বাবলুর মেজাজটা খারাপ। আব্বা এখানে এসে সেই কখন থেকে বসে আছে। নড়েও না চড়েও না। কথাও বলেনা। বাবলু একজায়গায় বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারেনা। তার হাত-পা কামড়ায়। সে অনেকক্ষণ গা মুড়ামুড়ি করেছে । তারপর বলেছে তাকে মশা কামড়াচ্ছে। সেকি একটু ঘুরে আসবে? কিন্তু আব্বার কোনো সাড়া নাই। তারপর ক্ষিদা লাগসে বলে সে শুরু করেছে ঘ্যানঘ্যান। তারও বেশ কিছুক্ষণ পরে আব্বা তার দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে বললো, বাবলু একটা কাজ করতে পারবি বাবা?
কি?
কাজটা আমরা দুইজন মিলা করবো, বুঝছিস?
কাজটা কি?
লোকজনের কাছে টাকা চাবো
কি বলবো?
বলবি, তোর মা হাসপাতালে, অপারেশনের জন্য টাকা দরকার। আমাদের সাহায্য করেন। পারবি না?
বাবলু জোরে মাথা নাড়ে। না পারার তো কিছু নাই। রাস্তায় কত দেখেছে! কেঁদে কেঁদে বলে, আমার মা হাসপাতালে, একটু সাহায্য করেন। কিন্তু বাবলুর তো কান্না পাচ্ছেনা। অসুবিধা নাই। আব্বা তো আছেই।
বটগাছের তলাটা গোল করে বাঁধানো। সন্ধা ঘনিয়ে আসায় সেখানে জমাট অন্ধকার। একপাশের একটুকরো রাস্তা দিয়ে একজন দুজন করে মানুষ গন্তব্য অথবা গন্তব্যহীনতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। রাস্তার ধারের বাতির হলুদ আলোর বরাদ্দ শুধু রাস্তার জন্যই। বটগাছতলার অন্ধকারে সেই আলোর ছোঁয়াচও লাগছেনা। সেই অটুট অন্ধকার কোনো এক কারণে বাবলুর আব্বাকে স্বস্তি দিচ্ছিল। তাই বাবলু যখন তার শার্টের হাতা ধরে টানছিল প্রথমে তিনি খেয়ালই করতে পারেননি।
আব্বা, চল এদের কাছে টাকা চাই। আব্বা! চল!
হুম!
অতি উৎসাহী বাবলু দৌড়ে হলুদ আলোতে গিয়ে দাড়ায়। আর বার বার পিছনে তাকিয়ে ইশারা করতে থাকে। সামনে হাসতে হাসতে এক যুগলকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়। বাবলুর আব্বা অনেক সময় নিয়ে আস্তে আস্তে উঠে দাড়ান। সামনে আগানোর চেষ্টা করেন। যুগলটিও তাকে দেখতে পেয়েছে বলে মনে হয়। তাদের হাঁটার গতি বেড়ে যায়। এখনই তারা বটতলা পেরিয়ে যাবে। বাবলুর আব্বার পা কিছুতেই সরে না। অন্ধকার দুই হাত দিয়ে যেন তাকে টেনে ধরে। তিনি বলয়ের বাইরে আলোতে আসতে পারেন না।
কি হলো আব্বা? আসলানা কেন?
বাবলুর হাত ধরে হাসপাতালের পথে হাঁটা ধরেন আব্বা। বেশি দেরী হলে বাবলুর মা চিন্তা করবে।
মন্তব্য
বুকটা কেমন যেন এক কষ্টে ধ্বক করে উঠল আপনার লেখা পড়ে।
নিজের তুচ্ছতার কাছে স্বয়ং নিজে যে কত তুচ্ছ তা আবার প্রমাণ পেলাম।
-অতীত
লেখা পড়ে মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ
দুর্দান্ত
এরা দুই জনে ছক্কা পিটায়া আমাদের তো ছাতু বানায়া দিলো।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ইয়ে মানে আমাকে বললেন! স্ট্যাম্প তো উড়ে গেল।
হ! এইযে, এইখানে কি সুন্দর একটা 'লাইক' মারা যেত এই মন্তব্যটায়, তা না, লাইকানো উঠায়ে দিয়েছে!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
ছোট একটা লেখায় অনেক কিছু বলে ফেললেন। খুব ভাল লাগলো। -রু
অনেক ধন্যবাদ।
কষ্ট করে একটি বার শুরু করলেই হয়। A good beginning is half-done.
এরপর বাকিটা ডোমিনো ইফেক্ট।
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!
(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
থ্যাংকু। এই নেন
আপনার মতই দারুণ!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
যাহ! দুষ্টু! পাব্লিক প্লেসে এমন কথা বলে?
ভালো হয়েছে হে।
-নুসায়ের
অসাধারণ!
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
মর্মস্পর্শী লেখা।
খুব ভালো
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
অনেক ধন্যবাদ
ছোট্ট একটুখানি কাহিনী; সামান্য কয়েকটা সংলাপ; কিন্তু কি বিরাট একটা প্রেক্ষাপট। আসলেই কিছু কিছু গল্প বা গল্পের কিছু কিছু অংশ যুগ যুগ ধরে বুকের মধ্যে খুঁচিয়ে চলে। সেই যেমন বসুন্ধরা ছবিতে যখন ইলিয়াস কাঞ্চন তার বাবুর কবরের মধ্যে ছবি এঁকে পাওয়া চেকটা ছেড়ে দিলো। অথবা ইদুরকর আস্তে আস্তে, একটু একটু করে রুষাকে গ্রাস করে নিলো। আর হয়তো অর্ককে বলা ন্যাড়ার সেই কথাটা, "না খেলে আমাকে ডেকো।"
বিশ্বাস করেন আপু ইনফ্লেট করছি না। আপনার এই অনুগল্পটার প্রভাব জানিনা কবে মন থেকে তাড়াতে পারবো! আমার মনটাই হয়তো এরকম। ধন্যবাদ আপনাকে।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
সংবেদনশীলতা খুবই প্রয়োজন এখনকার সময়ে। অনেক অনেক ধন্যবাদ পড়া ও মন্তব্য করার জন্য।
ভালো।
সত্যি!
দারুণ লিখছেন আপু।
আসলেই মর্মস্পর্শী লেখা।
অলস সময়
হুম!
যাক মেয়েটা বেঁচে আছে , দুর্দান্ত গল্প।
হুম! বেঁচে আসি। তুমিও বেঁচে আসো দেখে খুশি হইলাম। নাও।
খুব ভাল গল্প
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
এইটা শুধু গল্প হলে অনেক খুশি হতাম। কিন্তু কেনো জানি চোখের সামনে ভেসে উঠলো পুরো দৃশ্যটা। আমাদের দেশের অনেক মানুষের ক্ষেত্রে চরম বাস্তব কিছু অবস্থা। খারাপ লাগে, ভয়ানক খারাপ লাগে। কিছু করতে না পারার ব্যর্থতায়।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
সবাই সব কিছু বলে ফেলেছে দেখি। আমি বরং আরেকটা দিয়ে যাই।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
কি মন খারাপ করা এক সন্ধ্যার গল্প!
জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
অদ্ভুত! ভাল লাগল...
নতুন মন্তব্য করুন