শারমিন খুবই বিরক্ত। কাজের বুয়ার জ্বালা কি আর ঘুচবে না! সোহেলের মাকে কাজে রাখার সময়ই স্পষ্ট বলে দিয়েছিলো বাচ্চা–কাচ্চা বাসায় আনা যাবেনা। ঠিকই নিয়ে এসেছে!
তোমাকে আমি বলি নাই বাচ্চা নিয়ে আসা যাবেনা? বলি নাই তোমাকে?
আম্মা পোলাটার শরীলটা ভালা না।
আমার বাড়ি কি হাসপাতাল নাকি যে রোগী নিয়ে চলে আসলা? রোগ-বালাই ছড়িয়ে আমরা সবাই মরি আর কি। তুমি চাও আমার বাচ্চাটারও অসুখ হোক?
ছি ছি আম্মা কি কন, অরে এই কোনায় বহায় রাহুম ।
ইশ! অফিসের দেরী হয়ে যাচ্ছে। শুনো সোহেলের মা, এরকম হলে কিন্তু আমার বাসায় তোমার আর কাজ করা হবেনা। আমি বের হচ্ছি। তোমার ছেলে যেন তুতুলের ধারেকাছেও না যায়।
সোহেলের মা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। ছেলেটার জ্বর। কেউ নেই যে তার কাছে রেখে আসবেন। এমনিতে একটা চায়ের দোকানে কাজ করে। হঠাৎ কি যে হলো, কাল থেকে আকাশ–পাতাল জ্বর। যাক আজকের মত রেহাই পাওয়া গেছে। কাজে ব্যস্ত হয়ে যায় সে।
অ্যাই তুমি কে?
আমি সোহেল।
সোহেল তুমি আমার সঙ্গে খেলবা?
আমার তো জ্বর।
জ্বর কেন? আইসক্রিম খাইসিলা?
না, ভয় পাইসি।
ভয় পাইসো কেন?
খারাপ জিনিস দেখসি।
কি দেখসো? বল না।
সোহেল চোখ বন্ধ করে ফেলে। ধাতব নৈ:শব্দ্, হাজার মৌমাছির গুঞ্জনের মত একটানা বোওও আওয়াজ আর নিজের লাফাতে থাকা ছোট্ট হৃদপিণ্ডের শব্দ।
কুরবানীর সুম গরু জবো দেয় দেখসেন?
না, মামনি আমাকে দেখতে দেয়নি। বাবাকে বললো কি জানো, বললো ওগুলো দেখলে আমার নার্ভে প্রেশার পড়তে পারে। তুমি দেখসো?
হ।
এটুকু বলে আবার চোখ বোজে সোহেল। পানি পিপাসা, গলায় জ্বালা করছে। জ্বরটা বোধহয় বেড়ে যাচ্ছে।
আমি মানুষ জবো করতে দেখসি।
মানুষ!
খালের পারে, মাটির মইদ্যে চাপ দিয়া ধরসে, তারপর গলাটা ফাক কইরা দিসে।
তুমি কি করলা তারপর?
আমি দৌড়াইলাম।
আরে ভাইয়া, আপনে এইহানে কি করেন? আসেন তাড়াতাড়ি আপনের
খাওনের সময় হইয়া গেসে।
আমি এখন খাবো না। আমি ওর সঙ্গে গল্প করতেসি।
আসেন কার্টুন ছাইড়া দিমু।
ঐদিন শারমিন বাসায় ফিরলে তুতুল খুব আগ্রহ নিয়ে ছুটে আসে।
মা জানো জানো আজকে আমাদের বাসায় একটা ছেলে এসেছিলো না?
কাপড় বদলাতে বদলাতে ছেলের উচ্ছাস উপভোগ করে শারমিন।
কেন বাবা?
ঐ ছেলেটার সঙ্গে আমি অনেক গল্প করলাম।
এবার শারমিনের রাগ ওঠার পালা। এত মানা করা সত্তেও ঐ নোংরা, রোগগ্রস্ত ছেলেটার সঙ্গে তার ছেলে মিশেছে।
বাবা, তোমাকে না বলেছি বাইরের কারো সঙ্গে কথা বলবেনা।
আগে শোনো না। ও আমাকে কি বললো জানো? ও নাকি মানুষ জবাই করতে দেখেছে।
কী বললা তুমি?
ঐ যে কুরবানীর সময় গরু জবাই দেয়না তেমনি মানুষ জবাই।
জ্বর গায়ে বেদম মার খেলো সোহেল। ওর কারণেই যে ওর মায়ের কাজটা চলে গেল।
---
ছবি : ইন্টারনেট
মন্তব্য
খুব ভালো লাগলো, মনামী! শেষটা যদিও আন্দাজ করা যাচ্ছিলো, লেখার গুণে ভালো লেগেছে তাও
আমার গল্প পড়ে সবসময় ভালো ভালো মন্তব্য করে আমাকে উৎসাহিত করার জন্য থ্যাংকু স্নিগ্ধাপু।
দারুণ
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
থ্যাংকু। আপনেরে সেদিন চাক্ষুষ করসি। আপনের বইখান কিনুম। অটুগ্রাফ দিয়েন।
দূর থেকে চাক্ষুষ করেই চলে গেলেন! দুইটা সিঙ্গাড়া আর এক কাপ চা খাওয়াইতেন। তাইলে নাহয় অটোগ্রাফের ব্যপারটা ভেবে দেখতাম
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
বাহ, দারুণ লাগল।
শুরুতে বুঝতে পারছিলামনা গল্পটা কোনদিকে যাবে,
টার্ন টা ভাল লাগল।
আপনার "ভাঁজ কর, আনন্দ দেখ" অসাধারণ। আপনার মন্তব্য পেয়ে ধন্য হলাম।
ইস! বেচারা সোহেল...
==========================================
পরদেশী বঁধু, ঘুম ভাঙায়ো চুমি আঁখি।
যদি গো নিশিথ জেগে ঘুমাইয়া থাকি,
ঘুম ভাঙায়ো চুমি আঁখি।।
ভালো লেগেছে।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
ভাল্লাগলো!
--------------------------------------------------
"আমি তো থাকবোই, শুধু মাঝে মাঝে পাতা থাকবে সাদা/
এই ইচ্ছেমৃত্যু আমি জেনেছি তিথির মতো..."
*সমরেন্দ্র সেনগুপ্ত
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
গল্পটা এখনো পড়ি নাই। মন্তব্যে চোখ গেল। এটা দেখি নারীবাদি পোস্ট। মন্তব্যকারী প্রায় হগলে নারী। অনার্য- বাবারে- কেন যে মন্তব্য করবার গেলা। আগেপিছে একটু দেখবা তো সুনা।
ছবির কপিরাইট মানি নাইকা।
আরে, পুরাই তো উল্টা কথা বললেন! নারীবাদি পোস্ট হলে অনার্য সঙ্গীতের তো মন্তব্য করতেই হবে, ছবি অন্তত তাইই বলে
জোশ তো ছবিটা!!
--------------------------------------------------
"আমি তো থাকবোই, শুধু মাঝে মাঝে পাতা থাকবে সাদা/
এই ইচ্ছেমৃত্যু আমি জেনেছি তিথির মতো..."
*সমরেন্দ্র সেনগুপ্ত
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
আমার তো কোন দুষ নাই শুভাশীষ'দা। আমি যখন মন্তব্য করছি তখন স্নিগ্ধা'পু ছাড়া আর কেউ মন্তব্য করেননি।
যে ছবিটা দিছেন এইটা কার ছবি? রানা মেহের আপু, জুয়েইরিযাহ মউ আর বুনোহাঁস এরকম নিষ্ঠুরভাবে কার উপর নির্যাতন করছে?
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
সবাই অনার্য ভাইরে মারে কেন
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
উদ্ধৃতি
যে ছবিটা দিছেন এইটা কার ছবি?
সামনে কুনু আয়না পাইলে খাড়ায়া যাইবেন। তাইলে বুঝতার্বেন ছবিটা কার?
আর নির্যাতনের ব্যাপারে ঝাতি জানবার চায়-
আপ্নাগো কুনু বাপ-ভাই নাই?????????????
( বাক্যটার কপিরাইট কল্পনা আক্তারের)
শুভা দা, মানে বলতে চাচ্ছিলাম গল্পটা পড়লে হয় না?
গল্প পড়ছি। ভাল ও লাগছে। পাঁচালাম।
শুভাশীষ দাশ
. পাঁচিয়ে বাঁচিয়ে দিলেন। ধন্যবাদ দিয়ে খাঁটো করতে চাইনা।
বাঁচালাম ক্যামনে?
আরে ভাই কেউ না পাঁচাইলে ভাল্লাগে বলেন?
মানলে মনে হয় ভালো লাগত।
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
@ দুষ্ট বালিকা,
আমি সরি।
ছবিটা সরিয়ে দিলাম। আপ করার সময় মাথায় আসে নাই, এখন দেখে মনে হচ্ছে একটা পাবলিক ডোমাইনে এই ছবি ছাড়া উচিত হয় নাই।
গল্প ভালো লেগেছে ।
সত্যটাই লিখেছেন
বোহেমিয়ান
বুয়ার পোলার লগে মিশলে গৃহকর্তৃর ছেলে নষ্ট হইয়া যায়। হায়রে কোয়াল (কপাল)!
.
___________________________________________
ভাগ্যিস, আমার মনের ব্যাপারগুলো কেউ দেখতে পায় না!
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
আপনার লেখার হাতটি সরেস। ছোট্টো ছোট্টো মোচড়ে চমৎকার করে বুনেছেন কাহিনি। হাত খুলে লিখতে থাকুন।
শুভেচ্ছা রইলো।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আজকাল কার্টুনেও যে পরিমাণ রক্তপাত দেখানো হচ্ছে, সেটি অভিভাবকদের চোখ এবং বিবেক দুটোই এড়িয়ে যাচ্ছে ...
: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: :
'Cinema is over' - Master Godard
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
গল্পটা ভাল লেগেছে
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
গল্প ভালো লাগলো। শুরুর দিকের টুইস্টগুলো চমৎকার, যদিও শেষদিকে এসে গল্পের সমাপ্তিটা একটু বোধগম্য হয়ে গেছে আগে থেকেই। তারপরও সবমিলিয়ে ভালো লেগেছে। আরও লিখতে থাকুন।
সহমত...
-------------------------
ওলো সুজন আমার ঘরে তবু আইলোনা
এ পোড়া মনের জ্বলন কেন বুঝলোনা!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
গল্পটা খুবই ভালো লাগল।আমি সবসময় কোনো গল্প পড়া অথবা মুভি দেখতে গেলে এক্সপেক্টেশনের বাক্সটা শুন্য করে বসি বলেই কোনো টার্ন -টুর্ন বুঝতে পাই না
তবে গল্পের " সোহেল " এর সাথে আমাকে কেন জানি মিলিয়ে ফেললাম। এই " কিছু নাই " প্রবাসে পড়াশুনার পাশাপাশি কামলা ( অড জব) দিতে হয় ,তাই মাঝে মাঝে আমারও জ্বর হয়,সবকিছু উপেক্ষা করে কাজে যেতে হয়,আর তখন শারমিন শ্রেনীয় মালিক পক্ষরা শূচীবায়ুগ্রস্ত দৃষ্টি নিয়ে বলে-" যা ,যা- দূরে দূরে থাক,পরে আবার আমাদের জ্বর বাঁধাবি "
ভাইডি, আপনার জ্বর যেন উড়ে আমরা যারা দেশে আরামে ব্যারাম বাঁধাইতে পারিনা তাদের ওপর আইসা পড়ে। সবসময় ভালো থাকেন। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
ভাল লাগলো, আরো লিখুন।
------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
লেখার হাতটা তো দারুণ। অনেক সংযত। মাপা।
ভালো লাগল। পাঁচ তারা।
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
আপনি কেমুন আসেন ভাইজান? অনেক দিন দেহা - সাক্ষাইত নাই। এহন কুতায় কাম করেন?
খুব খুব খুব চমৎকার লাগলো গল্পটা। আমার ছোট বোনের নামও আপনার নামে। তবে আমরা লিখি মনামি , নামের অর্থ জানেনতো আমার বন্ধু?
লেখা বেশ ভালো লেগেছে। সত্যি...
টুইস্টটা শেষে দিলে আরো ভালো লাগতো কিন্তু...
পরেরটার অপেক্ষায় রইলাম...
_________________________________________
সেরিওজা
মিস করে গিয়েছিলাম। নিজেরে মাইনাস।
ভালো লাগলো খুব।
________________________________
তবু ধুলোর সাথে মিশে যাওয়া মানা
সময়োপযোগী লেখা, তাই বেশি ভাল লেগেছে
---------------
আলোর ছটা
---------------
খুবই অসাধারন
নতুন মন্তব্য করুন