আমি তোমাকে খুব মিস করি সোনা।
আমরা অবিচ্ছ্যেদ্য ছিলাম। তুমি আর আমি - দু’জনে দুজনার। মেড ফর ইচ আদার। লোকে বলত ‘অভিন্নহৃদয়’। সোল মেট।
কিন্তু তারপরও আমাদের মধ্যে নানারকম স্পেস ঢুকে গেল। শুরুতে এটা ছিল শুধুই আমাদের কথাবার্তার মধ্যকার স্পেসটুকু, সেই কয়টা সেকেণ্ড যা লেগে যেত তোমার বুঝে উঠতে যে আমি কিছু একটা বলেছি আর কি বলেছি সেটা স্মরণ করতে গিয়ে হাবুডুবু খেতে।
তারপরের স্পেসটা আসলো তোমার মনে : সেই ফাঁকা দৃষ্টি - যেন আমাকে ভেদ করে অনেক দূরে কিছু একটা দেখছ তুমি। তুমি ভুলতে শুরু করলে আমাদের জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী, দেখা-সাক্ষাতের দিনক্ষণগুলি।
তবে আমার সবচেয়ে অসহ্য লাগত বিছানায় আমাদের মধ্যে স্পেসটুকু। ওহো, তোমার দেহটা ওখানে পড়ে থাকত বৈকি - মানে শুরুর দিকে তো অন্তত থাকত, কিন্তু আত্নাটা ঘুরে বেড়াত অন্য কোন জগতে। খুব একাকী হয়ে গেছিলাম তখন আমি।
আর সবশেষে, আমাদের বাসার ভিতর সেই স্পেসটুকু। তুমি চলে যাওয়ার পর। তোমার স্পেস লাগবে, তুমি বলেছিলে। তোমার নতুন প্রেম, নতুন ‘অভিন্নহৃদয়’ সখীর, সাথে থাকার জন্যে। তার স্পেস শেয়ার করে।
তুমি ডিভোর্স চেয়েছিলে। আমাদের বিয়েটা যেখানে থাকত সেখানে একটা স্পেস ফেলে রেখে।
আমি মানতে পারলাম না।
এই সময়েই আমি বুঝতে পারলাম তোমাকে মরতে হবে। যদি আমাকে সেরে উঠতে হয়.... যদি আমাকে টুকিয়ে-টাকিয়ে জড়ো করে ছেড়াফাঁটা জীবনের সুতোগুলি জোড়াতালি দিয়ে আবার চালাতে হয়, তাহলে তুমি যেখানে থাকতে সেখানে একটা স্পেস থাকতেই হবে। তুমি যতক্ষণ বেঁচে থাকবে, ততক্ষণ আমার পক্ষে কিছুতেই বেঁচে ওঠা সম্ভব নয়।
আমি কয়েক সপ্তাহ ধরে তোমাকে মেরে ফেলার প্ল্যান করলাম। কাজটা নিখুঁত হতে হবে আর আমাকে নিশ্চিত করতে হবে যেন আমি ফেঁসে না যাই। কি ফায়দা হবে, যদি বাকি জীবনের জন্য আমাকে জেলখানার একটা ছোট্ট দম-আটকানো খুপরির মধ্যে পড়ে পড়ে পঁচতে হয় ? ওখানে শ্বাস নেয়ারও কোন স্পেস পাব না।
বিষ, আমি সিদ্ধান্ত নিলাম.... কেননা তোমার সোনার অঙ্গে কোনরকম দাগ পড়লে তা আমার কিছুতেই সহ্য হবে না।
কিন্তু, জীবনে সবকিছু প্ল্যান অনুযায়ী ঘটে না, তাই না ?
সত্যিকারে অভিন্নহৃদয়ের মতই, তুমিও অনুভব করলে আমি যেখানে থাকতাম সেখানে একটা স্পেস থাকা দরকার।
সুতরাং আজ রাতে, কিম্বা হয়তো কাল, আমি আশা করি তুমি ঐ মহার্ঘ্য পুলিনি মঁর্যাশে ওয়াইনের স্পেশ্যাল এডিশন বোতলটা খুলবে, যেটা সেদিন তোমাকে আমি দিয়েছিলাম - তুমি আমাকে ব্রীজের ওপর থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়ার ঠিক আগে আগে। আশা করি, তুমি আর তোমার নতুন অভিন্নহৃদয় সখী আমার ভবলীলা সাঙ্গ হওয়া আর তোমাদের নবলব্ধ স্পেসটা উদযাপন করতে ওয়াইনটা টোস্ট করবে।
তোমার মৃত্যুটা খুব বেশি যন্ত্রনাদায়ক হবে না, প্রিয়তম। আমি আগেই রিসার্চ করে নিয়েছি খুব ভাল করে। তুমি কষ্ট পাও - আমি তা কখনো চাইনি। তাছাড়া, তুমি তো চিরকালই ভাল মঁর্যাশে ওয়াইনের খুব ভক্ত।
এখনকার মত আমরা দু’জন দুই জায়গায়, ভিন্ন ভিন্ন স্পেস দখল করে আছি। কিন্তু আমি যখন এই এক চিলতে জমিটুকু কিনি, তখন আমার পাশে তোমার জন্যেও একটা স্পেস কিনে রেখেছিলাম। এইটুকু তো আমি আমার অভিন্নহৃদয় সখার জন্যে করতেই পারি, পারি না ?
আই উইল সী ইউ সুন, সুইটহার্ট।
মন্তব্য
স্পেস = space
****************************************
ভালোবাসলে কেউ কাউকে এমন করে মারে নাকি?
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
হয়ত সাহস হয়না, কিন্তু মাঝে মাঝে স্বার্থপর এর মত মনে হয় মেরে ফেলতে পারলে এই জমাট বাঁধা কষ্টগুলা মনে হয় কমে যেত কিন্তু পরক্ষণেই মনে হয় না হেরে যাব নিজের কাছে...... কি এক অদ্ভুদ টানাপোড়ন
সুন্দর অনুবাদ করেছেন, খুব ভাল্লাগলো পড়ে।
****************************************
দারুণ!!!!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
****************************************
ভালো লাগলো! শুভেচ্ছা, তানিম এহসান
আপনাকেও শুভেচ্ছা। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
****************************************
পড়ে মুগ্ধ
হুম! বুঝলাম! স্পেস কাহাকে বলে কত প্রকার ও কী কী!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
সেটাই। এজন্যেই তো শব্দটার কোন মনোমত বাংলা করতে পারিনি। এমন একটা ক্যালাইডোস্কোপিক ব্যঞ্জনাময় শব্দের এক শব্দে বাংলা কি হতে পারে বলেন তো দেখি, যা এই গল্পের প্রতিটা ক্ষেত্রে খাপে খাপ মিলে যাবে ?
****************************************
অনুবাদটা আড়ষ্ট লাগলো।
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
খোমাখাতা
দুঃখিত। তবে যদি বুঝে থাকি, তবে মনে হয় আপনার কাছে যেটা আড়ষ্টতা মনে হয়েছে সেটা ইচ্ছাকৃত। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
****************************************
লেখাটি পড়ে মনে হল রূমানার সাথে সাইদের কি স্পেসটা দীর্ঘতর হয়ে গিয়েছিল? পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে দেখা যায় বিয়ের অনকে পূর্ব থেকেই তাদের মধ্যে জানা-শোনা ছিল। তাহলে কেন এমন হল? তবে কি লেখাটির প্রধান চরিত্রের মতোই নিজেকে সারানোর জন্য সাইদ এ ভয়ংকর সিদ্ধান্তে পৌছেছিল ?
কবি ইয়টেস হয়তো এজন্যই লি খে গে ছে ন:
SWEETHEART, do not love too long:
I loved long and long,
And grew to be out of fashion
Like an old song.
এম আব্দুল্লাহ
গল্পটা অনুবাদ করতে গিয়ে প্যারালেলটা আমার মাথাতেও এসেছিল। তবে আমার মনে হয় 'ভালবাসা' আর মালিকানা স্বত্ব এক জিনিষ না। আবার কারো ব্যক্তিত্ত্ব ও মালিকানা স্বত্ববোধের শক্তি যদি স্বত্বভুক্ত সম্পত্তির উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে যায়, তখন সেটা আরো ভয়ংকর ও পোটেনশিয়ালি বিস্ফোরক একটা ককটেল হয়ে ওঠে। তখন কোন কারনে স্বত্বভুক্ত সম্পত্তি খোয়া যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে অনেক সময় বিকারগ্রস্ত মনে - মনে হতে পারে ঐ সম্পত্তিটার বিলুপ্তি ঘটিয়ে তার জায়গায় একটা খালি 'স্পেস' বাঁচিয়ে রাখাই বরং নিজের অহম বা আত্নবোধ এবং ব্যক্তিত্বকে বাঁচিয়ে রাখার একমাত্র উপায়। এজন্যেই মনে হয়ে উপরের গল্পের প্রধান চরিত্রটা বলে -
****************************************
লোকজনকে ভয় দেখাতে আপনার ভালো লাগে বোধ হয়। কাজটা ভালো পারেনও।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
আরে, আপনি ধরে ফেলেছেন দেখছি !
****************************************
অনুবাদটা আমার কাছেও একটু আড়ষ্ট লাগল। আপনি যখন স্পেস-এর মত একাধিক-অর্থ-বোধক শব্দটার মনোমত বাংলা করা নিয়ে অস্বস্তিতে আছেনই, তখন গল্পটা বাদ দিয়ে গেলেই পারতেন - অনুবাদ করতে গিয়ে এমন একটা কী-ওয়ার্ডই ইংরিজিতে রেখে দিলে ক্যাম্নেকি?
আপনি যা বললেন তা আমিও ভেবেছি। কথাটা ঠিকই। তবে গল্পটা এতই আকর্ষনীয় আর অভিনব মনে হলো যে অনুবাদ না করে পারলাম না। সম্পূর্ণ মনোমত হয়নি বটে, তবু আমার অনুবাদটা করতে এবং সম্ভবত অনেকেরই পড়তে মজাই লেগেছে শেষমেশ।
আচ্ছা, 'আড়ষ্ট' কি শুধু একারনেই লেগেছে - নাকি আরো কোথাও আড়ষ্টতা আছে ? একটু বললে ভাল হতো, পরে কাজে লাগত।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
****************************************
ভাষাটা সামগ্রিকভাবে একটু আড়ষ্ট লেগেছে। তার জন্য লেখকের ইমোশনটা একটু কম প্রকাশ পেয়েছে মনে হয়।
কখনো কখনো দূরত্বই হয়ে উঠে তার কাছ থেকে পাওয়া একটি উপহার। ওটাকে কমানোর আর ইচ্ছে হয় না। মির্যা গালিবের সেই শেরটার মত,
ভালো লেগেছে গল্পটি। ধন্যবাদ আপনাকে।
কিছু মনে না করলে- আমি নিছক পরীক্ষা করার জন্য এটা অনুবাদ করেছি আপনার মন্তব্যের পরে- দেখতে চাইলাম স্পেস শব্দটাকে জব্দ করতে পারি কি না।
=======================
ঠিক এই মুহুর্তে আমাদের মধ্যকার দূরত্ব অনেকটাই ছয় ফিট। গেলো কয়েক বছর ধরে আমাদের মধ্যে যে দূরত্ব তার তুলনায় এই ছয়-ফিট দূরত্ব ঢের কম, তবুও এই দূরত্ব ঠাণ্ডা, আর্দ্রময় পার্থিব।
তোমাকে মিস করি আমি।
এই আমরা, তুমি ও আমি, অবিচ্ছেদ্য ছিলাম। আত্মার আত্মীয়, লোকে তাই বলতো।
কিন্তু ক্রমশ দূরত্ব বাড়তে শুরু করলো। প্রথমে আমাদের কথোপকথনে, সেইসব ক্ষণগুলোতে- যখন তুমি উপলব্ধি করতে এতক্ষণ আমি তোমাকে লক্ষ্য করেই কথা বলেছিলাম, এবং তুমি মরিয়া হয়ে মনে করার চেষ্টা করতে আমি আসলে কী বলেছি এতোক্ষণ।
অতঃপর শূন্যতা এলো তোমার চিন্তায়, মনে: তোমার ভবঘুরে দৃষ্টি, মনে হতো আমার ভেতরটা ভেদ করে তুমি অন্যত্র স্থির দৃষ্টি পেতে আছো। তুমি ভুলে যেতে শুরু করলে জন্মদিবসের কথা, বিয়েবার্ষিকীর তারিখ, অভিসারের সময়।
কিন্তু আমি সত্যিই আমাদের বিছানায় লেপ্টে থাকা দূরত্বকে ঘৃণা করতাম। ওহ, শুয়ে থাকা তোমার নিথর দেহ; প্রথম দিকে তাই থাকতো বটে, অথচ তোমার মন উড়ুউড়ু- যেনো চন্দ্রে নিতো ঠাঁই। আমি খুব নিঃসঙ্গ বোধ করতাম তখন।
অবশেষে আমাদের এই বাড়িতে। তুমি চলে যাওয়ার পর। তোমার একা থাকা দরকার, তুমি বলেছিলে।
তোমার নতুন প্রেমিকার জন্য, তোমার নতুন আত্মার আত্মীয়। তার সাথে ভাগ করে নেবে আধার।
তুমি প্রস্তাব দিলে বিবাহবিচ্ছেদের। আমাদের বিয়ের মাঝে এক দূরত্ব সৃষ্টি করে।
এতো হওয়ার নয়।
তখনই আমি বুঝলাম যে তোমাকে মরে যেতে হবে। যদি আমি উপশম চাই...যদি আমি এখানে সেখানে ছড়িয়ে থাকা জীবনের সুতোকে জড়ো করে গাঁথতে চাই তবে আগে যেখানে তুমি ছিলে সেখানে এক শূন্যতা থাকা দরকার। তুমি থাকলে কোনোভাবেই আমার পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব হবে না।
সপ্তাহ পর সপ্তাহ ধরে আমি তোমার খুনের পরিকল্পনা করতে লাগলাম। নিশ্চিদ্র হতে হবে, এবং আমার নিশ্চিত হওয়ার প্রয়োজন ছিলো যে আমি জড়িত তা যেনো কোনোভাবেই বোঝা না যায়। কী আর এমন সিদ্ধি টানা হবে যদি বাকি জীবন জেলখানার একটি অন্ধকার আবদ্ধ কুঠুরিতে ধুঁকতে হয়? শ্বাস টানার জায়গা-ও তো পাবো না।
বিষ, আমি সিদ্ধান্ত নিলাম... তোমার মধুমাখা শরীরে কোনো দাগ যে আমার সহ্য হবে না।
কিন্তু সবকিছু তো পরিকল্পনামাফিক হয় না, তাই না?
যেমন আমরা বাস্তবিকই জীবনসঙ্গী ছিলাম, তুমি-ও অনুভব করলে যে আমার জায়গায় একটি শূন্যতা দরকার।
তাই আজ রাত্তিরে, অথবা হয়তো আগামীকাল, অনুমান করছি তুমি পুলিগনি মনত্রাশে ওয়াইনের বিশেষ বোতলটি খুলবে, যেটি আমাকে ব্রিজ থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়ার দিন আমি তোমাকে দিয়েছিলাম। তুমি এবং তোমার নতুন জীবনসঙ্গী আমার প্রস্থান ও তোমার সদ্য পাওয়া বিস্তারণ উপভোগ করবে খুব।
তোমার মৃত্যু খুব বেদনাদায়ক হবে না, সখী; আমি গভীর নিষ্ঠার সাথে গবেষণা করে বের করেছি। তোমাকে আমি কখনোই কষ্ট দিতে চাই নি। তাছাড়া তুমি মনত্রাশের ভালো সমঝদার।
এখনকার মতো আমরা ভিন্ন ভিন্ন কোনো জায়গায়, ভিন্ন ভিন্ন স্থান দখল করে আছি। কিন্তু আমি যখন এই কবরের জমিটুকু কিনি, তখন তোমার জন্য-ও আমার পাশে জায়গা করে রেখেছি। জীবনসঙ্গী হিসেবে এটুকু তো আমি করতেই পারি।
সহসাই দেখা হবে, মধুমিতা।
=============
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
খোমাখাতা
বাহ্! চমৎকার! বেশ কাব্যিক হয়েছে তো !
****************************************
আমার কাছে এটা বেশি আক্ষরিক অনুবাদ লাগছে।
নতুন মন্তব্য করুন