মরুযাত্রা ৮ম পর্ব : পিরামিড ছাড়িয়ে দেবতার খোঁজে

মন মাঝি এর ছবি
লিখেছেন মন মাঝি [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ০৬/০১/২০১২ - ৭:৫২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অনেকেরই ধারনা পিরামিড মানেই ইজিপ্ট, ইজিপ্ট মানেই পিরামিড। ...এ দুইয়ের কোনটাই যে আসলে সত্য নয়, তা আপার ইজিপ্টে না গেলে পুরোপুরি বুঝা যায় না। মিশরের মত না হলেও পিরামিড আরো অনেক দেশেই আছে, আর মিশরেও পিরামিডের বাইরে অনেক কিছুই রয়েছে যা পিরামিডের চেয়ে খুব কম কিছু না...

এই পোস্টে যে ছবিগুলির ক্যাপশনে "নেট" শব্দটি নেই বা ক্যাপশনগুলি সবুজ রঙের সেগুলিই কেবল আমার তোলা। বাকিগুলি নেট থেকে সংকলিত।


অনেকেরই ধারনা পিরামিড মানেই ইজিপ্ট, ইজিপ্ট মানেই পিরামিড। এমনকি স্রেফ মনুমেন্টের বিচারেও এ দুইয়ের কোনটাই যে আসলে সত্য নয়, তা আপার ইজিপ্টে না গেলে পুরোপুরি বুঝা যায় না। মিশরের মত না হলেও পিরামিড আরো অনেক দেশেই আছে, আর মিশরেও পিরামিডের বাইরে অনেক কিছুই রয়েছে যা পিরামিডের চেয়ে খুব কম কিছু না।

আপার ইজিপ্ট - সাধারন ভাবে বললে মিশরের দক্ষিনাংশ এর এক জ্বলজ্যান্ত উদাহরন। প্রাচীণ কাল থেকেই মিশরকে প্রধানত আপার এবং লোয়ার - এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়।

প্রাচীণ মিশরে ভিন্ন ভিন্ন কালপর্বে দু'টি সবচেয়ে বিখ্যাত রাজধানী ছিল -- মেম্ফিস এবং থিব্‌স । মেম্ফিস ছিল লোয়ার ইজিপ্টের (উত্তর মিশর) রাজধানী, আর থিব্‌স আপার ইজিপ্টে (দক্ষিন মিশর)। মিশরের সেরা পিরামিডগুলি এই মেম্ফিসের সোনালি অধ্যায়েই নির্মিত হয়েছে। মেম্ফিস যুগের এই কীর্তিগুলির কিছুটা আমরা মরুযাত্রার ৬ষ্ঠ পর্বে ('পিরামিড সমগ্র') দেখেছি। আমার সীমিত টুরিস্টিক পর্যবেক্ষনে মনে হয়েছে মেম্ফিস পর্বের শীর্ষ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এই পিরামিডই - আল-লাহুন থেকে কায়রোর নিকটবর্তী গিজা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ মরুপ্রান্তরে যা ছড়িয়ে আছে নীলনদের পশ্চিম পার ঘেষে।

পক্ষান্তরে আপার ইজিপ্টের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর অজস্র এবং সুবিশাল সব মন্দির, মূর্তি আর এককালে ধনরত্ন-শিল্পবস্তুতে বোঝাই ভূঃগর্ভস্থ সমাধি কমপ্লেক্স। মিশরের এই দক্ষিনাঞ্চলের উল্লেখযোগ্য শহরগুলির মধ্যে আছে এ্যাবিডস, আসিয়ুত, সুহাজ, কিনা, এডফু, কম ওম্বো, থিব্‌স, আসওয়ান, আবু সিম্বেল, ইত্যাদি।

থিব্‌স হচ্ছে কায়রো থেকে সড়ক পথে ৭২১ কি.মি. দক্ষিনে বর্তমান লুক্সোর শহরের অন্তর্ভূক্ত প্রাচীণ মিশরের এককালীণ বিখ্যাত রাজধানী। ৫,২০০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত দেবতা আমুনের অধিষ্ঠান এই শহর দ্বাবিংশ থেকে শুরু করে বিংশ খৃঃপূর্ব-শতাব্দী পর্যন্ত একাদশ রাজবংশের শাসনকালে এবং ১৫৫০ - ১২৯২ খৃঃ পূর্বাব্দ পর্যন্ত বিখ্যাত অষ্টাদশ রাজবংশের শাসনকালে (তুতানখামুন যার অন্যতম) মিশরের রাজধানী ছিল। (বাংলায় সংক্ষিপ্ত ইতিহাস)।


ফারাও ৩য় আমেনহোটেপ। মূর্তি। নেট।

গ্রীক কবি হোমারের ভাষায় "হাজারদুয়ারী থিব্‌সের" অতুলনীয় প্রত্নসম্পদ এক চমকপ্রদ প্রাচীণ সভ্যতার সাক্ষ্য দেয়। আজকের থিব্‌স অর্থাৎ লুক্সোরকে পৃথিবীর বৃহত্তম ওপেন এয়ার মিউজিয়াম বলা হয়ে থাকে। প্রত্নসম্পদে গিজগিজ করা এই শহরেই রয়েছে পৃথিবীর বৃহত্তম প্রাচীণ ধর্মীয় পীঠস্থানের প্রত্নাবশেষ - কর্নক মন্দির কমপ্লেক্স। রয়েছে রাজসিকভাবে অলঙ্কৃত ও ধনরত্নশিল্পবস্তুতে সমৃদ্ধ ১৩৩-টিরও বেশি ভূঃগর্ভস্থ সমাধিমন্দিরে আকীর্ণ বাদশাহি উপত্যকা -- ভ্যালি অফ দ্য কিংস এবং ভ্যালি অফ দ্য কুইন্স - যার একেকটি সমাধি এক থেকে শুরু করে ১২০ পর্যন্ত কক্ষবিশিষ্ট হতে পারে। রয়েছে ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মিশরীয় শাসক নারী ফারাও হাত্‌শেপ্‌সুতের স্মৃতিমন্দির, কলোসি অফ মেম্‌নন, এবং আরো বহু কিছু।

থিব্‌স তথা লুক্সোর ছাড়িয়ে আরো দক্ষিনে রয়েছে আসওয়ান - যা আসওয়ান হাই ড্যামের জন্য বিখ্যাত, রয়েছে আবু সিম্বেল - যেখানে আছে পাহাড়ের গা কুঁদে তৈরি ত্রয়োদশ খৃঃপূর্ব শতকের ফারাও ২য় র‍্যামেসেসের দৈত্যাকৃতির মূর্তির সারি শোভিত - তার নিজের এবং তার প্রিয় সম্রাজ্ঞী নেফেরতারির স্মৃতিতে নিবেদিত সেই বিখ্যাত মন্দিরদ্বয়।

এসবেরই প্রেক্ষাপটে আর পিরামিড দেখতে দেখতে যখন মোটামুটি ক্লান্ত - এমন একটা পর্যায়ে ঠিক করলাম মিশরের দক্ষিনাঞ্চলে হপ্তাখানেকের একটা ট্যুর দেয়া যেতে পারে।

লুক্সোর

মার্চের শেষের দিকে এক শীতার্ত রাতে কায়রো থেকে ট্রেনে চেপে বসলাম। প্রাথমিক গন্তব্য ৭২১ কি.মি. দক্ষিনে দক্ষিনাঞ্চলীয় শহর লুক্সোর। এটাই প্রাচীন মিশরীয় ওয়াসেত, গ্রীক ও রোমানদের ভাষার থিবাই বা থিব্‌স, আরবদের আল-উক্সুর, এবং আধুনিক লুক্সোর। আমার আইটেনারিতে আছে এই লুক্সোর, লুক্সোর ঘুরে সেখান থেকে সড়কপথে আরো ২৬১ কি.মি. দক্ষিণে আসওয়ান, আসওয়ান থেকে মরুভূমি পেরিয়ে আরো ২৮০ কি.মি. দক্ষিণে সুদান সীমান্তে মরুঘাঁটি আবু সিম্বেল, আবু সিম্বেল থেকে আবার আসওয়ান এবং নীলনদের বুকে 'ফিলে' দ্বীপে দেবী আইসিসের মন্দিরে পূজা দিয়ে সেখান থেকে আবার লুক্সোর, এবং সবশেষে লুক্সোর থেকে ট্রেনে কায়রো প্রত্যাবর্তন।

রাতের ট্রেনে বাইরের দৃশ্য কিছু দেখা যায় না বলে এই ট্রেন যাত্রাটা সম্পর্কে তেমন কিছু বলার নেই। শুধু মনে আছে নিকষ কালো অন্ধকারে শত শত মাইল মরুভূমির বুক চিরে যাওয়ার পথে ট্রেন যখন মরুর বুকে কোন পৃথিবী-বিচ্ছিন্ন মরুদ্যান বা অজপাড়াগাঁর নির্জন ভৌতিক স্টেশন বা অনির্ধারিত স্টপেজে থেমেছে, ঐখানে নেমে শীতে কাঁপতে কাঁপতে হাঁটাহাঁটি করতে গিয়ে মনে হয়েছে যেন মহাশুন্য অভিযানে বেরিয়ে জনশুন্য কোন অচিন গ্রহে এসে পড়েছি। এই রাত, এই শীত, এই শুন্যতা, এই জগতবিচ্ছিন্ন নির্জনতা - অস্তিত্ত্বের মর্মমূলে শিরশিরিয়ে উঠে। আলোর জগত থেকে লক্ষ যোজন দূরে কি এক গূঢ় সত্য যেন হাতছানি দেয় মরুভূমির ঐ অন্ধকারের ভেতর থেকে। কি একটা 'বোধ' যেন উঁকি দিয়ে যায় নিজের ভেতরে।

স্বপ্ন নয় — শান্তি নয় — ভালোবাসা নয়,
হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়!
আমি তারে পারি না এড়াতে...

দারুন মজা লাগছিল। নাগরিক ভীড়ের অসহনীয় যন্ত্রণা থেকে কি অপূর্ব আধ্যাত্নিক মুক্তি!

লুক্সোর পৌঁছে হোটেলে উঠেই প্রথম কাজ হলো ম্যানেজার কাম মালিককে ধরে একটা গাইড ঠিক করা। চালিয়াৎ-ষণ্ডা গাইডদের টাউটামি সম্পর্কে কিছু পূর্বাভিজ্ঞতা থাকায় একটু চিন্তায় ছিলাম। সকাল দশটায় গাইড মহাশয়া পৌঁছুতেই বুঝলাম এটিয়েম শামসুজ্জামানের আরবি সংস্করণ আমার হোটেল মালিক নিঃসন্দেহে বিচক্ষণ মানুষ।

যাক, এরপর গাইডের সাথে বসে দর্শনীয় স্থানগুলির একটা ছক তৈরি করে ফেললাম। দেখা গেল বহু কিছুই আছে, কিন্তু তার মধ্যে ২-৩ টার বেশি এই সংক্ষিপ্ত সফরে দেখা সম্ভব হবে না। ঠিক করলাম এই দফায় তবে কর্নক ও লুক্সোর মন্দির, ভ্যালি অফ দ্য কিংস এবং কুইন্স, কলোসি অফ মেম্‌নন - এইগুলিতেই প্রধানত যাব। সেই সাথে হয়তো কিছু মিউজিয়াম-টিউজিয়াম।


শিল্পীর দৃষ্টিতে লুক্সোর মন্দিরের সিংহদুয়ার। নেট।

লুক্সোর মন্দির

দেবত্রয়ী আমুন, মাৎ আর খন্‌সু-র অধিষ্ঠান পবিত্র নগরী এই লুক্সোরে মহামহিম ফারাও ৩য় আমেনহোটেপ (১৩৮৬-১৩৪৯ খৃঃপূর্বাব্দ) তার বহুযুদ্ধজয়ী প্রপিতামহ ফারাও ৩য় থুৎমোস-এর বিজয়লব্ধ অপরিমেয় ধনদৌলত সম্বল করে এক অতুলনীয় স্বপ্নসৌধ নির্মানে হাত দেন। শুরুটা যদিও মানব ইতিহাসের সম্ভবত প্রথম পরাক্রমশালী নারী সম্রাট ফারাও হাত্‌শেপ্‌সুতের হাতে হয়েছিল, কিন্তু এই সৌধের স্বপ্নসৌধ হয়ে ওঠার যাত্রাটা আমেনহোটেপের হাতেই শুরু। এই দেবমন্দিরের অন্যতম উল্লেখযোগ্য অংশ এর বিখ্যাত স্তম্ভবীথি আর সূর্যদরবার তার সময়েই নির্মিত। কিন্তু না, তিনিও মন্দিরটার শেষ দেখে যেতে পারেননি। দেবতা আমুন তার ভক্তিতে খুশি হয়েই বোধহয় অকালেই তাকে ডেকে নেন স্বর্গরাজ্যে। প্রায় এক শতাব্দী অবহেলার পর এই মন্দির নির্মান সম্পন্ন করেন আরেক বিখ্যাত মিশরীয় শাসক ফারাও ২য় র‍্যামেসেস।


শিল্পীর দৃষ্টিতে লুক্সোর মন্দিরের সম্মূখ-দৃশ্য। নেট।

লুক্সোর মন্দিরের বিশাল কমপ্লেক্সে অনেক কিছুই আছে যার সবকিছু হয় আমি দেখিনি কিংবা এখন মনে পড়ছে না। মূলত দু'টো অংশের কথাই মনে আছে। পুরো মন্দিরটা নির্মিত হতে বেশ কয়েকজন ফারাওর শাসনকাল লেগে যায় - যার মধ্যে প্রধান হচ্ছেন ৩য় আমেনহোটেপ এবং ২য় র‍্যামেসেস। এই দু'জনের সময়ে নির্মিত দু'টো অংশ মনে পড়ছে- র‍্যামেসেসের "গ্রেট কোর্ট" এবং আমেনহোটেপের "সান কোর্ট" (সূর্যদরবার?)।


ফারাও ২য় র‍্যামেসেসের "মহা প্রাঙ্গন"। লুক্সোর মন্দির।


শিল্পীর দৃষ্টিতে ফারাও ২য় র‍্যামেসেসের "মহা প্রাঙ্গন"। লুক্সোর মন্দির। নেট।

প্রথম দর্শনেই লুক্সোর মন্দিরের প্রাচীণ স্থাপত্য দর্শককে অভিভূত করে -স্রেফ সৌন্দর্যে নয়, সেইসাথে এর বিশালতা আর অস্তিত্ত্বের প্রাবল্য দিয়ে। এর দৃপ্ত পৌরুষে। প্রথম প্রবেশপথ পেরিয়ে ভেতরে ঢোকার পর একটু এগুলেই এক বিশাল চত্বর - যা ফারাও র‍্যামেসেসের 'গ্রেট কোর্ট' বা 'ফিস্ট কোর্ট' নামে পরিচিত। তবে এর প্রাচীণ মিশরীয় নাম হচ্ছে "অনন্তের সাথে একীভূত র‍্যামেসেস মেরিয়ামনের মন্দির" । এই বিরাট সামান্তরিক চত্বরটা দুই সারিতে ৭৪টা প্যাপিরিফর্ম স্তম্ভে ঘেরা। স্তম্ভগুলির মধ্যখানের প্রতিটি শুন্যস্থান সারি দিয়ে ফারাও র‍্যামেসেস, তার স্ত্রী রানি নেফেরতারি আর দেবদেবীর মূর্তি দিয়ে শোভিত। আমার পক্ষে এখানে ভাষায়, এমনকি ছবি দিয়েও বোঝানো সম্ভব নয় অভিভূত দর্শকের মনের উপর এই বিশাল মূর্তি-সারির সামগ্রিক প্রভাবের কথা। এক কথায় বলা যায় - অ-ইন্সপায়ারিং! রোমহর্ষক! অপূর্ব! কিন্তু তারপরও আসলে তেমন কিছুই বলা হয় না।

তো, এই যদি হয় সূর্যের আলোয় প্লাবিত বর্তমানে ছাদহীণ খোলা প্রাঙ্গনে দাঁড়িয়ে একবিংশ শতাব্দীর অবিশ্বাসী টুরিস্টের প্রতিক্রিয়া, তাহলে যখন এটা ছাদে ঢাকা ছিল (হয়তো, তবে নাও হতে পারে) তখন জ্বলন্ত মশালের রহস্যময় আলো-আঁধারিতে পুরোহিতদের স্তবগান, ধূপধুনো, দৈত্যাকৃতির দেবমূর্তির বুকের রক্ত ছলকানো সারি - এমন অপার্থিব পরিবেশে সাড়ে তিনি হাজার বছর আগেকার বিশ্বাসী ভক্তকুলের মনে কি প্রতিক্রিয়া হতো তা কেবল কল্পনাই করা যেতে পারে। বোঝা যায় এই মন্দিরের স্থপতিদের মাথায় সৌন্দর্যের পাশাপাশি ভক্তহৃদয়ে কাঙ্খিত আরো কিছু ইফেক্টের কথাও খুব ভালো ভাবেই ছিল। তবে তাদের সবচেয়ে বড় সাফল্য বোধহয়, একটা নির্দিষ্ট যুগের নির্দিষ্ট একটা বিশ্বাসী সম্প্রদায়কে ছাড়িয়ে তিন-চার সহস্র বছর পরেও সম্পূর্ণ অবিশ্বাসী এমনকি বিদেশী বহিরাগত মানুষের মনেও তাঁদের কীর্তির আবেদন অব্যাহত রাখতে পারা। এটা অমরত্ব ছাড়া আর কি ? তবে হ্যাঁ, এই অমরত্ব মন্দিরের ঐ দেবদেবীরা পায় নি - বরং তাঁদের স্রষ্টারাই পেয়েছে, এই আরকি। হয়তো দেবদেবীরাও খানিকটা পেয়েছে, তবে সেটা নিজগুনে নয় - বরং তাদের স্রষ্টার কল্যানেই। আয়রনিটা এখানে অনিবার্য - কে কার কাছে অমরত্ব চাইল, আর শেষ পর্যন্ত কে কাকে সেটা দিল!


মহাপ্রাঙ্গন ও সূর্যদরবারের মধ্যে স্তম্ভবীথি। লুক্সোর মন্দির।


স্তম্ভবীথি। নেট।

এরপর ফারাও র‍্যামেসেসের 'মহাপ্রাঙ্গন' বা মূর্তি-গ্যালারি ছাড়িয়ে আমি এগিয়ে গেলাম আমেনহোটেপের সূর্যদরবারের দিকে। এখানে যেতে পেরিয়ে যেতে হয় ৩০০ ফুট দীর্ঘ এক বিশাল স্তম্ভবীথি। এটাও আমেনহোটেপের তৈরি। সাত যোগ সাত, দুই সারিতে মোট চৌদ্দটি ৬০-৭০ ফুট উঁচু বিশাল 'প্রস্ফুটিত প্যাপিরাস' স্তম্ভে নির্মিত এই অপূর্ব স্তম্ভবীথি। এর ছাদ এখন আর নেই, তবে ছাদ যে ছিল সেটা স্পষ্ট। এর মধ্য দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করেই অনুভব করলাম, আমিও বুঝি সাড়ে তিন হাজার বছর আগে দেবতা আমুনের পুরোহিতদলের প্রোসেশনের সাথে সাথে হেঁটে যাচ্ছি নামগান গাইতে গাইতে। ধূপধুনোর গন্ধ পাচ্ছি। সামনেই সূর্যদরবারের খোলা প্রাঙ্গন।

এখন কালের অমোঘ গ্রাসে ক্ষয়প্রাপ্ত এককালে মার্বেলে বাঁধানো এই বিশাল প্রাঙ্গন। তিনদিক তার রাজসিক স্তম্ভবীথিতে ঘেরা। শিল্পীর মমতায় কর্তিত পাথরের দেয়ালের বুকে উৎকীর্ণ বাস-রিলিফ।


প্যাপিরাস। নেট।

কল্পনা করুন মাথায় অপ্রস্ফুটিত ফুল নিয়ে আটটি প্যাপিরাস গাছের সুদীর্ঘ তন্বী ডাঁটি। সেই ফুলের কলিগুলির গোড়ায় বাঁধুনী দিয়ে ডাঁটিগুলি আঁটি করে বাঁধা শক্তভাবে - সৌন্দর্যের মধ্যে শক্তি জোগাতে। কল্পনা করুন প্যাপিরাস ফুলের এই সুন্দর মসৃন ডাঁটিগুলির আঁটির প্রকাণ্ড পাথুরে রাজসিক সংস্করণ। এবার কল্পনা করুন সমদূরত্বে সারিবদ্ধ ভাবে সাজানো এই সুদীর্ঘ রাজসিক প্যাপিরাস আঁটির সারি। হ্যাঁ, এবার আপনি পেলেন প্রাচীণ মিশরীয় স্থাপত্যের বিখ্যাত প্যাপিরিফর্ম স্তম্ভ আর সেই স্তম্ভে সাজানো সদম্ভ স্তম্ভবীথি । নাজুক সৌন্দর্যের সাথে অপরিমেয় শক্তির অনন্য মেলবন্ধন।


সূর্যদরবার। নেট।

চিন্তা করুন বিপুল স্থাপনাবাহী (এন্ট্যাব্লেচার) এরকম সুদীর্ঘ আচ্ছাদিত স্তম্ভবীথিতে তিনদিক থেকে ঘেরা এক বিশাল পেরিস্টাইল প্রাঙ্গন; এবার পুরোটাকে মানসপটে কল্পনা করুন সাড়ে তিন হাজার বছর আগের অক্ষত অবস্থায়। এইবার বিমুগ্ধ বিস্ময়ে শ্রদ্ধা জানান সেইসব মানুষগুলিকে, যারা সভ্যতার শৈশবলগ্নেই এমন অতুলনীয় সব সৌধ কল্পনা, পরিকল্পনা এবং নির্মান করে যেতে পেরেছেন।

এখানে পাবেন এই পেরিস্টাইল সূর্যদরবারের আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর ২টি ছবি -   ও  ।

শেষ একটা কথা মাথায় না এসে পারল না - গ্রীক স্থাপত্যের বিখ্যাত কলামগুলির মূল আইডিয়া কি এখান থেকে, মিশর থেকেই গিয়েছিল ?

কর্নক মন্দির কমপ্লেক্স


শিল্পীর দৃষ্টিতে কর্নক মন্দিরের সম্মুখভাগ। নেট।

অন্তত ১০০ হেক্টর (=১ কোটি বর্গফুট?) এলাকা জুড়ে অবস্থিত বিখ্যাত কর্নক মন্দির কমপ্লেক্স বেশ কিছু বিশাল মন্দির, উপাসনাগৃহ,সিংহদুয়ার আর নানারকম সম্পৃক্ত ভবন ও স্থাপনার এক সুবিশাল সমাহার (বর্তমানে অবশ্য অনেকখানিই ধ্বংসপ্রাপ্ত)। সেইসাথে এককালে প্রায় ৮৬০০০ দেবমূর্তির আবাসস্থল।

পৃথিবীর বৃহত্তম প্রাচীণ ধর্মীয় পীঠস্থান এই মন্দির কমপ্লেক্সটাকে একটা বিশাল ওপেন-এয়ার-মিউজিয়ামও বলা যায় এখন, যা বর্তমানে মিশরের ২য় সর্বোচ্চ পর্যটকধন্য ঐতিহাসিক স্থান। শুধু এখনই নয়, 'পর্যটন' নামক ফেনোমেননের সূচনাকাল সেই ৩-৪ হাজার বছর আগে থেকেই এটা একটা ধর্মীয় তীর্থের পাশাপাশি একটা পর্যটন তীর্থও হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কর্নকের পুরোটা কোন একজন ফারাও বানাননি, বরং একাধিক শতাব্দী ধরে অনেক ফারাও নিজ নিজ কীর্তি এর সাথে জুড়ে গেছেন। এভাবেই এটা বেড়ে উঠেছে।


ফারাও ২য় র‍্যামেসেস ও তার স্ত্রী রানি নেফেরতারির মূর্তি। কর্নক।

কর্নক মন্দির মূলত চারটি ভাগে বিভক্ত - ২৫ লক্ষ বর্গফুট জুড়ে বিস্তৃত দেবতা আমুন-রে-র এলাকা , ১৫ লক্ষ বর্গফুট জুড়ে বিস্তৃত তার সঙ্গিণী দেবমাতা দেবী মাৎ-এর এলাকা , তাদের সন্তান দেবতা মন্থু-র এলাকা , এবং ফারাও ৪র্থ আমেনহোটেপের মন্দির । প্রতিটি মহল্লা/এলাকা/চৌহদ্দির (precinct) ভেতরেই মন্দির ও 'পবিত্র সরোবর'-সহ আরো বহু কিছুই আছে। আরো কিছু ছোটখাটো মন্দির ইত্যাদি রয়েছে এই চারটির বহির্দেয়ালের বাইরে। এছাড়াও ছিল লুক্সোর মন্দিরের সাথে সংযোগকারী দেবীমূর্তি আর মেষমুণ্ড-স্ফিংক্স শোভিত একাধিক রাজপথ। এর মধ্যে ফারাও ৩য় আমেনহোটেপ নির্মিত দুই পাশে ১০০০-এরও বেশি স্ফিংক্সমূর্তির সারিশোভিত প্রায় ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ একটা শোভাযাত্রাপথ বর্তমানে আবার পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রাচীণকালে মিশরীয়দের বার্ষিক 'ওপেট উৎসব' উপলক্ষে থিব্‌সের তিন অধিষ্ঠিত দেবতা আমুন, মাৎ আর খনসুর মূর্তি কর্নক আর লুক্সোর মন্দিরকে সংযোগকারী এই 'স্ফিংক্স-সড়ক' দিয়ে কর্নকের আমুন মন্দির থেকে লুক্সোর মন্দিরে ব্যপক আনন্দ শোভাযাত্রা করে নিয়ে যাওয়া হত। সম্ভবতঃ আমুন আর মাৎ-এর বিবাহবার্ষিকীর প্রতীকি উদযাপন করতে। কর্নকের আমুনের সাথে লুক্সোরের আমুনের দেখা হত তখন। সেইসাথে অধিষ্ঠিত ফারাওর পূণঃঅভিষেক অনুষ্ঠানটাও হত। তারপর আবার মূর্তিগুলি তিন মাস্তুলওয়ালা বজরায় করে আরেক শোভাযাত্রা করে কর্নকে ফিরিয়ে আনা হতো।


শিল্পীর দৃষ্টিতে 'হাইপোস্টাইল হল' (মডেল)। কর্নক মন্দির। নেট।

কর্নক মন্দিরের উপরে উল্লেখিত চারটি অংশের মধ্যে কেবলমাত্র দেবতা আমুন-রের এলাকা , বিশেষ করে এর অন্তর্ভূক্ত "হাইপোস্টাইল হল" ('স্তম্ভদালান' নাম দেয়া যেতে পারে বাংলায়) - নামে খ্যাত অংশটুকুই সাধারণ পর্যটকদের জন্য খোলা থাকে। বাকি সব মনে হয় রিস্টোরেশন বা সংরক্ষণের জন্য বন্ধ থাকে। তবে এই অংশটুকুও কম নয়। এখানেই গিয়েছিলাম আমি। ১৬টি সারিতে ১৩৪টি বিশাল দানবিক সচিত্র স্তম্ভে স্থাপিত এই "হাইপোস্টাইল হল"-এর শুধুমাত্র 'হল' অংশটুকুরই বিস্তৃতি হচ্ছে ৫০,০০০ বর্গফুট। স্তম্ভগুলির উচ্চতা ৬৩ ফুট পর্যন্ত, অনেকগুলির ডায়া ৯ ফুটেরও বেশি। স্তম্ভগুলি নানারকম খোদাই করা হিরোগ্লিফিক্স, দেয়ালচিত্র, রিলিফে সুশোভিত ও পরিপূর্ণ। এখন এদের গায়ে কোন রঙ আর না থাকলেও এককালে যে এসব বহুবর্ণিল, অলঙ্কৃত আর চাকচিক্যময় ছিল সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।


হাইপোস্টাইল হল। কর্নক মন্দির।


হাইপোস্টাইল হল এবং হাৎশেপ্‌সুতের ওবেলিস্ক। কর্নক মন্দির।


হাইপোস্টাইল স্তম্ভ ও ক্লেরেস্টোরি জানালা। কর্নক মন্দির।

এই স্তম্ভগুলির উপরে প্রস্তরনির্মিত আর্কিট্রেভগুলির (স্তম্ভশীর্ষ লিন্টেল) একেকটির নিরূপিত ওজন ৭০ টন। এত ভারী বীম এত উপরে এত প্রাচীণকালে কিভাবে তোলা হয়েছিল, বিশেষজ্ঞরা এখনো সে ব্যাপারে নিশ্চিত নন। এই হলের ছাদ এখন আর নেই।


শিল্পীর দৃষ্টিতে হাইপোস্টাইল হল। কর্নক মন্দির। নেট।

"হাইপোস্টাইল হল"-কে কর্নক বা অন্তত আমুন-রের মন্দিরের অন্দরমহলের জন্য একটা জমকালো প্রবেশপথ বা সদরদালান হিসেবে দেখা যেতে পারে। এত বিশাল একটা ব্যাপার - অথচ পুরো কর্নক মন্দিরের এটা একটা অতি ক্ষুদ্র অংশমাত্র ভাবতেই স্তম্ভিত হতে হয় (২০০ ভাগের ১ ভাগ?)।


ওবেলিস্ক, কর্নক মন্দির। (?)

১৮২৮ সালে ইজিপ্টোলজির জনক চ্যম্পোলিওন লিখেছিলেন,

"I went at last to the palace, or rather to the city of monuments to Karnak. There all the magnificence of the Pharaohs appeared to me, all that men have imagined and executed on the grandest scale. No people, ancient or modern, has conceived the art of architecture on a scale so sublime, so great, so grandiose, as the ancient Egyptians.

They conceived like men a hundred feet high.

... Above all, the Hypostyle Hall... Nearby two slender obelisks, monoliths complete in symmetry and grace, rise like pillars of light amid the ruins of statues and temples, and announce in their inscriptions the proud message of Queen Hatshepsut to the world.

Their tops are of fine gold chosen from the best in all foreign lands. They can be seen from afar on the river; the splendor of their radiance fills the Two Lands, and when the solar disc appears between them it is truly as if he rose up into the horizon of the sky.

"You who after long years shall see these monuments, who shall speak of what I have done, you will say, "We do not know, we do not know how they can have made a whole mountain of gold.

To guild them I have given gold measured by the bushel, as though it were sacks of grain, . . . for I knew that Karnak is the celestial horizon of the earth."

What a queen, and what kings! Perhaps this first great civilization was the finest of all, and we have but begun to uncover its glory."

........................

লুক্সোর প্যানোরামা এ্যাণ্ড এনিমেশন গ্যালারি ফর সচল






মন্তব্য

মন মাঝি এর ছবি

আয় হায়, আমার এত কষ্ট করে করা সব ফরম্যাটিং দেখি হাওয়া হয় গেছে! এমনকি সামান্য সেণ্টারিং বা জাস্টিফায়িং-ও নাই!! ওঁয়া ওঁয়া

এটা কি মডুদের কারনে, নাকি টেকনিকাল কোন কারনে? সম্পাদনা সেকশনে গিয়ে দেখছি আমার দেয়া বিবিকোড নাই, তার বদলে এইচটিএমএল বা ঐরকম কিছু। ঘটনাটা কি ?

****************************************

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

contact@sachalayatan কম এ মেইল দেন।

আমি তো সেন্টারিং ও জাস্টিফিকেশন দেখতে পাচ্ছি।

আরেকটা বিষয়, ছবিগুলোর আসল মালিককে ক্রেডিট দেয়া খুবই দরকারি।

মন মাঝি এর ছবি

১। স্যরি, ভুলটা মনে হয় আমারই ছিল। পোস্ট করার সময় ব্লগ-লেখুন পাতায় "লেখার সাজ" অংশে 'BBCodeFilterHTML' অপশনটা ডিফল্ট চয়েস ছিল। কিন্তু এটা হিডেন থাকায় আমি দেখিনি ও গূরুত্ব দেইনি। তাছাড়া আগে মনে হয় 'BBCode' অপশনটাই ডিফল্ট থাকতো। আমি এসব খুব একটা বুঝি না, তবে মনে হয় এজন্যেই হয়তো আমার বিবিকোডে দেয়া সব ফরম্যাটিং হারিয়ে গিয়েছিল (অবশ্য প্রি-পোস্ট প্রিভিঊতে কেন সব ঠিকঠাক ছিল তার ব্যাখ্যা আমি জানি না)।

কিন্তু লাকিলি লেখাটা সংরক্ষণের ঠিক আগমুহূর্তে আমি আমার বিবিকোড সহ পুরো টেক্সট কপি করে রেখেছিলাম। সেটাই এখন আমি "লেখার সাজ" অংশের শুধুমাত্র 'বিবিকোড' অপশনটা সিলেক্ট করে আবার সেইভ করেছি। এজন্যেই মনে হয় ফরম্যাটিং ঠিক হয়ে গেছে। এটুকুই আমার এবিষয়ে বুঝার দৌড়! হাসি

২। ক্রেডিটের ব্যাপারে আপনি একদম ঠিক কথাই বলেছেন। তবে সমস্যা হলো এটা লেখার অনেক আগে থেকেই আমি এইরকম ছবিগুলি গুগুলের ইমেজ রেসাল্ট থেকে save image as... দিয়ে নামাচ্ছি - যার ৫০ ভাগের এক ভাগও এখানে ব্যবহার করিনি এবং নামানোর সময় জানতামও না কোনটা বা কয়টা শেষ পর্যন্ত ব্যবহার করব। কিম্বা আদৌ করব কিনা । ফলে সেসময় নামানো প্রতিটা ছবির উৎস লিপিবদ্ধ করে রাখার উৎসাহ পাইনি সময় ও খাটুনির ভয়ে। হাজারো ছবি ঘেঁটে নিজের পছন্দমত উপযুক্ত ছবি বের করতে এবং সেগুলি নিজের স্মৃতির সাথে মেলাতে গিয়ে এমনিতেই আমার দফারফা হয়ে গেছিল, তার উপর প্রতিটি ছবির মূল সাইটে ভিজিট করে তার url ও ফটোগফুরের পরিচয় সংগ্রহ ও সেইভ করে রাখতে গেলে এই লেখাটা লেখার পর্যায়ে বোধহয় আর আসতে পারতাম না - তার আগেই মনে হয় দেবতা আমুনের সাথে আমার দেখা হয়ে যেত স্বর্গধামে। হাসি

যাহোক, এই খাটুনি বাঁচানোর ফল হচ্ছে - নেট থেকে নেয়া বেশির ভাগ ছবির উৎস বা আসল মালিকের ঠিকঠিকানা এখন (বা পোস্ট দেয়ার সময়) আর মনে নেই। আমি জানি এটা হয়তো কাঙ্ক্ষিত প্র্যাক্টিস নয়, তবে আশা ছিল এবং আছে এই বিচ্যূতিটুকু আপনারা/পাঠক ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমি এখানে কেবল আমার ভ্রমন-অভিজ্ঞতা আর আনন্দটুকু ভিস্যুয়ালি অন্যদের সাথে শেয়ার করতে চেয়েছি - অন্যের ছবির ক্রেডিট নিজে দাবী করে বসিনি বা সেরকম কোন ইম্প্রেশনও দেয়ার চেষ্টা করিনি। পোস্টের শুরুতেই স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি কোন ছবিগুলি আমার নয়, এবং কোনগুলির মালিক আমি। তাছাড়া নেট থেকে নেয়া প্রতিটি ছবির ক্যাপশনেও সেকথা বলা আছে।

তবু যেটুকু মনে পড়ছে সেটুকু এখানেই বলে দিচ্ছি।

প্রিভিউ-এর ছবিটা বাদ দিয়ে উপর-থেকে-নীচে ক্রমানুসারে ধরলে --

২, ৩, ৫, এবং ১০ নং ছবিগুলির মালিক 'মার্ক মিলিমোর'।
৪, ৬, ১১, ১৩, ১৪, ১৫, এবং ১৭ নং ছবিগুলির মালিক 'মন মাঝি' (এই ছবিগুলির ক্যাপশন সবুজ রঙে দেয়া)।
বাকিগুলির (প্রিভিউ, ১, ৭-৯, ১২, ১৬) মালিক/উৎস - অজানা/মনে নেই।

এরপরও আমার ব্যাখ্যা কারো মনোপুত না হলে বা আপত্তিকর মনে হলে আবারো দুঃখপ্রকাশ করছি।

ও হ্যাঁ, অন্য সব পর্বে ফুটনোটে যেটা বলে থাকি কিন্তু এই পর্বে ভুলে গিয়েছি - এই লেখাটার জন্য রিসার্চ করতে গিয়ে উইকিপিডিয়া সহ নেট থেকে ব্যাপক ভাবে তথ্যসংগ্রহ করেছি। এটা লিখতে অনলাইন, অফলাইন, আইলাইন, মনলাইন - সব সূত্রই কাজে লাগিয়েছি। কোনখানে কোত্থেকে কোনটা কতটুকু মিক্স দিয়েছি এখন আর মনে নেই - তবে পড়লে কি কি জিনিষ আমার মাথা থেকে বেরুনোর কথা নয় (যেহেতু আমি আর্কিওলজিস্ট বা ইতিহাসবিদ নই) - তা বোধহয় এমনিই বোঝা যাবে।

যাহোক, আমার ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। কিন্তু আমার লেখাটা কেমন লাগলো সেটা তো বললেন না ? সচলে এসেই তো প্রথমবারের মত লেখালেখি শেখার চেষ্টা করছি, কেউ এই ক্ষেত্রে কি ঠিক হচ্ছে বা কি ভুল হচ্ছে, বা আদৌ কিছু হচ্ছে কিনা, ধরিয়ে দিলে মনে হয় কম উপকৃত হতাম না। হাসি

****************************************

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আপনি এত্ত বড় মন্তব্য করবেন জানলে... হাসি

মন মাঝি এর ছবি

Overkill হয়ে গেছে বলছেন ? দেঁতো হাসি দেঁতো হাসি দেঁতো হাসি

****************************************

ফাহিম হাসান এর ছবি

আরেকটা বিষয়, ছবিগুলোর আসল মালিককে ক্রেডিট দেয়া খুবই দরকারি।

চলুক

সত্যপীর এর ছবি

আছছা মন মাঝি ভাই এরা দক্ষিণকে আপার আর উত্তরকে লোয়ার ইজিপ্ট বলতো ক্যান? এখনতো দেখি উত্তর মানে আপার আর দক্ষিণ মানে লোয়ার বুঝায়...ঘটনা কি জানেন নাকি?

শিশিরকণা এর ছবি

এইটা মনে হয় নীল নদের প্রবাহের দিকের কারনে। নীল নদ তো দক্ষিণ থেকে উত্তরে প্রবাহিত হয়। আমাদের মাথায় কেন যেন গেথে গেছে নদী সব সময় উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়- সেইটা সব ভৌগলিক ক্ষেত্রে সত্য না। যেমন আমি আগে জানতাম না যে, নায়াগ্রা ফলস এর পানি দক্ষণ থেকে উত্তর দিকে গিয়ে পড়ে। ভুইন্যা আজিব জায়গা।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

মন মাঝি এর ছবি

এগজ্যাক্টলি! হাসি

****************************************

রিসালাত বারী এর ছবি

জানা ছিল না! একটা নদী দক্ষিণ থেকে উত্তরে যাচ্ছে চিন্তা করে আমার ভূগোল জ্ঞানের মাথা কেমন জানি চক্কর দিয়ে উঠলো মন খারাপ

মন মাঝি এর ছবি

ম্যাপের উত্তর-দক্ষিণের সাথে বাস্তব জীবনে আপনার যথাক্রমে উপর আর নীচ জ্ঞান বা মাধ্যাকর্ষন শক্তির কোন সম্পর্ক নাই - এটুকু মাথায় রাখলেই আর মাথা চক্কর দিবে না। সব সোজা হয়ে যাবে! হাসি

****************************************

শিশিরকণা এর ছবি

পানি উপর থেকে নীচে গড়ায়। বাংলাদেশের উত্তর দিকে হিমালয় উচা জায়গা থেকে নীচে দক্ষিণে সাগরে পানি গড়ায়। নীল নদের উৎপত্তিস্থল থেকে উত্তরে সাগর কাছে। আপার আর লোয়ার সম্ভবত হাইটের হিসাবে।
কিন্তু সোজা না পড়ে এত প্যাচ পুচ খায়া কেন যায়, এইটা বুঝি না। টিপাইমুখের ম্যাপ দেখেও টাশকি লাগছে, ঐখানেও পানি একবার উত্তর যায় একবার দক্ষিণ যায়।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

মন মাঝি এর ছবি

আমার মনে হয় বিষয়টা হাইটের না। প্রায় ৪ হাজার মাইল দীর্ঘ নীল নদের ৮০% অংশের থেকেই মনে হয় এর ভূমধ্যসাগরীয় মোহনার চেয়ে ভারত মহাসাগর বা লোহিত সাগর অনেক অনেক কাছে। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আপনি আগে যেমন বলেছেন, প্রবাহের সামগ্রিক/চূড়ান্ত গতিমুখটাই (উৎস থেকে মোহনার দিকে) এখানে আপার-লোয়ার নামকরনের ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হচ্ছে।

****************************************

মন মাঝি এর ছবি

...এরা দক্ষিণকে আপার আর উত্তরকে লোয়ার ইজিপ্ট বলতো ক্যান?

'বলতো' না, এখনো বলে! হাসি
কারনটা নীচে শিশিরকণার জবাবে দেখুন।

****************************************

ফাহিম হাসান এর ছবি

বেশ মোটসোটা পোস্ট, ভালো লাগছে পড়তে

মন মাঝি এর ছবি

ধন্যবাদ।

****************************************

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

আপনার লেখা সবসময়েই হাতি সাইজ। কয়েক ধাপে পরে ফেললাম। জানাশোনা হল অনেক কিছু।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

মন মাঝি এর ছবি

পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

****************************************

তারেক অণু এর ছবি

চলুক দাঁড়ান, আসিতেছি !

মন মাঝি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- দাঁড়াইসি ! হাসি কবে আসবেন ?

****************************************

উচ্ছলা এর ছবি

পড়লাম। খুবই মেটিকিউলাস আপনার বর্ণনা-ভঙ্গি। ভাল লেগেছে হাসি

মন মাঝি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- তবে আমার নিজের কাছে নিজের লেখাটা কেন জানি খানিকটা শুষ্কং-কাষ্ঠং লাগছে। এর মধ্যে আমার ভ্রমণের আনন্দ আর চার্মটা আরেকটু সঞ্চারিত করতে পারলে ভাল লাগত। কিন্তু সেটা কেম্নে করব বুঝতে পারছি না। হাসি

****************************************

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।