তাদের অন্ন ছিলনা, পেট ছিল
তাদের ছাদ ছিলনা, সম্পর্ক ছিল
তাদের মাটি ছিলনা, দেশ ছিল
আর ছিল পথ
...
নগরীতে যেহেতু উদ্বৃত্ত খাদ্যপ্রাপ্তির সম্ভাবনার শতকরা হার বেশি কাজেই পিঁপড়ার মত পিলপিল করতে করতে তারা এসেছিল, বিরক্তি উদ্রেক করেছিল অভিজাত নগরবাসীর। প্রচলিত রাষ্ট্রব্যবস্থায় তাদের নাম দেয়া হয়েছিল ছিন্নমূল অর্থাৎ যারা মূল থেকে ছিন্ন অর্থাৎ যাদের নিয়ে লোফালুফি করতে কোনো তাত্ত্বিক বাধা নেই। কাজেই নগরীর মসৃণ ত্বকে কুৎসিত জরুলের মত তাদেরকে উৎপাটন করা হলো।
বাড়ির অনাঙ্কাখিত কুকুরটিকে যেমন বস্তায় ভরে ফেলে আসা হয় নদীর ধারে যাতে তা গন্ধ শুঁকে ফিরে আসতে না পারে; ঠিক তেমনি নগরীর উপকন্ঠে একটি জলাকীর্ণ স্থানে ট্রাকে করে ফেলে আসা হলো তাদের।
আপনারা চিন্তা করিবেন না, অতিসত্বর সরকার আপনাদিগের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করিবেন।
যাদের মাটি ছিলনা তারা পেল মাটির আশ্বাস। সেই আশ্বাসের স্বপ্নের ঘোরে জল - কাদার মাঝে বসতি পড়লো।
তারা জানতোনা জল আঁধার টানে।
নগরীর কাঁচেঘেরা আলোর তলার অন্ধকার জমা হতো এই স্থানে। জল বেয়ে আসত মাদক আর অস্ত্র। রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিত্যক্ত এই কাঠামোটির উপযুক্ত ব্যবহারে চলতো আঁধারের বেসাতি। তারাও যুক্ত হলেন সেই বেসাতিতে।
সময়ের চাকা অব্যাহত রাখলো তার ঘুর্ণন।
অবশেষে রাষ্ট্রব্যবস্থা তাদের স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিল। একটি নির্ভরশীল প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব পেল তাদের ঘর গড়ার। কিন্তু ঘর গড়া হয়ে গেলে তারা দেখলো চড়ামূল্যে বিকিয়ে দেয়া হচ্ছে তাদের ঘর। কিনে নিচ্ছে সরকারি চাকুরিজীবি, ব্যবসায়ী, প্রবাসীরা।
বস্তিবাসীর আবার ঘর কী? বস্তিবাসীর পথই ঘর। উচ্ছেদ আর বিচ্ছেদের নিরন্তর খেলা।
মন্তব্য
অসাধারণ.....মসৃণ লেখা অথচ ভীষণ রুঢ় এক বাস্তবতা ধারন করে লেখাটি....অনেক ভালো লাগলো পড়ে।
অসাধারণ....মসৃণ লেখা কিন্তু সারক্যাজমের খোচাটি বোঝা যায় স্পষ্ট....অনেক ভালেঅ লাগলো পড়ে...
ধন্যবাদ শুচি!
চাঁছাছোলা ভাষায় কর্কশ বাস্তবতা। অসাধারণ!
______________
বিধিবদ্ধ পংকিলতা।
জীবন বাবু,তাঁর কবিতা।
তৃপ্তিদায়ী আত্মশ্লাঘা।
এবং এ রাতজাগা।
***************
ধন্যবাদ সহজীয়া।
অফটপিকঃ আমরা রাজশাহী আসতেসি।
ভাল হইছে, কিন্তু লাভ কি?
লাভ কি? হুম আসলেই লাভ নাই যদি আমরা চোখ, কান, মুখ বন্ধ করে বসে থাকি।
হ... এটাই সত্য...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
তাতো বটেই।
লেখা ভালো হয়েছে।
-------------------------------------------------------------
জানতে হলে পথেই এসো, গৃহী হয়ে কে কবে কি পেয়েছে বলো....
-----------------------------------------------------------------------------------------------------
" ছেলেবেলা থেকেই আমি নিজেকে শুধু নষ্ট হতে দিয়েছি, ভেসে যেতে দিয়েছি, উড়িয়ে-পুড়িয়ে দিতে চেয়েছি নিজেকে। দ্বিধা আর শঙ্কা, এই নিয়েই আমি এক বিতিকিচ্ছিরি
থ্যাংকু ।
ঢাকা শহরের একটা ডেমোগ্রাফিক (বা এথনোগ্রাফিক) হিস্ট্রি লেখা প্রয়োজন। জুলিয়ান সিদ্দিকী ফুলবাড়িয়া নিয়া লিখসিল। মামুন হক একটা দুর্দান্ত লেখা লিখসে, এতে গোড়ান-সবুজবাগের জনজীবন অনেকটাই পাওয়া গেসে। তুমি ভাষানটেক নিয়া লিখলা। এইরকম লেখাগুলা আমি ভালো পাই।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
আমারটা অবশ্য গল্প, তবে মামুন ভাই বা জুলিয়ান সিদ্দিকীর মত আরো লেখা সত্যিই প্রয়োজন।
নতুন মন্তব্য করুন