"...
- তবু সে দেখিল
কোন ভূত? ঘুম কেন ভেঙ্গে গেল তার?"
করিম সাহেবকে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিদিনের মত মহল্লার মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন। এশার ওয়াক্ত হয়ে গেলেও যখন ফিরলেন না, তখন বাড়ির লোক ভেবে নিলো এশার নামায পড়েই ফিরবেন। তারপরও যখন ফিরলেন না তখন মোবাইলে ফোন দেয়া হলে, সুললিত নারীকন্ঠ বলে ওঠে - আপনি যে নাম্বারে ডায়াল করেছেন তা এই মুহূর্তে বন্ধ আছে ...।
প্রথাগত প্রক্রিয়া অনুসারেই তাকে খোঁজা শুরু হয়। যে মসজিদে তিনি নামাজ পড়েন সেখানে খোঁজ নিয়ে জানা যায় মাগরিবের নামাজ পড়েই তিনি বেরিয়ে যান। অন্যদিনের মত মহল্লার উন্নয়ন এবং ধর্মীয় ও সামাজিক মুল্যবোধ বিষয়ে আলাপচারিতায় অংশ না নেয়ায় সহমুসল্লিরা একটু অবাক হলেও কাজ আছে মনে করে তাকে আর বিরক্ত করেননি। তারাও হাজী সাহেবের খোঁজে বেরিয়ে পড়েন।
৫৩ বছর বয়সে প্রথম হজ আদায় করেন করিম সাহেব। ব্যবসায়ী মানুষ - নানা ঘাটের পানি তাকে খেতে হয়েছে এবং তিনি স্বচ্ছন্দে খেয়েছেন। টাকার রঙ বিচার করতে বসলে টাকা তার হাত গলে বেরিয়ে যেত। কাজেই তিনি সময়ের কাজ সময়ে করেছেন এবং সময়মত হজ্জ্ব করতে গেছেন। কিন্তু পাপভঞ্জনকারী পাথরে চুম্বন করার মুহূর্ত থেকেই তার মধ্যে সেই অজ্ঞাত ও অপ্রয়োজনীয় বোধটি দানা বাঁধতে শুরু করে।
করিম সাহেবের বোধ বিষয়ক জটিলতার ব্যাপারে তার পরিবার ও মহল্লার লোকদের কিছুই জানা ছিলনা তাই তারা স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেয় তিনি অবশ্যই কোনো অনাকাঙ্খিত বিপদের মুখোমুখি হয়েছেন। ফলে তারা আত্মীয় - পরিজনদের খবর দেয়। আত্মীয় পরিজনরা পরামর্শ দেন পুলিশে খবর দিতে। পুলিশ পরামর্শ দেয় হাসপাতালে খোঁজ নিতে।
করিম সাহেবের মনে হয়েছিল কালো পাথর তার পাপের সঙ্গে সঙ্গে তার বেঁচে থাকার উদ্দেশ্যও শুষে নিয়েছে। কারণ ধর্মের মহাবয়ান অনুযায়ী আদি পাপ মোচনের চেষ্টাই জীবন। এ ছাড়াও ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সকল দায়িত্ব ও আচার তিনি নিয়ম অনুযায়ী পালন করেছেন।
বোধটিকে লাগাম পরানোর জন্য নিজেকে কঠোর নিয়মতান্ত্রিকতায় বেঁধে ফেলেন তিনি। তিনি বরাবরই প্রায়োগিকতায় বিশ্বাসী এবং ভাবালুতার ঘোরবিরোধী ছিলেন। যা তাকে একটি নিষ্কন্টক ও নিস্পৃহ জীবন নিশ্চিত করতে সাহায্য করেছে।
কিন্তু বোধটি ক্রমশও ডালপালা ছড়িয়ে তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলতে শুরু করে। আরো বারকয়েক হজ্জ্বে গমনেও এই অসহ্য অসুখের নিরাময় হয়না।
তারপর এক সন্ধ্যায় যখন পাখিরা ঘরে ফিরছে তিনি প্রতিদিনের মহল্লার মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়তে যান এবং নিখোঁজ হন।
তার পরিবার ও মহল্লার লোকের এ বিষয়ে ঘুণাক্ষরেও কিছু জানা ছিলনা । তাই তারা গাণিতিক নিয়মে খোঁজার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখে।
কিন্তু করিম সাহেব নিজেও গাণিতিক নিয়মেই নিয়ম ভাঙ্গার ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন।
আব্বা বাসায় চলেন।
নিরুত্তর।
বাসায় চলেন আব্বা।
তুই কিভাবে জানলি আমি এখানে।
আপনি শহরে আসলে আগে এখানেই থাকতেন, তাই ভাবলাম এখানে একবার খোঁজ নিয়ে দেখি।
ও আচ্ছা।
সুতরাং
অর্থহীনতা = অর্থহীনতা
পুনশ্চ: মানুষ একটি সমাজবদ্ধ জীব।
মন্তব্য
শেষটা নিয়ে একটু সমালোচনা ছিলো, কিন্তু গল্পটার ভাষা+ভঙ্গি এবং
এই দুটো লাইনের জন্য আপনার এতোটাই প্রশংসা প্রাপ্য হয় যে, আপাতত অন্য কিছু শিকেয় তোলা রইলো
আপনার পায়ে পড়ি সমালোচনা করুন। আপনাদের সমালোচনা থেকে অনেক কিছু শেখার সুযোগ পাই। বিশেষ করে কখন আপনি মন্তব্য করবেন সেই অপেক্ষায় থাকি। থ্যাংকু।
অর্থহীনতা = অর্থহীনতা
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
"আমি তারে পারি না এড়াতে
সে আমার হাত রাখে হাতে"।
অর্থহীনতা এড়ানোর কোনো টোটকা পাইলে ভাল্লাগতো।
শেষ তিনটে লাইন পুরো গল্পটিকেই অন্যমাত্রা এনে দেয়...
--------------------------------------------------
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
আপনার গল্প ভালো লেগেছে মনামী। বিশেষত আপনার গল্পের ভাষা।
ছোটগল্পের এমন এ্যাবসার্ড সমাপ্তির পরও সেটা উতরালো কেবল ওই ভাষার প্রাঞ্জলতার কারণেই । না হয় পাঠক হিসেবে আরো ডিটেইলিং
চাইতাম হয়তো ।
যে যা-ই বলি না কেন আমরা, সাহিত্যের সব চেয়ে কনিষ্ট এই মাধ্যমটির সম্পূর্ণতা কিন্তু 'লেখা'য়ই 'বলা'য় নয় ।
আজকাল অনেকেই প্রশংসা করেই বলেন দেখি, 'অমুকে গল্প লিখেন না,গল্প বলেন ' এই জন্যেই আমরা গল্পের বদলে এতো কিচ্ছা পাচ্ছি মনে হয় !
আপনার এই গল্প আশাবাদী করে তুলে ।
ধন্যবাদ আপনাকে ।
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
- দারুন বলেছেন। আপনার মন্তব্য আশাবাদী করে তুললো :)। ধন্যবাদ।
আবেগের রংছটা কাটিয়ে মুক্তধারার একটা সুন্দর গল্প। প্রাঞ্জল এবং ঝরঝরে ধরণের এই ছোট গল্পটি আমার কাছে খুব ভালো লাগ্লো। ফরম্যাট নিয়ে আমার কোন অভিযোগ নেই, বরং ভিন্নধারার এই প্রকাশভংগী অন্য একটি মাত্রায় লেখাটিকে সুন্দর করে তুলেছে।
সমাপ্তিতে অনবদ্য মুন্সিয়ানা!!!
---- মনজুর এলাহী ----
অশেষ ধন্যবাদ।
নতুন মন্তব্য করুন