মার্ক টোয়েনের বচনামৃত - ১ম পর্ব এখানে
গৌরচন্দ্রিকাঃ মার্ক টোয়েনের বচনামৃতের আগের পর্বে একজন বলেছিলেন এই সংগ্রহের একটা ভূমিকা লিখলে ভাল হত। কিন্তু টোয়েন এতই বিশ্ববিখ্যাত, বিশ্বপরিচিত আর জনপ্রিয় লেখক আর সেইসাথে তাঁর লেখা এতই কালোত্তীর্ণ আর স্বতঃজ্বাজ্জ্বল্যমান, যে তার সম্পর্কে এমন কি লিখব যা অপ্রয়োজনীয় বাগ্বিস্তার বলে মনে হবে না, বা মা'র (এক্ষেত্রে পাঠকের) কাছে মাসির বাড়ির গল্প বলার মত মনে হবে না - তা কিছুতেই ভেবে বের করতে পারলাম না। তাই এবারও কোন ভূমিকা লেখা গেল না! এটা আমারই ব্যর্থতা হয়তো। কিম্বা হয়তো আমার এই ব্যর্থতাই টোয়েন সম্পর্কে একরকম ভূমিকা।
সে যাই হোক, এই ২ পর্বের সংকলন ও অনুবাদ সরাসরি টোয়েনের কোন বই থেকে করিনি - বরং ইন্টারনেটে ইংরেজি ভাষায় টোয়েনোক্তি সংক্রান্ত অজস্র ওয়েবসাইটে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা তার উদ্ধৃতিগুলি থেকে নিজের পছন্দমত বেছে নিয়ে অনুবাদ করে এই সংকলনটা সাজিয়েছি। এই কাজে আমার প্রধান হাতিয়ার ছিল গুগল, আর উৎস ছিল উইকিকোট আর ব্রেইনিকোট সহ আরও অনেক ওয়েবসাইট।
সত্যবাদিতা স্মৃতিশক্তির উপর চাপ কমায়।
কেবল মৃত মানুষেরই পূর্ণ বাকস্বাধীণতা আছে।
সব সাধারণীকরণই ভুল, এইটা সহ।
বেরিয়ে যাওয়ার চেয়ে বাইরে থাকা সহজ।
আবহাওয়ার জন্য স্বগ্গে যান, সঙ্গের জন্য নরকে।
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আবিষ্কারকের নাম বলুন। - দুর্ঘটনা!
কল্পকাহিনির সম্ভাব্যতার প্রতি দায় আছে; সত্যের নেই।
আমরা আমেরিকানরা... বাকি পৃথিবীর স্বাধীণতার সিন্দুক।
পোশাকেই মানুষের পরিচয়। সমাজে উলঙ্গদের কোন প্রতিপত্তি নেই।
মানুষ একমাত্র প্রাণী যে লজ্জায় আরক্তিম হয়, বা হওয়ার প্রয়োজন পড়ে।
ভালবাসার জন্য ছিপ ফেললে নিজের হৃদয়কে টোপ দিন, মস্তিষ্ককে নয়।
দ্রুত উত্তর দিতে পেরে আমি খুব সুখী হলাম। আমি বললাম - আমি জানি না।
ভাষার উপর আমার চমৎকার দক্ষতার উপর ভিত্তি করে - আমি চুপ থাকলাম।
ভালবাসা পেতে মানুষ অনেক কিছুই করে, কিন্তু ইর্ষা পেতে সে সবকিছুই করবে।
মাঝা মাঝে দুঃখ হয়ে ভেবে যে, নূহ নবী কেন তার কিস্তিতে উঠতে ব্যর্থ হলেন না।
ছোটখাটো দোষত্রুটি নেই এমন লোকের উপর আমার বিন্দুমাত্র আস্থা নাই।
এই জীবনে আপনার কেবল মূর্খতা আর আত্নবিশ্বাস প্রয়োজন; সাফল্য আপনারই হবে।
উৎফুল্ল বোধ করার সেরা উপায় হচ্ছে অন্য কাউকে উৎফুল্ল করে তোলার চেষ্টা করা।
ঈশ্বরের মানুষ সৃষ্টি করার একমাত্র কারন হল - বান্দর তাঁকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি।
সাবান আর শিক্ষা গণহত্যার মত তাৎক্ষণিক নয়, কিন্তু তাদের সুদূরপ্রসারী পরিণাম আরও মারাত্নক।
একটা মোটকা পুলিশ-ফাইলের মানে হচ্ছে ব্যবসা-বানিজ্য ভালই চলছে, আর টাকাও হাওয়ায় উড়ে বেড়াচ্ছে।
অজ্ঞ লোকেরা ভাবেন ঝগড়ারত বিড়ালরা যে আওয়াজ করে সেটা অসহ্য, কিন্তু না, আসল যন্ত্রনা হচ্ছে তাদের অসহ্য ব্যাকরন।
পাঠক, মনে করুন আপনি একটা গাধা। আর ধরুন আপনি একজন সাংসদও। আচ্ছা ঠিক আছে, আপনার বোঝার সুবিধার্থে আবারও বলছি...
তাঁর প্রাচূর্য থেকে দারিদ্র্যে দ্রুত উন্নতি ঘটছে।
একটি সঠিক শব্দ আর একটি প্রায়-সঠিক শব্দের মধ্যে পার্থক্যটা কিন্তু একটা বিশাল ব্যাপার আসলে - অনেকটা বিদ্যুৎপোকা (জোনাকি) আর বিদ্যুৎচমকের মধ্যে পার্থক্যের মতই।
আমাকে একজন মহান লেখক হিসেবে উল্লেখ করায় আমি খুব দুঃখ পেয়েছি, কারন মহান লেখকদের একটা বদভ্যাস হচ্ছে মরে যাওয়া। চসার মৃত, স্পেন্সার মৃত, মিল্টন মৃত, শেক্সপিয়ারও মৃত, আর আমিও ইদানীং খুব একটা সুস্থ বোধ করছি না।
মানুষ সৃষ্টি করাটা একটা চমৎকার আর মৌলিক আইডিয়া ছিল নিঃসন্দেহে, কিন্তু তারপর ছাগল সৃষ্টি করাটা একেবারেই দ্বিরুক্তিপ্রবণ হয়ে গেছে।
একটা টেলিগ্রাফ আবিষ্কারের পিছনে হাজারো মানুষের অবদান থাকে; একটা স্টিম ইঞ্জিন, একটা ফোনোগ্রাফ, একটা ফোটোগ্রাফ, একটা টেলিফোন বা অন্য যে কোন গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের পিছনেও তাই থাকে -- কিন্তু শেষ লোকটাই কৃতিত্ব পায় আর আমরা বাকিদের কথা ভুলে যাই।
এই নিয়মটা একদম নিখুঁতঃ মতামত সংক্রান্ত সব বিষয়ে আমাদের বিরোধীরা বদ্ধ পাগল।
সর্বদা সৎ ভাবে নিজের ভুল স্বীকার করুন। এরকম স্বীকারোক্তিতে কর্তৃপক্ষ কিংকর্তব্যবিমূড় হয়ে পড়বেন, আর আপনি আরও ভুল করার সুযোগ পেয়ে যাবেন।
বেশির ভাগ লেখক সত্যকে নিজেদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ মনে করেন, ফলে এ বিষয়ে তাঁরা অত্যন্ত মিতব্যয়ী হয়ে থাকেন।
আমার মনে হয় আমার প্রচুর পরিমানে মন আছে; এজন্যেই এটা স্থির করতে অনেকসময় আমার হপ্তা পেরিয়ে যায়।
প্যারিসে ফরাসীদের সাথে ফরাসীতে কথা বলতে গেলে ওরা খালি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। আমরা কিছুতেই এই গাধাগুলিকে ওদের নিজেদের ভাষাটাই শিখাতে পারলাম না!
যখনই কোন সাহিত্যবোদ্ধা জর্ম্মন একটা বাক্যের মধ্যে ঝাঁপ দেয় - আপনি তাঁকে আর দেখতে পাবেন না, যতক্ষণ না সে আবার একডুবে তাঁর অতলান্তিকের অপর পারে ভুশ্ করে ভেসে উঠছে তার ক্রিয়াপদটা মুখে নিয়ে।
আমি কারও জাতি-বর্ণ-ধর্ম ইত্যাদির ধার ধারি না। একটা মানুষের মানুষ পরিচয়টাই আমার জন্য যথেষ্ট। এর চেয়ে খারাপ আর কি হবে?
ঈশ্বর, বিশ্বব্রম্মাণ্ড, মানবজাতি, পার্থিব জীবন, স্বর্গনরক - বলে কিছু নেই। এ সবকিছুই আসলে একটা স্বপ্নমাত্র - বিকট মূর্খ একটা স্বপ্ন। আপনি নিজে ছাড়া আর কোন কিছুরই কোন অস্তিত্ত্ব নেই। আর আপনি নিজে আসলে একটা চিন্তামাত্র - একটা ভবঘুরে চিন্তা, একটা গৃহহীণ মূল্যহীণ চিন্তা -- অনন্তের নিরন্ত শুন্যতায় এক বিপথু পথিক।
উচ্চ বংশের পরিচয় পাওয়া যায় নিজের সম্পর্কে কতটা উচ্চ ধারণা পোষন করেন আর অন্যকে কতটা তুচ্ছ জ্ঞান করেন, সেটা গোপন করাতে আপনার দক্ষতার মধ্যে।
কেবলমাত্র প্রেসিডেন্ট, সম্পাদক আর পেটে ফিতাকৃমিওলা লোকদেরই অধিকার আছে সম্পাদকীয় "আমরা" বহুবচনটা ব্যবহার করার।
মাঝে মাঝে আমি অবাক হয়ে ভাবি পৃথিবীটা কি অত্যন্ত বুদ্ধিমান লোকেরা চালাচ্ছে যারা আসলে আমাদের বুঝতে দিতে চায় না তারা কত চালাক, নাকি বোকারাই চালাচ্ছে যারা আমাদের বোঝাতে যায় তারা কত চালাক।
আমি একবার আমার ১২ জন বন্ধুকে এই টেলিগ্রামটা পাঠিয়েছিলাম -- সব ফাঁস হয়ে গেছে -তাড়াতাড়ি পালাও! তাদের সবাই শহর ছেড়ে ভেগে গিয়েছিল সাথেসাথে।
আপনি যা জানেন না, সেটা আপনাকে বিপদে ফেলে না। আপনাকে বিপদে ফেলে আপনি যা নিশ্চিত ভাবে জানেন।
আমেরিকা আবিষ্কার একটা মহান ঘটনা ছিল, কিন্তু আবিষ্কার না করলে ঘটনাটা আরও মহান হত।
বিশেষ পরিস্থিতিতে, গালাগালি করে এমন শান্তি পাওয়া যায় যা এমনকি উপাসনাতেও পাওয়া যায় না।
অন্য কোন উপায়ে আপনি যখন কোন প্রশংসা পাচ্ছেন না, তখন নিজেই নিজেকে সেটা দিয়ে দিন।
ঈশ্বরের কৃপায় আমাদের দেশে এই তিনটি অবর্ণনীয় অমূল্য সম্পদ আছেঃ বাক-স্বাধীণতা, বিবেকের স্বাধীণতা, আর এই দু'টি কখনই চর্চা না করার বিচক্ষণতা।
আপনাকে আঘাত করতে হলে, আপনার শত্রু আর আপনার বন্ধু - দুজনেরই সম্মিলিত উদ্যোগ লাগেঃ একজন আড়ালে আপনার নিন্দা করবে আর আরেকজন সেই খবরটা আপনার কাছে বহন করে আনবে।
একটা ক্লাসিক হচ্ছে সেই বইটা যা সবাই নিজের পড়া বলে আশা করে, কিন্তু কেউই পড়তে চায় না।
চলুন আমরা একে অপরের সাথে যোগাযোগের চেষ্টাটা থামিয়ে একটু সংলাপের চেষ্টা করি।
সঠিক একটা শব্দ কার্যকরী হতে পারে, কিন্তু সঠিক সময়ে প্রযুক্ত একটা বিরতির মত কার্যকরী কোন শব্দ পৃথিবীতে একটিও নেই।
জীবন অনেক বেশি সুখময় হত, শুধু যদি আমরা আশি বছর বয়সে জন্মগ্রহণ করে ধীরে ধীরে আঠারোর দিকে এগুতে পারতাম।
ফসিলীভূত মতের প্রতি আনুগত্য কোনদিনও কোন শৃঙ্খল ছিন্ন করেনি বা কারও আত্নার মুক্তি ঘটায়নি।
বাইবেলের যে অংশগুলি আমি বুঝি না সেই অংশগুলি নিয়ে আমি তেমন চিন্তিত না, আমি চিন্তিত সেগুলি নিয়ে যেগুলি আমি বুঝি।
১লা এপ্রিল সেই দিবস যেদিন বছরের অন্য ৩৬৪ দিন আমরা আসলে কি - সেইটা উদযাপন করি।
একটা মিথ্যা আর একটা বিড়ালের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পার্থক্যগুলির অন্যতম হল - বিড়ালের মাত্র নয়টা জীবন।
জীবনে সাফল্যের অন্যতম রহস্য হল - যা মন চায় তাইই খাওয়া, আর তারপর খাদ্যকে পেটের ভিতর গিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি করে কে শ্রেষ্ঠ তা ওদেরই ঠিক করতে দেওয়া।
আপনার বন্ধুরা যেদিন আপনার চেহারায় তারুন্যের দীপ্তি নিয়ে প্রশংসা করা শুরু করবে, সেদিন আপনি নিশ্চিত ভাবে বুঝবেন আপনি বুড়ো হয়ে যাচ্ছেন।
মাটির উপরে উনি একেবারেই অচল। মাটির নীচে গিয়ে বাঁধাকপিদের উৎসাহ যোগানো উচিৎ ওনার।
আমরা কেন কারও জন্মের সময় আনন্দ প্রকাশ করি, আর কেনইবা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় শোকপ্রকাশ করি? এর কারন হল - ঐ মানুষটা আমরা নই।
চমৎকার বন্ধুবান্ধব, ভাল ভাল বইপত্তর আর একটা ঘুমন্ত বিবেকঃ এই তো একটা আদর্শ জীবনের রেসিপি।
রাগ এমন একটা এসিড, যার উপর তাকে ঢেলে দেওয়া হয় - তার চেয়ে সে যে পাত্রের ভেতর তাকে সংরক্ষণ করা করা হয় সেটারই অনেক অনেক বেশি ক্ষতি করে।
সম্পূর্ণ আত্নসংযম এতই চমৎকার একটা বিষয় যে, এই ক্ষেত্রে কোন বাড়াবাড়িই আসলে বাড়াবাড়ি না। আমি এটা এতই ভালবাসি যে আমি এমনকি সম্পূর্ণ আত্নসংযম থেকেও সম্পূর্ণ আত্নসংযত থাকি।
মন্তব্য
এটা সবচেয়ে বেস্ট।
আসলেই
****************************************
সবচেয়ে বেস্ট ! মাফ করবেন। বেস্ট তো বেস্টই, আবার সবচেয়ে কি ?
আরে মাফ করার কি আছে, আসলেই তো
।
আমি একটু বেশি বলে ফেলেছি, বেশি ভাল লেগেছে কিনা তাই।
যতই গভীরে যাই---------- মধু!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
****************************************
****************************************
খুবই তৃপ্তি পেলাম পড়ে। ধন্যবাদ।
পড়ার জন্য আপনাকেও
****************************************
সত্যিই অমৃতসম।।।
সত্যিই
****************************************
****************************************
সুন্দর তো। টোয়েন আমারও অনেক পছন্দ।
______
বুনোফুল
****************************************
****************************************
facebook
পড়ার জন্য
****************************************
এক্কেবারে একটা বস্ টাইপের কাজ করেছেন !
- স্পেশালি এইটা লা-জবাব হয়েছে।
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
বাব্বাহ্.... এতগুলা ইমো !!
পড়ার এবং উপভোগ করার জন্য আপনাকেও অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ!
****************************************
আপাতত এটা বেস্ট মনে হচ্ছে।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
****************************************
পড়লাম, এবার মুখস্ত করতে হবে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
****************************************
নতুন মন্তব্য করুন