[পর্ব ১, ২, ৩ আর ৪ ও সাথেই রইলো। আলাদা আলাদা পর্ব- কাজেই পড়লেও চলবে,না পড়লেও।]
ডাইনিং রুমের টেবিলটার আশেপাশে মিঁয়াও পায়চারি করছে বেশ কিছুক্ষণ হয়ে গেলো। টেবিল নিয়ে ওর এতো মাথাব্যথা নেই, কিন্তু টেবিলের ওপরে যে প্যাকেটটা রাখা হয়েছে কিছুক্ষণ আগে সেটা তাকে চিন্তায় ফেলেছে- সমস্যা হলো দুশ্চিন্তা সুরাহা করার উপায় এখনো পর্যন্ত মেলেনি।
নিতুনের আব্বু.মানে ঐ হোঁদলকুতকুত,যে মিঁয়াওকে দেখলেই মাঝে মাঝে পাগল হয়ে ছুটে আসে ফ্রিজের আড়ালে রাখা লম্বা লাঠিটা দিয়ে ওর পিঠে দু ঘা বসিয়ে দিতে,আজ সকালে বেরিয়ে আবার হুট করে বাসায় চলে এসেছে। হাতে ঝুলিয়ে এনেছে দুটো প্যাকেট,মুখজোড়া হাসি। প্যাকেট দুটোর একটা চলে গেছে কিচেনে,আর একটা ঐ টেবিলের ওপরে।
হোঁদলবাবুর মুখের হাসির রেখাটা দেখেছে বলেই মিঁয়াও নিশ্চিত জানে ওগুলোতে কোন খাবার না থেকেই যায়না। এছাড়া দুনিয়ার আর কোন বস্তু নাই যা ঐ ব্যাটার তেলতেলে মুখে মোলায়েম হাসি নিয়ে আসতে পারে! বেঢপ শরীর, ডাক্তার পই পই করে বেমক্কা খাবার দাবার বন্ধ করতে বলেছে- এটা নিতুনের আম্মু কারণে অকারণে সময়ে অসময়ে মনে করিয়ে দেয়। তাতে কী- হোঁদল সাহেব প্রায়ই এটা ওটা খেয়ে গ্যাঞ্জামে পড়ে আর
বাড়তি হিসেবে জুটিয়ে নেয় নিতুনের আম্মুর গঞ্জনা- "তোমাকে পই পই করে মানা করে দিলাম, তবু শুনবানা, আর ঝামেলায় ফেলবা আমাকে। যদি ডাক্তারকে না বলছি এবার-...!"
কিচেনে গিয়ে মিঁয়াও এখুনি দেখে আসতে পারে ঐ প্যাকেটটায় কি আছে, কিন্তু ওখানে যাবার আগে টেবিলটা ঘুরে যাওয়ার ইচ্ছা- পরে যদি এটা আর এখানে না থাকে! "নাহ্!" মিঁয়াও এক লহমায় সিদ্ধান্তে পৌঁছে,চাইকি কিচেনের প্যাকেটে নাক লাগুক আর না লাগুক,টেবিল ছেড়ে এখন মোটেই যাওয়া চলবেনা। পুরনো অভিজ্ঞতা থেকে ও বিলক্ষণ জানে,কিচেনে যেসব প্যাকেট যায়না ওগুলোতেই রাজ্যের ভালো ভালো বস্তু থাকে সবসময়;
আর দুঃখের ব্যাপার হলো ওগুলো হাওয়া হয়ে যায় চট করেও, গন্ধের উত্স ধরে অনেক শুঁকেও পাওয়া যায়না আর।
এতোক্ষণে ডাইনিং টেবিলে উঠে যাওয়া থেকে মিঁয়াও নিজেকে বিরত রেখেছে দুটো কারণে-
এক নম্বর কারণ- হোঁদলকুতকুত এখন বেডরুমে বসে হাঁসফাঁস করছে, বিছানার ঐ কোণা খেকে ডাইনিং টেবিল স্পষ্ট দেখা যায়। আড়চোখে চেনা দূরত্বটুকু আরেকবার মেপে মিঁয়াও নিশ্চিত হয়েছে ঝুঁকিটা একটু বেশীই হয়ে যাবে। কাজেই বসে বসে ধীরলয়ে ল্যাজ নাড়ানো, থাবা চাটা আর উতলা হয়ে এদিক ওদিক তাকানো ছাড়া আর কিছুই করছেনা সে। "আরে বাবা, ওখানেই কেনো বসতে হবে!" মিঁয়াও বিরক্ত হয়। খানিকটা সহানুভূতিও
দেখাতে ইচ্ছা হয়, "আহা! কত খেটেখুটে এসেছো, খানিক শুয়ে থাকলেওতো পারো!"
দুই নম্বর কারণটাও ফেলে দেয়ার মতো নয়। কালকের ঘটনাটা এখনো ভোলেনি মিঁয়াও।
দুপুরে ঘুমানোর জন্য ডাইনিং টেবিলের চেয়ারগুলো ওর পছন্দের। ঠান্ডা, মসৃন। শোয়ামাত্র চোখ বন্ধ হয়ে আসে আরামে। যখনি মনে হলো দুপুরের আয়েশী গড়ানোটা হয়ে যাক এক প্রস্থ ও আলতো লাফে চেপে বসতে গেলো চেয়ারে, পরের মুহূর্তে নিজেকে আবিষ্কার করলো মেঝেতে! চেয়ারের চেনা পিঠটা হুট করেই কেমন অচেনা ঠেকলো,কেমন পিচ্ছিল হয়ে গেছে,নখ বের করেও আসন্ন পতন এড়ানো গেলোনা। ও কেমন করে জানবে,পিচ্ছিল
ক্লথে মোড়ানো নতুন গদিওয়ালা চেয়ার আমদানি হয়েছে,ও যখন পাড়া বেড়াতে গিয়েছিলো তখন,ফিরে এসেও এদিকে আর আসা হয়নি - চিত্পটাং হয়ে ও যখন কারণ খুঁজছে তখনি নিতুনের আম্মুর চিত্কার কানে এসেছে,"ওরে হতচ্ছাড়া! আমার নতুন চেয়ার-একটা দিনও কাটলোনা- আজকেই- তোকে আমি..!" শেষ পর্যন্ত অবশ্য কিছু করেনি, চেয়ারটা দেখে একবার হাত বুলিয়ে ওর দিকে একটা গরম চাহনি দিয়ে চলে গেছে নিজের কাজে। মিঁয়াও হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে। এজন্যই ও এখনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি,এক দিন না পেরোতেই আরো একবার ঐ ঝুঁকিটা নেয়া ঠিক হবে কিনা।
সুযোগ আসে হঠাত্ করেই। ওটাকেই কাজে লাগাতে হয়- মা অনেক আগে শিখিয়েছিলো। তা সুযোগ হঠাত্ই এলো।
হোঁদলবাবু কি ভেবে একটু গেলো বারান্দার দিকে, অমনি মিঁয়াও প্রস্তুত হয়ে গেলো এক লহমায়। পিচ্ছিল ক্লথে পা পিছলে গেলোনা এবার- একলাফে পৌঁছে গেলো টেবিলের ওপরে। ঠিক মাঝামাঝি প্যাকেটটা রাখা, খানকয়েক পিঁপড়ে চোখে পড়লো, ওটার দিকে চলেছে মার্চ করে। "মিষ্টি কিছু হবে", মিঁয়াও বুঝে নিলো, খাওয়ার যোগ্য কিনা কে জানে!তবু ও চোখ বুলিয়ে নিলো প্যাকেটটায়,খয়েরি রংয়ের প্যাকেট,পাতলা সুতো দিয়ে বাঁধা। আরো এগিয়ে নাকে শুঁকে দেখলো একটু- মিষ্টি গন্ধ, কেমন জানি শুকনো শুকনো। এরচে বরং কিচেন থেকে আসা চেনা উতলা করে দেয়া ভাজা ভাজা গন্ধটা অনেক ভালো- "নির্ঘাত মাছ ভাজা "- মিঁয়াও ল্যাজে একটা ঢেউ তুলে এক লাফে নীচে নামে, পথ ধরে কিচেনের।
দুপুরে খাওয়ার সময়টায় বাসায় একটা খুশি খুশি ভাব নজর কাড়ে মিঁয়াও-এর। টেবিলে বসে ওরা তিনজনা- নিতুন,ওর বাবা, মা। আর বাড়তি সুগন্ধ জানান দেয় মাছভাজা,পোলাও,গোশতের সরব উপস্থিতির।
টেবিলের নীচে ওর নির্দিষ্ট কোনাটা থেকে নিতুনের গলা শুনতে পায় মিঁয়াও,"জানো বাবা আজ অনেক গান হচ্ছে টিভিতে। মেলা-ও দেখাচ্ছিলো!" "তাই? কেনো বাবা বলোতো দেখি?!"- চিবুনোর চপ চপ শব্দের পাশাপাশি প্রশ্নটাও কানে আসে।
নিতুনের অবাক গলাটাও ভেসে আসে প্রায় সাথে সাথেই,"ওমা! তাও জানোনা, আজ যে নববর্ষ!" "হুম, তাইতো! আজ যে নববর্ষ! নববর্ষের মিষ্টি খেয়েছো তো বাবা?" এবার নিতুনের বদলে ওর মায়ের গলা শোনা যায়,"ওসব মঠ, বাতাসা, প্যাঁড়া পরে হবে, আগে খেয়ে নিক!"
এতোক্ষণে মিঁয়াও-এর বোধগম্য হয় সব। "নব...বর্ষ",শব্দটা উচ্চারণ করার চেষ্টা করে ও। নিতুনের আম্মুর কানে যায় ওর কথা-"একটু সবুর কর্! এত ম্যাও ম্যাও করিস ক্যান? এখুনি দিচ্ছি তোকে!"এবার মিঁয়াও অবাক হয়,ও বলে কী আর এরা শোনে কী!
ঠোঁটে লেগে থাকা মুচকি হাসিটা আরেকটু বড় হয় মিঁয়াও-এর, সরবেই সুর টেনে বলে,"মানুষ কী বোকা!"
ও জানে,টেবিলের ওপরের মানুষগুলো ভাবছে ও বলেছে, "মিঁয়ায়ায়াওও!"
মন্তব্য
মিঁয়াওকে নব্বর্ষের শুভেচ্ছা। সেই সাথে মিঁয়াওকে ইলিশ মাছের পেটি উপহার পাঠিয়ে দিলাম।
-লাবণ্য-
মিঁয়াও কে পৌঁছে দেওয়ার আশা রইল। আপনাকেও শুভেচ্ছা মিঁয়াও শুভার্থী হওয়ার জন্য।
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
আরে,
মিঁয়াও ইজ ব্যাক! (তালিয়া)
--------------------------------------------------
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
তাইতো দেখছি!
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
"ইঁদুর সমস্যা তিথীডোরের নিজস্ব সম্পদ"
মন্তব্যে আবারো সহমত!
--------------------------------------------------
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
ইঁদুর তো নয়, সাক্ষাত জেরী!
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
মজারু
______________________________________
ভাষা উন্মুক্ত হবেই | লিনলিপি
______________________________________
লীন
ধন্যবাদ
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
ক
আচ্ছা, আপনি কি কোন জন্মে বেড়াল ছিলেন? বেড়ালের মনস্তত্ব আর গতবিধি এত চমৎকার ভাবে বলেন কী করে?
খ
আরো দু তিনটা পর্ব আসুক। তারপর একটা কথা বলবো।
গ
কমার পরে একটা স্পেস দেবেন।
|| শব্দালাপ ||
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
ক.
জন্ম ভাই একটাই,
মানুষ ছিলাম, মানুষ আছি,
মানুষ থাকতে চাই!
তবে হ্যাঁ, বেড়ালদের কয়েক প্রজন্ম একদম চুলচেরা দেখার সৌভাগ্য হয়েছে।
একসময় ঘুমই ভাঙতো সদ্য ঘুম থেকে ওঠা বেড়ালের ফুলকো ল্যাজের মোলায়েম ছোঁয়ায়, আবার রাতে বেড়াল এসে পায়ের তলাটায় এসে ঘুমিয়ে পড়তো। বলতে গেলে শয়নে স্বপনে বেড়াল!
আর যত লিখছি ততই যেনো সব মনে পড়ছে আরো নতুন করে, মানুষের মগজ আসলেই এক অদ্ভুত বস্তু!
খ.
কথাগুলো যদি হয় "গপ্পো বোরিং লাগছে", "বিরক্তিকর", "আর ভালো লাগছেনা" গোছের তাহলে আরো দুয়েক পর্ব পর্যন্ত অপেক্ষা না করে ঝটপট বলে ফেললেই খুশী হব।
গ.
মুঠোফোন যুগ পেরিয়ে কম্পু যুগে প্রবেশ প্রক্রিয়া চলছে, কিছু প্রতিবন্ধকতাও আছে দেখতে পাচ্ছি!
বলে রাখা ভালো, পথ চলা শুরু হয়েছে অভ্র-এর হাত ধরেই।
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
মোটেও বোরিং লাগছে না। সামনের পর্বগুলোর অপেক্ষায় রইলাম।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
যত দিন যাচ্ছে মিঁয়াওকে বেশ পছন্দ হচ্ছে। ওকে জানাবেন আমি ওর সাথে একমত।
নহক
দেখা হলে নিশ্চিত জানাবো!
অটঃ
চুপি চুপি বলি, খবর পেয়েছি খালার বাসায় এক মিঁয়াও-ছানাকে দেখা যাচ্ছে! ইচ্ছে আছে এক নজর দেখে আসবো।
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
রিপিট!!
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
নতুন মন্তব্য করুন