তাদের অতীত বলে কিছু ছিলনা। কারণ তাদের অতীতবাহী বয়ঃবৃদ্ধরা ছিলেন অনুপস্থিত। তাদের পুঁথিগুলো ছিল হরফশূন্য। তাদের ধর্মযাজকেরা ছিলেন মূক। এমনকি তাদের সামষ্টিক অবচেতন থেকে ঘষে তুলে দেয়া হয়েছিল পুরাণের জলছাপ।
একজন নেতার ডাকে তারা সমবেত হয়েছিলেন, তারা অতীতবিচ্ছিন্ন হয়েছিলেন এবং কাতারে কাতারে তারা এসে দাঁড়িয়েছিলেন একটি বসতিহীন ভূমিতে যেন পুরো পৃথিবীতে কেবল তাদেরই অস্তিত্ব রয়েছে আর রয়েছে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই।
তারা ছিলেন সুখী কারণ তারা স্বাপ্নিকের স্বপ্নের চেয়েও বিশাল কারখানার পত্তন করেছিল - যেখানে অহর্নিশি চলতো উৎপাদনের মহাযজ্ঞ। যন্ত্রের সঙ্গে ছিল তাদের আত্মিক সম্পর্ক।
তারা ছিলেন সুখী কারণ দিনান্তে যন্ত্র থেকে বিযুক্ত হওয়ার পর তারা অজ্ঞাতে অতীতকালের মানুষের মতই অগ্নিকুণ্ড ঘিরে তৈরি করতেন উষ্ণতার বলয়। ঐতিহ্যের মেদ ঝড়িয়ে ফেলা সংগীতের দেহবল্লরী তাদের উন্মাতাল করে তুলতো। নৃত্যের ঝংকার দাবিয়ে দিত ভাবনার পদশব্দ।
তারা ছিলেন সুখী কারণ তাদের সকলের কর্ম ছিল, খাদ্য ছিল, আবাস ছিল, সংগীত ছিল, আকাশ ছিল, উষ্ণতা ছিল আর সবকিছুই ছিল সম আকৃতির চৌকো বাক্সে রাখা।
তারা ছিল সুখী কারণ তাদের অতীত ছিলনা।
পৃথিবীকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে ভাগ করে নিয়েছিল বেনিয়ারা। আদম-হাওয়ার এই সন্তানদের আগ্রাসী ক্ষুধা কখোনো মেটেনা। তাই তারা অতীতের বেসাতি করে। কাউকে ইতিহাসের পথ বাতলে দেয় কাউকে দেয় আত্মপরিচয়ের সুত্র। আসলে তারা উপদেষ্টা। তাদের মূল্যবান উপদেশ অনুযায়ী অতীতকামী মানুষ লড়ে, মরে আর ক্ষুধার্ত বেনিয়াদের খোরাক হয়। বেনিয়ারা পান করে তাদের রক্ত, নেয় তাদের মাংসের আস্বাদ, কড়কড় করে চিবিয়ে খায় তাদের হাড়। তাও তাদের ক্ষুধা মেটেনা তখন তারা অস্ত্রের ব্যবসা করে। মানুষ মরে আর মরে আর মরে...কি আনন্দ!
কিন্তু তারা ছিলেন সুখী কারণ তাদের অতীত ছিলনা। যখন নেতার পতন ঘটলো তখন বেনিয়ারা ধর্মযাজকদের মুখের পাট্টা খুলে দিল। আফটার অল তারাই ছিল বেনিয়াদের সেরা এজেন্ট (তারা সবসময়ই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সফল হয়)। তারা কথা শানিয়ে কোট-টাই পড়ে পৌছে গেল তাদের বসতিতে। প্রথমেই তারা চৌকো বাক্সগুলোকে অসম করে দিল। হুলুস্থুল পড়ে যেতেই তারা শোনালো অতীতের কথা। হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার বাঁশির সুরে সম্মোহিত ইঁদুরদের মতো তারাও অতীত সমুদ্রে ঝাপ দিল কাতারে কাতারে। হাবুডুবু খেতে খেতে তারা শুনলো তাদের সুখী বর্তমানের মৃত্যুর নিঃশব্দ।
তাদের কারখানাটা এখনও উগড়ে দেয় তরল আগুন। সেই আগুনে তৈরি হয় অস্ত্র আর জাহাজ। বেনিয়াদের ক্ষুধা কখোনো মেটেনা।
মন্তব্য
দূর্দান্ত! জিব্রানের কবিতার মত ভাষা অথবা গসপেলের মত। এও কি এক রকম গসপেল নয়?
শেষের আগের অনুচ্ছেদে একটু হোঁচট খেয়েছি। এ'খানে শব্দচয়নের ব্যাপারে আরেকবার ভাবার অনুরোধ করছি।
বৈশ্যদের দিনই শেষ কথা নয়। আগামীতে শুদ্রদের দিন আসবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
অসংখ্য ধন্যবাদ।
শেষের আগের অনুচ্ছেদে কিছু শব্দ কিছু বিষয়ের ইঙ্গিত হিসেবে ব্যবহৃত। একটু নির্দিষ্ট করে বলবেন কি? তাহলে সুবিধা হতো।
ভীষণভাবে বিশ্বাস করি আসবেই শুদ্রদের দিন
অসাধারণ !
নিঃশব্দ মৃত্যু হবে সম্ভবত। বোধহয় ভুলে ফসকে গেছে।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
ইচ্ছা করেই নিঃশব্দ রেখেছিলাম, নৈশব্দ করে দেয়া যেতে পারে। অনেক ধন্যবাদ।
নৈঃশব্দ্য
নৈঃশব্দ্যও হইতে পারে।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
বাহ...এরকম লেখক থাকতে আমি কেন বইমেলা থেকে খালি হুআ কিনি???
ক্যান কিনেন? পরের বার আমার বই কিনবেন ঠিক আসে ? অনেক ধন্যবাদ।
অসাধারণ!!!!
-------------------------------------------------------------------
স্বপ্ন নয় — শান্তি নয় — ভালোবাসা নয়,
হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়
অনেক দিন আপনার লেখা নাই, ব্যপার কি? লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
অনেক দিন আপনার লেখা নাই, ব্যপার কি? লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
দুর্দান্ত!!!
===অনন্ত ===
ধন্যবাদ অনন্ত!
------------
থাম্বস আপ!
থ্যাংকু!
চমৎকার লেখা! কেমন একটা আশ্চর্য ম্যাজিকভাষা! আরো চাই এমন।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
চমৎকার লিখেছেন ।
নতুন মন্তব্য করুন