১
ব্যপারটা অনেকটা হাডুডু খেলার মত। লম্বা দম নিয়ে শত্রুর ডেরায় ঢুকে পড়ো তারপর চালাও দাবড়ানি। যে কয়টাকে পারা যায় ঘায়েল করো। কিন্তু দম যাওয়ার আগেই ফিরে আসতে হবে নিজের লোকদের মধ্যে। ধরা খেলে কাম সাবাড়।
রানু কোনোদিন হাডুডু খেলে নাই। হাডুডু ছেলেদের খেলা দেখে না, খেলাধুলা করার মত অবসরই কোনদিন পায় নাই। হাত - পা শক্ত হওয়ার পর থেকেই মানুষের বাসায় ঝিয়ের কাজ করতো। শেষ যে বাড়িতে ও কাজ করতো ...
আরে ভাইগ্না, এতো দেরি হইলো? আসো। অই, অরে চা দে।
মাহমুদ আলীর আনানো এই চা আর লাঠি বিস্কুটই সাইফুলের সকালের নাশতা। প্রথম যেদিন এখানে এসেছিল সেদিন থেকেই এই নিয়ম। মাহমুদ আলীর দেখাদেখি এখানকার সবাই তাকে ভাইগ্না ডাকে। সে যদিও কাউকে মামা ডাকে না। সাইফুল কথাই বলে কম। বড় বড় চোখ তুলে শুধু চেয়ে থাকে। চকসার্কুলার রোডের দোকানিদের সাইফুলের জন্য বাঁধা বরাদ্দ - দুই টাকা।
সাইফুল খুব দ্রুত হাঁ ...
শেষ ক্লাশ। মুনিয়ার ব্যাগ গোছানো হয়ে গেছে। কাজটা করতে হয়েছে খুব সাবধানে। ঘন্টা বাজার আগেই ব্যাগে বই-খাতা ঢুকাতে দেখলে রফিক স্যার খুবই রাগ করে। তাই বইটা সামনে রেখে দিয়েছে আর খাতা, পেন্সিল বক্স, পানির বোতল ঢুকিয়ে ব্যাগের ওপরের চেইনটা খুলে রেখেছে। টিফিন পিরিয়ডের পর সায়মাকে পটিয়ে বেঞ্চের কিনারে বসেছে, এক পা দিয়ে রেখেছে বাইরে। শিমু লীনাকে কি জানি বলবে তাই ওদের বেঞ্চে এসে ব ...
‘একটি মেয়ে এক্ষুনি ঘূর্ণিতে ডুবে মরল। আমি ময়না পাখি। চল আমাকে নিয়ে খাঁচায় পুরে রাখবে।’ - জলদেবী গল্পের নটে গাছটি মুড়ায় এই কথা কটি দিয়ে। যদিও অবশেষে তাহারা সুখে - শান্তিতে বসবাস করিতে লাগলো - গল্পের রূপকথাধর্মীতার কারণে, অন্ত্যবাক্য হিসেবে এটিই বেশি মানানসই হতো। কিন্তু তার বদলে নারীর আত্মবিসর্জনের চিরকালীন সত্যকে মিছরির ছুরির মত পাঠকের বুকে বিঁধিয়ে দিলেন লেখক।
তিনি লক্ষ্ণী...
আষাঢ়ের সকাল বাসি মুখেই দুপুরে গড়ায়। রাতের সঙ্গে কলহকাতরতায় হয়ত মুখভার করে রাখেতো রাখেই। বেলায় বেলায় তার বসন পাল্টানোয় অভ্যস্ত আমি তার এই বৈচিত্রহীন বিরাগে কিছুটা ব্যবহারিক সমস্যায় পড়লেও বিচলিত হইনা। আরামদায়ক আলস্যে মোড়ানো সকালটা অবলীলায় বিছানায় খরচ করে বেলা দ্বিপ্রহরে হাতে তুলে নেই চায়ের কাপ। পত্রিকাটা খুলতেই মুখে লাগে রক্তের ছিটা। টিস্যু পেপারে মুছে দেই তড়িৎ হাতে। আমা...
টালমাটাল পায়ের ধাক্কায় পানিভরা জেরিকেন উল্টে ফুটপাতের ঘুম ছুটিয়ে দেয় আরিফ। বন্ধ দোকানের গায়ে টাঙানো মশারির ওপর প্লাস্টিকের শিট বিছিয়ে তিন কোনায় তিনটি ভর দিয়ে তৈরি পানি ও মশানিরোধক ঘুমবাসার ওপর এই ধরণের বেহুদা আক্রমণে অভ্যস্ততার দরুণ চটপট সবকিছু আবার ফিরে যায় আগের জায়গায়। তবে প্রতিআক্রমণে অব্যর্থ গালির বাণ ছুঁড়ে দিতে ভুল হয়না।
- ফারাওরা গালি দেয় দেখি !
: কি কস শালা ফারাও-মার...
কফির তিতা-মিঠা সুবাসে মাতাল নাচে আবেশী বেহালা - নাচিয়ে যাও আমায়,ভালোবাসার শেষ প্রান্ত অবধি - কোহেনের কড়া কণ্ঠ ঠোঁটে ওঠে মাপা চুমুকে। ঘোলা কাঁচে ধাক্কা খেয়ে আলুথালু মেঝেতে লুটায় হলুদ আলো। ছড়ানো সোফায় গড়িয়ে পড়ে হাসি। রেশম চুলে আঙ্গুল চালানোর ফাঁকে একজোড়া সতর্ক চোখ চট করে দেখে নেয় - পা রাখার ভঙ্গিটা ঠিক আছে তো?
এনিথিং এলস স্যার?
ল্যপটপের আড়াল থেকে মাথা নাড়ে হাসি। দ্রুত তার জায়গা ...
গল্পটা কিছুটা এডিট করা হলো (২৪.০৮.২০১০):
কান পেতে সমুদ্রের গর্জন শোনেন হাশেম আলী।
আব্বা যখন মঞ্চে উঠতেন তখন এমনই শোনাতো তার গলা - এই মাটির পৃথিবীতে হেঁটে বেড়ানো রক্ত-মাংসের খাঁচায় যার উৎপত্তি অসম্ভব। মনে হতো চিন্তার গহীনের কোনো জগত থেকে ভেসে আসছে ঐশী শব্দাবলী। বাদ্যের সঙ্গতে যখন তিনি সংলাপ বলতেন তখন মন্ত্রমুগ্ধের মত চেয়ে রইতো হাজারো দর্শক। দীর্ঘশ্বাসের ঘুর্ণিঝড় থরে থরে সাজা ...
আজকাল ওদের আড্ডাগুলো বেশ সরগরম। ওরা যারা দেশকে ভৌগোলিক সীমারেখার বাস্তব পরিধির চেয়ে অধিক কিছু মনে করে, ওরা যাদের কাছে দেশ বিস্তীর্ণ চেতনার কায়াহীণ পরিমন্ডলে একটি উজ্জ্বল অবস্থিতি, ধুলা-মলিন পৃথিবীতে তারা লুটাতে দেয়না দেশমাতৃকার পবিত্র আঁচল, তাই দেশকে ঝুলিয়ে রেখেছে উচ্চমার্গীয় চিন্তার সুতোয় বোনা শিকেয়।
আজকাল ওদের আড্ডাগুলো বেশ সরগরম। মাটির পৃথিবীতে একটি স্বতন্ত্র অস্তিত...
সকালে ঘুম ভাঙ্গার পর আয়না দেখাটা রেনুর অভ্যাস। ছোটবেলার এই অভ্যাসটা কিছুতেই ছাড়তে পারেনা। তাই দিনের শুরুতেই মনে গুমরে ওঠে আষাঢ়ের মেঘ। তারপর বাথরুমে পানির ঝাপটায় অন্তরের অবিশ্রান্ত বর্ষণ ধুয়ে ফেলে মুখে মুখোশ এঁটে নেয়া। চায়ের ধোঁয়া ওঠা কাপে বাস্তবের মুখোমুখি হওয়ার আশ্বাস খোঁজা। অত:পর স্বাভাবিক মানুষদের ভীড়ে মিশে নিজেকেও স্বাভাবিক ভাবার প্রয়াস।
চারিদিক থেকে চোখগুলোর ঘুরে ...