চন্দ্রাহুত

মনামী এর ছবি
লিখেছেন মনামী (তারিখ: শুক্র, ২৯/১০/২০১০ - ১২:০২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

চাঁদটা ঘুনে খায় আর মতলু মিয়া ভাবে প্রতিবারই একই কাণ্ড। বাটালি দিয়ে ছেঁচে ছেঁচে অন্ধকার তুলে কত কষ্টে চকচকে গোল চাঁদটাকে বের করে আনো। একটা দিন যায় কি না যায় সঙ্গে সঙ্গে ধরে ঘুন। আর মিহি হলদেটে সাদা গুড়া ঝরে পড়ে মতলু মিয়ার মুখের উপর। আর পড়েই গলে ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা।

ক্ষিদায় চাঁদের ভাবনা মাথা থেকে দূর হয়। আলেয়াকে ডাকে - চল খেয়ে আসি। রাতের বেলায় খাবার খোঁজা বড় কষ্ট। মানুষে ভয় তার, ভীষণ ভয়। ঐ লেংড়িটা তার সঙ্গী নিয়ে হানা না দিলেই হলো। আগাতেই ঘেউ দিয়ে লেংড়ি জানিয়ে দেয় - উপস্থিত। মতলু মিয়া বলে, আলেয়া খাওন পাই না রে...

মতলু মিয়া সারাদিন হাঁটে। হাঁটে আর আলেয়ার সঙ্গে কথা বলে। ঘুনে ধরা চাঁদের কথা, কাকের কথা, নদীর কথা। আলেয়া মাঝে মাঝে মানুষের কথা বলে। মতলু মিয়া ভয় পায়। সে আবার হাঁটে।

মতলু মিয়া আগে মানুষদের সঙ্গে থাকতো। তারা বাক্সের পূজা করে। মতলু যখন বললো আমার বাক্স ভাল্লাগেনা, আলেয়ার বাক্স ভাল্লাগেনা; তখন তারা বাক্সে করে শেকল নিয়ে আসলো। আলেয়া বললো, চলো যাইগা।

তারপর থেকেই মতলু মিয়া হাঁটে। হাঁটা মানে এক জায়গায় না থাকা। মানে কোথাও না থাকা। যে কোথাও থাকেনা তাকে কেউ দেখতে পায়না। যাকে কেউ দেখতে পায়না সে সবাইকে দেখতে পায়। যে বাক্সে থাকে তাকে সবাই দেখতে পায়।

মতলু মিয়া হাঁটে, আলেয়া হাঁটে, ঘুনে ধরা চাঁদও হাঁটে। মতলু মিয়া ভাবে কখন চাঁদটাকে ঘুনে পুরোপুরি খেয়ে ফেলবে। চাঁদের গুড়া ঝরে ঝরে পড়বে আর দুনিয়াটা ঠান্ডা ঠান্ডা লাগবে আর যখন অন্ধকার খেয়ে ফেলবে আলোকে তখন কেউ তাকে দেখতে পাবেনা।


মন্তব্য

অদ্রোহ এর ছবি

পয়লা শিরোনামটা মনে হয়েছিল চন্দ্রাহত, পরে দেখলাম চন্দ্রাহুত।

গল্প ভাল্লাগসে, কিন্তু কী জানি একটা ধরি ধরি করেও ধরতে পারিনাই।

--------------------------------------------

আজি দুঃখের রাতে সুখের স্রোতে ভাসাও ধরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

মনামী এর ছবি

ভাল্লাগলেই হইলো। ধরতে না পারলে নাই।

সাইফ তাহসিন এর ছবি

দারুণ এক সিজোফ্রেনিক আপনার এই মতলু মিয়া! দেইখেন পাবলিক আবার গনধোলাই না করে, হাজার হইলেও মাইরের উপরে ওষুধ নাই।

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

মনামী এর ছবি

আমাদের থেকে ভিন্ন যারা তাদেরকে ধোলাই দেয়ার জন্য আমাদের হাত এত নিশপিশ করে দেখেই আমাদের এই অবস্থা! একটা নৃশংস সমাজের গর্বিত সদস্য আমরা!

সাইফ তাহসিন এর ছবি

এক্কেবারে, চিন্তা করে দেখেন, স্কুলে থাকতে যে ছাত্রছাত্রীগুলো একটু স্লো হয় বা অন্যকোন সমস্যা থাকে, ধোলাই সেখান থেকেই শুরু হয়, আমাদের শিক্ষক সমাজের কাছে মাইরের উপরে ওষুধ নাই। ছোট বেলা থেকে পাওয়া আমাদের এই প্রশিক্ষন বৃথা যাবে কিভাবে? তবে হ্যাঁ, এ সমাজের গর্বিত সদস্য আমরা কিন্তু একা নই।

আমার এক পরিচিত ডাক্তার ত্রিনিদাদের ভদ্রলোক বলছিলেন আমাকে এক ADD এর রোগী দেখার পর যে সৌভাগ্য বাচ্চাটার, এই ঘটনা ত্রিনিদাদে হলে বেত ছাড়া অন্যকিছু জুটত না।

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

অতিথি লেখক এর ছবি

থিমটা ভাল্লাগছে। আমরা সবাই বাক্সের ভিতরে সভ্য মানুষের অভিনয় করে যাচ্ছি।

আপনার প্রতিটা গল্পের থিমই ব্যতিক্রম।

অনন্ত

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চন্দ্রাহুত হওয়া ভালু না... লুকে মন্দ বলে মন খারাপ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

গল্পের মধ্যে কবিতা-কবিতা গন্ধ পেলাম। সেটা ভাল না খারাপ জানি না, তবে পড়তে ভাল লেগেছে। গল্প আর কবিতার মাঝে ব্যবধানটা বোধয় আস্তে আস্তে কেটে যাচ্ছে।


ফারাবী

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

ভাল্লাগসে আপু। যারা বাক্সের বাইরের মানুষ তাদের জন্যে দুনিয়া জায়গাটা খুব একটা সুবিধার না! মন খারাপ

-----------------------------------------------------------------------------------
...সময়ের ধাওয়া করা ফেরারীর হাত থিকা যেহেতু রক্ষা পামুনা, তাইলে চলো ধাওয়া কইরা উল্টা তারেই দৌড়ের উপরে রাখি...

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

সবসময় বাক্স কিন্তু খুব খারাপ না মনে হয়, বাইরের কেওস থেকে রক্ষা করে। কিন্তু মাঝেমাঝে বাক্সটাকে রিডিফাইন করা দরকার সময় আর স্রোতের পরিপ্রেক্ষিতে। মাঝে মাঝে ভেঙে ফেলাও দরকার!
খালি বাক্সের বাইরে বেরুতে চাইলেই বা বেরুবার সময় আর কাওকে হাতছানি দিলেই কেন যে তাদের সবার বাক্সেরি গভীরে গিয়ে লুকাতে বা বাক্সের বর্ডারগুলো মনে করিয়ে দিতেই এত ভাল লাগে তা যদি বুঝতাম ত বেশ হতো!

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

... [অতিথি] এর ছবি

বাক্স জিনিসটা সব সময়ই খারাপ। সোনা দিয়ে তৈরি হলেও শেকল কখনও আনন্দদায়ক হয় না।

প্রতিটি শিশু জন্মায় স্বতন্ত্র হয়ে। পরে পরিবার, সমাজ, শিক্ষাব্যবস্থা, ধর্ম, রীতি, আচার তাকে আস্তে আস্তে বাক্সবন্দি করে ফেলে। আমাদের অধিকাংশের জীবন কেটে যায় এই অবস্থাতেই। হয়তও কখনো টেরও পাই না চারপাশে বাক্সের দেয়াল, কুয়োর ব্যাঙ যেমন জানে না বাইরের বিশাল পৃথিবীর অস্তিত্বের কথা।

দ্রোহী এর ছবি
সবুজ বাঘ এর ছবি

হ। লাইফ ইজ নাথিম বাট মুন ইজ ভেরি হট।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

বাঘার উপ্রে আর কতা না কওনই ভালো।

--------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

... [অতিথি] এর ছবি

অসাধারণ লেখা। বরাবরই আমি আপনার লেখার ভক্ত।

খেকশিয়াল এর ছবি

দারুণ! দারুণ! দারুণ!

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।