জানিনা কী লিখবো; ভয়ানক কষ্ট হচ্ছে আসলে। একজন দীর্ঘদেহী প্রানবন্ত মানুষের হাসপাতালে জীবন্মৃত্যর সন্ধিক্ষণে শুয়ে থাকার দৃশ্যটা চোখের সামনে সব ঝাপসা করে দিচ্ছে বার বার!
সচলদের মধ্যে আমার ব্যক্তিগত আলাপ সবার আগে সিমনের সাথে। ফেইসবুকে এড করেছিল। ২০০৯ এর দিকে প্রথম ব্লগ চিনি আমি।
যা মনে আসে লিখি- বাংলায় লিখতে পারাটাই তখন আমার কাছে বিশাল ব্যাপার! ব্লগের ফিডব্যাক ইত্যাদি তেমন বুঝিনা। হঠাৎ একদিন ইনবক্সে মেসেজ--" দিদিভাই, এইবারের কবিতাটা খুব ভালো হয়েছে। আমি সিমন- শাহেনশাহ সিমন! সচলায়তনের।"
এরপরে ধীরে ধীরে সচল পরিবারের অনেকের সাথেই আলাপ হয়। কিন্তু সিমন আমার কাছে সবসময়েই খুব স্পেশাল থেকে যায় তার ওই 'দিদিভাই' ডাকের কারণে।মাঝে মাঝে ফেবুতে চ্যাট হয়-'দিদিভাই, এটা শুনেছো? ওটা?' আমিও জানতে চাই-' এইটা কি জিনিস? ওইটা কি ঘটনা বলতো?" সিমনের চোখ দিয়ে ঢাকার খবরাখবর জানা হয়, সচল সম্পর্কে ধারণা জন্মে। একটা কথা বলা খুব প্রয়োজন মনে করি- কখনো কোন বিষয় বা ব্যক্তি সম্পর্কে ওর মুখে কোনো 'না-বোধক' কথা আমি শুনিনি! একদিন ফোনে মিতুর সাথে আলাপ করিয়ে দিলো; মিতু তখন ওর গার্লফ্রেন্ড। এপাশ থেকে শুনতে পাই--' আমার দিদিভাই, কথা বলো!' আমার কোনো ভাই ছিলো না। সিমন ওর এক ধরণের সরল, পজেটিভ আচরণ দিয়ে সেই স্থানটা খুব দ্রুত দখল করে নিয়েছে। সিমন--আমার ভাই!
২০১১ সালে দেশে যাবার আগে সিমনের সাথে কথা হয়-' চলে এসো, সমস্যা নাই; সবার সাথে আলাপ হয়ে যাবে!' নজরুল ভাই ও অন্যান্যদের সাথে দেখা করার ইচ্ছেয় বইমেলায় গিয়ে ওই সময়ে খুবই গ্যাঁড়াকলে পড়ে গিয়েছিলাম আমি। ঢাকায় থেকেছি খুব কম, কিছুই চিনিনা এই শহরের। বাংলা একাডেমীর গেটে গিয়ে পুরাই মাথা আউলা- হাজার হাজার মানুষ! ভীড় থিক থিক করছে! এত ভীড়ের মাঝে অসহায় ভাবে অচেনা মানুষের মুখের দিকে দেখি- কোনো পরিচিত মুখ?! আমি তো এদের কাউকে চিনিনা!
ভয়াবহ ভীড়ের মধ্যে অসহায় হতে হতে বেশ দূরে সকল মানুষের উচ্চতা ছাড়িয়ে যাওয়া একজন লম্বা, স্বাস্থ্যবান মানুষকে দেখি আমার দিকে হাত নাড়ছে! সিমনকে চিনতে সমস্যা অন্য সবার মতন আমারও হয়না! আমার সাথে সেদিন কবি ফেরদৌস নাহার। কোথায় একটা যাবার তাড়া থাকলেও আমাকে অচেনা ভীড়ের মধ্যে একা রেখে যেতে অস্বস্তিতে ভুগছিল বেচারী। সিমনের দিকে আমায় হাত নাড়তে দেখে ফেরদৌস আপু হেসে বলল,' এইতো পাইছো! এখন আর হারাবার চান্স নাই তোমার!'
সিমনের সাথে কথা বলতে গেলে নানাবিধ সমস্যা। দাঁড়িয়ে আলাপ হলে কথা বলা লাগে আকাশের দিকে তাকাবার মতন করে- ; ঘাড় ব্যথা হয়ে যায়, নিজের উচ্চতা সম্পর্কিত হীনমন্যতা ফিরে ফিরে আসে! তবে সুবিধাও আছে- ও আশেপাশে থাকলে মনে হয় বিপদ আপদ নাই- ও আড়াল করে দাঁড়ালে আমাকে কেউ দেখতেই পাবেনা! প্রথম সামনাসামনি দেখায় সে আমায় বলে, 'দিদিভাই, কেউ কোনো সমস্যা করলে আমারে দেখায়া বলবা-এইটা আমার ছোট ভাই; সবাই ভেগে যাবে!' আমি ওর এই কথা একেবারে শাব্দিক ভাবে নিয়েছি। সবাইকেই কারণে অকারণে বলি- 'সিমন কিন্তু আমার ছোট ভাই!"
এবার ঢাকায় যাবার আগে সিমন বলল-'যে কোনো সমস্যায় জানায়ো, আমি আছি!' সমস্যার কথা জানিয়েছি, সে সাধ্যমতন সাহায্যও করেছে। কতবার যে বইমেলা, শাহবাগ, তন্ময়ের বিয়ে, আর নজরুল ভাইয়ের বাসায় দেখা! -'দিদিভাই, কিছু লাগলে বইলো!'
ভাইয়া, আমার আর কিছু লাগবে না- তুমি সুস্থ হও। তাড়াতাড়ি আগের সিমন হয়ে ফিরে এসো আমাদের মাঝে; আমরা তোমার সরলতা মাখা অকপট হাসিমুখটি আবার দেখতে চাই। আবার একসাথে মধুর সব আড্ডা দিতে চাই-- হাসতে চাই তোমার সঙ্গে।
আমরা অপেক্ষা করছি, সিমন!
মন্তব্য
সিমন উঠে এসো
...........................
Every Picture Tells a Story
সিমন... ভাই আমার... সুস্থ হয়ে ফিরে আয়...
facebook
সিমন তাড়াতাড়ই সুস্থ হও।
সিমন আমাদের সবারই ভাই - দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক।
- হিজিবিজবিজ
সবাই অপেক্ষায় আছে, প্লিজ তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ফিরে আসুন সিমন ভাই।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
আমরা অপেক্ষা করছি, সিমন!
____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"
সিমন নিশ্চয়ই ফিরে আসবেন। তাঁকে আসতেই হবে
উনার সুস্থতা কামনা করছি। ফিরে আসেন সিমন...
ডাকঘর | ছবিঘর
তিনি তাড়াতাড়ি সেরে উঠুক, সেই কামনা করি।
অপেক্ষার প্রহর বেশি লম্বা হবে না, এই বিশ্বাস করি। দ্রুত সুস্থ হয়ে সিমন ভাই ফিরে আসবে আমাদের মধ্যে। তারপর আবারও আড্ডা, হাসিঠাট্টা, এইসব নানান কাহিনির জন্ম হবে।
সিমন সম্পর্কে কিছুই জানতাম না, এই লেখা পড়েই কিছুটা জানলাম, আর তাতেই বুঝলাম, কি অসামান্য প্রানবন্ত একজন মানুষ এখন মৃত্যুর সাথে লড়ছে! বুঝলাম, কেন সে সচল পরিবারের এত আপন, এত ঘনিষ্ঠ! এই লেখার সামান্য কয়েকটি বাক্যেই স্পষ্ট হয় এক অসাধারণ মমত্ববান ভাইয়ের প্রতিচ্ছবি!
সচলের একজন পাঠক হিসেবে আমারও চাওয়া- ভাইয়া, তুমি ফিরে এসো। আমরা অপেক্ষা করছি!
আমরা সত্যিই অপেক্ষা করছি, সিমন
সিমন দ্রুত সুস্থ উঠবেন, এই কামনা করি।
-দুর্জয় সাব্বির
অপেক্ষা করছি সিমন
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
সিমন মানুষটা বড় লড়াকু দিদি, আশা রাখো, আমরা ওকে হারাবো না!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন সিমন।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
নতুন মন্তব্য করুন