টালমাটাল পায়ের ধাক্কায় পানিভরা জেরিকেন উল্টে ফুটপাতের ঘুম ছুটিয়ে দেয় আরিফ। বন্ধ দোকানের গায়ে টাঙানো মশারির ওপর প্লাস্টিকের শিট বিছিয়ে তিন কোনায় তিনটি ভর দিয়ে তৈরি পানি ও মশানিরোধক ঘুমবাসার ওপর এই ধরণের বেহুদা আক্রমণে অভ্যস্ততার দরুণ চটপট সবকিছু আবার ফিরে যায় আগের জায়গায়। তবে প্রতিআক্রমণে অব্যর্থ গালির বাণ ছুঁড়ে দিতে ভুল হয়না।
- ফারাওরা গালি দেয় দেখি !
: কি কস শালা ফারাও-মারাও। মদ খায়া মাতলামি না কইরা শালায় শুরু করসে আতলামি। চল তোরে একটা জায়গায় নিয়া যাই।
রাত নামলেই ফুটপাতে পিরামিড গজায়, রাস্তাটা হয়ে যায় নীলনদ। আর শহরের কোনায় কোনায় আরব্যরজনীর শাহজাদিরা খুলে বসে মোহনীয় গল্পের ঝাঁপি।
- অই তুই আমারে বাসায় নিয়া আসছিস ক্যান?
: আরে কি কয়? হ তোরই বাসা, আয় ।
কুমারি বিছানার কোনায় পা গুটিয়ে বসে আছে এক শাহজাদি।
- নাম কী?
: টিয়া, টিয়া পাখি।
- আসল?
: নামে কিবা আসে যায় কামে পরিচয়।
- আসল নাম নাই?
: চায়না, আমার নাম চায়না। দুইটা বোনের পর যখন আমি হোলাম তখন আমার ফুপু বললো আর মেয়ে চাইনা। তাই আমার নাম হলো চায়না। মেয়ে কেউ চায়না। ... বিশ্বাস করতেসেন না? এইখানে বানাইন্যা নাম বলাই নিয়ম। আমিও বলি - ক্যাটরিনা, কারিনা, শাবনুর - আপনার কারে ভাল্লাগে?
- তোমার বয়স কত?
: বয়স দিয়া কি করবেন?
মেয়েটা এগিয়ে এসে বুকে তুলে নেয় আরিফের মাথা।
: আহারে! আপনার কি খুব কষ্ট হইতেসে? আপনি ঐসব খারাপ জিনিস খাইসেন ক্যান? আমার মাথা ছুয়ে বলেন আপনি আর ঐগুলা খাবেন না। বলেন!
আরিফের জীভে ঠোকর দিয়ে যায় পেটে পাক খেতে থাকা ভদকা, শিক-কাবাব, নানরুটি, সালাদ। স্বতন্ত্র স্বাদে বিচ্ছিন্ন আবার তিক্ততায় একত্রিত।
- বাড়ি কই তোমার?
: আমার বাড়ি? সিরাজগঞ্জ। কিন্তু বাড়ি তো নাই।
- বাড়ি নাই মানে?
: নদীতে নিসে। লাইট নিভাবেন না?
- কেন?
: তাহলে কি লাইট জ্বালায়েই? আমার তো লজ্জা করে।
- ঐসব পরে। কথা বলি?
: আপনার কি আমার পা দেখে ঘিন্না লাগতেসে? পা গায়ে লাগবেনা। এই ঘায়ের জন্য তিনদিন কেউ নেয় নাই। আপনিও যাবেনগা...
- না না অসুবিধা নাই।
: আরে পায়ের দিকে আপনার চোখই যাবেনা, আসেন না, আসেন...
আরিফের অন্ধ শরীর অযথাই উষ্ণতা খোঁজে। গড়িয়ে পড়া ঘামে আরো বাড়ে শীতলতা।
টাকা বের করতে করতে উঠে দাড়ায় আরিফ। ঐ হারামি শালা মজা মারুক। তার বাড়ি ফেরার সময় হয়েছে।
: চলে যাইতেসেন? আবার আসলে কিন্তু আমার কাছে আইসেন। আমার নাম চায়না...
সংযুক্ত ছবি : মার্কিন শিল্পী বার্নেট নিউম্যানের শিরোনামহীন
মন্তব্য
গল্পটা ভালো লাগলো। থিমটা একটু প্রচলিত হলেও, মন্দ না।
কিছু জায়গায় সংলাপ আরোপিত মনে হয়েছে, পুরাপুরি বাস্তবানুগ মনে হয় নি। তবে সব মিলিয়ে পড়তে মন্দ লাগে নি।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
লিখাটি কিছুটা সংলাপ সর্বস্ব অনুভূত হল, আরো কিছুটা দৃশ্যায়ন হলে মনেহয় ভালো লাগত আমার কাছে..। লেখনীর সাবলীলতা ভাল লাগল।
ছেড়া পাতা
ishumia@gmail.com
ঘ্যাচাং
অসাধারণ দুইটা লাইন।
আর গল্পটার কিছু সংলাপ একটু একঘেয়ে লেগেছে। হয়তো ওদের বলবার কথাগুলো একই, তাই। লেখকের তেমন কিছু করার নেই হয়তো।
পড়তে গিয়ে সামান্য আটকে গেছি। কোন সংলাপটা কার বলা বোঝা যায়নি মাঝে মাঝে।
- ফারাওরা গালি দেয় দেখি !-আরিফের সংলাপ....
কিন্তু উত্তরটা কার?
আর ঘুমবাসা মানে কী?
জহিরুল ইসলাম নাদিম
প্রথম সংলাপ দু'টা ঠিক বুঝিনি।
গল্পের শুরু বলেও যদি কিছু ধরা যায় কিন্ত শেষ টা যেন জোর করে টেনে আনা । ডায়ালগ শব্দ সর্বস্ব খুঁজে পেয়েছি তার অন্তর্থক কিছু পাইনি । বুঝতে পারছি না যদি সিরিজ হতো তাহলে পরের পর্বের জন্য রেখে দিতাম চিন্তাকে দানা বাধাতে ।
আরো লিখুন । আপনার লেখা সাথে পরিচিত হই -
গল্পের শেষটা কিছুটা আরোপিত মনে হয়েছে। কথপোকথনের পরে আরো কিছু বিবরণ থাকলে ভাল হত। শব্দের ব্যবহার ভাল লেগেছে। সব মিলিয়ে খারাপ না।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
গল্পের শুরু শেষ থাকাটা খুব জরুরি নয় বলেই আমি মনে করি। গল্প হওয়ার দায়িত্ব নিতে গিয়ে অনেক বাস্তবতাকেই ডিস্টর্টেড হতে হয়। তাই খেলাটা বিপজ্জনক। কিন্তু সমস্য হল : বাস্তবতাই যখন বাস্তবতার 'স্ট্যান্ডার্ডে' ডিস্টর্টেড ... করণীয় কি থাকে? এই প্যাঁচ সহজে ছুটবে বলে মনে হয় না।
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
বাস্তবতাই যখন বাস্তবতার স্ট্যান্ডার্ডে ডিস্টর্টেড- ফলাফল দূর্বল গদ্য। করণীয়- গল্পের ঘষামাজা।
ধরে নিচ্ছি আপনি আমার মন্তব্যের প্রতিমন্তব্য করেছেন। কিন্তু আমি একটু অস্বস্তিতে আছি যে আপনার মন্তব্যের সুরটি লেখককে প্রেসক্রিপশন দেয়ার মতো হয়ে গেছে (একান্তই আমার নিজস্ব ধারণা)। এতে আমি অংশ নিতে উৎসুক নই। আমার মন্তব্যটির দূরতম উদ্দেশ্যও যে তা ছিল না, সেটি গল্পলেখককে জানিয়ে গেলাম।
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
গল্প পড়তে ভালো লেগেছে...
এটুকু জানি আর জানিয়ে গেলাম তাইই...
--------------------------------------
জানতে হলে পথেই এসো,
গৃহী হয়ে কে কবে কী পেয়েছে বলো....
-----------------------------------------------------------------------------------------------------
" ছেলেবেলা থেকেই আমি নিজেকে শুধু নষ্ট হতে দিয়েছি, ভেসে যেতে দিয়েছি, উড়িয়ে-পুড়িয়ে দিতে চেয়েছি নিজেকে। দ্বিধা আর শঙ্কা, এই নিয়েই আমি এক বিতিকিচ্ছিরি
আরেক দীর্ঘ হলে বোধ হয় আরো বেশি ভালো লাগতো।
*************************************************************************
ভবিষ্যতে কি হবে তা ভেবে বর্তমানকে উপেক্ষা করবো কেনো?
____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"
ভালো লাগলো আরও ভালো লেখা চাই্
নতুন মন্তব্য করুন