কাজে ক্ষান্ত দিয়ে জহিরুল আলম ফেসবুকে ঢুকলেন।
ফেসবুকে চেনা, আধা-চেনা, অচেনা মানুষের ছবি দেখা জহিরুল আলমের একটা প্রিয় কাজ। ছবি দেখে তাদের সম্পর্কে ধারণা করার চেষ্টা করেন। কেমন তাদের জীবন? তারা কি সুখী? তাদের স্বপ্ন কী? এইসব ভাবতে তার ভাল লাগে। অচেনা মেয়েদের সঙ্গে কথা বলতেও তার ভালো লাগে যেহেতু, নিজেকে নানা নতুন আকার ও প্রকারে উপস্থাপনের সুযোগ পাওয়া যায়।
আপনার স্বপ্ন কী? ফেসবুক চ্যাটে যখন একটা মেয়ে হঠাৎ এই প্রশ্ন করে বসলো তখন জহিরুল আলম একটা লাগসই উত্তর খুঁজতে হিমশিম খেয়ে গেলেন। তিনি একটি রোমান্টিক ধাঁচের জবাব দিতে চাচ্ছিলেন যাতে মেয়েটা তার প্রতি আকর্ষিত হয়। কিন্তু এই উত্তর খুঁজতে গিয়ে তিনি লক্ষ্য করলেন তার কোনো স্বপ্ন নাই। এই উপলব্ধি তার মন অস্বস্তিকর ভীতিতে ভরে দিল। তিনি অফলাইন হয়ে গেলেন।
জহিরুল আলম টিভিতে দেখেন শিশু, কিশোর, তরুণ এমনকি বৃদ্ধেরও স্বপ্ন আছে, স্বপ্ন পূরণের লড়াইয়ে নেমেছে সবাই। কোনো না কোন ভাবে সবার স্বপ্ন বাকিরা কেবল তাকেই দেখুক, কথা হোক কেবল তাকে নিয়েই। জহিরুল আলম অনেক ভেবে দেখলেন তার কোন স্বপ্ন নাই।
জহিরুল আলম এরপর ভাবলেন বিষয়টিকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সমাধা করা উচিৎ। অতএব তিনি প্রতিদিন ৫ জন করে মানুষের স্বপ্ন জানার সিদ্ধান্ত নিলেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জবাবগুলো ছিল বাড়ি বা গাড়ির মালিকানা, সুন্দরী স্ত্রী, বিত্ত ও বীর্যবান স্বামী, বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি, উন্নত দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস জাতীয়। কিছু ব্যতিক্রমী জবাবও ছিল যেমন চলচ্চিত্র নির্মাণ বা বই প্রকাশ। কিন্তু জহিরুল আলমের স্বপ্নের অন্বেষণ সফল হলো না।
এরপর জহিরুল আলম ঘুমাতে শুরু করেন। প্রথম প্রথম ঘুমের মাত্রাটা একটু বাড়িয়ে দিয়েছিলেন আর কি। এরপর টিভি দেখা, আড্ডা দেয়া, বেড়াতে যাওয়া এধরনের অপ্রয়োজনীয় কাজগুলোর বদলে ঘুমিয়ে সময় কাটানো শুরু করেন। তারপর দেখা গেল ক্লায়েন্টের সঙ্গে মিটিং করার সময় বা কিংবা বাজার করার সময়ও তিনি ঘুমিয়ে পড়ছেন। এমতাবস্থায় তাকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে একটি উন্নত সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়।
তারপর তিনি তার স্বপ্নটা দেখেন বলে ধারণা করা হয় কারণ তখন তার মুখে অপার্থিব আনন্দের রেশ ফুটে উঠতে দেখা যায়। যদিও ততদিনে তিনি নিদ্রা ও জাগরণের পার্থক্য নিরুপণের ক্ষমতা হারিয়েছেন। তার অব্যবহিত পরেই জহিরুল আলম পাকাপাকিভাবে ঘুমিয়ে পড়েন।
অফলাইন:
একটি গভীর দীঘি। কালো শান বাধানো ঘাটের সিড়ি নেমে গেছে অনেকদূর পর্যন্ত। শেষ ধাপের বসে দীঘির কালচে সবুজ পানিতে পা ডুবিয়ে রেখেছে একটি ছোট্ট ছেলে। ছেলেটার চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। দীঘির পানিতে এক ফোঁটা পড়তেই পানির রং নীল হয়ে গেল আর ভুশ করে ভেসে উঠলো মায়াবী চোখের একটা বিশাল বড় মাছ। ছেলেটা কাঁদতে কাঁদতে বললো - আমাকে ওরা নিয়ে যাবে । মাছটা বললো - তুমি আমার সঙ্গে চলো। ছেলেটাকে কাঁধে করে মাছটা তাকে নিয়ে গেল গভীর পানির দেশে।
মন্তব্য
স্বপ্নের আগামাথা বুঝি নাই, কিন্তু সুন্দর। গল্প ভাল্লাগছে।
স্বপ্নের আগামাথা থাকে না বইলাই ওইটা স্বপ্ন। আপনার ভাল্লাগছে জাইনা আমারও ভাল্লাগলো।
শেষটা 'বিগ ফিশ' এর কথা মনে করিয়ে দিলো
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
হুম
জ্যোৎস্না কিরণের মতো স্বচ্ছ-সাবলীল বর্ণনা!
রোমেল চৌধুরী
বাহ! ভালো লাগলো।
ভালো থাকুন নিরন্তর।
সাবরিনা সুলতানা
ধন্যবাদ। আপনিও অনেক অনেক ভালো থাকুন।
গল্পটা খুব ভালো লাগল, কেমন যেন ভালো
আমার শেষ পত্রের উত্তর পাই নাই এখনো।
পানির দেশেই কেন?
ভাল্লাগছে।
অলস সময়
হুদাই, কুন কারণ নাই।
ভালু লাগে নাই।
ভালু পাইলাম।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
আমিও ভালু পাইলাম
একটু অসংলগ্ন লাগলো। একজন জিজ্ঞেস করলো আপনার স্বপ্ন কি? সেই স্বপ্ন কি জানার জন্য সব কাজ ছেড়ে দিয়ে ঘুমানো। এরপর ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখা...
=================================
"রঙিন কাফনে মোড়া উৎসুক চোখে
ছায়া ছায়া প্রতিবিম্ব দেখি
মানুষ দেখি না।।"
=================================
"রঙিন কাফনে মোড়া উৎসুক চোখে
ছায়া ছায়া প্রতিবিম্ব দেখি
মানুষ দেখি না।।"
ঠিকই ধরসেন।
গল্পটা ভালো লেগেছে। শুধু ভালো না, খুব ভালো লেগেছে।
কাকস্য পরিবেদনা
গল্প ভালো লেগেছে, গল্পের ভাষা ভালো লাগেনি। আসলে এমন একটা চমৎকার গল্পের বর্ণনার স্টাইলটা জুতমত হয়নি বলে মনে হয়েছে।
'অফলাইন'টা দেবার মাজেজা কী? অনলাইনের সাথে অফলাইনের একটা correlation-এর অভাব বোধ করেছি।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
সহমত।
অফলাইনটা একটা খোয়াব। এটার মাজেজা খোয়াবনামায় খোঁজা যাইতে পারে।
অফলাইনেও স্বপ্ন দেখা সম্ভব! নাকি সব স্বপ্নই অফলাইন।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
এ ভ্রমণ, কেবলই একটা ভ্রমণ- এ ভ্রমণের কোন গন্তব্য নেই,
এ ভ্রমণ মানে কোথাও যাওয়া নয়।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ভাবছি ... স্বপ্নরাই যদি অনলাইন হয়? আর রিয়াল লাইফটাই অফলাইন?!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
গল্পের ভাষা কেমন যেন প্যাটার্নড লাগল, ঠিক বলতে পারব না কার মত। আর গল্পে কোন মেসেজ দিয়ে থাকলে ধরতে পারি নাই
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
লেখাটা বেশ ভালো লেগেছে। আরো ভালো লাগতো যদি পাঠককে কল্পনার আরেকটু সুযোগ দেয়া হতো। গল্পটা তো এমনই। কিন্তু এতো দ্রুত এগিয়েছে যে স্বপ্নরাজ্যের নাগাল পাবার আগেই সমাপ্তি।
গল্পটার বারোটা বাজানোর জন্য গল্পের শেষ লাইনটাই অতিরিক্ত হয়ে গেছে !
আর অফলাইনের খুব কি প্রয়োজন ছিলো ?
ভালো গল্প।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
এ জায়গায় এসে কেন জানি মনে হচ্ছিল গল্পের নামটা অফলাইন না হয়ে লগআউট হলে ভাল হত...
--------------------------------------------
আজি দুঃখের রাতে, সুখের স্রোতে ভাসাও তরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।
--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।
মাথার উপ্রে দিয়া গেল। ধরতে পারলাম না , তয় মনে হয় ভালা হৈসে ।
পাগল মন
অনেক ভাল লাগল।
ইদানীং ভয়াবহ কাজের চাপ যাচ্ছে। বেশ কিছু ডেডলাইন মিট করতে হবে। আজকে ক্ষ্যামা দিয়ে সচলায়তনে ঢুকে পড়েছি। কাজের চাপের কারণে যা হয়, দুঃস্বপ্ন দেখলাম গত সপ্তাহে বেশ কিছু, আর ঘুমও ছাড়া ছাড়া হচ্ছে। কিন্তু এটা পড়তে বেশ লাগল। আর আমার কাছে অফলাইনের স্বপ্নও ভালো লেগেছে। কিন্তু স্বপ্নের সাথে ভদ্রলোকের যোগাযোগটা... আচ্ছা বেশ আমি আমার মতো করেই ধরে নেই বরং।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
গল্পটা বুঝলাম, খেই হারিয়ে গেলাম ভাষার জন্যে। ভালো লেগেছে।
-----------------------------------------------------------------------------------
...সময়ের ধাওয়া করা ফেরারীর হাত থিকা যেহেতু রক্ষা পামুনা, তাইলে চলো ধাওয়া কইরা উল্টা তারেই দৌড়ের উপরে রাখি...
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
ajaira vaab
নতুন মন্তব্য করুন