এগুলা কি ছবি? স্থির না, কাজেই ছবি বলা চলে না। দৃশ্য? সিনেমার মত? কিন্তু বানানো না। কেউ কারো ভূমিকায় অভিনয় করছে না। কিংবা করলেও শামীম জানে না, জানতে চায়ও না। সে খালি দেখে, দেখে যায়, দেখতে দেখতে যায় গন্তব্যের দিকে।
দুইটা মেয়ে কথা বলতে বলতে রান্না বসানোর কথা ভুলে যায়, এক মাঝবয়েসী মহিলা ঘরময় ছড়িয়ে থাকা খেলনা কুড়ান, টিভিতে কিছু একটা দেখে উত্তেজনায় লাফিয়ে ওঠে এক যুবক, একটা ছোট্ট মেয়েকে কোলে নিয়ে হেঁটে বেড়ান এক লোক।
অনেক দিন পর যখন বৃষ্টি হলো তখন অনেক দিনের জমাট কালচে হয়ে আসা দাগ ধুয়ে গেল। কেউ টের পায়নি যদিও। কিন্তু আমি তো জানতাম! রাতের গাঢ় অন্ধকারেও আমি ঠিকই দেখতে পেতাম ঐখানে আস্তে আস্তে কালচে হয়ে আসতে থাকা দাগটা।
প্রতিদিন আমি বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করতাম। প্রতিদিন আকাশের দিকে তাকিয়ে মেঘ খুঁজতাম। গভীর, জলদ মেঘ, রাগী, গর্জনশীল মেঘ, পাগল, মাতাল মেঘ। কিন্তু বৃষ্টি হলো না। প্রতিদিন ঝাঁঝালো, উজ্জ্বল রোদে একটু একটু করে প্রকট হয়ে উঠছিল দাগটা। আর আমি বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করে যাচ্ছিলাম।
আমি কিছু জানিনা ভাই! রাস্তা দিয়া হাঁইটা যাইতেসিলাম। দেখলাম অনেক লোক জড়ো হয়া রইসে। আউগায় গেলাম, ঠেইলা ঠুইলা সামনে গিয়া দেখি হাড় জির জিরা একটা পোলা, হাতটা বান্দা।
কিছু মনে কইরেন না ভাই, আমার মনে পড়লো তেলাপোকার কথা। তেলাপোকা উল্টায় গেলে যেমন ফড়ফড় করে কিন্তু কিছু করতে পারে না, ঐ রকম আর কি! আমি তেলাপোকা ডরাই। হাইসেন না ভাই, যতই বলেন জিনিসটা আমার সহ্য হয় না। ঘিন্নাও লাগে, আবার ডরও লাগে। তাই তেলাপোকা দেখলেই আমি পিটায় মাইরা ফালাই। উইড়া আসুক আর দৌড়াইয়া যাক, আমার হাত থিকা নিস্তার নাই। ভয়টা তাইলে কমে, শান্তি শান্তি লাগে।
মূল ঘটনায় যাওয়ার আগে, আমরা যে বাসায় থাকতাম তার একটা বিবরণ দেয়ার প্রয়োজন বোধ করছি। আমরা থাকতাম একটা বেসরকারি কোম্পানির চাকুরেদের জন্য তৈরি একটি কোয়ার্টারে যেখানে মাত্র দুইটা বিল্ডিং ছিল। বিরাট এলাকা দেয়াল দিয়ে ঘেরা, এক কোনায় দেয়াল ঘেষে সামনাসামনি দুইটা ৫ তলা বিল্ডিং। আমরা থাকতাম সামনেরটার নিচতলার ডানপাশে। বিরাট বারান্দার তিনদিকে ৩টা ঘর। প্রতিটা ঘরের বারান্দার দিকে একটা দরজা, আবার একটা করে দরজা দিয়ে
সামিরার জীবনটা আরো অনেকভাবে শেষ হতে পারে। জীবনের শুরুটা মানুষের হাতে না থাকলেও শেষ কিভাবে হবে তা কিন্তু কোনো না কোনো ভাবে মানুষই নির্ধারণ করে, সামিরা ভাবে। মৃত্যুটা পৌঢ়-নরম বিছানায় হবে, আশেপাশে থাকবে চেনা-অচেনা অনেক মুখ, নাকি রোমাঞ্চে ভরা জীবনের পেয়ালা হুট করে উল্টে যাবে। অথবা নিঃসঙ্গতাই দিবানিশি সঙ্গ দিতে দিতে একদিন হাত ছেড়ে দিয়ে বলবে, যাই তবে। কিংবা একদিন মধ্যদুপুরে যখন মা’রা বাচ্চাদের বলছেন, এই তো তরকারি হয়ে গেছে, আর বাচ্চারা স্কুলের পোশাক না খুলেই একবার খাবার টেবিলে আবার ছুটে যাচ্ছে প্রিয় কার্টুনের সামনে। আর লাঞ্চ টাইমের সময় পেরিয়ে যাওয়ায় দ্রুত অফিসের দিকে ছুটছেন কর্মীরা আর ভাবছেন আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মিলবে মুক্তি। আর একের পর এক যাত্রীর থেকে মুখ ফিরিয়ে অলস গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে একটা রিকশা, রিকশা জমা দিয়ে যেতে হবে বাড়ি, আজ বৌ মুড়িঘণ্ট রাঁধবে বলে। এমন সময়ে কেউ ভাবতে পারে এই জীবনটা শেষ করে দেয়া যায়?
সবচেয়ে কঠিন কাজটা সবচেয়ে সহজে হয়ে যাওয়ায় তানিম একটু ফাঁপড়ে পরে যায়। অবশ্য গত কয়েকদিন ধরে সুমির হাবভাব ভালো করে বোঝা যাচ্ছেনা। বোঝার মত মনযোগ দেয়াও তানিম ছেড়ে দিয়েছে অনেকদিন আগে। যাই হোক, কাজটা হয়ে গেছে এটাই আসল, তানিম নিজেকে আশ্বাস দেয়।
তাহলে, আমরা দার্জিলিং যাচ্ছি?
অফিস যেতেই হয়। সবারই কোনো না কোনো কারণ থাকে। টাকা, মানুষের সমাজে জায়গা, ক্ষমতা, জীবনে বৈচিত্র, ব্যস্ত থাকা ইত্যাদি।
শাহিন অফিসে যাওয়া শুরু করে কর্মজীবী নারী হওয়ার জন্য। তারপর সে বলা শুরু করে কাজটাকে ভালোবেসেই সে কাজ করে। বিশ্বাসও করতে চেয়েছিল কথাটা। কিন্তু কোনো সৃষ্টি আর তার স্রষ্টার সম্পর্ক এখন আর সরাসরি ও সহজ নাই। কাজেই কাজের প্রতি আদিম ভালবাসার দিনও নাই। যান্ত্রিক পুনরুৎপাদনের ছলাকলা ছাড়া করার তেমন কিছুই নাই।
মানুষ সাধারণভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকা একটি জীব। এর নানা বৈজ্ঞানিক ও সমাজতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা আছে, বিজ্ঞজনেরা তা জানেন, এখানে বলার তেমন প্রয়োজন কী? সম্পর্কিতরা একে অন্যের ক্ষতি করেনা (অন্তত এটাই প্রচলিত ধারণা)। তাই মানুষ ক্রমাগত সম্পর্ক তৈরি করে। রিকশাওয়ালাকে মামা ডাকে, দোকানিকে ভাই, অফিসকে বলে পরিবার।
নিয়মিত, ছন্দময় পতন। শাড়ি উঠে গিয়ে কালো উরু ঝিক ঝিক। রোদটা চড়া খুব, চামড়ার উপর মোমের মত গলে গলে পড়ে। প্রতিপতনে ভেঙ্গেচুড়ে আসে নিঃসংকোচ সুঠাম দেহ। চাপড়া চাপড়া কালো মাটির সঙ্গে মিশে যায় গুড়ো গুড়ো হয়ে, মুহূর্তেই আবার ঝিকিয়ে ওঠে কালো উরু।
পাহাড়ি, স্যার!কয়লা তুলে
হুম? রূপক চমকে তাকায় , তোতা মিয়া অবশ্য বাঙালি, এ যাত্রায় তাদের গাইড।
এইখানে নদীতে কয়লা পাওয়া যায় স্যার, আর চিনামাটি।
[justify]হোসেন মিয়া রিকশা চালায়। যখন প্যাডেল মারতে আর মন চায়না, তখন মেয়ে প্যাসেঞ্জার খুঁজে বের করে। সবচেয়ে ভালো হয় কলেজ-ইউনিভার্সিটির ছাত্রী তুলতে পারলে। যা ভাড়া বলবে রাজী হয়ে যেতে হবে। তারপর উঠে বসলে হুডটা ঠিকঠাক লাগানোর পর কথা শুরু করতে হবে। এই খুচরা আলাপ আর কি। যেমন - মা আপনি কি ইনবার্সিটিতে পড়েন? কথা আগালেই সরাসরি আসল কথায় চলে যায় হোসেন মিয়া। আমি ভয়াবহ বিপদে পড়সি মা, কালকের মধ্যে ৭শ’ টাকা না দিলে আমার মাইয়ারে ইস্কুল থিকা বাইর কইরা দিবো। আমার দুই ছেলে এক মেয়ে মা। অনেক কষ্ট কইরা পড়াশোনা করাইতেসি। ম্যাট্রিক পাশ করলেই মাইয়ার বিয়া দিয়া দিমু। বই-খাতার যেই দাম। আর পারি না...
আব্দুল মতিনের শরীর শিরশির করে। বিড়বিড় করে বলে উঠে ‘আহ!’। হাত দুইটা ঢুকিয়ে দেয় দুই উরুর মাঝখানে। ভলভো বাসের দোতলার ঝাঁকুনি আর গায়ের উপর চড়ে যাওয়া মানুষ সবই ভাল্লাগে তার। ডান হাতটাতে এখনও মাখন মাখন অনুভূতি।