আব্দুল মতিনের শরীর শিরশির করে। বিড়বিড় করে বলে উঠে ‘আহ!’। হাত দুইটা ঢুকিয়ে দেয় দুই উরুর মাঝখানে। ভলভো বাসের দোতলার ঝাঁকুনি আর গায়ের উপর চড়ে যাওয়া মানুষ সবই ভাল্লাগে তার। ডান হাতটাতে এখনও মাখন মাখন অনুভূতি।
এমন সুযোগ আসলে কালে-ভদ্রে মিলে। টাইমিংটাও শালা জবরদস্ত ছিল। বৃহস্পতিবারের সন্ধা। ফার্মগেটের ভিড় দেখলে মনে হয় অনেকগুলো ধড়ের একটা আকারহীন দেহ হলিউডি সিনেমার ফেবারিট ভিনগ্রহের প্রাণীর মত নীল ও সবুজ এই পৃথিবীর শ্বাসরোধ করতে চাচ্ছে । মতিনও সেই ভিড়ের অংশ হয়ে একটা বাসের পেটে ঢুকে যাওয়ার চেষ্টা করে। আর তখনই...ভেবেই আবার পুলকিত হয়ে উঠে মতিন।
কাজটা করতে হয়েছে খুব সাবধানে। ভিড় ব্যাপারটা অনেক সহজ করে দিয়েছে এটাও ঠিক, তবে ভিড়ের কারণে বিপদে পড়ার সম্ভাবনাও জোরালো ছিল। প্রথমেই নিজের অবস্থান ঠিক করে নেয় মতিন। তারপর হাত চালিয়েই সুড়ুত করে সরে পড়ে। একবারও পেছনে না তাকিয়ে সোজা ভলভো বাসের দোতলায়। শালা! এই বাসগুলো দারুণ করেছে!
বাস থেকে নেমে কিছুটা হেঁটে তারপর মতিনের বাসা। প্রতিদিনই মোড়ের দোকানে চা খেয়ে কিছুক্ষণ আড্ডা মেরে বাসায় ফেরে মতিন।
হাতসাফাইটা ভালোই শিখসেন, হে হে হে - ওষুধ কোম্পানির লোকটার নাম মনেই থাকেনা মতিনের। তবে লোকটার দাঁতগুলা খুব কালো, কালো। এরকম একটা লোকের কাছে লোকে ওষুধ কিনে কিভাবে?
ভাত খেতে বসে দেখে বৌয়ের মুখটা ভার। কোনো ঝামেলা-টামেলা হবে হয়তো! মেয়েমমানুষ মানেই ঝামেরা! বিরক্তি চেপে বলে
কিসু হইসে নাকি?
কতদিন ধরে বলতেসি একটা গাড়ি কিনো, সেকেন্ড হ্যান্ড একটা গাড়ি কিনতে কত টাকা লাগে?
তোমার বাপরে বলো কিনা দিতে, বললেই হইলো! স্বামী বাসে ঝাঁকি খাইতে খাইতে বাসায় আসে, আর বৌ গাড়ি চইড়া রং ঢং করবে!
আমার জন্য বলসি নাকি, তোমার মেয়ের জন্য
তার আবার কি হইসে?
মেয়ে বড় হইসে না? কোচিং-টোচিং যায়। আমি তো সবসময় যাইতে পারিনা। একা একা যাওয়া লাগে। গাড়ি থাকলে..
আর মেয়েরা যায়না না? তোমার মেয়ে আকাশ থেকে নেমে আসছে, বেসিনে হাত ধুতে ধুতে বলে উঠে মতিন
আজকে কে জানি ওর বুকে হাত দিসে ...
মতিন আর কিছু শুনতে পায়না। খালি সাবান দিয়ে হাত ঘষে ঘষে ধুতে থাকে তো থাকেই।
মন্তব্য
বাংলাদেশে খুব পরিচিত সামাজিক বিষফোঁড়া।
ভালো লিখেছেন।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
পাঞ্চটা অসাধারণ হয়েছে। ছোটগল্প হিসেবে দারুণ সার্থক।
টুইটার
গুরুতর সমস্যার ভয়াবহ আলোকপাত। অসাধারণ আপু
-অতীত
দারুণ।
ও হেনরির ছোটগল্প মনে পড়ল।
চমৎকার লেখা।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
চমৎকার লিখেছেন।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
পড়ে মাথা হেট হয়ে যায়...!
বর্ণনা তোমার মতই অসাধারণ , কেবল পাঞ্চটাকে তোমার মত মনে হয়নি আপু, আগে থেকে যে আন্দাজ করা যাচ্ছিল...!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
ভালো লেগেছে
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
খুব চমৎকার একটা অন্ধকারের গল্প !! খুশবন্ত সিঙের 'দ্যা বটম পিঞ্চার' গল্পকে মনে করালো একটু।
...
অদ্ভূত ............
- সুমিত রহমান
শুরু থেকে বোঝা গেছে, কিন্তু গল্প অনবদ্য হয়েছে।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
আপুমনি, কিছু হয়েছে? কেন যেন মনে হলো তোমার মন খারাপ।
মাঝেমাঝে রাগের সাথে মাথায় এমন গল্প চাড়া দিয়ে উঠতে চায়, কিন্তু তোমার মত এমন লেহার হাত তো নাই, তাই হয়ে উঠে না।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
গল্পটা ভাল, কিন্তু লেখার আদলটা একটু জোলো মনে হল যেন। তবে পাঞ্চলাইন জবরদস্ত হয়েছে বটে।
--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।
গল্পকে পাঁচতারা, ঘটনাকে ঘৃণা।
অলস সময়
অসাধারণ বর্ণনা। গল্পটাও চাবুকের মতো। খুব ভালো লাগলো। একঝুড়ি তারা।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
খুসবন্ত সিং এর একটা গল্প পড়েছিলাম, 'নিতম্বে চিমটি প্রদানকারী' পড়ে দেখতে পারেন।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
সবসময়ের মতো এবারো ভালো লিখছেন। -রু
কী ভয়ংকর!
লেখাটা জব্বর হয়েছে!
মা, বোন, মেয়ে- এই শব্দগুলির সত্যিকারের অর্থ যেদিন এই মানুষগুলি বুঝবে, সেদিন হয়ত এইসব বন্ধ হতেও পারে। বা, "মানুষ" শব্দটির অর্থও যদি বোঝে।
দারুণ, মনামী।
১.
ফার্মগেটে লাল রঙের বিআরটিসি বাসটা এসে থেমেছে, লোকজন ভীড় করে উঠছে। আমি বেশ খানিকটা দূর দিয়ে যাচ্ছিলাম। দেখি একপাশ দিয়ে যাত্রী মেয়েগুলো উঠছে। মেয়েগুলোর পেছনেই এক মধ্যবয়স্ক লোক। অযথাই একটা মেয়ের পেছনে লেপ্টে আছে এবং পেছন থেকে ধাক্কা দিচ্ছে শরীর দিয়ে।
খুব অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম ভীড় আছে অবশ্যই, কিন্তু লোকটার পেছনে কেউ নেই!
তারচেয়ে অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, সবাই উঠে গেলে মেয়েগুলো ভেতরে চলে গেলো, লোকটা নেমে আবার ভীড়ের মধ্যে হারিয়ে গেলো, বাসটা চলে গেলো!
২.
দারুণ লিখছেন... লেখা চলুক
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
সপাং!
গল্প দারুন। অভিব্যক্তি চাবুকের মতো। সপাং......
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
পাঞ্চলাইনটা আন্দাজ করতে পেরেছিলাম কিন্তু তাতে গল্পের মান কমেনি।
বেশ ভালো লেগেছে। (গুড়) লন।
------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।
অসাধারন হয়েছে......
শেষটা তীক্ষ্ণ ...
-অর্ফিয়াস
দুর্দান্ত।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
শক্তিশালী লেখা!
এমন আরো আসুক---
লেখা পড়ে মন্তব্য করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
অসাধারণ একটা গল্প
আব্দুল্লাহ আল মামুনের "বাবর আলী" বা কাছাকাছি নামের একটা নাটকের শেষ সিকুয়েলটার কথা মনে পড়ে।
অসাধারণ গল্প। (গুড়)
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
"ফার্মগেটের ভিড় দেখলে মনে হয় অনেকগুলো ধড়ের একটা আকারহীন দেহ হলিউডি সিনেমার ফেবারিট ভিনগ্রহের প্রাণীর মত নীল ও সবুজ এই পৃথিবীর শ্বাসরোধ করতে চাচ্ছে"। কুতসিত ফার্মগেটের ভিড়কে এত সুন্দর দুটি লাইনে আবদ্ধ দেখে ভালো লাগলো
-আক্ষরিক অভিলাষ
নতুন মন্তব্য করুন