অণুঃআতঙ্ক - ৩ : রেসিপি

মন মাঝি এর ছবি
লিখেছেন মন মাঝি [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ১৪/০৬/২০১১ - ১:১৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

“বল না ! হিলবিলির মানুষখেকো পরিবারের গল্পটা আমাদের আরেকবার বল না -- প্লিজ!

জন কঁকিয়ে উঠল। “আর না ! এর মধ্যে কয়বার শুনেছ তোমরা গল্পটা ?”

“প্লি-জ।” বাচ্চা দু’টো নিস্পাপ চোখদুটো বড় বড় করে মিনতিমাখা চেহারায় তাকায়। জন হাল ছেড়ে দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, “বসো তাহলে। কিন্তু আর একবারই মাত্র, ঠিক আছে ?”

বাচ্চাগুলি জায়গামত বসে পড়লে জন শুরু করে।

“একবার এক ইংরেজ ব্যাকপ্যাকার অস্ট্রেলিয়াতে হিচহাইক করে দেশটা দেখতে বেরিয়েছেন। এমনি করে যেতে যেতে একবার উনি একটা পুরনো লক্কড়-মার্কা স্টেশন ওয়াগনের পিছে লিফট পেলেন। এরপরের কথা তার আর স্পষ্ট মনে নেই। শুধু পরে টের পেয়েছেন যে তাঁর মাথা ফাটিয়ে, হাত-পা বেঁধে তাঁকে লোকালয় থেকে বহুদুরে নির্জন আউটব্যাকের কোথাও একটা পুরনো কুটিরে নিয়ে আটকে রাখা হয়।”

বাচ্চাগুলি গল্পটা আগেও শুনেছে। কিন্তু তারপরও তারা মন্ত্রমুগ্ধ ভাবে শুনতে থাকল।

“ভদ্রলোকের জ্ঞান ফিরলে তিনি আবিষ্কার করলেন তাঁকে একটা খাটের ফ্রেমের সাথে চেন দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। পুরনো আমলের খুব ভারি সলিড লোহার খাট – তাঁর পক্ষে নড়ানো সম্ভব নয়।”

উত্তেজনায় বাচ্চাগুলি ছটফট করছে...গল্পের পরের অংশুটুকু তাদের খুব ভাল করেই তো জানা আছে।

“ঐ রাত্তিরে একটা হিলবিলি, মানে, একটা অতি বদখৎ নোংরা বুড়ো কুচ করে এক কোপে ভদ্রলোকের ডান পা’য়ের পাতাটা গোড়ালি থেকে কেটে ফেলল ! ভদ্রলোক চেঁচাতে চেঁচাতে আকাশ-পাতাল তোলপাড় করে ফেললেন, কিন্তু হিলবিলি তাতে একচুলও কর্ণপাত করল না। বরং সে, ভদ্রলোকের অন্য পা’য়ের পাতাটাও এবার আরেক কোপে আলাদা করে ফেলল! একটা খুনখুনে বুড়ি যে ঐ ঝুপড়িতেই থাকত, রক্তপাত বন্ধ করার জন্য ভদ্রলোকের পা দু’টো পচা-ছেড়া পুরনো ত্যানা দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিল। ইতিমধ্যে, পা’য়ের পাতা দু’টো জ্বলন্ত চুলায় ফুটন্ত পানি-ভর্তি কড়াইতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে - যাতে সেদ্ধ হয়ে মাংস গলে নরম হয়। খাওয়ার মত নরম হয়।”

বাচ্চা দু’টোর চোখগুলি এতক্ষণে একেকটা পিরিচের আকার ধারন করেছে। এর মধ্যে বড়টা, দশ বছরের একটা মেয়ে, অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে মুখের উপর একটা হাত রেখে বলে উঠল, “নাআআআ...ওরা নিশ্চয়ই....!?”

“হ্যাঁ,” জন বলল, “একদম প্লেট চেটেপুটে খেয়েছে! এমনকি হাড্ডিগুলা পর্যন্ত ফেলেনি, ওদের ঘেয়ো কুত্তাটাকে আদর করে খেতে দিয়েছে।”

“এরপর কি হল ?” মেয়েটা জিজ্ঞেস করে।

এতক্ষণে জনের মধ্যেও একটা ফ্লো এসে গেছে, ওদিকে গল্পও তার ক্লাইম্যাক্সের কাছাকাছি পোঁছে গেছে।

“হিলবিলিদের ইংরেজ লোকটার প্রতি এবার একটু মায়া হলো। পা ছাড়া উনি যেহেতু পালাতে পারবেন না, তাই ওনার বাঁধন খুলে দিল এবার। এমনকি তাঁকে নানারকম এঁটোকাটাও খেতে দিতে লাগল মাঝেমধ্যে। কিন্তু এসবে ভদ্রলোকের মন ভরল না। নিজের পরিবারের জন্য তাঁর খুব মন খারাপ করত। তাছাড়া পায়েও প্রচণ্ড ব্যাথা। বেশির ভাগ রাতেই উনি কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়তেন। এভাবে দিন গড়িয়ে তাঁকে প্রথম বন্দী করার প্রায় মাসখানেক পর, বুড়ো হিলবিলি তাঁকে আবার একদিন বেঁধে ফেলল। এইবারে ভদ্রলোকের আস্ত একটা পা-ই কেটে ফেলল সে ! বিশ্বাস কর, জীবনে এমন ভীষন চিৎকার তুমি কোনদিন শোননি। ভদ্রলোকের ঐ আস্ত ঠ্যাং দিয়ে হিলবিলি পরিবারের ৬টা সপ্তাহ দিব্যি চলে গেল। কিন্তু তারপরে কি হলো আন্দাজ কর দেখি ?”

“ওরা ভদ্রলোকের অন্য পা’টাও কেটে ফেলল ?” ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে মেয়েটা।

“ঠিকই ধরেছ,” জন বলে, “আর সেইসাথে তারা ভদ্রলোককে পষ্টাপষ্টি বলেই দিল যে, তারা ওনাকে একটু একটু করে খেতে থাকবে –পুরো পরিবারকে নিয়েই খাবে, যতক্ষণ না উনি পুরোপুরি শেষ হয়ে যান !”

মেয়েটা হুইলচেয়ারে বসা জনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “আমার আব্বু তোমার হাতটা কবে কাটবে তাহলে ?”

“আগামী সপ্তাহে মনে হয়,” হুইলচেয়ারটা গরাদ লাগানো জানালার দিকে ঘুরিয়ে নিতে নিতে বলে জন।

“উফ্‌, কি মজা ! কি মজা !” চকচকে চোখে সোল্লাসে চেঁচিয়ে উঠে দুই ভাইবোন।

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------
মূলঃ নিক এ্যালেন
অনুবাদঃ মনমাঝি



মন্তব্য

আয়নামতি1 এর ছবি

ভরপেট খেয়ে এসেছি কিছুক্ষণ আগে, গল্পটা পড়ে কেমন যে গা ঘুলাচ্ছে ইয়ে, মানে... কী ভয়াবহ গল্প রে বাবা!!!
মিয়া অনুবাদ আপনি খুব ভালো করেন, তাই বলে এমন গল্প কেনো রে বাপু!

মন মাঝি এর ছবি

শয়তানী হাসি

****************************************

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

এই টুইস্টগুলো কখনো পুরনো হয় না...

চলুক

মন মাঝি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

****************************************

অদ্রোহ এর ছবি

সবগুলো অণুআতঙ্ক একসাথে পড়লাম। এইটাই সবচে ভাল্লাগলো হাসি

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

মন মাঝি এর ছবি

তাহলে রেসিপিটা ট্রাই করে দেইখেন। দেঁতো হাসি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

****************************************

পড়ুয়া এর ছবি

আমি সত্যিই আতঙ্কিত বোধ করছি...আর গা গুলাচ্ছে..।

মন মাঝি এর ছবি

ধন্যবাদ ! দেঁতো হাসি

****************************************

আশালতা এর ছবি

অ্যাঁ

মন মাঝি এর ছবি

শয়তানী হাসি

****************************************

অপছন্দনীয় এর ছবি

ইয়ে, মানে...

মন মাঝি এর ছবি

কেন, রেসিপিটা পছন্দ হয়নি ? হাসি

আমি তো ভেবেছিলাম আপনি আর নব্যসচল কৌস্তুভ ভাই খুব খাদক মানুষ। মজার মজার খাওয়া-দাওয়া নিয়ে নিয়মিত পাল্লা দিয়ে পোস্ট দেন !

কোই বাৎ নেহি, অস্ট্রেলিয়ান আউটব্যাকে না হোক - সুন্দরবনের গহীনে আমারও অমন একটা কুটির আছে। আপনাদের দু'জনকেই দরাজ গলায় আমার ঐ গরীবের কুটিরে নেমন্তন্ন দিচ্ছি। চলে আসুন না একদিন ! অনেক মজার মজার স্টূ আর 'পায়া' খাওয়াবো আপনাদের। বিশ্বাস করুন, এমন মজার পায়া আর স্টূ আপনা্রা জীবনেও খাননি। তবে হোস্ট হিসেবে আমি কি খাব...থাক, সেটা আর বললাম না এখানে.... সময় হলে দেখতেই পাবেন। ও হ্যাঁ, কাউকে এই নেমন্তন্নের কথা বলবেন না যেন.... রেসিপিটা টপ সিক্রেট ! আর মোবাইলটা বাড়িতে রেখে আসবেন। ঠিক আছে ? চোখ টিপি শয়তানী হাসি

****************************************

অপছন্দনীয় এর ছবি

কেউ কেউ খুব তৃপ্তি নিয়ে বিভিন্ন প্রাণীর মগজ খায় দেখেছি, আপনি যদি ওই দলে পড়েন তাহলে আমাকে নেমন্তন্ন করে আপনার কোনই লাভ হবে না - ওটা বরং খালি কৌস্তুভকেই দেন।

মহাস্থবির জাতক এর ছবি

অসুস্থ বাবার ছেলেমেয়েদের সান্ত্বনার বদলে আনন্দ দেওয়ার ভঙ্গিটা খুবই অভিনব, কিন্তু সাথে নিষ্ঠুরতার শিক্ষাও যে দিয়ে দেওয়া হলো তাদের, এইটে বড্ড বাজে লাগলো।

_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

মন মাঝি এর ছবি

ঠিক বুঝলাম না। ইয়ে, মানে...

একটু বুঝিয়ে বলবেন ?

****************************************

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

এই কথাটাও বলতে যাচ্ছিলাম। ধন্যবাদ। এটা অনেকটা কোরবানীর ঈদে বাচ্চাদের গরু জবাই দেখতে পাঠানোর মতো শিক্ষা! মন খারাপ

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

মন মাঝি এর ছবি

ঠিকই.... তবে বাচ্চাগুলি মানুষের বাচ্চা হলে তবেই। দেঁতো হাসি

এখানে বাচ্চাগুলি গল্পকথক 'জন'-এর বাচ্চা নয় - ওরা ঐ "বদখৎ নোংরা বুড়ো" রাক্ষসটার বাচ্চা, হিলবিলির মানুষখেকো পরিবারেরই সদস্য। আর জন হচ্ছে আসলে সেই ইংরেজ ব্যাকপ্যাকারটা - তাদের সবার বন্দী খাদ্য। এজন্যেই বাচ্চাগুলি গল্পের শেষে একটা জিভে জল আনা, সুস্বাদু ফিস্টের আশায় অধীর আগ্রহে - 'উফ্‌, কি মজা ! কি মজা !' বলে চকচকে চোখে সোল্লাসে চেঁচিয়ে উঠে ! সোজা কথায়, ওরাও বাচ্চা-রাক্ষস - ওদের নতুন করে আর কোরবানীর ঈদে মানুষ-জবাই দেখে নিষ্ঠুর হওয়ার কিছু নেই ! শয়তানী হাসি

****************************************

মন মাঝি এর ছবি

-- অবলম্ফনজনিত ঘ্যাচাং --

****************************************

মন মাঝি এর ছবি

এখানে বাচ্চাগুলি গল্পকথক 'জন'-এর বাচ্চা নয় - ওরা ঐ "বদখৎ নোংরা বুড়ো" রাক্ষসটার বাচ্চা, হিলবিলির মানুষখেকো পরিবারেরই সদস্য। আর জন হচ্ছে আসলে সেই ইংরেজ ব্যাকপ্যাকারটা - তাদের সবার বন্দী খাদ্য। এজন্যেই বাচ্চাগুলি গল্পের শেষে একটা জিভে জল আনা, সুস্বাদু ফিস্টের আশায় অধীর আগ্রহে - 'উফ্‌, কি মজা ! কি মজা !' বলে চকচকে চোখে সোল্লাসে চেঁচিয়ে উঠে ! সোজা কথায়, ওরাও বাচ্চা-রাক্ষস - ওদের আর শিক্ষা দেয়ার কিছু নেই ! শয়তানী হাসি

****************************************

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

চ্রম!!
আর পরম আতঙ্কের... মন খারাপ
অনুবাদও খুব সাবলীল লাগলো। চলুক
তবে র‍্যাভেনাস দেখেছেন কি...? মিল আছে।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

আচ্ছা, বলতে ভুলে যাই বারবার... মূল গল্পগুলোর ইন্টারনেট লিংক থাকলে দিয়ে দিয়েন তো লেখার শেষে। অন্তত গল্পের মূল নামটা দিবেন, খুঁজে পেতে সুবিধা হয় তাইলে।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

আইলসা এর ছবি

সেইরকম গল্প। খুবই ভালো লাগছে। আমি তো ভাবতেছিলাম বাচ্চাগুলোরেই খা্ওয়া হবে....

মন মাঝি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

****************************************

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।