এই দুইটা তো হিন্দুর বাচ্চা
দারিদ্রের শেখানো চাতুরির ফাঁক গলে টুপটাপ ঝরছে শৈশবের সারল্য। থমকে যাওয়া শহুরে সংস্কৃতির মুখের ওপর আবারও পড়ে হাসিমাখা চাবুক।
হিন্দু , এই দুইটা হিন্দু।
যে দুজনের পরিচয় দেওয়া হচ্ছে তারা সদ্য উপার্জিত দশটাকার কিয়দংশ খরচ করে কেনা গাজর যে তুচ্ছার্থে তাদের পরিচয় তুলে ধরছে তারই সঙ্গে কামড়চুক্তিতে পেটে চালান করতে ব্যস্ত। একজন একবার কামড় দিতে পারবে কাজেই এই মুহূর্তে প্রত্যেকের জীবনের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য সবচেয়ে বড় কামড় দেয়া। কম কষ্ট করতে হয়েছে! শহর থেকে আসা এই আপাকে পটাতে পকেটের সবকয়টা কৌশল খরচ করতে হয়েছে। হিন্দু দুইটার একটা একচোখ বন্ধ করে কানা সেজেছে, আরেকটা পা ধরেছে, মুসলমানটা তিন বছরের আধো আধো বোল ফোটা গুট্টুস ভাইটাকে এগিয়ে দিয়ে নিজে করুণ গলায় বলেছে দুইটা ট্যাকা দেন। চারজনের সমন্বিত ঘ্যানঘ্যানের পর আপা দশটা টাকা বের করে বলেছে - সবাই মিলে ভাগ করে নে।
দেশের সেরা বিদ্যাপীঠে কলাবিভাগের শীর্ষ শ্রেণীতে অধ্যয়নরত প্রভা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার জন্য শহুরে সমাবেশগুলোতে বেশ সমাদৃত। চিন্তাশীলতার প্রসার ঘটাতে অন্যান্য সঙ্গে প্রভা প্রায়ই রাজধানীর বাইরে ঝটিকা সফর পরিচালনা করে থাকে। একটি বৃহৎ নদী সম্বলিত ছোট্ট এই মফস্বল শহরে সেই হেতু আগমন।
শহরের রাজপথে গড়াতে থাকা কালিঝুলি মাখা বাচ্চাদের একঘেয়ে মিনতিকে সাধারণত দ্রুত হেঁটে পাশ কাটিয়ে যায় প্রভা। কখোনো নিদারুন যানজটে আটকে যাওয়ার কারণে যখন আর এড়াতে পারেনা তখন ক্ষীপ্র গতিতে তুলে দেয় তাপানুকূল গাড়ির কাঁচ তারপর ঝিঝি পোকার মত ওদের একনাগাড়ে ডাকতে থাকা মিলিয়ে যায় আর জে'র অবিশ্রান্ত কথাবর্ষণে। কিন্তু মফস্বলের এই অনন্তযৌবনা নদীর স্বর্গীয় সৌন্দর্যের সামনে অকালপক্ক, সিকনি ঝরা, কালি-ঝুলি মাখা বাচ্চাগুলোর ছল-চাতুরির প্রতিও দয়া দেখাতে ইচ্ছা করে, ইচ্ছা করে এদের মানুষ মনে করতে।
তাই দশটাকা দিয়ে কিছুটা সময়ের জন্য এদের কিনে নেয় প্রভা। ভাবে, এদের সঙ্গে কিছুক্ষণ আলাপ করা যাক। তাই সবচেয়ে চটুল বাচ্চাটি যে একচোখ বন্ধ করে কানা সেজেছিল তার দিকে ছুঁড়ে দেয় প্রশ্ন।
তোর বাপ কি করে?
জবাব দেয় আরেকজন।
এই দুইটা তো হিন্দুর বাচ্চা।
দেশবিভাগ, শত্রু সম্পত্তি, বাবরি মসজিদ, গুজরাট - প্রভার মাথার মধ্যে ওলটপালট। যে জবাব দিল তার বয়স পাঁচ। যার সম্পর্কে বললো তার বয়স তিনের কিছু বেশি। ধর্মের সংজ্ঞা কি জানে ওরা?
হঠাৎ প্রভার চোখে খুশির ঝিলিক - শিশুদের মধ্যে কি করে সাম্প্রদায়িকতার নষ্ট বীজ ঢুকিয়ে দেয়া হয় এটাকে বিষয়বস্তু করে ভালো একটা প্রবন্ধ ফাঁদা যেতে পারে, আঁতেলরা ভালো খাবে। যাক ট্রিপটা বৃথা গেলনা।
মন্তব্য
ভালু ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
থ্যাংকু
আফসোস। আমরা এমনই কদর্য সভ্য মানুষ।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
আমরা সকলেই সভ্যতা বেঁচাকেনা করি। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
চমৎকার লেখা।
মূর্তালা রামাত
ধন্যবাদ।
khub bhalo laglo pore. nijer soishober kotha mone pore gelo.
choto bela theke emon montobbo onek shunechi , "o tumi hindu??" or "tomra hindu ra pani ke jol bolo keno?" aro koto ki...shishu mone dag katto..kharap lagto. amader charpasher manush gulo ki bicchiri bhabe samprodayik eta tari proman... ar er training kon porjay theke shuru hoy ...
আমার মনে হয় শিশুদের ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষটা সবসময় ওইভাবে কাজ করে না। অন্য যে কোনো বৈচিত্রের মতোই সাম্প্রদায়িক বৈচিত্র অনুসন্ধিৎসু শিশুদের আকৃষ্ট করে ...
: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: :
'Cinema is over' - Master Godard
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
আহ্, এই গল্পে আবার আমার পরিচিত গল্প লিখিয়ে মনামীকে খুঁজে পেলাম!
আপনার কিছু কিছু শব্দ/বাক্যবন্ধ অসাধারণ! ওগুলো পড়লে আপনার ক্ষমতা টের পাওয়া যায়
লজ্জা পেয়ে গেলাম তো! থ্যাংকু স্নিগ্ধাপু।
চমৎকার বিষয়! কিন্তু এটাকে কি ঠিক গল্প বলা যায়? একটা স্থির চিত্র, একটা চিন্তার স্পাইক। কিন্তু পরিপূর্ণ গল্প কিনা সে বিষয়ে আমি সন্দিহান।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
গল্পের আকার দিয়ে একটা স্থির চিত্র, একটা চিন্তার স্পাইকই পাতে তুলে দিতে চেয়েছি। সেই চেষ্টা করতে গিয়ে হয়তো গল্পটাকেই টিকমত আকার দিতে পারিনি। পরের বার ঐদিকে বিশেষ নজর দেবো। ধন্যবাদ।
শেষ লাইনটাই আসল কথা
__________________________
হৃদয় আমার সুকান্তময়
আচরণে নাজরুলিক !
নাম বলি বোহেমিয়ান
অদ্ভুতুড়ে ভাবগতিক !
_________________________________________
ওরে! কত কথা বলে রে!
ধইরা ফালাইসেন
প্রথম লাইনটা পড়েই বুঝছিলাম দারুণ কিছু একটা হবে। তারাইতে চাইছিলাম, পারলাম না। অতিথিদের বোধয় তারাইতে মানা
বাহ!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
বিষয়টা ভাল, হয়তো গল্পও। কথোপকথন বা সংলাপ গুলো ঐ পিচ্চিদের নিজের বা আঞ্চলিক ভাষায় হলে বেশ মানাতো। প্রভার প্রতি সদয় হয়েও এই আবেদন ঠিক রেখে গল্পটা বলা যেতো।
যদি ধরে নেই প্রভা কোন সংবাদকর্মী, তাহলে তার কাজ এই সব আমাদের জানানো। কাজেই প্রভাকে দোষ দিয়ে লাভ কী?
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
বস মনে হয় একটু ভুল রিড করতেছেন । এই গল্পে শিশুরা কি পারিপার্শিকতায় বড় হচ্ছে সেটা বলা হয়েছে এবং সেইসাথে একটা চরিত্র হাজির করা হয়েছে যে এটা নিয়ে কাজ করে । গল্পের শেষ প্যারায় এটা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যে ঐ কাজটার পেছনে আসলে শিশুদের এ থেকে বের করে আনার থেকে নিজের আখেরটাই বড় । প্রভার দোষটা ঠিক এইখানেই । এই পরিস্থিতিটা আসলে অনেক বাস্তব ঘটনা । এধরনের অনেক "সমাজ সেবা" আমরা আশে পাশে দেখি দৈনিক ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
- প্রভা নামটা শুনলেই বুকের ভিত্রে কেমন কেমন জানি প্রতিভাময় কুকিলার ডাক শুনি! তাগো হাজার দোষ মাফ হয়ে যায়, অটোমেটিক!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ধুগো, সাইডে খাড়ান। লাইনে অলরেডি পচুর গিয়ানজাম।
মনামি আপা, লেখা চমৎকার লেগেছে, তবে -
এমনটা শুধু ঢাকা বা বড় শহরের পথশিশুদের মাঝেই দেখেছি, মফস্বল শহরের বাচ্চারা গরীব হলেও অপেক্ষাকৃত পরিষ্কার / ভাল ভাবেই থাকে। এমন একটা নদী থাকতে গায়ে তারা ময়লা থাকতে দিবে কেন?
হাছাই কইসেন মাগার এইডা নিজের চউক্ষে দেহা ভাইজান। আসলে ঢাকার কাছাকাছি হওয়ার কারণে হয়তো শহরটিতে ঢাকার বাতাস লেগেছে তাড়াতাড়ি - ব্যাপারটা আমাকেও আপনার মতই অবাক করেছিল।
ধাক্কা খেলাম।
================================================
পরদেশী বঁধু, ঘুম ভাঙায়ো চুমি আঁখি।
যদি গো নিশিথ জেগে ঘুমাইয়া থাকি,
ঘুম ভাঙায়ো চুমি আঁখি।।
পড়ে যান নি তো! অনেক ধন্যবাদ লেখা পড়ার জন্য।
ভালো লেগেছে গল্প।
সত্যি তো!
বেশ কিছুদিন পর পর এসে একটা টুইস্টেড গল্প দিয়ে আবার মিলিয়ে যান। এবার একটু ঘন ঘন আসবেন
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
সিমন ভাই এই কথা কইলে কেমুন লাগে। আপনেতো একাকাশেরকোটিতারারএকতারাহয়েগেছেন। আপনের গল্প পড়তে টেলিস্কোপে এংগেল কইরা খুঁজতে হয়।
---- মনজুর এলাহী ----
মুর্শেদ ভাইয়ের সাথে একমত। লেখাটা গল্প হইতে হইতে স্ন্যাপশট হয়ে গেছে মনে হয়।
এতেই ভালো লাগলো।
---- মনজুর এলাহী ----
নতুন মন্তব্য করুন