ইয়াসুকো আমার কাছে স্পোকেন ইংলিশ পড়তে আসতো প্রতি শনিবার সকালে। এক এক দিন সে এক এক রকমের চা নিয়ে আসত; আমরা একসাথে বসে গ্লাসের পর গ্লাস বিভিন্ন ধরণের চা খেতাম। আমরা সাহিত্য নিয়ে কথা বলতাম, গান নিয়ে কথা বলতাম, রান্না নিয়ে কথা বলতাম। আমরা ব্যক্তিগত দুঃখ-সুখের গল্প করতাম। জাপানে নারী অধিকার প্রসঙ্গ, কেনো জাপানীজ মেয়েরা ইদানীং আর বিয়ে করতে চাচ্ছে না এসব নিয়ে কথা হতো।
একদিন আমরা Takashi Nagai এর The Bells Of Nagasaki নিয়ে আলোচনা করছিলাম। এক সময় দেখি মেয়েটি কাঁদছে( জাপানীজরা খুব সহজে কাঁদে না)। আমি ওর কাঁধে হাত রাখতে সেই কান্না ঝড়ের বাতাসের মত বেড়ে গেল।
কান্না থামার পর ইয়াসুকো আমায় বলল —“তুমি কি জানো, আমার মা একজন হিবুক্শা (এটম বোমায় ক্ষতিগ্রস্থ)? আমরা একথা কাউকে কখনো বলিনা। মানুষের ধারণা-হিবুক্শাদের বংশধরেরাও এই অসুস্থতা বয়ে নিয়ে যাবে, তাই তাদের সহজে বিয়ে হয় না, বয়ফ্রেন্ড জোটেনা! তুমি যেন একথা প্লিজ কাউকে কখনো বলনা!”
জাপানে যতদিন ছিলাম, একথা আমি কাউকে বলিনি। আজ এখানে বলায় নিশ্চই ওর কোনো ক্ষতি হবে না!
বেশ অনেকদিন পরে, এক রবিবারের প্রখর দুপুরে ইয়াসুকোর মা আকিকোর সাথে দেখা হয়েছিলো ......!)
নাগাসাকি
--------
এখানে ঘুমাও দেখি মায়ের আঁচলে
ঘুম পাড়ানী গান শোন,
চোখ বন্ধ! সভ্যতার নিষ্পেষণে নীলাকাশ জ্বলে
এত দাহ! ক্ষুদ্র শিশু্ - নীলাকাশ জ্বলে! সবুজ কিশোর বৃক্ষ, পাথুরে পাহাড়
উড়াকামি নদী, ধেয়ে আসা ঋদ্ধ ঝর্ণা জ্বলে!
এখানে ঘুমাও দেখি!
-মাতৃস্তন জ্বলে!
আকিকোর অন্ধচোখ আগুনে আগুনে ফিরে দীর্ঘশ্বাস গোনে,
দেখেছ গীর্জার ঘন্টা, রবিবার ঠিক বারোটায়
বেজেছিলো শেষবার, তারপর আর কেউ গিয়েছিল প্রার্থনায়, হা ঈশ্বর!
হায় শান্তি! শুধু দেখি পুড়ে যাওয়া মাংসের পাহাড়!
শুনি শুধু তৃষ্ণার্তের তীব্র হাহাকার! শান্তি, অক্ষম শান্তি!
অক্ষম প্রার্থনা, অক্ষম ঈশ্বর!
জলও আগুন হয়ে পুড়েছিল সহস্ত্র যুবতী শরীর, সহস্ত্র মরাল গ্রীবা
সহস্ত্র শিশুর দেহ- কী করেছ তার? ঈশ্বর!
আকিকোর অন্ধচোখ মানুষের মুখ জুড়ে শান্তির সংখ্যাহীন পায়রা ওড়ায়!
এভাবেই শান্তি এসো, এভাবেই নাগাসাকি বুকে করে সভ্যতার
শৈল্পিক কারুকার্য বয়।
পিস পার্কের প্রখর আলোয় এভাবেই সহস্রাধিক পুড়ে যাওয়া মানুষ ঘুমায়!
>>>>>>>
মন্তব্য
কবিতাটা দুর্দান্ত লাগল।
কিন্তু নাগাসাকির আরো অনেক গল্প শুনতে চাই আপনার কাছে। আপনার ভাণ্ডারে নিশ্চয়ই আছে প্রচুর। প্লিজ আমাদের শোনান না...
কবিতা খুবই ভালো লাগলো।
_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি। ( জয় গোস্মামী)
_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি। ( জয় গোস্মামী)
কবিতা ভালো লাগলো । তারচে ভালো লাগলো ভূমিকাটা। আমার মন একটুতেই চটজলদি খারাপ হয়ে যায়। চিনি না ,জানি না এক ইয়াসুকোর জন্যে কস্ট হচ্ছে এখন! মানুষ কত রকমের বিচিত্র কষ্ট নিজের মধ্যে ধারণ করে রাখে - আমরা কি বাইরে থেকে বুঝি ? না জানি!
-------------------------------------------------------------------------
আমার জীবন থেকে আধেক সময় যায় যে হয়ে চুরি
অবুঝ আমি তবু হাতের মুঠোয় কাব্য নিয়ে ঘুরি।
আমার জীবন থেকে আধেক সময় যায় যে হয়ে চুরি
অবুঝ আমি তবু হাতের মুঠোয় কব্য নিয়ে ঘুরি।
আপনে জাপানেও থাকছেন? আপনে তো দেখি একটা... যা হোক... কইলাম না কিছু... ভালো লাগলো কবিতাটা...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
শান্তির পায়রা উড়ে যায়, শান্তিকেও সাথে নিয়ে যায়।
কবিতায়
কবিতাটা অসাধারণ, আপনার লেখা ভূমিকাও।
দ্বিজু
মণিকা আপনার লেখাটা অসাধারন।
শুধু লেখার বিষয়ের জন্যে না, আপনার লেখার ভঙ্গীটা দূর্দান্ত লাগল।
আপনি কবিতা ভাল লিখেন। কিন্তু আপনার গদ্য আমাকে মুগ্ধ করে দিল।
পাঠক হিসেবে একটা অনুরোধ রইল----হিবাকুশাদের নিয়ে আরো লিখুন।
অফুরান শুভেচ্ছা!
প্রিয় মণিকা, অনিকেতের হিরোশিমা বিষয়ক পোস্টে আপনাকে অনুরোধ করেছিলাম আপনার অভিজ্ঞতার কথা লিখতে। আপনার চোখে পড়েছে কিনা জানি না। তবে এই বিষয়ে লেখা যে শুরু করেছেন তার জন্য ধন্যবাদ। আমার জানতে ইচ্ছে করে পারমাণবিক বোমা হামলার ব্যাপারটি নিয়ে আজকের জাপানীদের মনোভাব কী? পত্রিকার ভাষ্য আর টিভির সাক্ষাতকারগুলোকে কেমন যেন মেকি মনে হয়। আপনি কবি, তাই মানুষকে আপনি সহজেই স্পর্শ করতে পারার কথা। আপনার চোখে দেখা, কানে শোনা জাপানীদের এই গল্পগুলো আরো শুনতে চাই।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
কবিতা ভালো লাগলো খুব।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
ইয়াসুকোর জন্যে সমবেদনা! কবিতাটা আবেগজাগানিয়া!
..................................................................
ঐ যে হাঁটছি মুদ্রা দোষে নাকটা ঘষে
আড্ডা মানেই সেকেণ্ড হাফে খেলছি সোলো
গুজবো না শার্ট আমার পাড়া স্মার্ট পেরিয়ে
সে রোদ্দুরের স্মরণ সভাও লিখতে হল
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
মণিকা আপা, আপনার কবিতা বরাবরই আমার খুব প্রিয়, আপনার সব কবিতাই আমি খুব মন নিয়ে পড়ি। কেন জানি খুব ভালো লাগে। সচলে আপনি লিখেন না কেন আরও বেশি??
এদিক ওদিক মিলিয়ে বেশী লেখার সুযোগ হয়ে ওঠেনা আসলে।
........................................
......সবটুকু বুঝতে কে চায়!
----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand
লেখা কবিতা সবই দুর্দান্ত লাগলো
মণিকা, এমন একটা লেখা লিখেছেন যে কি বলবো বুঝতে পারি না। অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।
আরো অনেক কিছু জানতে ইচ্ছে করে। একটা সিরিজ লিখুন না আপনার সেখানকার অভিজ্ঞতা নিয়ে!
----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
খুব ভালো লেগেছে কবিতাটা।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
ভালো লাগলো, খুবই - কবিতা আর কবিতার গল্প, দুটোই!
-
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
নতুন মন্তব্য করুন