সকালে ঘুম ভাঙ্গার পর আয়না দেখাটা রেনুর অভ্যাস। ছোটবেলার এই অভ্যাসটা কিছুতেই ছাড়তে পারেনা। তাই দিনের শুরুতেই মনে গুমরে ওঠে আষাঢ়ের মেঘ। তারপর বাথরুমে পানির ঝাপটায় অন্তরের অবিশ্রান্ত বর্ষণ ধুয়ে ফেলে মুখে মুখোশ এঁটে নেয়া। চায়ের ধোঁয়া ওঠা কাপে বাস্তবের মুখোমুখি হওয়ার আশ্বাস খোঁজা। অত:পর স্বাভাবিক মানুষদের ভীড়ে মিশে নিজেকেও স্বাভাবিক ভাবার প্রয়াস।
চারিদিক থেকে চোখগুলোর ঘুরে যাওয়া বেশ টের পায় রেনু। আজকাল কেমন গা সওয়া হয়ে গেছে। তাই একবারও না থমকে নির্বিকার হেঁটে যেতে পারে। মুশকিলটা হয় যখন নিজের চোখ দুটো বন্ধ করে। হাজার হাজার বিস্ফোরিত চোখের দৃষ্টি তাকে বিদ্ধ করে কাঁটার মত।
অনেক ভেবেছে রেনু। সবাই যা করতে পারে তা সেও করতে পারে। সবার মত সেও বাসে চড়ে, রাস্তায় হাঁটে, আড্ডা দেয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়, চা বানায়। তবে কেন তার দিকে ঘুরে যায় চোখগুলো, কেন ফিসফাসের ঝড় ওঠে, কেন দীর্ঘশ্বাসের লু হাওয়া পুড়িয়ে দেয়।
এতসব ভাবতে ভাবতেই দোকানটিতে ঢুকে পরে রেনু। টিউশ্যনির টাকা হাতে পেয়েছে। আগে থেকেই পছন্দ করে রাখা পোষাকটি আজ কিনবে সে। তবে আগে একটু পরখ করে নিতে চায়। দোকানের কর্মচারিটির চোখেও সেই একই দৃষ্টি, কন্ঠে দ্বিধাজড়িত প্রশ্ন?
আপা সত্যিই এই ড্রেসটা নিতে চান?
হ্যা এটাই নেব, আমি কি একটু পরে দেখতে পারি?
পরোয়া না করেই ঢুকে পড়ে ট্রায়াল রুমে। লম্বা আয়নায় হাতাহীণ পোষাকে নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে থাকে অপলক। একটি হাতের শূন্যতা কী অনেক বড় শূন্যতা, যা ছাপিয়ে যায় বাকি সব কিছুর অস্তিত্ব?
মন্তব্য
সুন্দর!
গল্প সুন্দর হয়েছে। সত্যটা নিষ্ঠুর।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
নিষ্ঠুর সত্যরা পাশ দিয়ে হেঁটে যায় আমরা ফিরেও তাকাইনা, কল্পসত্যের মায়াজালে আটকে থাকি মাকড়শার মত। ধন্যবাদ।
ভালো হয়েছে গল্পটি।
------------------------------------------------------------
জানতে হলে পথেই এসো, গৃহী হয়ে কে কবে কি পেয়েছে বলো....
-----------------------------------------------------------------------------------------------------
" ছেলেবেলা থেকেই আমি নিজেকে শুধু নষ্ট হতে দিয়েছি, ভেসে যেতে দিয়েছি, উড়িয়ে-পুড়িয়ে দিতে চেয়েছি নিজেকে। দ্বিধা আর শঙ্কা, এই নিয়েই আমি এক বিতিকিচ্ছিরি
ধন্যবাদ। তুমি তোমার ভালো ভালো কবিতাগুলো আমাদের পড়ার সুযোগ করে দিচ্ছনা কেন?
--------------------------------------
জানতে হলে পথেই এসো, গৃহী হয়ে কে কবে কি পেয়েছে বলো....
-----------------------------------------------------------------------------------------------------
" ছেলেবেলা থেকেই আমি নিজেকে শুধু নষ্ট হতে দিয়েছি, ভেসে যেতে দিয়েছি, উড়িয়ে-পুড়িয়ে দিতে চেয়েছি নিজেকে। দ্বিধা আর শঙ্কা, এই নিয়েই আমি এক বিতিকিচ্ছিরি
অসাধারণ
সুন্দর
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
অনেক সুন্দর লেখা। শেষের চমকটাও ভালো। অনেক ভারো ভালো ছোট গল্পের শেষে এমন একটি চমকানো ব্যাপার থাকে।
গল্পটা সুন্দর। শেষের চমকচটাও ভালো। অনেক ভারো ভারো ছোটগল্পের শেষে এমন একটা চমকানো ব্যাপার থাকে।
নতুন ধরণের টার্ন দেখতে পাচ্ছি। সাবজেক্টের চেয়ে টার্নটাই যেন বড় না হয়। এটাতে দুটাই আছে, বলা বাহুল্য। (কিন্তু বাহুল্য হইলে কইলাম ক্যান ?)
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
টার্নটা সত্যের রুঢ়তাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। খেয়াল রাখবো। ধন্যবাদ।
যাদের গল্প ভালো লেগেছে তাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ভালো লাগলো...।
ভালো
নতুন মন্তব্য করুন