ত্রিচক্র

মনামী এর ছবি
লিখেছেন মনামী (তারিখ: মঙ্গল, ০৫/০৪/২০১১ - ১:৪৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

হোসেন মিয়া রিকশা চালায়। যখন প্যাডেল মারতে আর মন চায়না, তখন মেয়ে প্যাসেঞ্জার খুঁজে বের করে। সবচেয়ে ভালো হয় কলেজ-ইউনিভার্সিটির ছাত্রী তুলতে পারলে। যা ভাড়া বলবে রাজী হয়ে যেতে হবে। তারপর উঠে বসলে হুডটা ঠিকঠাক লাগানোর পর কথা শুরু করতে হবে। এই খুচরা আলাপ আর কি। যেমন - মা আপনি কি ইনবার্সিটিতে পড়েন? কথা আগালেই সরাসরি আসল কথায় চলে যায় হোসেন মিয়া। আমি ভয়াবহ বিপদে পড়সি মা, কালকের মধ্যে ৭শ’ টাকা না দিলে আমার মাইয়ারে ইস্কুল থিকা বাইর কইরা দিবো। আমার দুই ছেলে এক মেয়ে মা। অনেক কষ্ট কইরা পড়াশোনা করাইতেসি। ম্যাট্রিক পাশ করলেই মাইয়ার বিয়া দিয়া দিমু। বই-খাতার যেই দাম। আর পারি না...

৫০, ১০০, বেশি না হলে ১০ টাকা পাওয়া যাবেই। কথার মাঝখানে একবার কার্ডটা বের করে দেখায় দেয়। আজ পর্যন্ত কেউ কার্ড হাতে নিয়ে দেখতে চায় নাই। হোসেন মিয়া কার্ড লেমিনেট করিয়ে নিয়েছে। তাই সবসময় নতুনই মনে হয়।

আহসান উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়
ফাতেমা আক্তার
শ্রেণী: ৭ম, শাখা: ক
রোল নং: ৩২

ছবিও আছে একটা, পাসপোর্ট সাইজ ছবির গলা কেটে স্ট্যাস্প সাইজ বানানো। ছবি দেখে অবশ্য বোঝা যায়না, মেয়েটা তার কত সুন্দর! ছুরি দিয়ে মেয়েটার গলা ফালাফালা করে দিয়েছিল ঐ কুত্তার বাচ্চা। হোসেন মিয়ার মতই বয়স, থাকতো ওদের মহল্লাতেই, এখনও থাকে। এখনও হোসেন মিয়ার সামনে দিয়ে হেঁটে যায়, দোকানে চা খায়, আড্ডা পিটায়।

আর হোসেন মিয়ার যখন রিকশা চালাতে ইচ্ছা করেনা তখন সে কার্ডটা বের করে।

আহসান উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়
ফাতেমা আক্তার
শ্রেণী: ৭ম, শাখা: ক
রোল নং: ৩২


মন্তব্য

নীলকান্ত এর ছবি

মন খারাপ


অলস সময়

শাফি. এর ছবি

ছবিও আছে একটা, পাসপোর্ট সাইজ ছবির গলা কেটে স্ট্যাস্প সাইজ বানানো। ছবি দেখে অবশ্য বোঝা যায়না, মেয়েটা তার কত সুন্দর! ছুরি দিয়ে মেয়েটার গলা ফালাফালা করে দিয়েছিল ঐ কুত্তার বাচ্চা। হোসেন মিয়ার মতই বয়স, থাকতো ওদের মহল্লাতেই, এখনও থাকে। এখনও হোসেন মিয়ার সামনে দিয়ে হেঁটে যায়, দোকানে চা খায়, আড্ডা পিটায়।

বুঝলাম না!

ধৈবত (অতিথি) এর ছবি

দুনিয়ায় পচুর খারাপ মানুষ মন খারাপ

অতিথী  এর ছবি

জানি ছোটগল্পে অনেক কিছুই না বলা থাকে। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তার পরেও গল্পটা তো বোঝা চাই পাঠকের। এই লেখাটিতে কেন যেন মনে হচ্ছে যে বেশ কিছু জিনিস না বলা রয়ে গেল, তাই গল্পটা যে কি সেটা পরিষ্কার হলো না। বুঝলাম মেয়েটিকে কেউ মেরে ফেলেছিল, যার বিরুদ্ধে কিছুই করবার নেই হোসেন মিয়ার। কিন্তু তার সাথে মেয়ের ছবি দেখিয়ে পয়সা চাওয়ার কি সম্পর্ক? লোকটার প্রতি কি আমার সহানুভূতি হবে, নাকি প্রতারক হিসেবে রাগ হওয়া উচিত?

-নিলম্বিত গণিতক

সাফি এর ছবি

মন খারাপ

পাগল মন এর ছবি

এরকম ঘটনা আমার ক্ষেত্রেও হয়েছে, রিকশাওয়ালা টাকা চেয়েছে সন্তানের পড়ার খরচের জন্য, দিয়েছিও মাঝেমধ্যে।
কিন্তু আপনি শেষে এটা কী লিখলেন? পড়ে মনটা-ই খারাপ হয়ে গেল। মন খারাপ

------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

নিজের মতো করে বুঝে নিলাম।

অবাঞ্ছিত এর ছবি

বেশ ভালো লাগলো।

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

অতিথি লেখক এর ছবি

মন খারাপ

অতীত

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

বুঝছি না অবুঝ হইছি তাই বুঝতেছি না বিভিন্ন মন্তব্য পইড়া মন খারাপ

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমার কাছে গল্পটার এই মাপটাই ঠিক বলে মনে হলো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

শামীম এর ছবি

টুইস্ট দিয়ে শেষ হইলো মনে হয় চিন্তিত

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

সবজান্তা এর ছবি

গল্পটা ভালো লাগলো।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লেগেছে গল্পের বিন্যাস। আমার কিছু অভিজ্ঞতা আছে এই ধরনের।

সুমিমা

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

ইয়ে.. আমিও বুঝি নাই। ইয়ে, মানে...

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

সুরঞ্জনা এর ছবি

অসম্ভব ভালো লেখা।
এমন নাড়া লাগলো মনে শেষে এসে...
দারুণ। দারুণ অণুগল্প।
এত দুঃখ পেয়েছি, খুব মন কেমন করেছে গল্পটা পড়ে।
আহা্রে বাবাটা...
মন খারাপ

............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্‌ চিনে।

খেকশিয়াল এর ছবি

দারুণ লাগলো! আমিও আমার মত করেই বুঝে নিলাম।

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

তুমি এত বাজে ভাবে মন খারাপ করে দিতে পারো, যে আমি মাঝে মাঝে ভয়ে তোমার গল্পে ঢুকিনা!
আমিও আমার মতো করেই বুঝলাম, আর আমিও সুরের মতো করেই অনুভব করলাম বাবা-র জন্যে...

আর ইয়ে, তুমি কি মজার কিছু লিখবে? অনেকদিন কোন আওয়াজ পাই না কিন্তু!

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

অপছন্দনীয় এর ছবি

মন খারাপ

সচল জাহিদ এর ছবি

ভাল লেগেছে।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

অমানুষিক ভালো লাগছে!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অতিথি লেখক এর ছবি

কঠিন বাস্তবতা। তারচেয়েও কঠিন মেয়েটির বাবার ওরকম ভাবে বেঁচে থাকা...............

- আয়নামতি

কথা ও কাহিনী এর ছবি

খুব সম্ভবত এটা কোন গল্প নয়, বরং বাস্তব ঘটনা।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

এই গল্পের দুটি গুরুত্বপূর্ন পয়েন্ট-

১. হোসেন মিয়ার মহল্লায় খুন হয়েছিল ফাতেমা নামের বালিকাটি। খুন হবার পর মেয়েটার আইডি কার্ডটা কুড়িয়ে নেয় হোসেন মিয়া।

২. যখন হোসেন মিয়ার রিকশার প্যাডেল চালাতে অনিচ্ছা হয় তখন হোসেন মিয়া ওই কার্ড দেখিয়ে লোকজনের কাছ থেকে সহানুভুতিজাত অর্থ আদায় করে।

গল্পটিতে অযথা মহত্ব আরোপ না করে লেখক যথার্থ কাজ করেছেন। এই সাইজের গল্পগুলো মুগ্ধ করে বরাবর।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

নীড়দা -

১. আমার কিন্তু মনে হয়েছে, মেয়েটা হোসেন মিয়ার নিজের।

২. নিজের মেয়ের খুনের সাইকোলজিকাল ট্রমার কারণে সে এমন করে, মাঝেমাঝে এই প্রচণ্ড শক-এর সাথে কোপ করার জন্যে সে তার নিজের ফ্যান্টাসি তৈরি করে তাতে রোল প্লেয়িং করে যে মেয়ে এখনো বেঁচে আছে, এবং সে এক সময়ে ম্যাট্রিক দেবে, তাকে বিয়ে দিতে হবে, ইত্যাদি। একরকম সাইকোলজিকাল ডিজঅর্ডারে (এটার কোন নাম থাকতে পারে, আমি জানি না ঠিক) ভুগছে।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

একজন মনোবিজ্ঞানীর সাথে আলাপে জানলাম শকের কারণে নিজে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হলে নাকি সেই স্মৃতি টাকা-সাহায্য এরকম ম্যাটেরিয়ালিস্টিক স্বার্থে লাগাবার কথা না। এ ধরনের কাজ করা মানে সে মৃত্যুটা অ্যাক্সেপ্ট করেছে। আমার অবশ্য মনে হয়েছে মেয়েটা তারই ছিল,

ছবি দেখে অবশ্য বোঝা যায়না, মেয়েটা তার কত সুন্দর!

ব্যক্তিস্বার্থে সে এই ঘটনা যেহেতু ব্যবহার করছে, পাঠক আমার মনে হয় দারিদ্র তাকে বাধ্য করছে, বা সে নিজের কু-অভ্যাস বদলাতে পারছেনা। অন্য কোন ভাবনা থেকেও লেখা হয়ে থাকতে পারে গল্প, লেখিকা মনামী ভালো জানে। আমার কাছে প্রতিটা ভাবনাই কষ্টের মনে হচ্ছে, এখানেই তার লেখার স্বার্থকতা মনে হয়।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

কনফুসিয়াস এর ছবি

গল্পটা ভাল লাগলো অনেক। চলুক

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

পার্ফেক্টো। গল্পই ধরে নিলাম, সত্যি না হোক।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।