গবেট
[ন্যাশনাল আরকাইভে প্রাচীন কিছু স্ক্রিপ্ট পাওয়া গেছে সম্প্রতি। কী লেখা আছে ওখানে তা এখোনো পুরোপুরি বের করা যায়নি, মনে করা হচ্ছে এ থেকে আমাদের ইতিহাসে নতুন কিছু পাতা যোগ হবে। একটি স্ক্রিপ্টের কিছু অংশের পাঠোদ্ধার করা গেছে। পাঠকদের ভাল লাগবে ভেবে ভাষান্তরিত অংশটুকু এখানে প্রকাশ করা হলো।
- সম্পাদক/প্রকাশক]
আমি একেবারেই গবেট টাইপ মানুষ। আমার কথা না এটা, তবে আমার কাছের মানুষেরা এই কথা একদম জলবত্ তরলং করেই বুঝিয়ে দেয় আমাকে। প্রথম প্রথম ভালো লাগতো না শুনতে, ঘাড় বাঁকিয়ে রুখে দাঁড়াতাম, এরপর দেখি এতে লাভ তো হয়-ইনা, ক্ষতি হয়ে যায় বরং; সামনে কেউ কিছু বলেনা, পরে আড়ালে হেসে নেয় একচোট। সেই থেকে কেউ কিছু বললেও মন খারাপ করিনা, কেনো করবো? আমি গবেট কিনা!
অবশ্য আমার কপালটাও বোধ হয় খারাপ খানিকটা। যত বন্ধু আছে আমার সবার মা-বাবা একেবারে অসাধারণ- "কী ভালো ছেলেটা আমার!"-ঠারে ঠোরে এ কথা জানিয়ে দেন তাঁরা আর ছেলের দিকে আড়ে তাকিয়ে একটু থু থু ছিটিয়ে দেন ওদিকে, নজর না লেগে যায়! আর আমার আব্বু-আম্মু? "দিনকে দিন তুই গবেট থেকে গবেটতর হচ্ছিস!"- আড়াল আবডালের বালাই নেই, সবার সামনেই বলেন আবার চিন্তিত মুখে পাশে দাঁড়ানো কোন ভাই ভাবির পরামর্শও নেন, "ভাবি, এ গবেটটারে কেমনে ঠিক করি বলেন তো!"
মাঝে মাঝে অবশ্য বোঝার চেষ্টা করি আমি আসলেই গবেট কিনা। বের করতে পারিনা।
আম্মু-আব্বু যে আমাকে নিয়ে চিন্তায় থাকে তার কারণ আছে এটা অস্বীকার করি না, সবার মতো না হলে মা-বাবারা অমন একটু আধটু চিন্তা করেই। কথাটা কি বড়োদের মতো হয়ে গেলো? হতেই হবে।ওঁদেরকেই বলতে শুনেছি, জায়গামতো ছেড়ে দিলাম আর কি! এটা করতেও আমার খুব মজা লাগে। তবে এটা ঠিক, 'সবার মতো না'র মানেটা কী এটা এখনো ঠিকঠাক বুঝে ওঠতে পারিনি।
মানে যদি হয় 'একটু অন্যরকম' তাহলে মনে হয় ঠিকই আছে। অদ্ভূত কিছু অভ্যাস আছে আমার যেগুলো অন্যদের সাথে মেলেনা। অন্যরকম হওয়ার জন্য অবশ্য কিছু করিনা, অমন করি বলেই বরং অন্যরকম হয়ে যাই।
ঘর থেকে বেরোলেই খোলা রাস্তা, দুপাশের ছোট পাখা ছড়িয়ে দিয়ে নানান ধাঁচের গাড়ি ছুটে চলেছে- ছোট, বড়, একতলা, দোতলা। কোন কোন গাড়ি চলছে প্রায় মাটি ঘেষে, কিছু উঠে যাচ্ছে তিন থেকে পাঁচ তলা সমান উঁচুতে- এরপর হুশশ করে উড়ে যাচ্ছে। কোন গাড়ি কতটুকু উচ্চতায় উড়বে আগে থেকে ঠিক করে দেয়া, সূর্যশক্তির প্রয়োজনের উপর নির্ভর করে। আবার কোন স্তরের গাড়ি কোন কোন পেশার মানুষ বহন করবে তাও ঠিক করে দেয়া, সেটা কাজের গুরুত্বের উপর ভর করে। প্রতিদিন সকালে মানুষজন পিলপিল করে বেরিয়ে আসে একসাথে, কাজে যাবে বলে- চোখ মুখ থমথমে, কারো সাথে কথা নেই, মুখে হাসি নেই, ওরা কেবল অপেক্ষা করতেই জানে।
সকালবেলার এই ভীড় আর মানুষজনের কাঠ কাঠ চেহারা দেখতে আমার মজা লাগে। আব্বুর সাথে বেরোলে তাঁর সাথে অপেক্ষায় থাকা কাউকে মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করে বসি, "ভাল আছেন?" চরম বিরক্তি লুকিয়ে আব্বুর দিকে একটা বাঁকা দৃষ্টি হেনে ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে উত্তর দেন মানুষটি, "হুম! ভাল।" ফিরতি প্রশ্নও করেন, "তুমি ভাল খোকা?" 'খোকা!'- শুনতেই শরীর কেঁপে হাসি আসে, হঠাত্ ফিচ করে হেসে বলি, "আমিও!" আব্বু ততক্ষণে ওনাকে জরুরী খবর জানানোর ভঙ্গিতে বলে চলেছেন, "ছেলেটা বড়ই বিরক্ত করে, দুঃখিত, খুবই দুঃখিত!" পাশাপাশি চোখে চোখে আমাকে শাষণও চলছে, "আবার!" আমি তখন আবার আকাশে গাড়ি দেখতে থাকি।
আব্বুর মত যারা প্রাণীবিজ্ঞান নিয়ে কাজ করেন তাঁদের অবশ্য বেশি অপেক্ষা করতে হয়না, ওঁদের জন্য বরাদ্দ লাল রংয়ের না বড় না ছোট গাড়িগুলো চটপট আসে আর পেটে পুরে ঝটপট রওয়ানা দেয়। আব্বু ওঠার আগে তাগাদা দিয়ে যান, "গাড়িতে যেও কিন্তু!"
আমার মত ছোট ক্লাসের ছাত্র যারা তাদের জন্য একদম বিশেষ ব্যবস্থা করা গাড়ি ঠিক করে দেয়া। সাদা ছোপ দেয়া আসমানি রংয়ের গাড়িগুলো যখন বলতে গেলে আসমান থেকে নেমে আসে তখন দেখতে অসাধারণ লাগে। গাড়ির ভেতরটাও সুন্দর করে সাজানো, অন্যান্য গাড়ির বসার জায়গাগুলো থাকে একের পেছনে এক আর এ গাড়িতে সবাই মুখোমুখি বসতে পারে, আবার চাইলে ঘুরিয়েও নেওয়া যায় সিট। জানালাগুলো বেশ বড় সাইজের, নীচের দুনিয়া স্পষ্ট দেখা যায় উপর থেকে। আবার ছাদের কিছু অংশও স্বচ্ছ কিন্তু শক্ত আবরণে ঢাকা, কালচে ভাবটুকু সূর্যের তাপ ঠেকায় কিন্তু আকাশ দেখা আটকায় না। যেহেতু গাড়ি উড়ে যায় সমান গতিতে কাজেই রীতিমত ঘুরে বেড়াতেও সমস্যা হয়না কোন। স্কুলে যারা পড়ে তাদের গাড়িগুলো ওড়ে আকাশের বেশ খানিকটা উপর দিয়ে, নীচের বাড়িঘরগুলো কেমন খেলনা খেলনা লাগে আর মানুষকে মনে হয় পিঁপড়ের সমান। আরেকটা মজা আছে, গাড়িগুলো অনেক ঘুরে তবে গিয়ে পৌঁছায় স্কুলে, চালায়ও অনেক আস্তে আস্তে। আমার ঠিক মনে আছে- পাঁচ বছর বয়েসে "কোনমতে স্কুলে যাবনা" থেকে "মাঝে মাঝে যাব" হয়ে "কেন ছুটির দিনে স্কুলে যাবনা?" বলে গড়াগড়ি দিয়ে কান্নাকাটির পেছনে এ গাড়ির বেশ ভূমিকা ছিল। এখন আমার ছোট বোনটা বেশ উত্সাহ নিয়ে উঠলেও আমার আর অত ভাল লাগেনা, বড় হয়েছি তো!
এরচে বরং নীচে পায়ে চলার ফুটপাথগুলো অনেক সুন্দর। পা চালিয়ে হাঁটতে হয়না অবশ্য, পথ নিজেই চলে। অনেকটা কনভেয়ার বেল্টের মত। একটা সবসময় যাচ্ছে, আরেকটা আসছে- পাশাপাশি। দুই পথ যেখানে এসে মিলছে সেখানে একটু থেমে আবার পথ বদলে নিতে হয়।
দুপাশের বাড়িঘর, খোলা মাঠ আর একটু পর পর বসানো স্বয়ংক্রিয় বিশ্রামাগারে বসে থাকা মানুষজনের কাজকর্ম দেখার একটা আলাদা আনন্দ আছে। আবার উপরে তাকালে খোলা আকাশ, নীল সাদা ছোপ ছোপ আর মাঝে মাঝে শো শো করে উড়ুক্কু গাড়িগুলো উড়ে যাচ্ছে- দুপাশে ছড়ানো ছোট্ট পাখা আর চলার সময় গুটিয়ে নেয়া স্ট্যান্ডগুলো মিলিয়ে দেখতে একদম অচেনা লাগে যানগুলোকে। তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখনো মনে হয় জানালায় গাল ঠেকিয়ে রাখা কাউকে চিনে ফেলেছি ঠিক ঠিক, ভুল হলেও ভাবতে ভাল লাগে।
সবচেয়ে মজা অবশ্য অন্য জায়গায়। চলতে থাকা পথ দুটোই খালি থাকলে আমি চটপট পথবদল করে ফেলি পাশাপাশি, উল্টো পথ ধরে যাওয়ার চেষ্টা করি। পথের গতি আমাকে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করে, আর আমি ওকে হারিয়ে উল্টোপথে যেতে থাকি স্কুলের দিকে। একটু সময় লাগে, সবাই হা হা করে ওঠে দেখলে, পথের কোণে লাগানো ক্যামেরায় ছবি ওঠে গেলে আব্বু-আম্মুকে বেশ ঝামেলায় পড়তে হয় (নিজের গাড়িতে ওঠার সময় আব্বুর "গাড়িতে যেও কিন্তু" বলে যাওয়ার মূল কারণ এটাই!)- তবু আমি এ পথেই যাই। আমার সমান বয়েসের কেউ এদিক দিয়ে যায় না, তাতে কী?!
স্কুলের গেটটা বেশ বড়সড় আর পুরো স্কুলটা পাচিলে ঘেরা। স্কুলের গাড়ি একদম ভেতরে গিয়ে ছাত্র ছাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে যায়, সময়ের শেষে আমার ভেতরের ঐ মাঠ থেকেই তুলে নিয়ে যায় আবার। চলন্ত পথে যারা চলে আসে তারা স্কুলে ঢোকে গেট পেরিয়ে। বিশাল গেটটায় কেউ কখনো থাকেনা, তবু যখনি এ গেট একের পেছনে এক আর এ গাড়িতে সবাই মুখোমুখি বসতে পারে, আবার চাইলে ঘুরিয়েও নেওয়া যায় সিট। জানালাগুলো পেরোই তখনি কেমন ঠান্ডা শিহরণ শিরদাড়া দিয়ে বয়ে যায়- কে না জানে গেটের মাথায় বসানো ক্যামেরায় গেট দিয়ে ঢোকা প্রত্যেককে চুলচেরা স্ক্যান করা হয়! আমি দেখতে পাচ্ছিনা কিন্তু আমার নাড়ি নক্ষত্র দেখে ফেলছে কেউ ভাবতে ভাল লাগে না একটুও।
অবশ্য ভেতরে ঢুকে যাওয়া মাত্র মন ভাল হতে বাধ্য। শুরুতে সব ছোটদের ক্লাস, বেশির ভাগ সময়ই ওরা ছোটাছুটি করে কাটায়, একই পোশাকের একই বয়সের একই রকম দেখতে পিচ্চিগুলোকে দেখতে ভাল লাগে খুব। সারাদিন দৌড়ে দিন কাটছে ওদের। বিশাল সবুজ মাঠ, চমতকার বাগান দেখে মন এমনিতেই ভাল হয়ে যায়। মাঝে মাঝেই দুএকজনকে দেখা যায় শূণ্যে ঝুলছে, এটা অবশ্য শাস্তির অংশ। ব্যাপার তেমন কিছু না, মধ্যাকরষনহীন ছোট ঘরে রেখে ওদের বাতাসে ভাসিয়ে দেয়া হয়, রোদ লাগেনা গায়ে, তবে ওদের কথা কেউ শুনতে পায়না, কেবল শরীরের কসরত চোখে পড়ে। অনেকে অবশ্য আগ্রহের সাথে এ শাস্তি পেতে চায়, অনেক নাকি আনন্দ!
ওদের খুশী রাখা বেশ জরূরী। ওদের যত ছুটাছুটি সবই ড্রীলের অংশ- এভাবেই জন্মের দুবছরের মাঝে সার্জারি করে ওদের মাথায় বসিয়ে দেয়া মাইক্রোচিপের সাথে ওদের মস্তিষ্ক মিলেমিশে কাজ করতে শুরু করে। মস্তিষ্ক যত ব্যস্ত থাকবে ঐ চিপের জন্য কাজ করা তত সহজ হবে, স্কুলের কাজ হল এ ব্যস্ততার অভ্যাস গড়ে দেওয়া।
স্কুলের নিজস্ব ডেটাব্যাংক আছে, এটা আবার দেশের কেন্দ্রীয় তথ্যব্যাংক থেকে আলাদা। স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরা কেবল স্কুলের ডেটাব্যাংক থেকে সরাসরি তথ্য নেয় ঐ মাইক্রোচিপ ব্যবহার করে, কাজে লাগায়, শেখার চেষ্টা করে। স্কুলের গন্ডি পেরোলে পরের ধাপের তথ্য ব্যবহারের অধিকার পায় তারা, এভাবে শেষ ধাপে পূর্ণবয়স্ক হওয়ার পর আনুষ্ঠানিক ভাবে কেন্দ্রীয় তথ্যব্যাংক সরাসরি ব্যবহারের সুযোগ পায় সবাই।
স্কুলের পুরো পদ্ধতিটাই বলতে গেলে করা হয় নিজের নতুনতর সামর্থযুক্ত মস্তিষ্কের সর্বোচ্চ ব্যবহার শেখানোর ব্যাপারটা মাথায় রেখে। খেলা, পড়া, টেস্ট- সব। পড়ালেখা যে কি সহজ কাজ- যা শিখতে চাইছ তা তথ্যকেন্দ্র থেকে যোগাড় কর, প্রয়োজন অনুযায়ী সাজাও, ব্যাস হয়ে গেল! তবে তথ্যকেন্দ্র থেকে দরকারমত তথ্য বের করাটাই পরিশ্রমের কাজ, ছোট হোক আর বড়- সবার জন্যই কঠিন। পিচ্চি থেকে শুরু করে সবাই সারাদিন মস্তিষ্কের নিত্য নতুন ড্রিল সেরে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফেরে। সারাদিন এভাবে কাটানোর পর আর কিছু করার ইচ্ছা বা সামর্থ কোনটাই কারোর থাকেনা।
এদিক দিয়ে আমার কপাল বিশেষভাবে ভাল। পুরোপুরি জানিনা কিছু, এটুক কেবল জানি আমার মাথার যে চিপটা বসানো আছে সেটা কাজ করেনা আর। মস্তিষ্ক ম্যাপিং করার পর ওটা বসানো হয়, তখনি বোধ হয় কিছু একটা ঝামেলা হয়েছিল, সেজন্যই এ অবস্থা। আরেকটা সার্জারি করলে হয়তো সব ঠিকঠাক হয়ে যেত কিন্তু কিছু ঝুঁকি থাকার কারণে ওটাও আর করা হয়নি।
আমার জন্য পুরো ব্যাপারটা শাপে বর হয়েছে, আমি আমার মত থাকতে পারি, ইচ্ছেমত, কেউ কিছু বলেনা।আমি আমার মত করে পড়ি, সময় কাটাই। যেহেতু মেডিক্যাল বিভাগ থেকে কড়া নিষেধ করা, স্কুলের উঁচু স্তরের কজন ছাড়া এটার কথা কেউ জানেও না। সবাই যখন মাথার দুই অংশের সাথে বাড়তি এক বিশাল অংশের সংযোগ করা নিয়ে গলদঘর্ম হয়, আমি তখন স্কুলের প্রাচীন সংগ্রহশালায় সময় কাটাই। পুরোন স্ক্রীপ্ট দেখি, অচেনা সব জিনিসের অজানা সব গল্প জানার চেষ্টা করি। কত কিছুই না জানার আছে দুনিয়ায়!
অন্য সবার তুলনায় আমার সব সময়ই খারাপ করার কথা, কিন্তু উল্টোটাই নাকি হচ্ছে। বেশ অবাক হয়েই টের পেয়েছি যে অন্যান্যদের জন্য যা কঠিন তা আমি সহজেই করে ফেলি। যা পড়ি তা আমার বেশ মনে থাকে, যখন দরকার হয় তখন লিখতে বা বলতেও সমস্যা হয়না তেমন। আবার বাড়তি কষ্ট থেকে ঠিকি পার পাওয়া যাচ্ছে। কারণতা বের করার চেষ্টা করেছিলাম- কঠিন কথা বোঝা শক্ত, তবে এটুকু জানতে পেরেছি যে ঐ মাইক্রোচিপের জন্য বেশিরভাগ মানুষেরই কল্পনাশক্তির ব্যবহার করা কঠিন হয়ে গেছে। যে তন্তুগুলো মস্তিষ্কের উত্তর আর দক্ষিণ গোলার্ধের মধ্যে সংযোগ করতে সাহায্য করে ওগুলো নাকি মাইক্রোচিপের রেডিয়েশনের জন্য কর্মক্ষমতা অনেকটা হারিয়ে ফেলে! সহজ করে বললে, ঐ মাইক্রোচিপ নাকি মানুষকে রোবট করে ফেলছে!
পুরোন স্ক্রীপ্টগুলো না দেখলে আমার হয়ত কখনোই জানা হতোনা, এই যে এখনকার মানুষগুলো কেমন যন্ত্রের মত হয়ে থাকে- হাসেনা, কথা বলতে চায়না- এতে ওদের হাত নেই তেমন। এই প্রথম ওদের জন্য খানিকটা কষ্ট লাগে আমার।
স্কুলের পর বাসায় ফিরে নিজের ঘরে অটোরিডার দিয়ে আব্বু আর আম্মুর (বলিনি বোধ হয়, আম্মু ফ্রিল্যান্সার হলেও আব্বুর সাথেই একই বিষয়ের উপর কাজ করে) বিজাতীয় ভাষায় লেখা 'জার্নাল' পড়তে দারুণ লাগে আমার। হঠাত্ একটা জার্নাল পেয়ে গেলাম মাইক্রোফিল্মে আলাদা করে রাখা, অনেক তথ্য রাখা ওতে।
প্রাণীবিজ্ঞানের উপর অদ্ভূত সব তথ্য এখানে রাখা। কি হয়েছে, কি হচ্ছে, কেন হচ্ছে- আছে সে রেকর্ড ও। কত কত তথ্য, সব বোঝাও যায়না। যখন বুঝবো ঠিক করে রেখেছি যে তখন এসব নিয়ে লিখব আমিও।
তবে একটা ব্যাপার জেনে ভাল লাগছে যে আমার বাবা মা ও আমার মতোই। চিপ কাজ করেনি ওদের মাথায়ও। ব্যাখ্যা তাঁরা নিজেরা করেছেন, সেটা বুঝতে পারিনি, বেশ খটোমটো করে লেখা, কয়েকবার ‘জীন’ আর ‘ডি এন এ’ শব্দদুটো চোখে পড়েছে এটা বলতে পারি। তবে একটা কথা পরিস্কার বুঝতে সমস্যা হচ্ছেনা কোন- আমার বাবা মায়ের মাথায়ও একই মাইক্রোচিপ লাগানো আছে এবং আমার মতো অদের বেলায়ও এ চিপ কাজ করেনি। আব্বু আম্মুর বিশ্বাস আমার ছোট বোনেরও ক্ষেত্রেও চিপ কাজ করবেনা। অদ্ভূত ব্যাপার হল ওদের বিশ্বাস এতেই সবচেয়ে ভাল আর তাদের গবেষণাও বোধ হয় এ নিয়েই। কোন অজানা কারণে তারা যে তথ্য লুকিয়ে রাখছেন আড়ালে এটাও বোঝা জায় মাইক্রোফিল্মের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখে, কেনো তা এখনো জেনে উঠতে পারিনি। সবকিছুই সম্ভবত এখানে স্পষ্ট করে লেখা- থাক্! কী লেখা তা জানায় কাজ নেই অত, আমি যে ওঁদেরি মত, উড়ে এসে জুড়ে বসিনি মোটেও আজব এক প্রাণী হয়ে, এটাই বড় কথা।
আর যে লিখবোনা এর পেছনের আসল কথাটা বলেই ফেলি এখন-অটোরাইটার আমি ব্যবহার করিনা, পুরোন দিনের মত স্ক্রিপ্টে লিখি গ্রাফাইট দিয়ে, ওতে টান পড়েছে।
আব্বুকে বলবো, "তোকে নিয়ে আর পারা গেলোনা" ভাব নিয়ে আব্বু শুনবে, এনে দেবে, এরপর লিখব।
ততদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া আর তো কোন উপায় দেখছিনা!
[**সকালে একবার পোস্ট করেছিলাম। পরে আরেকবার পড়ে মনে হলো আরো কিছু কথা যোগ করা দরকার। মুছে দিয়েছিলাম তাই, কিছু যোগ বিয়োগের পর আবার পোস্ট করলাম।
***অভ্রতে এখনো অভ্যস্ত হইনি। বানান ভুল আছে কিছু। ঠিক করতে পারলাম না কোন মতেই!!]
মন্তব্য
গবেট পড়ে বোঝা গেল যে লেখক মোটেও গবেট নন!
বানান নিয়ে লিখতে যাব ভাবছিলাম তবে শেষ অংশে এ নিয়ে ব্যাখ্যা থাকায় তা থেকে সরে এলাম। আইডিয়া নতুন। তবে হঠাৎ শেষ হয়ে গেল বলে মনে হয়েছে।
লিখতে থাকুন।
জহিরুল ইসলাম নাদিম
জ ই না,
একদম শুরুতে 'প্রকাশকে'র একটা মুখবন্ধ আছে, 'হঠাত্ শেষ' হওয়ার পেছনে খোঁড়া যুক্তিটুকু হয়ত ওখানে পাবেন।
অট:
কিছু টাইপো আছে যেগুলো মোবাইলে টাইপ করতে পারছি কিন্তু অভ্র থেকে পারছিনা, যেমন- মধ্যাকর্ষণ, আর্কাইভ ইত্যাদি।
কিছু বানান রীতিমত বিব্রতকর, 'এডিট' করতে পারছিনা, আপাততঃ দুঃখিত হওয়া ছাড়া আর কোন গত্যন্তর নেই!
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
সহব্লগার 'মহাস্থবির জাতক'-কে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
গতকাল সকালে করা এই একই শিরোনামের পোস্টে তাঁর মত দেখেই আমি লেখাটি আবার পড়ে দেখি এবং আরো একটু যোগ করার প্রয়োজনীয়তা চোখে পড়ে, উপায়ন্তর না পেয়ে পোস্টটি মুছেই দিই শেষ পর্যন্ত।
ঐ লেখাটির সাথে তাঁর মন্তব্যটিও মুছে গেছে, তবে ওটা আমার ব্যক্তিগত সংগ্রহে ঠিকই আছে।
তাঁর কোন মন্তব্য আবার পেলে লেখাটির 'অরিজিনালিটি' ফিরবে বলেই আমার ধারণা।
অটঃ
এ লেখাতেও ভুল আছে, একটা লাইন দুবার এসেছে- স্কুল গেটের কথা বলার সময় চলে এসেছে ভুল করে-
"একের পেছনে এক আর এ গাড়িতে সবাই মুখোমুখি বসতে পারে, আবার চাইলে ঘুরিয়েও নেওয়া যায় সিট। জানালাগুলো "-
এটুকু বাদ দিয়ে পড়তে হবে।
বানান ভুল আছে, টাইপো আছে। কিছু ঠিক করতে পারিনি, কিছু চোখে পড়েনি। কপাল!!
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
কসম্মাউস কি, আপনার কুনু লেহায় যুদি আর কিসু কৈসি।
এই গেলাম্গা এহান্থিকা।
খুদাপেজ।
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!
(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!
(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)
না না কিল্লিগ্গা?!
হুদাহুদি হুদাপ্পেস কইতেন দু?!
ইতা মানিনা!
এমনে গ্যাল্যাগাও অইতোনা!
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
সারাদিনে 'বেকুব' শব্দটা আমাকে অসংখ্যবার শুনতে হয়।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
আমার বেলায় এটা এতই স্বতঃসিদ্ধ যে কেউ উল্লেখ করার দরকারও মনে করেন না!
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
লেখা একটু লম্বা হয়ে গেছে। আমি আবার বড় লেখায় ভুল করি বেশি!
মাঝে মাঝে গান ধরতে ইচ্ছা হয়- "ওগো লেখা আপন বেগে পাগলপারা..!"
লেখা চলতে থাকে, আমি থামার অপেক্ষায় থাকি।
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
ভাল লাগল। এই গল্পটির ধারাবাহিক আরো কিছু গল্প লিখলে মজা হবে!
ছেড়া পাতা
ishumia@gmail.com
এক পর্বেই অস্থির অবস্থা, এরপর আরো?!
তবু বলেছেন যখন, মাথায় থাকলো।
[নতুন স্ক্রিপ্টের পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হলে ভাষান্তর করে শীঘ্রই প্রকাশ করা হবে।
-প্রকাশক]
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
ভালো লাগল।
______________________
বর্ণ অনুচ্ছেদ
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
অযাচিত নিজস্ব দ্বিতীয় মন্তব্য বাতিল বলে গণ্য হল!
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
আমারও ভাল লেগেছে। অনেক পর্ব আশা করছি।
ধন্যবাদ নেতাজী! আমিও আশায় রইলাম।
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
ভাল লাগল, একটু টিপিক্যাল, তাও একটানে পড়ে গেলাম। দ্বিতীয় বা তৃতীয় পর্ব লিখবেন? ভাল হয় তাহলে
ভাল লেগেছে এটাই বড় কথা আমার কাছে, কমার্সের ছাত্র হয়ে বিজ্ঞানের গল্প হাত বাড়িয়েছি তাই তো অনেক বেশি!
আরো পর্ব? ইচ্ছা থাকল, সম্ভব হলে অবশ্যই লিখব!
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
গত কয়েকদিন থেকে এই পেজ খুঁলে রেখছি যে রয়ে সয়ে আরাম করে পড়ব। আজ শুরু করে দু-তিন লাইন পড়ে দেখি আর আগাতে পারছি না, আপনার উপর রাগই হচ্ছিলো, কিন্তু জোর করে আরেকটু এগিয়ে তারপর আর থামা গেল না, বাথ্রুম চেপে একেবারে পুরো লেখা শেষ করে, কমেন্ট লিখে তারপর উঠছি এই।
আশা করি আপনি এখন শান্তি-সুখে ভাসছেন!
কেন বলবেন? আপনি একের পর এক লেখা পড়ে যাচ্ছেন, এই প্রথম এমন বললেন- এইজন্য কৌতুহল হল।
এই লেখাটা খানিকটা এক্সপেরিমেন্ট টাইপের ছিলো- আগেও এমন লিখিনি, পরেও না!
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
নতুন মন্তব্য করুন