আমরা যেরকম বাংলাদেশ চেয়েছিলাম- কাদের মোল্লার ফাঁসির মধ্য দিয়ে তার সূচনা হোক।

মণিকা রশিদ এর ছবি
লিখেছেন মণিকা রশিদ (তারিখ: বুধ, ১৮/১২/২০১৩ - ১২:১৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমি সময়মত কিছু বলতে বা লিখতে পারিনা। কাদের মোল্লায় ফাঁসি নিয়ে উত্তেজনার দিনগুলোতে সবকিছু বাদ দিয়ে আমার চোখের সামনে ভাসতো আমাদের স্বাধীনতা উত্তর অসহায় পরিবারটি। আশির দশকেও মামাবাড়ির ঘরগুলো খড়ের, মাথার ওপর কিছু নতুন টিনের চাল। চারদিকে বলতে গেলে খোলাই। আমরা ওখানে যেতে চাইতাম না। মাকে জিজ্ঞেস করতাম -- মামারা এতো গরীব কেনো?

আমার দুই মামাই তখনও নাবালক। আমাদের বাড়িতে থেকে পড়ছে, দিদিমা অসুস্থ স্বামীকে একা একা দেখে রাখছেন। দাদু একাত্তরের জুলাই মাসের পর আর কোনোদিন কথা বলতে পারেননি। তাঁর গালের ওপর দিয়ে বেওনেট চার্জ করে গলার নিচ পর্যন্ত কেটে ফেলা হয়েছিলো। কীভাবে যে বেঁচেছিলেন সেটা এক রহস্য। লুকিয়ে ছিলেন ধান ক্ষেতের পাশে পেয়ারা বাগানে। নিজের ছেলেকে যখন গুলি করে মারলো-চুপ থাকতে পারলেন, কিন্তু যখন সেই প্রাণহীন শরীর চার-পাঁচ টুকরো করা হচ্ছিলো চোখের সামনে- তখন চীৎকার করে বেরিয়ে এসেছিলেন। ওইদিন তাঁর কারণে আরো অনেককেই প্রাণ হারাতে হয়েছিলো। আর তাঁর ছেলের সাথে গুলি করা হয়েছিলো এক-দুই নয়- ষাট থেকে সত্তুরজন যুবককে! একই দিনের বিভিন্ন সময়ে।

আমি কাদের মোল্লার ফাঁসির খবর শুনে ভাবলেশহীন হয়ে বসে আমার দিদিমার কথা ভাবি! একাত্তুরে তাঁর কী সুন্দর সংসার ছিলো একটা! ছেলে সবে চাকরী পেয়েছে, পুত্রবধূ সাড়ে চার মাসের অন্তসত্ত্বা, এক মেয়ে মাধ্যমিক শেষ করে উচ্চ মাধ্যমিকের পড়া করছে, চার আর ছয় বছরের দুই ছোটো ছেলে! একদিন গান পাউডার দিয়ে তার বাড়িটাকে শাদা ছাই বানিয়ে দেয়া হলো, ছেলেটাকে মেরে ফেলা হলো, আহত স্বামী চিকিৎসাহীন-- সেই দিনগুলোতে মেয়েকে হাঁটা পথে ( চারদিনের একটানা হাঁটা) ভারতে পাঠিয়ে দিয়ে সারাদিন পেয়ারা বাগানে লুকিয়ে থাকা, রাতে এসে কিছু রেঁধে খাওয়া- ভোরের জন্যে অপেক্ষা, আবার পালানো-- কতগুলো মাস এই জীবন কীভাবে টেনে নিয়েছেন!

আমাদের বাড়িতে কেউ আমার মামার কথা বলতো না। যুদ্ধ শেষ হবার পর দিদিমা সারাদিন-রাত সুযোগ পেলেই কাঁদতেন। ছেলের বউয়ের আবার বিয়ে দিয়েছিলেন নিজেই, বাচ্চাটা একটা অসাধারণ বাবা পেয়েছে! কিন্তু তিনি ভয়াবহ একা! একসময় আর চোখে দেখতে পেতেন না!
আলোতেও তিতি চোখে নানারকম বানানো ফুল দেখতেন। দেখার কারণও ছিলো- বড় হতে হতে আমরা চারপাশে একাত্তরের খুনীদের আস্ফালনই শুধু দেখেছি। - 'মালাউন, ভারত যা!' প্রথম শুনে এসে বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম- 'মালাউন মানে কী?' এর পর আরো অনেক হাজারবার শুনেছি- বাবাকে আর এসে জিজ্ঞেস করতে হয়নি।

আমাদের বাড়িতে কেউ মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে না ( হয়তো এখন আবার বলবে)! বাড়ির লোকজনের একটা সময় বিশ্বাস হয়ে গিয়েছিলো- এই দেশে আমাদের মতন পরিবারগুলোর কোনো স্থান নাই। এই দেশে আমার প্রাণের বন্ধুও এসে ফিসফাস করে বলতে পারে- 'তোদের হিন্দুদের তো একটাই যাবার জায়গা!' আমরা তো সবাই বাঙালী ছিলাম- কবে থেকে শুধু 'হিন্দু' বলে আমার পরিচয় হলো! আমরা এগুলো নিয়ে অভিযোগ করতাম। আমাদের বাপ-মা রা চুপ থাকাই শ্রেয় মনে করতেন। তারা ভারত যেতে পারেননা- ওই দেশ তাঁদের দেশ না, তাঁরা বাংলাদেশে থাকতে পারেন না- কারণ তারা হিন্দু!

আজ ভালো লাগছে- হয়তো পরিবর্তন সূচিত হবে। সবাই আবার নিজেদের সর্বোপরি 'বাঙালী' ভাবতে শুরু করবে। আমার ছোট্ট বোনটিকে কেউ উড়ো চিঠিতে লিখে পাঠাবে না-" হারামজাদী মালাউনের বাচ্চা, উঠায়া নিয়া যাবো"

আমরা যেরকম বাংলাদেশ চেয়েছিলাম- কাদের মোল্লার ফাঁসির মধ্য দিয়ে তার সূচনা হোক।
( বেশি বেশি আবেগে আক্রান্ত হয়ে কী লিখলাম বুঝতেছিনা ভালো করে)।


মন্তব্য

আশালতা এর ছবি

হোক। শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে তাই হোক।

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

মণিকা রশিদ এর ছবি

হ্যাঁ!

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

অতিথি লেখক এর ছবি

মনটা খারাপ হয়ে গেল দিদি লেখাটা পড়ে,আমার পরিবারের এইরকম কোন ক্ষয়-ক্ষতি হয় নি কিন্তু তারপর ও রাজাকারগুলার চেহারা দেখলে এত ঘৃণা হয়;আমি কল্পনাও করতে পারি না যারা আপনজনকে হারিয়েছে তারা এতগুলা বছর কিভাবে কাটিয়েছে
সূর্য একদিন উঠবেই
ইসরাত

মণিকা রশিদ এর ছবি

আমি হয়তো শুধু আমার পরিবারের কথা বলিনি; এরকম পরিবার সারা বাংলাদেশে অনেক রয়েছেন!

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

মন খারাপ
কি বলব বুঝে উঠতে পারছিনা। মন খারাপ
একদিন নিশ্চয় আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ হবে, নিশ্চয় হবে।

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

স্পর্শ এর ছবি

আমরা যেরকম বাংলাদেশ চেয়েছিলাম- কাদের মোল্লার ফাঁসির মধ্য দিয়ে তার সূচনা হোক।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

মোহছেনা ঝর্ণা এর ছবি

আমরা যেরকম বাংলাদেশ চেয়েছিলাম- কাদের মোল্লার ফাঁসির মধ্য দিয়ে তার সূচনা হোক।

সহমত

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমি ভাবি, মণিকার লেখা পড়ি সেই কবে থেকে, তার সাথে সচলের বাইরেও যোগাযোগ হয়, দেখাও হয়েছিল। অথচ, মণিকার পরিবারে মুক্তিযুদ্ধের এমন সহ্যের অতীত ঘটনার ইতিহাস আছে সেটা কখনো তার কাছ থেকে শুনিনি। বস্তুত, বাংলাদেশের কোটি কোটি পরিবারে মুক্তিযুদ্ধ এমন সব ইতিহাস আছে। আমরা সবাই যদি মণিকা বা সুমনের মতো এই ইতিহাসগুলো লেখা শুরু করি তাহলে অনেক বীরের ইতিহাস যেমন জানা যাবে তেমন অনেক পিশাচের মুখোশও খুলে যাবে।

হারামজাদী মালাউনের বাচ্চা, উঠায়া নিয়া যাবো

এই হুমকি দেয়াটা রাতারাতি বন্ধ হবে না। আশা করতে পারি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ঘটনা সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়ে গেলে এমন অশ্লীল তড়পানি কমে আসবে। আর পুরোপুরি বন্ধ করতে গেলে শিক্ষা, মানবিকতা, পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ, অসাম্প্রদায়িকতা এমন আরো অনেক কিছুর প্রসার ঘটতে হবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

সহমত পান্ডব দা।

মাসুদ সজীব

অতিথি লেখক এর ছবি

আমরা যেরকম বাংলাদেশ চেয়েছিলাম- কাদের মোল্লার ফাঁসির মধ্য দিয়ে তার সূচনা হোক।

চলুক

মাসুদ সজীব

স্যাম এর ছবি

চলুক

মণিকা রশিদ এর ছবি

পাণ্ডবদা, সব মানুষ রাতারাতি অসাম্প্রদায়িক হয়ে যাবে সে আশা আমরা এখনই করতে পারিনা। বস্তুত আমার সামান্য অভিজ্ঞতায় আমি দেখেছি পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষই সাম্প্রদায়িকতা, রেসিজম-ইত্যাদির বাইরে যেতে পারেনি আজও! সে পর্যন্ত বোঝাটা সহজ। কিন্তু যে অমানুষিক রক্তক্ষয়ের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের দেশটা পেয়েছি সেইখানেও এখনও এতো অবাঞ্ছিত ঘৃণা, বিদ্বেষের অভিজ্ঞতা কষ্টকর। কিন্তু তারপরেও কিছু কিছু মানুষ যে সংকীর্ণতার উর্ধ্বে উঠে সত্যিকারের মানবিকতার পরিচয় দিচ্ছেন- তাঁদের সাথে যোগাযোগ হলে আশা বাড়ে যে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে হয়তো খুব খারাপ একটা পৃথিবীতে রেখে যেতে হবে না!

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

পাণ্ডবদা ঠিক আমার কথাগুলোই বলে দিলেন।
আর মণিকাদি, কী বলব। কথা সরছে না মুখে।
রেসিজম সব জায়গাতেই আছে, থাকবে। কিন্তু এরকম প্রকাশ্যে দিনের আলোয় গলা চড়িয়ে হুমকি দেয়ার মতো অল্প কয়টা দেশের মধ্যে বাংলাদেশও একটা, সেটা ভাবতেই খারাপ লাগে!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

কিন্তু আল্লামা আবদুল কাদের মোল্লা তো কিছু করে নাই, হ্যাতে ছাত্র ইউনিয়ন করতো, তোফায়েল আহমেদের লগে মুক্তিযুদ্দা আছিল।

মণিকা রশিদ এর ছবি

হ!

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

আমরা যেরকম বাংলাদেশ চেয়েছিলাম- কাদের মোল্লার ফাঁসির মধ্য দিয়ে তার সূচনা হোক।

আশায় বুক বাঁধতে দোষ কী!

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

নির্ঝর অলয় এর ছবি

এমন অজস্র বেদনার ইতিহাস এই বিস্রস্ত জনপদ।
মালাউন এত শুনেছি যে, ওতে ইমিউন হয়ে গেছি। এবং আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় সত্যিকার উদার লোক খুবই কম দেখেছি।

তবে পরিবর্তন হবে খুবই কঠিন। কাদের মোল্লা এবং তার দোসরদের বংশধরদের কথা আমরা ভুলে যাচ্ছি। এই জন্তুদের মামলা যারা লড়ছেন এবং যারা বিদেশে লবিং করছে- তাদের সংখ্যা একেবারে কম নয়। তাদের অর্থ আমাদের চেয়ে অনেক বেশি। মনোবল আর সাহসই আমাদের শক্তি। লড়াইটা কঠিন, ভীষণ কঠিন।

মণিকা রশিদ এর ছবি

লড়াইটা কঠিন, কিন্তু লড়াইটা জিতে যাবার সম্ভাবনা দেখে আনন্দ হয়!

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

শাহীন হাসান এর ছবি

আজ ভালো লাগছে- হয়তো পরিবর্তন সূচিত হবে। সবাই আবার নিজেদের সর্বোপরি 'বাঙালী' ভাবতে শুরু করবে। ?

....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

চোখ ভিজে এলো লেখাটা পড়ে। "হিন্দু না ওরা মুসলিম ঐ জিজ্ঞাসে কোন জন" - আমরা মানুষ, সামান্য ধর্ম আমাদের পরিচয় নয়, হতে পারে না। যা সকল জারজপুঙ্গব এইভাবে চিন্তা করে, তাদেরকে জনসমক্ষে যথোপযুক্ত শাস্তি দিলে এক সময় এই ধরণের জারজরা আর জন্মাবে না। আমি আশাবাদী - আজ হোক কাল হোক, এটা ঘটবেই। আর ততদিন আমরা যে যেখানে আছি নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রতিবাদী হয়ে উঠতে পারি।

____________________________

মণিকা রশিদ এর ছবি

শাহবাগের গণজাগরণ দেখে সেই আশা আমরা অবশ্যই করতে পারি

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

স্যাম এর ছবি

মন খারাপ
আমরা যেরকম বাংলাদেশ চেয়েছিলাম- কাদের মোল্লার ফাঁসির মধ্য দিয়ে তার সূচনা হোক

অমি_বন্যা এর ছবি

আপনার লেখা পড়ে কান্না পেল মনিকা দি। ভালো থাকবেন সবসময়। ড়

মণিকা রশিদ এর ছবি

নেক ধন্যবাদ!

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

দীনহিন এর ছবি

এক চিলতে লেখা, কিন্তু পুরো মুক্তিযুদ্ধকেই যেন তুলে আনলেন! মুক্তিযুদ্ধে রাজাকার বাহিনীর নারকীয় তাণ্ডব, বীভৎসতা, মুক্তি-যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে সীমাহীন প্রবঞ্চনা , একটি সম্প্রদায়ের প্রায় তলিয়ে যাওয়া, আশা ও আশাভঙ্গের কথা- কোনটাই বাদ যায়নি, আপু!

একদিন গান পাউডার দিয়ে তার বাড়িটাকে শাদা ছাই বানিয়ে দেয়া হলো,

বলতে কি, পরাজিত শত্রুরা এখনো তাই করছে, এবং ঘোষণা দিয়েই ওরা মুক্তিকামী বাঙ্গালির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে! যে ডিসেম্বরে ওরা শোচনীয় পরাজয় বরণ করেছিল, সেই ডিসেম্বরেই ওরা হামলে পড়েছে সর্বশক্তি দিয়ে, উদ্দেশ্য বাঙ্গালির মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে স্তব্ধ করে দেয়া!

আমার ছোট্ট বোনটিকে কেউ উড়ো চিঠিতে লিখে পাঠাবে না-" হারামজাদী মালাউনের বাচ্চা, উঠায়া নিয়া যাবো"

সাম্প্রদায়িকতার চাষ যে কত ব্যাপক হয়েছে, তা প্রতিদিনই টের পাই। একজন মানুষ হয়ে আর একজন মানুষকে শুধুমাত্র ভিন্ন ধর্মের কারণে যে কি প্রচণ্ড ঘৃণা করা হয়, তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। ভাববেন না, শুধু কুপমন্ডক, অশিক্ষিত লোকদের মধ্যেই এ ঘৃণা আছে। অনেক উচ্চশিক্ষিত, শহুরে, আধুনিক (আক্ষরিক অর্থে!) মানুষকেও দেখেছি একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষের সাথে হাসিমুখে কথা বলছে ঠিকই, কিন্তু সে চলে যাওয়ার পর পরই এমন নোংরা কথা বলছে যে, সভ্যতা স্তব্ধ হয়ে যেতে বাধ্য!
এজন্যই বলছিলাম, পরাজিত শত্রুদের যুদ্ধটা আসলেই প্রগতির বিরুদ্ধেই। ওরা যতদিন বিরাজ করবে, ততদিন বাংলাদেশটা এমনই থাকবে, অথবা বড়জোর পাকিস্তানের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারবে কেবল।

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

মণিকা রশিদ এর ছবি

আমি দ্বিমত করি না। শিক্ষা মানে তো আর প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রী নয়; শিক্ষা একটি ব্যপক এবং বিস্তৃত বিষয় যা মানুষের অন্তর্লোক আলোকিত করে। সেই হিসেবে একজন শিক্ষার আলোপ্রাপ্ত মানুষ সাম্প্রদায়িক হবে না এটা আমি বিশ্বাস করি ব্যক্তিগতভাবে। আর আমার গল্প-- এই গল্প শুধু আমার একার না; এরকম আরো হাজার হাজার গল্প রয়েছে আমাদের- না বলা সেই গল্পগুলো সবাই শুনতে পেলে হয়তো দেশে রাজাকারের বিচার হতে বিয়াল্লিশ বছর লাগতো না।

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

অতিথি লেখক এর ছবি

সবার অপরে মানুষ সত্য তাহার ওপরে নাই

এই নীতিতে আসতেছে বাংলাদেশ।

মণিকা রশিদ এর ছবি

হাসি

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

অতিথি লেখক এর ছবি

আমরা যেরকম বাংলাদেশ চেয়েছিলাম- কাদের মোল্লার ফাঁসির মধ্য দিয়ে তার সূচনা হোক।

স্বপ্নের বাংলাদেশ পেতে আরো অনেক পথ চলতে হবে, অনেক বাধা অতিক্রম করতে হবে। আশায় বুক বাঁধি সেদিনের যেদিন দেশটা যেমন চাই তেমনি হবে।

শব্দ পথিক

আয়নামতি এর ছবি

...

আমরা যেরকম বাংলাদেশ চেয়েছিলাম- কাদের মোল্লার ফাঁসির মধ্য দিয়ে তার সূচনা হোক।

অনিকেত এর ছবি

আমরা যেরকম বাংলাদেশ চেয়েছিলাম- কাদের মোল্লার ফাঁসির মধ্য দিয়ে তার সূচনা হোক।

--এই একই কামনা আমারো
শুভেচ্ছা নিরন্তর!

এক লহমা এর ছবি

মণিকাদিদি, এই লেখা ইন্টারনেটে উঠে থাকল। অন্তত: যতদিন সচলায়তন থাকবে, ইতিহাসের এই দলিল জনতার নিজস্ব দেয়ালে টাঙানো থাকবে। অসাধারণ কাজ হয়েছে।

আরো আরো বেশী করে এই দলিলগুলি সামনে আসা দরকার। হিমু একটা ভীষণ জরুরী ডাক দিয়েছে। লিখতে থাকুন, সবাই মিলে লিখতে থাকুন। সত্যি ঘটনার গোছান-আগোছাল-আস্ত-টুকরো-যে-যেমন-লিখতে-পারেন বিবরণে বিবরণে ডুবিয়ে দিন, ভাসিয়ে নিয়ে যান যত বানোয়াট প্রচার আর ধাপ্পাবাজীকে। মুক্তিযুদ্ধের আলোয় উজ্জল বাংলাদেশকে পাওয়ার আশা পূর্ণ হওয়ার জন্য এটা অত্যন্ত দরকার।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

নীড় সন্ধানী এর ছবি

লেখাটা পড়ে ভেতরটা ভীষণ কেঁপে উঠলো!! যার লেখা এতদিন ধরে পড়ছি তার ভেতরেও এমন একটা ইতিহাস লুকিয়ে আছে চিন্তাই করিনি। যারা কাদের মোল্লাদের মতো অন্ধকারের সৈনিকদের জন্য কান্নাকাটি করছে, তাদেরকে এই ইতিহাসগুলো পাঠ করে শোনাতে ইচ্ছে করে। আবার ভাবি এসব মানবতার কথা শুনিয়েও লাভ হবে না। ধর্মোন্মাদ লোকজন প্রচণ্ড রকমের অমানবিক হয়।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

তীরন্দাজ এর ছবি

ধর্মীয় বিভেদ সৃষ্টিকে ঘৃণা করি। অনেকে সরাসরি না বললেনও ভেতরে ভেতরে এই বিভেদ বহন করে চলে। অনেকে অন্য দেশের অন্য কোনো বিভেদকে তুলে ধরে নিজের ভেতরের বিভেদকে যুক্তিসিদ্ধ করার চেষ্টা করে। তাদের সবার জন্যে আমরণ ঘৃণা। তাদের বোধোদয় হোক!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি

সচলে লেখা শুরু করার অনেক আগে থেকেই আমি আপনার লেখা কবিতার একজন একনিষ্ঠ পাঠক। চিরকালই কবি কে তার গুণমুগ্ধ পাঠকের কাছে খুব চেনা কাছের কেউ মনে হয়। আপনার বুকের ভেতরের এরকম অসহ্য কষ্টের একটি বাস্তব কবিতা বয়ে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা শুনে আমারও বুকের ভেতরটা মুশরে উঠলো।

অতিথি লেখক এর ছবি

লিখাটা পড়ার পড় ইচ্ছে হচ্ছিল চিৎকার করে হাউমাউ করে কাঁদি, নিজেকে বড় ক্ষুদ্র মনে হচ্ছিল । হঠাত আমার কাঁধে হাত পড়তেই দেখি আমার অফিসের অডিটের সুবির দা, দাদা কি হইসে মন খারাপ কেন ? বললাম ভাই আমারে মাফ কইরা দিয়েন আমরা এখনও সভ্য হইতে পারি নাই। দাদা হাসে কেন এই কথা বলেন, লিখাটা পড়তে দিলাম। পড়ে আবারও সেই স্নিগ্ধ হাসি দিয়ে বললেন, এই ফেব্রুয়ারিতে আপনি যখন শাহবাগে আমার পরিবারের কথা শুনে আমাকে বুকে জরিয়ে কেঁদেছিলেন তখন আমার খুব আনন্দ হইসিল কেন জানেন, মনে হয়েছিল এই দেশ রাজাকারের না এটা আমাদের দেশ। প্রসঙ্গত বলছি মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের পরিবার ছাড়া বাকি সবাই যখন ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন তখন তার দাদুর এক কথা ছিল ওটা আমার দেশনা মরি বাঁচি আমি আমার দেশ ছেড়ে কোথাও যাবনা , ফলাফল চাচা শহীদ, ফুফু বীরাঙ্গনা, বাবা নিখোঁজ ছিলেন প্রায় ২ বছর, নিঃস্ব হয়ে দীনহীন অবস্থায় জীবন কটিয়েছেন।

আপু একটা কথা বলবেন এত শক্তি আপনি বা সুবির দা কোথা থেকে পান?!! মুক্তিযুদ্ধে আমার পরিবারের তেমন কোন ক্ষতি হয়নি তবুও আমি মানতে পারিনা মাঝেমাঝে ক্রোধে উন্মাদ হয়ে যাই অথচ আপনারা নির্দ্বিধায় আমাদের মাথায় সান্তনার হাত বুলান।

আমি বিশ্বাস করি এই দেশে এমন দিন অবশ্যই আসবে যে দিন মালাউনের বাচ্চা তুই ইন্ডিয়ায় যা না বলে সবাই বলবে রাজাকারের বাচ্চা তুই পাকিস্তানে যা ।

অভিমন্যু .
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি

স্বপ্নহারা এর ছবি

আমার মায়ের মুখে শুনেছি, তখন মা ক্লাস এইটে পড়েন। বোরখা পড়ে কীভাবে পালিয়েছিলেন, কলেমা মুখস্থ করেছিলেন, নদীর মধ্যে মাথায় কচুপাতা দিয়ে সারাদিন ডুব দিয়ে ছিলেন-রাতে নদী পার হয়েছিলেন! দিদিমার কয়েকশ ভরি সোনা লুট হয়- বড় ছেলে যুদ্ধে যায়, আর ছোটটা ছিল হাজারীর বাহিনীতে!

আমি বিন্দুমাত্র আশাবাদী না। এখন দেশে হিন্দু বিদ্বেষ চরমে। মালাউন গালি আগে কিছু লোক দিতো, এখন আরও বেশি দেয়! মন খারাপ তবে স্বপ্ন দেখতে থাকি, একসময় সত্য হবে এই আশায়! জাস্ট এই লেখাটা পড়ছিলামঃ
এখানে!

গত চার বছরে সংখ্যালঘুদের নির্যাতন ও সহায়সম্পদ হরণ এবং ধ্বংসের বহু ঘটনা ঘটলেও চলতি বছর ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত এক মাসের ঘটনা ছিল মর্মান্তিক। এক মাসেই সারা দেশে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়েছে ১৮০টি মন্দির। আংশিক ধ্বংস করা হয়েছে ১৫৪টি মন্দির। ধ্বংস করা হয়েছে ২৭৭টি হিন্দু বাড়ি। আংশিক ধ্বংস করা হয়েছে ২১২টি বাড়ি। লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে ৫৮টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী শ্লীলতাহানি করা হয়েছে নয় হিন্দু নারীর। দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে দুই হাজার ১২টি পরিবারকে। হত্যা করা হয়েছে তিনজনকে। নির্যাতনে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন ২৮ জন হিন্দু নর-নারী। খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন ২৯০টি হিন্দু পরিবার। তাদের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি প্রায় ১৭০টি কোটি টাকা। অবশ্য পরে চলতি মাসের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ অঙ্ক বেড়েছে দাঁড়িয়েছে আরো অন্তত ৩৫ কোটি টাকা।
এ ছাড়া ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৭২ জন সংখ্যালঘু নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। অপহৃত হয়েছেন ৫০-৫৬ জন নারী ও শিশু। জোরপূর্বক দখল হয়েছে হাজারেরও বেশি সংখ্যালঘু পরিবারের জমি। ধর্মান্তরিতকরণের শিকার হয়েছেন দুই শতাধিক সংখ্যালঘু।

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।