মান্নান সাহেবের অসুখ

মনামী এর ছবি
লিখেছেন মনামী (তারিখ: শুক্র, ১২/১১/২০১০ - ১:৪৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

খুব সম্ভবত পার্কিনসন্সের রোগী লোকটা। হাত কাঁপছে অনবরত, শরীরটা ঝুকে আছে সামনের দিকে। ঠোটের কিনারে খানিকটা ঝুলে আছে জিহ্বা। ঘোলাটের চোখের মনিটা স্থির হচ্ছেনা কিছুতেই। কিন্তু কণ্ঠের দাপট বুঝিয়ে দেয় জীবন এখনও পিছু ছাড়েনি কিংবা তিনি ছাড়তে দেননি।

চার হাজার টাকা দিবেন একশো টাকায়।

দুই হাজার দিলে হয়না মান্নান ভাই, একশো টাকার নোট একটু শর্ট আসে।

না, না, হবে না ঈদের সময় না!

আরে ভাই যা আসে তারে দিয়া বিদায় করেন তো ভাই।

ঠিক লোকটার পেছনেই অপেক্ষমান এক ত্রিশোত্তর ব্যক্তি বলে ওঠেন ত্রস্ত সুরে। বেশকিছুক্ষণ ধরে মিষ্টি গলায় ‘ও মাই গড’, ইশ! উফ! করতে থাকা বালিকারা যারা তারই মত টাকা তোলার অপেক্ষায়, হয়তো উৎসাহিত করেছে তাকে। কারণ তার এই বাক্যব্যয়ে তাদের মধ্যে একজন খিলখিল করে হেসে ওঠেন। তিনি আরো উৎসাহিত হন এবং বলেন ‘কি রে ভাই আমরাও তো টাকা তুলবো নাকি!’

এই সংঘবদ্ধ রোষের উত্তাপ তাকে স্পর্শ করে না, তিনি সময় নিয়ে টাকা গুনতে থাকেন।

কি মান্নান ভাই ঠিক আসে তো?

ঠিক না থাকলে হবে? ব্যাংকের লোক যদি ভুল করে তাইলে কাজ কী আমরা করবো? আমার ব্যালেন্সটা কত দেখেন তো?

বুকপকেট থেকে বের হয় একটা এ ফোর সাইজের কাগজ যার শরীরে ভাজের দাগ জানান দেয় বয়স তার নেহাৎ কম নয়। নানা রং এর কালিতে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হরফে হিসাব কষা। এর মধ্যে কোথাও জায়গা খুঁজে নিয়ে লিখে রাখেন ব্যালেন্স। একটা প্লাস্টিকের থলে বের করে সযত্নে ঢোকান টাকাগুলো। তারপর বের হয়ে যান।

ইয়ে মানে, মান্নান ভাইয়ের কাজ ঠিকমতো না করলে কাউন্টারের ভেতরে চলে আসে বুঝলেন। এই কারণে একটু সময় বেশী নিতে হইলো। মাথায় একটু ইয়ে আসে তো, হে হে হে...

আব্বা টাকা নিয়া আসছো?

হ্যা, এই নে...

চার হাজার টাকার একশো টাকার নোট আনতে বলসিলাম না? তিন হাজার টাকার আনসো ক্যান?

ব্যাংকে ছিল না, যা ছিল সব দিয়া দিল।

ব্যাংকে আবার টাকা থাকেনা! এইটা কোনো কথা হইলো? ফালতু কথাবার্তা!

ব্যালেন্স লিখা আনসি

ধুত্তোর তোমার ব্যালেন্স...

মান্নান সাহেবের মাথাটা বুকের কাছে ঝুলে পড়ে। একদৃষ্টিতে তিনি তার অনবরত কাঁপতে থাকা হাতের দিকে তাকিয়ে থাকেন।


মন্তব্য

বরফ এর ছবি

কি আজব চিকিৎসাহীন এক রোগ! ভাল মানুষকে একদম বিছানায় নিয়ে ফেলে।
আশেপাশের অবুঝ, বিরক্ত আর উপহাসকারী মানুষদের জন্য একরাশ ঘৃণা রইলো।

মনামী এর ছবি

পাপকে ঘৃণা কর পাপীকে নয়। গল্প পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

মুস্তাফিজ এর ছবি

এইটা কী!!!

...........................
Every Picture Tells a Story

মনামী এর ছবি

এইটা গল্প লেখার একটা ক্ষুদ্র প্রয়াস

নিবিড় এর ছবি
মনামী এর ছবি

দেঁতো হাসি

দ্রোহী এর ছবি

গল্পটা দুর্ধর্ষ! কিন্তু ফুটোস্কোপিক হয়ে গেছে। আরেকটু বড় করে আবার লিখবেন? দুর্দান্ত গল্প হবে।


কাকস্য পরিবেদনা

মনামী এর ছবি

পারলে কি আর লিখতাম না রে ভাই। আমি তো বড় হয়ে ভালো গল্পকার হইতাম ছাই।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

এইটা অনেক শার্প হইসে। আঙ্গুলমাঙ্গুল কাটে নাই তো?


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আঙুল কাটাকাটি চলবেনা। এমন শার্পই ঠিক আছে। বর্ণনার ঘনঘটা অনেক সময় গল্পকে ভোঁতা করে দেয়।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মনামী এর ছবি

থ্যাংকু পান্ডবদা হাসি

মনামী এর ছবি

হ, আঙ্গুল কাইট্যা খুন দিয়া গফ লিখসি...খুন ভারি গফ

অতিথি লেখক এর ছবি

অসাধারন... হাসি
আরেকটু বড়ো করলে আরো ভাল লাগতো হয় তো...

-ইকথিয়ান্ডার

তাসনীম এর ছবি

পড়তে ভালো লাগলো এবং মাথার ভেতরে অনেকক্ষণ রয়ে যাবে। আসলেই ধারালো হয়েছে। তবে সবার মত আমারো মনে হয়েছে যে আরেকটু বিস্তার ঘটানো যেত।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী এর ছবি

একটু বড় হলে হয়তো আরো ভালো হতো। ধরতে সময় লেগেছে। তিন বার পড়া লেগেছে! চলুক

হোম - টুইটার - ফেইসবুক - উইকিপিডিয়া - এ্যাকাডেমিয়া

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

শুরুটা জমে উঠেছিলো। তারপর ঠাস করে শেষ হয়ে গেল।

নৈষাদ এর ছবি

ইন্টারেস্টিং লাগল।

মনামী এর ছবি

যাক!

অদ্রোহ এর ছবি

কিছু ভাবনার খোরাক পাইলাম।

--------------------------------------------

আজি দুঃখের রাতে সুখের স্রোতে ভাসাও ধরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

ভাবলাম! ভেবে খারাপ লাগলো! মন খারাপ

-----------------------------------------------------------------------------------
...সময়ের ধাওয়া করা ফেরারীর হাত থিকা যেহেতু রক্ষা পামুনা, তাইলে চলো ধাওয়া কইরা উল্টা তারেই দৌড়ের উপরে রাখি...

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

মনামী এর ছবি

হুম

কুলদা রায় এর ছবি

মনামী, খুব ভাল লাগল। এই এক পাতার গল্পই সুন্দর। কোনো বিস্তারের দরকার নেই। বিস্তারটা হয়ে গেছে--মান্নান ভাইয়ের মাথাটা যখন ঝুলে পড়েছে। আর লাইনে দাঁড়ানো মানুষগুলোর হাসিতে।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

মনামী এর ছবি

ধন্যবাদ দাদা।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

ভাল্লাগলো। আপনার বেশ কিছু গল্প পড়া হয় নাই, যাই গিয়া পইড়া আসি।

--

হালকা পরামর্শ:

অপেক্ষমান, ত্রস্ত সুরে, সংঘবদ্ধ রোষের উত্তাপ- এইগুলা সহজ শব্দ দিয়ে চেঞ্জাতে পারেন।


-----------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

মনামী এর ছবি

হ, আপ্নি আজকাল আমার লেহা পড়েন না মন খারাপ

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

চমকে উঠলাম!
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

সাঈদ আহমেদ এর ছবি

যাই, বাবাকে একটা ফোন করে আসি...
-----------
চর্যাপদ

-----------
চর্যাপদ

মনামী এর ছবি

হাসি

নীলকান্ত এর ছবি

ভালো গল্প হইছে, আপু।
বাবার কথা মনে পড়ে গেল। মন খারাপ

আমি মেঘের দলে আছি, আমি ঘাসের দলে আছি


অলস সময়

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

চমৎকার। বিস্তার ঠিকই আছে। অল্পকথায় গল্পকথা বলে নেয়া গেলে আর বাহুল্যের দরকার কী...

_________________________________________

সেরিওজা

বইখাতা এর ছবি

চলুক চলুক আপনার আগের দু'একটি গল্পের চেয়ে এটা বেশি ভাল লাগলো।

সাইফ তাহসিন এর ছবি

আপামনি, পারকিন্সনের রোগীর যদি জিহবা ঝুলে থাকে, তাহলে তো ঐটাতে কামড় পড়ে জিহবাই কাটা পড়বে। এই রোগে জিহবা ঝুলে থাকে, এই তথ্য কই পাইলেন? একটু পড়ে নিলে পারতেন না?, গল্পের খাতিরে যদি রোগের বর্ননা পাল্টায় ফেলেন, পরে আমাদের প্রিয় কাজী মামুনের মত কেউ আপনার বর্ননা পড়ে এসে বলবে, আমিতো পড়েছি অমুক জায়গায় যে MIT বিশ্ববিদ্যাল্য না। আপনার বর্ননা শুনে তো মনে হইতেছে আপনার গল্পের চরিত্রের ডাউন সিন্ড্রোমও আছে চোখ টিপি , অথবা এন্টিসাইক ওষুধ খাইতেছেন, এখন টারডিভ ডিসকাইনেসিয়া হইতেছে হাসি

টানাপোড়নের গফ ভালু পাইলাম। লন (গুড়) দিয়া মুড়ি খান

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

মনামী এর ছবি

রোগের নামের আগে "খুব সম্ভবত" শব্দদ্বয় আপনার প্রখর দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে মনে হচ্ছে। গল্পকার সব জানেন এটাও বা কেন ধরে নেয়া। তারপরও আমার 'ভুল' ধরিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। পরেরবার সতর্ক থাকব। একটা কথা, গল্পকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করাটা কোনো ক্ষেত্রেই যৌক্তিক না। কাজী মামুনের উদাহরণটা টেনে না আনলেও চলত মনে হয়। গল্প ভালো লেগেছে সেজন্য অনেক ধন্যবাদ।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

গল্প লেখার আগে ডাক্তারি পাশ করে নিতে হলে বিপদ!
আর তারচেয়েও বিপদ যদি কেউ গল্পকে রেফারেন্স হিসেবে কাজে লাগানোর পায়তারা করে...
কাজী মামুনের সংখ্যা বেড়ে গেলে সেটা আরো বিপদের লক্ষণ... আগে সেটা ঠেকাতে হবে হাসি
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

চমৎকার লাগল। সাইজটাও মনে হয় ঠিক আছে। না বেশী, না কম।

অমিত্রাক্ষর
অমিত্রাক্ষর@জিমেইল ডট কম

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চমৎকার গল্প...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

আগের কয়েকটা গল্প থেকে এটা বেশি গোছান মনে হয়েছে। বিস্তারণের দরকার আমার মনে হয়নি। তবে

খুব সম্ভবত পার্কিনসন্সের রোগী লোকটা। হাত কাঁপছে অনবরত, শরীরটা ঝুকে আছে সামনের দিকে। ঠোটের কিনারে খানিকটা ঝুলে আছে জিহ্বা
পড়তে গিয়ে একটু হোঁচট খেলাম। আসলে কার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখাচ্ছ? পাঠকের? তাহলে আবার মনে হয় ঠিকই আছে, কারণ একজন দূরে দাঁড়ানো দর্শক বা পাঠক জানে না আসলে এই ভদ্রলোকের কী হয়েছে, তারা অবজার্ভ করছে, করে যা দেখছে, তাই ভাবছে, তাই না? চিন্তিত

আর আরেকটা জিনিস আগেই বলতে চেয়েছিলাম পরে ভুলে গেছি, যখন কথা বলছে কেউ, সেটা কোটেশন মার্কের মাঝে রাখলে হয় মনে হয়, অন্যদের কতাহ জানি না, আমার নিজের একটু পড়তে সুবিধা হয় আরকি। অবশ্য লেখক হিসেবে তোমার ইচ্ছা।

তোমার গল্পগুলোয় টুইস্ট থাকে, আর ইদানীং টুইস্ট ভালো লাগে। তবে টুইস্ট সবাই সফলভাবে এক্সিকিউট করতে পারে না, তোমারটা ভালোই হয়। চালিয়ে যাও। হাসি

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।