""একবার গির্জার এক পুরোহিত বিলাতের শেফিল্ড কয়লাখনির শ্রমিকদের কাছে ভাষণ দিচ্ছিলেন, তিনি বলছিলেন,"তোমরা যদি যিশুর ভজনা না করো, তবে নরকে যেতে হবে।" তাই প্রথমেই একটি লোক প্রশ্ন করল, "কে যিশু?" পুরোহিত মশাই জিজ্ঞাসা করলেন, "তোমরা কেউ জানো কে যিশু?" সবাই চুপ। একজন বলল, "তার কত নম্বর?" তারা মনে করেছিল, যিশু বোধ হয় তাদের মধ্যে থেকেই কোনো একজন হবে। মানে, কয়লাখনির শ্রমিকদের কথা বলছি। ওদের নিশ্চয়ই একটা করে নম্বর থাকে। তাই জানতে চেয়েছিল, যিশুর নম্বর কত, তবে তাকে চিনতে পারবে।"
"পুরোহিত মশাই তখন বুঝতে পেরেছিলেন কি ধরনের মানুষদের সঙ্গে তিনি কথা বলছেন। তাই তিনি বুঝিয়ে বললেন, "আহা, যিশু তোমাদের মধ্যে কেউ নন। তিনি হলেন ঈশ্বরের সন্তান। তিনি তোমাদের উদ্ধার করতে এসেছেন। তাকে যদি তোমরা ভজনা করো, তা হলে তোমরা নরকে যাবেনা।"
"তখন জানতে চাইল, "নরকটা কি?" তখন তিনি বর্ণনা করে বলেলেন, "ভারি অন্ধকার, স্যাঁতস্যাঁতে, এমনি ধরনের।" লোকগুলি চুপ করে রইল, কারন তারা তো ঐ রকমের খনিগর্ভেই কাজ করতে অভ্যস্ত। তাই তারা নীরব হয়ে রইল। "কি রকমের নরক? ভালই তো!"
"তখন পুরোহিত মশাই ভাবলেন, কেমন করে ওদের বোঝানো যায়! তাই কয়েক মিনিট পরে বললেন, "না, নরকটা হল ভারি বিপজ্জনক।" - "কি রকমের?" - " ওখানে কোনও খবরের কাগজ পাওয়া যায় না।" - " ওঃ তা হলে তো ভয়ঙ্কর জায়গা।" কারণ তোমাদের এই পাশ্চাত্য জগতে প্রত্যেকের খবরের কাগজ না হলে চলে না। তেমনি আমাদেরও জোর দিতে হবে একটা বিষয়ে যে, এখানে কোনও ট্যাকস আদায়ের লোক নেই।"" [1]
... সাধুসঙ্গ বিষয়ে অন্তর্জাল অনুসন্ধান করিতে গিয়া প্রাপ্ত হইলো এই ইঙ্গরাজিতে যাহাকে বলে “এক্সার্প্ট” তাই। স্তব্ধ হলাম। রক্তকরবীর গোঁসাইজীর কথা মনে পড়ে গেল। অন্ধকার মৃত্যুপুরীর মত খনিতে মাটির বুক চিড়ে যক্ষের ধন বের করে আনতে আনতে সচল সংখ্যাগুলো যখন বিক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে তখনই সর্দার নিয়ে আসেন গোঁসাইজীকে। নামাবলীর আড়ালে যিনি শাসনযন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার আরেকটি বল্টুমাত্র। ৪৭ এর ফ কিংবা ৬৯ এর ঙ – এই ক্রমিক সংখ্যাগুলোর আড়ালে চাপা পড়ে যাওয়া মানুষের চেতনার আগুনকে ধর্মকথার ছাইচাপা দেন গোঁসাইজী। তাদের মধ্যে আনুগত্য আনেন, বিপ্লবের নুন্যতম সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করেন। একই রকম বিবরণ পড়েছি চিনুয়া আচেবের থিংস ফল অ্যাপার্ট গ্রন্থেও।
নাইজেরিয়ান লেখক বর্ণনা করেন উনিশ শতকে আইবো গোত্রের কালো মানুষগুলোর পৌত্তলিক ধর্মবিশ্বাসের ওপর সাদা খ্রীষ্টধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের প্রয়াস। হলি ট্রিনিটি কি করে আবার এক ঈশ্বর হন তা বুঝতে না পেরে হেসে ওঠে তারা। আর পাঠক দিব্যচোখে প্রত্যক্ষ করেন – যুক্তি – তর্কের উর্ধ্বে উঠে একটি গোত্রের ওপর ধর্মের মাধ্যমে আধিপত্য স্থাপনের প্রচেষ্টা।
ধর্মের প্রথম কথা – প্রশ্নাতীত আনুগত্য। প্রশ্ন করেছো কি নরকবাস নিশ্চিত। কেবল চাই নিয়মনিষ্ঠ অনুসরণ। ভালবাসা নয় চাই ভয়। পাপ – পূণ্য সব ছকে বাঁধা। ছকটা কেটেছেন আর কেউ নয় ক্ষমতায় আছেন যারা তারাই। আর এ সমস্ত কিছু নিজের স্বতন্ত্র অস্তিত্বের অবস্থান ভুলে একটি যন্ত্র হয়ে উঠতে প্রস্তুত করে তোলে, যার কাজ ক্ষমতাসীনের ভিত শক্ত করা।
ধর্ম নামক প্রতিষ্ঠানটির পাইকারী তিরষ্কার আমার উদ্দেশ্য নয়। রাজনীতির পাশাখেলায় ধর্মবোধ বার বারই ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয় সেটি কেবল বলতে চাই। ফকির, বাউল, সুফী সাধকদের কাছে মানুষই ঈশ্বরবৎ। ধর্মের কেন্দ্র তাদের কাছে মানুষ – সহজ মানুষ ভজে দেখ না মন দিব্য জ্ঞানে। সাত আসমানের ওপারে নয় মানুষের মাঝেই আছে ঈশ্বরের আলো। এই বোধটুকুই রুখে দিতে পারে সকল অনাচার।
---
[1] ১৯৬৮ সালের ২৫ মার্চ আমেরিকায় স্যান ফ্রানসিসকো শহরে শ্রীল প্রভুপাদের কক্ষে প্রদত্ত সংলাপ
ছবির উৎস : http://maflib.mtandao-afrika.net/MAF080219/definition.html
মন্তব্য
সুলিখিত। আচেবেকে ভাল লাগলে ইয়েট্স কেও ভাল লাগে নিশ্চই।
" Turning and turning in the widening gyre
The falcon cannot hear the falconer;
Things fall apart; the centre cannot hold;
Mere anarchy is loosed upon the world,
The blood-dimmed tide is loosed, and everywhere
The ceremony of innocence is drowned;
The best lack all conviction, while the worst
Are full of passionate intensity. "
(The Second Coming)
ধন্যবাদ। "How can we know the dancer from the dance? " - ইয়েটস কে শুধু ভালো লাগেনা, ইয়েটস ভাবায়ও।
দুর্ধর্ষ
"সাত আসমানের ওপারে নয় মানুষের মাঝেই আছে ঈশ্বরের আলো।"
-খুব ভালো লাগলো আপনার লেখা।
ফকির, বাউল, সুফী সাধকদের কাছে মানুষই ঈশ্বরবৎ। ধর্মের কেন্দ্র তাদের কাছে মানুষ – সহজ মানুষ ভজে দেখ না মন দিব্য জ্ঞানে। সাত আসমানের ওপারে নয় মানুষের মাঝেই আছে ঈশ্বরের আলো। এই বোধটুকুই রুখে দিতে পারে সকল অনাচার। - এই কয়টা লাইনের জন্য আপনাকে ৫ টা তারা দেওয়া যায়। কিন্তু "মহামান্য আপ্যায়িত অতিথিদের" আবার তারকা দেয়ার অধিকার নেই। তাই মন্তব্য করেই ঝাল মেটালাম।
------------------------------------------------------------------------
সকলই চলিয়া যায়,
সকলের যেতে হয় বলে।
==========================================================
ফ্লিকার । ফেসবুক । 500 PX ।
ঐ কয়টা লাইনের জন্যই পুরো লেখাটা ফেঁদেছি :)। অনেক ধন্যবাদ।
ঠিক।
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...
অ-সাধারন মনামী ।
খুব খুব ভালো লাগলো আপনার এই ছোট্ট লেখাটা ।
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
ঈশ্বরের আলো-ফালো বুঝি না। মানুষও দিনকেদিন একটা বিরক্তিকর প্রাণীতে পরিণত হইতেসে।
The best lack all conviction, while the worst
Are full of passionate intensity" (দুর্দান্তকে ধন্যবাদ)
তারপরও আপনের লিখা পইড়া মনে একটা শান্তিভাব আসিল। da da da . . .
: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: :
'Cinema is over' - Master Godard
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
বান্দর থেইকাই বইলা মানুষ হইসে? বিরক্তিকর তো হইবাই। শান্তিভাব আনতে পারসি, তাইলে আমার লেহাটা সার্থক হইসে।
সবাইকে ধন্যবাদ।
বাবার কাছে একটা মজার গল্প শুনেছিলাম, এক আফ্রিকানের আফসোস্ঃ
"যখন পাদ্রীরা এলেন, আমাদের হাতে ছিলো জমিজমা, ওদের হাতে বাইবেল,
হঠাৎ এখন দেখি,আমাদের হাতে শুধু বাইবেল, জমিজমাগুলো্সব ওদের হাতে!! "
মনামী, দুর্ধর্ষ লেখা----
বিশ লক্ষ তারা---!!!
নতুন মন্তব্য করুন