ছোটটাকে কোলে গুঁজে, বড় মেয়েটাকে পথের ওপর দিয়ে অনেকটা হেঁচড়াচ্ছিল সেলিনা। এ পথ তার চেনা নয়। তার পথের রঙ নরম সবুজ। এ পথ শক্ত কালো রঙ এর।
এখানে মানুষের মুখ কুয়াশায় তৈরি। ঠান্ডা আর অস্বচ্ছ। কিন্তু সেলিনার খুব বিপদ! তাই বদ্ধ ঘরে আটকে পড়া পাখির মত দেয়ালে বার বার বাড়ি খাওয়া, অদম্য প্রাণশক্তির অসহায় ক্ষয়।
“আমার স্বামীরে দেখসেন? উনার নাম আব্দুর রাজ্জাক।”
শহরে কেউ কাউকে চেনে না।
“এই কারখানায় রাজমিস্ত্রির কাম করে ভাই। দেখসেন নাকি? শুকনা কইরা মানুষটা?”
ধুর গন্ডগোলের মধ্যে আবার এই আপদ! এইগুলা হচ্ছে শহরের আবর্জনা। ঝেঁটিয়ে বিদায় করলে, শহরটা একটু শ্বাস নিতে পারে।
বড় মেয়েটার হাত ছেড়ে দিয়ে কপালের এক দিকে হাত দেয় সেলিনা, “এই যে এই খানে একটা কাটা দাগ আসে ভাই। দেখসেন আপনেরা কেউ?”
ঘুনে খাওয়া আসবাবের মত ঝুর ঝুর করে রাস্তার ওপর ভেঙ্গে পড়ে সেলিনা
“কি হইলো মানুষটার? একটা দিন পার হইয়া গেল । কই যামু?”
নদীটা ছিল বাড়ির পাশে। গোবর দিয়ে নিজহাতে উঠান নিকাতো। মাটির ঘরে দৈন্যের ছাপ থাকলেও আব্রুর ছায়া ছিল। বস্তির বাড়োয়ারি পরিবেশ আর দুর্ঘন্ধময় নালায় এখনও ধাতস্থ হয়ে ওঠেনি। তবু স্বপ্নের ওপর ভর করে শহরের আত্মবিস্মৃত কোলাহলে অস্তিত্বের জানান দেয়ার দুঃসাহস। খাওয়া পড়ার অভাবে পড়তে হবেনা , মেয়ে দুটো পড়াশোনা শিখতে পারবে।
“ইশ চিন্তা করসেন কারবারটা? তিন জনরে মাইরা ফালাইসে!”
“আরে রাস্তা আটকায় রাখার কি দরকার ছিল? এই জন্যই তো পুলিশে গুলি করসে।”
“আরে ভাই, সকালে আইসা ওয়ার্কাররা দেখে গার্মেন্টসের গেটে তালা। তিনমাস বেতন দেয় নাই। ঈদ গেসে, বোনাস পায় নাই। মাথা গরম তো হইবোই! কারখানা যে জ্বালায় দেয় নাই এইটাই তো বেশী।”
অনাহার আর অনিদ্রার ক্লান্তি ঠেলে এগিয়ে যায় সেলিনা। ঐতো তার স্বামী! ঐযে লোকটার হাতে পেপারটা। কেন ছাপা হয়েছে তার ছবি? এভাবে পড়ে আছে কেন?
সেলিনার আর্তনাদ কালো পিচের শহরের বুক চিরে দেয়, “এইটা ! এইটা আমার স্বামী। ”
“কন কি? আহারে বুকে গুলি লাগসিলো। ওয়ার্কারগো লগে পুলিশের পিটাপিটির সময় সামনে পইড়া গেসিলো। তাড়াতাড়ি মেডিকেলে চইলা যান। লাশতো বেওয়ারিশ পইরা আসে। আহ্ হারে বাচ্চাগুলানের অহন কি হইবো!”
এখানে মানুষের মুখ কুয়াশায় তৈরি।
----
ছবি : ইন্টারনেট
মন্তব্য
ঠিকাছে ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
কি ঠিকাছে ভা্ইজান? আমি এট্টু কম বুজি।
...
সশব্দ মন্তব্য চাই। অনুরোধ।
এখানে মানুষের মুখ কুয়াশায় তৈরি।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
এখানে মানুষের মুখ কুয়াশায় তৈরি।
স্যাল্যুট, এমন দেখার চোখকে।
আর, বিষয়বস্তু সম্পর্কে কী আর বলবো! বলতে ইচ্ছা করে না, জ্বালিয়ে দিতে ইচ্ছা করে সত্যি, পারি না, তাই নিজেই জ্ব'লে পুড়ি।
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
সেই দহনের আঁচ থেকেই এই লেখার জন্ম।
লেখা পড়ার জন্য সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।
প্রথমে ভাল লাগার কথা জানাই।
একে একে এই সিরিজের সবগুলো লেখাই পড়লাম।
তবে, এগুলোকে প্রজেক্ট না বানিয়ে, নেচারালি গল্প বলে গেলে
সমাজ সচেতনতার পাশাপাশি সাহিত্যের দাবি আরো ভালো ভাবে
মিটতো বলে আমার ধারণা।
অবশ্য আমি ''লেখকের কোনো দায় নেই'' বলেই বিশ্বাস করি।
শুভেচ্ছা।
নতুন মন্তব্য করুন