একটা পনের ওয়াটের বাতি অন। তা বাদে সব অফ। দখিনের বারান্দায় ইজি চেয়ারটা দুলছে। অল্প আলোয় কাঠামোটা দেখা যায় না। বারান্দা লাগোয়া ঘরটাতে নরোম ভলিউমে বেজে চলেছে......পুছো না ক্যায়ছে মান্ র্যায়না বিতায়ী...আব ইয়ে দীপাক্....
কোহিনূর যখন বারান্দায় বসেছিলেন তখন সম্ভবত রাত বারটা সাড়েবারটা হবে। কোহিনূর ইচ্ছা করলেই টেবিলে খাবার ঢাকা দিয়ে শুয়ে পড়তে পারেন। ইচ্ছা করলে ঘুমিয়েও যেতে পারেন। হাশমির কাছে অটোলকের চাবি আছে,কিন্তু কোহিনূরের মনে হয় ওর আর হাশমির সম্পর্ক এমন এক মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে যেখান থেকে ফেরার পথ নেই। হয় দুজনকেই পাশাপাশি হেঁটে আরো কিছুদূর যেতে হবে,নয়ত এই মোড় থেকেই আলাদা পথ খুঁজে নিতে হবে। বেশ কিছুদিন ধরেই ভাবছে। কোনভাবেই ভাবনাগুলোকে একটা সলিড ফর্মে আনতে পারছে না। বিশেষ করে তুলির হাসপাতালে থাকার দিনগুলোতে হাশমির কন্ট্রোভার্সিগুলো দগদগে হয়ে গেছে। প্রথম দু’তিন দিন ছাড়া মেয়ের পাশে ওকে পাওয়া যায়নি! মেয়েটা কি শুধুই কোহিনূরের? নাবালক প্রশ্ন,তবুও প্রশ্নটা ঘুরেফিরে আসে।
খুট করে একটা শব্দ হলো।
মেইন গেটটা খুলে গেল।খুব সাবধানে নিজেকে ঘরের ভেতর টেনে আনলেন হাশমি।
-তুমি জেগে আছ এখনো?এক্সিকিউটিভ পার্টিগুলোর এই এক সমস্যা! শেষ হওয়ার নাম নেই..
-বাহ! বসের কাছে এক্সকিউজ দিচ্ছো মনে হয়? আমি তো কোন প্রশ্নই করিনি!
-না মানে,প্রশ্নের দরকার কি,আমার দেরির কারণটা বলব না?
-না। বলবে না,কারণ তুমি ভাব রোজ নতুন কিছু বলছ,আসলে এগুলো মুখস্থ হয়ে গেছে। টেবিলে খাবার দেয়া আছে ।
-অ। তুলি কোথায়, তুলি ?
-তুলি এতরাতে জেগে থাকে না।
-হ্যাঁ হ্যাঁ তাইতো।
ডিস্ক বেজে বেজে শেষ হয়ে গিয়েছিল। কোহিনূর আবার প্লে দিলেন......পুছো না ক্যায়ছে মান র্যায়না বিতায়ী.....ওর মনে পড়ে, মুভিটা দেখেছিল। শেষ রাতের আবছা আলোয় জানালার শিক ধরে নায়িকা দাঁড়িয়ে আছে..নায়ক টলতে টলতে সিঁড়িভেঙে উঠে তার কাছে এসে গাইছে......পুছো না ক্যায়ছে..মান্না দে। কি অসম্ভব দরদ দিয়ে গেয়েছিলেন! হাসি পায় কোহিনূরের। বাবু সারারাত বাঈজিবাড়ি কাটিয়ে চুর হয়ে ঘরে ফিরে স্ত্রীকে শোনাচ্ছে....জানতে চাইলে না কি করে কাটল এতটা সময় !
হাশমি ও তো ওভাবে বলতে পারত?একসময় তো কবিতা- টবিতা লিখত। নামটাওতো কবিদের মত-রুবাইয়াত্ হাশমি! তাতেই বা কি এমন হতে পারত? কোহিনূর জানে এখন কি কি ঘটবে। প্রায় রোজকার ঘটনা। মনে পড়তেই ঘেন্না লাগে। গা গিন গিন করে ওঠে। আজকাল ও বেশ অনেক্ষণ ধরেই ড্রেসিং টিবিলের সামনে দাঁড়িয়ে দেখছে। নাহ,কোন সমস্যা নেই!সেটা কি নিজেকে সকলেই সুন্দর ভাবে সেজন্য? অন্য মানুষের ভাব নিয়েও দেখেছে। নাহ,তেমন তো বদলাইনি? তাহলে? কোহিনূর লক্ষ্যই করেনি ওর নাকের দু’পাশে খুব মিহি কিছু বলিরেখার আভাস। হাসলে অনেকগুলো অপ্রয়োজনীয় ভাঁজ পড়ে গালে। আড়াআড়ি আঁচলটা আগের মত উঁচু হয়ে থাকেনা। নিজের সুক্ষ্ন পরিবর্তন কখনোই নিজের কাছে ধরা পড়ে না। নিজেকে রোজ রোজ দেখার সমস্যা এটা ,সেটা কি করে জানবেন কোহিনূর?
যেমন চুমকি জানতে পারেনি যে সায়েবের ঘরে গতরাতে ও গিয়েছিল তার সাথে ওর ম্যাচিং হয় না। সম্ভবত ট্রাক ড্রাইভার- টার কিছু হবে। চুমকিকে এটা করতে হয়। আবাসিক হোটেলে ঘরঝাড়ু– দিয়ে যা পায় তাতে বাপ-মেয়ের চলে যাবার কথা,কিন্তু ওর বাপ মাসের পনের দিন যেতে না যেতেই চোলাই,ধেনো খেয়ে ফতুর করে দেয়।
চুমকির অবশ্য এ নিয়ে কোন কষ্ট নেই। বরং একধরণের ঔদ্ধত্ব কাজ করে ওর মধ্যে। কত বড় বড় বাবু দেখেছে! বাড়িঘর সব আছে, তাও হোটেলে এসে রাত কাটিয়ে যায়। চুমকি জানে,ওর কালো টান টান এই দেহটা বাবুদের মাথায় আগুন ধরিয়ে দেয়। বাবুদের রোজ রোজ পোষা ঘোড়ায় চড়তে চড়তে সাধ হয় একটা তেজি জংলি ঘোড়া বশ মানাতে। এক বাবু একবার বলেছিল-চুমকির বাঁক দিয়ে টানটান হয়ে দাঁড়ানো দেখেই নাকি ওই বাবুর সারা শরীর কেঁপে উঠেছিল! ওর ঘাড় বাঁকা করে তাকানো দেখে নাকি বাবুর বুকে শেল বিধেছিল! চুমকি এত সব বোঝেনা। বাবুরা বলে, ও শোনে.....ভাবতে ভাবতে ঘুম মত এসে গিয়েছিল। হঠাত্ বাবার ডাকে জেগে ওঠে চুমকি।
-গরম জল লিয়ে আসসি মা, ওঠ জলপট্টি দিয়ে শেক দেই।
-না, দরকার নেই। এমনি শুয়ে থাকলেই ঠিক হয়ে যাবে।
কেদার নাথ আড়চোখে তাকায়। সাহস করে বলতে পারে না, বাবা হয়ে যে বলা যায় না সেটা এই মামদো মাতালও বোঝে! আর বারের চেয়ে যে এবারের খামচাখামচি বেশি সেটা বুঝে কেদার ডাক্তার ডাকতে চায়।
-মজু ডাক্তোর কে ডেকে লিয়ে আসব মা?
-বললাম তো লাগবে না। বলে পাশ ফিরে শোয় চুমকি।কেদার নাথ মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। ধীরে ধীরে ঘুমের কোলে ঢলে পড়ে চুমকি। আর কেদার নাথ যন্ত্রচালিতের মত নাগাড়ে মাথায় হাত বুলাতে থাকে। অপলক চোখে দেখতে থাকে মেয়ের ঠোঁটের পাশে,চিবুকে,গলার কাছে খামচি আর আঁচড়ের দাগ। কাঁধের কাছে অনেকটা জায়গাজুড়ে দাঁতের কামড় বসে আছে। সভ্যতার চোলাই,শহরের জাঁক-জৌলুস,এ্যারিস্ট্রোক্র্যাসির ঠাঁট,মদমত্ততার আয়েসী ঠুমরি,গগনবিদারি হুল্লোড় আনন্দপ্রকাশের বাড়বাড়ন্ত খোমোক,দুমকে দুমকে হেঁটে যায়,সরে যায়। কোন কিছুই কেদার নাথকে স্পর্শ করে না। কেদার নাথ মেয়ের খুব কাছে মুখ নিয়ে যায়। পুরুষের গন্ধ পায়।খুব অল্প সময়ের জন্য একটা আগুনের হল্কা মাথাপর্যন্ত উঠে আসে, আবার ধীরে ধীরে নেমে যায়।
ঘনার সাথে কোহিনূর বেগমের কি সম্পর্ক বা কোন সম্পর্ক আদৌ হতে যাচ্ছে কীনা সে বিষয়ে আমরা আপাতত কোন পন্ডিতি করতে যাব না। কোহিনূরের মত এজন রুচিশীল শিক্ষিত পরিমার্জিত নারী ঘনার মত হারামির হাড়,বেধড়ক বদ,নিষ্ঠুর ষাঁড়,এবং ক- অক্ষর গোমাংশের সাথে অলৌকিক ভাবে ফিলমি নিয়মে ছাম্মাক ছাম্মাক গাইতে গাইতে আনসিভিলাইজড রিলেশন বিল্ডআপ করতে পারে কী না,সে নিয়েও আমরা কোন রকম গুজুর গুজুর ফুসুর ফাসুর করব না। ঘনার জীবন বিষয়ক ফিলোসফিটাও সোজাসাপ্টা---জীবন আছে তো আছে,মরণ আছবে তো স্লা জীবনের পোঁদে লাত্থি মেরে মরণের ছাথে চলে যাব, আমার কি বাল হোবে ? এই হলো ঘনা। ঘনশ্যাম ঝুনঝুনওয়ালা। ওর বাবারা এসেছিল মুঙ্গেরের মৌসুন্দি এলাকা থেকে। বড় হয়ে একবারই গিয়েছিল ঘনা। পৈতৃক বাড়ি থেকে চালু কিছু প্রবাদ শিখে এসেছিল । মাঝে মাঝেই সেগুলো শোনায় সাগরেদ দের।সেই প্রবাদগুলোর একটা বিড় বিড় করে বলছিল ঘনা। তার আগে দিনের প্রথম কাজটা সেরে ফেলেছিল। সকাল দশটা এগারটার দিকে প্রথম বাসে উঠেই এক গাব্দাগোব্দা নেড়ুর মোবাইল ঝেড়ে দিয়েছিল। অন্য দিন হলে ঝাড়ামালের সিমটা এক মুহূর্তেই খুলে সোজা ড্রেনে ,তার পর সেটা স্টেডিয়ামের কোনায় নিয়ে ঝেড়ে আসত। আজ তা করল না। ফোল্ডিং সেটটা খুলতেই একটা বোতামে চাপ লেগে বেজে উঠল..
.....আপনি কি আজ আপনার শিশু কে আদর করেছেন/আপনি কি আজ কোন দরিদ্র কে সাহায্য করেছেন/আপনি.......আবে স্লা ! ছের পে বাল নেইকে ফিন বোগোল মে কাঁক্কই ?আর ঠিক তক্ষুনি ঘনা ভূত দেখার মত চমকে উঠল ! খোচরের বাবার বাবা তার সামনে দাঁড়ানো.............................
মন্তব্য
চলুক ....
---------------------------------------------------------
আমার কোন ঘর নেই !
আছে শুধু ঘরের দিকে যাওয়া
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
চালাতে পারব কি না সেটা নিয়েই সন্দেহ হচ্ছে।
গল্প নিয়ে শুধু খাতার পাতায় আঁকিবুকি করলে চলত। এখন ভাবতে হচ্ছে বড় ক্যানভাসের রং তুলি নিয়েও ।কি জানি কোন গাড্ডায় পড়ি!
.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......
.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......
এত বেশি ভাল লেখেন কেন আপনি?
.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........
.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........
ভাল কোথায় ? এতো সব নীচুতলার কাশুন্দি।
.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......
.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......
চলুক, দ্রুত চলুক..........
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
তথাস্ত।
ক্লান্তি লাগলে দেব একদিন দুম করে ঘনাকে মেরে। কেচ্ছা খতম!
ধন্যবাদ।
.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......
.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......
আগেরটা পড়ে আসি...
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
এই মেরেছে !
.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......
.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......
দাদা আপনার এই সিরিজটা বেশি ফাটাফাটি হইতাছে, কমেন্ট করি না দেইখা মনে কইরেন না যে পড়ি না হেহেহে ।
------------------------------
'এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি ?'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
সে কি খুলে বলা লাগে ?পাগল !
.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......
.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......
তবুও তো কমেন্ট করতে হয়। এতো ভালো লেখা পড়ে কমেন্ট না করলে বড় অন্যায় হয় যে । শুভকামনা আপনার জন্য, সবার জন্য ।
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
চলুক.... উপন্যাস হয়ে যাবে।
যে রাতে গুঁজেছো চুলে বেগুনি রিবন বাঁধা ভাট,
সে রাতে নরকও ছিলো প্রেমের তল্লাট।
. . . . . . . . . . . . . . . . . . (আবু হাসান শাহরিয়ার)
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
নতুন মন্তব্য করুন