অবশ্য লেখকের তৃপ্তিটাও দরকারি ব্যাপার। লিখে যান।
কয় কী
জনাব আসাদুজ্জামান,
বুকে আসেন রে ভাই! একমাত্র আপনিই ধরে ফেলেছেন আমার গোমর। অনেক কষ্টে লেখাটা নিয়ে দায়সারা গোছের করে শেষ করেছি।
কেউ যদি পড়ে তাঁর সময় নষ্ট করেন, আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। ধন্যবাদ অবশ্য অন্তত পড়ার জন্যে।
তাপসদা, উনি খুব একটা ভুল বলেন নি বোধহয়।
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!
(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)
দাদা আসেন।
......
ফাটাইয়া ফালাইছেন গুরু। তো বলছিলাম কি শাহরুখ খান আপনার এই রিভিউ পড়লে ব্লতেন - " আজ ইয়ে সুন কর মেরি মা কিতনি খুশ হোতি"
তবে ২২ শে শ্রাবণ অচাম একটা সিনেমা...... একবার বল তোর কেউ নেই, কেউ নেই......
আর
খানসাহেবের স্টিরিওটিপিক্যাল ইস্টাইলে একটু তোৎলানি দিলেন না?
ছবিটা দেখেছিলেন কি? কেমন লাগলো এ নিয়ে আপনিও দুচার কলম লিখতে পারেন।
আর আপনার চোখ মশাই! গোটা লেখাই এই একটাই বোধহয় টাইপো, তাও আপনি ছাড় দিলেন না? উফ, শকুনাক্ষ বটে!
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!
(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)
আবার জিগায়.................. কিকিকিকি-রণ থুক্কু কিকিকিকি-কন
- দেখেছি তো। না দেখে যাই কই। ছবিটা রিলিজ করার আগে এতো হাইপ সৃষ্টি করেছিল না দেখে উপায় নাই। একটা ঘটনা বলি - আমার এক ফেন্ড আমার কথা শুনেই গুয়াহাটিতে ফাস্ট ডে ফাস্ট শো দেখতে যায়... সিনেমা হলে ঢোকার আধ ঘণ্টার মধ্যেই হল থেকে আমার উদ্দেশ্যে অফুরন্ত খিস্তির বন্যা বইয়ে দিয়েছিল...
তারপর আর এই সিনেমা নিয়ে লেখার আর ইচ্ছে নাইরে দাদা। তবে ২২শে শ্রাবণটা খুবই ভালো লেগেছে। তবে আমার কিন্তু গান গুলিও ভালো লেগেছে।
- তবে শাহরুখ খানের কিছু ছবি কিন্তু আমার খুবই ভালো লাগে। কিন্তু আমিরের মতো রিস্ক নেওয়ার গাটস ওর নেই কেন তাই বুঝতে পারিনা। রা.ওয়ান কে ও শুধু সাইন্স ফিক্স্যান বানালেই বোধ করি ভালো করতেন ' কন্ডম' কন্ডম' কমেডি নয় ফালতু ঠেকেছে।
- আর লাগবে না কেন আমার ঐ বন্ধুর মতো আমারও আঁতেল ছবি দেখার ইয়ে আছে...
-
- মজা পাইছি। গ্রেট কমপ্লিমেন্ট। এক্সেপটেড দাদা। উইথ প্লেপ্লেপ্লেপ্লেপ্লে -জ্যার (গুড়)
দারুন। দারুন
মারা পড়বো তো!
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!
(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)
এই না হলে সুস্বাদু রিভ্যু! গপগপাগপ গিলে ফেললাম পুরোটা।
রাওয়ান বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে দেখে ফেলেছি, (কপিরাইট আইনের চ্রম লঙ্ঘন; গুরু 'গহ্বর' স্মর্তব্য!) বাইশে শ্রাবণ দেখা হয়নি। আপনার লেখাটা পড়ার পরে না দেখা অন্যায় হয়ে যায়.. দেখে নেবো শিগগিরই।
সুস্বাদু লেখার জন্য সুস্বাদু গুড়। (গুড়)
_____________________________________________________________________
বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।
গলায় আটকাবে না আশা করি। গহ্বরের নাম শুনে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়লাম। আমার উত্তরাধুনিক লেখার কৌশল নিয়ে টিউটোরিয়াল আর এই পিরিয়ডিক লেখাটি একইসাথে সচলে এসেছিলো, বলতে কি ঠিক আগে আর পরেই ছিলো অবস্থান।
বাইশে শ্রাবণ দেখে কেমন লাগলো, আমরা মতামত ঠিক আছে কি না জানালে ভালো লাগবে।
নলেন গুড় তো? শীত তো চলেই এলো।
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!
(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)
বেশ।
মনে কি আছে কিছু রেশ?
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!
(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)
রুপালী পর্দার ছবির অসাধারণ পোস্ট মরটেম।
বাইশে শ্রাবণ-এর গানগুলো ভালোই(ই প্রত্যয় যুক্ত হবে। আপনার মন্তব্য যথার্থ। অটোগ্রাফের সমান সুর বা কথা ধরতে পারেনি বলে মনে হয়েছে।)
-------------------------
পথেই আমার পথ হারিয়ে
চালচুলোহীন ছন্নছাড়া ঘুরছি ভীষণ...
পড়লাম। পোস্টটা একদিন আগে দিলে কোন ক্ষতি হতকি? আমি আজই 'রা-ওয়ান' ডাউনলোড করতে দিলাম।
ভাইপো-ভাইঝি, ভাগনে-ভাগনিরা সিনেমাটি দেখার অনুরোধ জানিয়ে আমার মোবাইলের আয়ু কমিয়ে ফেলেছে।
শেষে ভাবলাম, এমন একটা মাস্ত ছবি না দেখে মরাটা বোধহয় জীবনটা বৃথা যাবারই সামিল।
আপনার বর্নণ ও ভাষার ব্যবহার অসাধারণ।
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া।
বাইশে শ্রাবণ নাম দেখে আমি আরো ভেবেছিলাম ঠাকুরমশাই বিষয়ক কিছু...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
নতুন মন্তব্য করুন