সামিরার জীবনটা আরো অনেকভাবে শেষ হতে পারে। জীবনের শুরুটা মানুষের হাতে না থাকলেও শেষ কিভাবে হবে তা কিন্তু কোনো না কোনো ভাবে মানুষই নির্ধারণ করে, সামিরা ভাবে। মৃত্যুটা পৌঢ়-নরম বিছানায় হবে, আশেপাশে থাকবে চেনা-অচেনা অনেক মুখ, নাকি রোমাঞ্চে ভরা জীবনের পেয়ালা হুট করে উল্টে যাবে। অথবা নিঃসঙ্গতাই দিবানিশি সঙ্গ দিতে দিতে একদিন হাত ছেড়ে দিয়ে বলবে, যাই তবে। কিংবা একদিন মধ্যদুপুরে যখন মা’রা বাচ্চাদের বলছেন, এই তো তরকারি হয়ে গেছে, আর বাচ্চারা স্কুলের পোশাক না খুলেই একবার খাবার টেবিলে আবার ছুটে যাচ্ছে প্রিয় কার্টুনের সামনে। আর লাঞ্চ টাইমের সময় পেরিয়ে যাওয়ায় দ্রুত অফিসের দিকে ছুটছেন কর্মীরা আর ভাবছেন আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মিলবে মুক্তি। আর একের পর এক যাত্রীর থেকে মুখ ফিরিয়ে অলস গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে একটা রিকশা, রিকশা জমা দিয়ে যেতে হবে বাড়ি, আজ বৌ মুড়িঘণ্ট রাঁধবে বলে। এমন সময়ে কেউ ভাবতে পারে এই জীবনটা শেষ করে দেয়া যায়?
সামিরা ভাবছিল, জীবনটা নিয়ে কি আরো অনেক কিছু করা যেত না, কেবলই নানা সামাজিক সম্পর্কের দাবি মেটানো ছাড়া? তাও যদি ঠিকমত করা যেত! ছোটবেলায় আব্বু বলতো, কখনও উপরের দিকে তাকাবা না, তাকাবা নিচের দিকে। তুমি কী পাও নাই, সেটা বড় কথা না। এমন অনেক মানুষ আছে যাদের কিছুই নাই, তাদের চেয়ে তুমি অনেক ভালো আছো সেজন্য শুকরিয়া করো। সামিরা ভাবে আবারও, ছোটবেলার মত ভাবে, আসলেই কি তাই? এটা ভেবেই কি সন্তুষ্ট হওয়া উচিৎ যে আমার চেয়ে অনেক মানুষ অনেক খারাপ আছে?
সামিরা অনেক ভাবে, খেতে না পাওয়া ন্যাংটা ছেলেমেয়েদের কথা ভাবে, যৌতুকের জন্য খুন হয়ে যাওয়া মেয়েদের কথা ভাবে, ধর্ষিতা মেয়েদের কথা ভাবে। কিন্তু তার মনে শান্তি ফেরে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে, সে যে খেতে-পরতে পাচ্ছে, স্বামী-শ্বাশুড়ির হাতে নির্যাতিতা হচ্ছে না, কিংবা এখন পর্যন্ত ইজ্জত বাঁচিয়ে চলতে পারছে - এতেই তার সুখী হওয়া উচিৎ? আর কিছু করার বা চাওয়ার নাই তার?
এই পৃথিবীর ইতিহাস প্রবাহে এক বিন্দু অর্থও যোগ করে যেতে পারবে না সে। তার কোনো সৃজন নাই, কোনো শব্দ নাই, কোনো কণ্ঠ নাই, ঘুরে দাড়াবার শক্তি। নিরাপদ জীবনের লক্ষণরেখা একবার পার করলে যদি আর ফিরে আসা না যায়! এই ভয়টুকু ছাড়া আর কি আছে তার? শিল্প-সংবেদনশীল মনটাও এখন টিভি সিরিয়ালের দখলে, কারণ সেটাই সহজ ও স্বাভাবিক। নাহ! আর সবচেয়ে বড় সংকট, এই এত বড় পৃথিবীতে কেউ তাকে বোঝার একটুও চেষ্টাও করছে না!
সামিরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে, এই অর্থহীন বেঁচে থাকার আর প্রয়োজন নাই। এমন সময় বেজে ওঠে মোবাইল, ইতস্তত হাতে ফোন তুলে নেয় সামিরা। তারপর ফোনটা রেখেই উঠে পড়ে দৌড়ে আলমারি খোলে। আজ একটা বিয়ের দাওয়াত আছে, একদম মনে ছিলনা!
মন্তব্য
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
বুঝতে অসুবিধা হইসে না চিন্তায় পড়ে গেসেন?
এই তো জীবন...
মন খারাপ করা ভাল লাগা জানালাম।
ধন্যবাদ
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
কি আর করা!
হুম্ম......
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ
হুম?
অনেক ধন্যবাদ
লেখাটা কোথাও ছন্দপতন ঘটালোনা, শেষে এসেও দারুন সমাপ্তি, একটা ঘোর লেগে গিয়েছিলো। একদিন মধ্যদুপুরের গল্প ভালো লাগলো!
তোমার মতো হয়নি আপু। কেমন যেন লেগেছে!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
শেষটা চমৎকার হল।
জীবন টা আসলে এমনি বোধ করি
ইয়ে মানে একটু কথা ছিল....
দারুণ লেখা, বিষাদময় তবে সুন্দর। আমাদের কেবলি সামাজিক সম্পর্কে মিশে যেতে হয়...........
হ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
বলতে দেরী হয়ে গেল, এই লেখাটা ভীষণ ভালো লেগেছে।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
সব পাঠককে ধন্যবাদ
নতুন মন্তব্য করুন