সকালে ঘুম ভাঙ্গার পর নিয়ম করে নাস্তা করা, পড়তে বসা আর গোসল করে স্কুলের জন্য তৈরি হওয়া- কোনটাই অন্তুর পছন্দ নয় একটুও। কিন্তু সবচেয়ে মন খারাপ করা ব্যাপার হল সব ক’টাই প্রত্যেকদিন করে যেতে হয়- পছন্দ হোক আর না-ই হোক।
মাঝে মাঝে নাস্তা না করলে কী এমন হয় তা ও বুঝতে পারে না কিন্তু না খেতে চাইলে আম্মুর চোখ দেখেই ও ঠিক বুঝতে পারে এরপরে কী হবে!
গোসল করাও আরেক ঝঞ্ঝাট- আরে, ইস্কুলে যেতে হবে ভাল কথা, বেশ ক’টা বন্ধু আছে ওর, স্যার-ম্যাডামগুলো সাধ্যমত যন্ত্রনা করলেও খুব একটা খারাপ লাগে না ওখানে- কিন্তু গোসল- গোসল কেন করতে হবে স্কুলে যাওয়ার আগে, এর কোন মানে হয়!? কাপড় না বদলে গেলে একটা কথা ছিল, সাদা শার্ট আর নেভী ব্লু প্যান্ট পড়ে তবেই না সে স্কুলে যায়।
আর কপাল-ও খারাপ, ঠান্ডা পানিতে গোসল করে শরীরের সবক’টা রোম একদম পিটি’র সময়ের ‘এটেনশন’ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, কিন্তু সর্দি হবার নামটি নেই!
সর্দি যদি হয়, নাক দিয়ে যদি পানি আসতে থাকে অহরহ, সুঁ-উ-উ-উ করে বড় একটা টান না দিলে ভেতরের জিনিসপত্র যদি ঠোঁটের দিকে যেতে চায় মর্জিমত- তখন কী শান্তি, গোসল করতে হয় না আর!
সর্দিতে সমস্যা নাই, চট করে হাতের পিঠে মুছে নিয়ে পরে প্যান্টের পকেটে আস্তে করে মুছে নিলেই হল- নাকটা লাল টমেটো হয়ে থাকে, এটা একটা সমস্যা, তবে প্রত্যেকদিন সকালে গোসল করার মত নয়।
শুধু গোসল হলেও না হয় কথা ছিল- গোসলের আগে যে সারা শরীরে যে চটচটে সরিষার তেল মাখাতে হয়, তার যন্ত্রনাই আর কাকে বোঝাবে? কী লাভ?! আম্মুর ঐ এক কথা- “ঝামেলা করিস না! ঠিক মত মেখে নিয়ে বারান্দায় গিয়ে বস! ঠান্ডা লাগবে না তাহলে!”
তবে বারান্দায় বসতেও অন্তু’র ভালই লাগে। বিশেষ করে এই সকাল সকাল। বারান্দার সামনে ছোট উঠান, বারান্দার পাশেই মাঝারি আকারের পেয়ারা গাছ একটা- কয়েকটা চড়ুই এসে এ ডাল থেকে ও ডালে লাফিয়ে বেড়ায়, মাঝে মাঝে চট করে মাটিতে নেমে এদিক ওদিক ব্যস্ত চোখে দেখে উঠান থেকে কিছু একটা ঠুকরে নিয়ে আবার উড়াল দেয়, গাছে বসে থাকা বাকি চড়াইগুলো তখন উৎসাহি চোখে নীচে তাকায় আর তিড়িং বিড়িং করে।
উঠানের আরেক মাথায় দেয়াল, পাশে গ্যারেজ। ওখানে আবার কয়েকটা কাক প্রতিদিন এসে বসে থাকে। দুটো বসে দেয়ালে, চোর চোর ভাব, পুরো শরীর কালো- তবে বুকের কাছটা ছাই, সাবধানি চোখে উঠানে তাকায় আর ময়দান ফাঁকা পেলে নীচে নেমে লাফাতে থাকে! আবার আরেকটা কাক বসে গ্যারেজের উপর, ওটা আরেকটু বড়, পুরো শরীরটাই কালো, মাঝে মাঝে ঘাড় বাঁকিয়ে ভাঙ্গা গলায় ক্বা ক্বা করে।
স্কুলে বন্ধুদের ওদের কথা বলেছে অন্তু। শান্ত ওদের মাঝে সবচেয়ে বেশি জানে। ও বলেছে, “বড়টা ধুড়া কাউয়া!” আর ছোটগুলো নাকি “পাতি কাউয়া!” আম্মু অবশ্য অন্যরকম বলে। বড়টা নাকি দাঁড়কাক আর ছোটগুলোর নাম পাতিকাক। কোনটা আসলে ঠিক অন্তু এখনো জানতে পারে নি, তবে ওদের যখন যে নামে ইচ্ছা হয় সে নামে ডাকে।
বারান্দাটা ছোট রেলিং ঘেরা, আর খোপ খোপ গ্রীল আর ঠিক মাঝামাঝি একটা গেট- সকাল বেলায় ক্যাঁচ ক্যাঁচ করে খুলে দিতে হয় আবার রাতে ক্যাঁচ ক্যাঁচ করে বন্ধ করতে হয়।
গেটের দুই পাশে বেশ কয়েকটা ফুলের টব- কোনটা বড়, কোনটা মাঝারি, কোনটা ছোট। গাছগুলোও- কোনটা বড়, কোনটা মাঝারি, কোনটা ছোট। কোন গাছে ফুল আছে, কোন গাছে ফুল নাই। কোন ফুল সাদা, কোন ফুল লাল, কোন ফুল হলুদ- আর কয়েকটা গাছ ছোট ছোট- তবে পাতাগুলো সুন্দর। কোন পাতায় সবুজের মধ্যে লালের ছোপ পড়েছে, কোনটা শুধু সবুজ। কোনটার পাতা মোটা কোনটা চিকন।
অন্তু যখন বারান্দায় বসে তখন এই ফুলের টবগুলোর দিকে খেয়াল রাখে বেশি। ফুল দেখার জন্য না, পাতা দেখার জন্যও না- মাঝে মাঝে ঐ টবগুলোর আড়াল থেকে একটা-দুটো ছোট মাথা দেখা দেয়-কখনো এর চেয়ে বেশি, এরপর হলদে বা সাদা শরীরটা বেরিয়ে আসে, ছোট ছোট, চিকন চিকন পা, কেমন জানি কিচ কিচ করে আওয়াজ করে, ঊঠানে একটা দুইটা ঠোকর দেয়- এরপর আবার চলে যায় টবের আড়ালে। ওগুলোই ওর সবচেয়ে পছন্দের।
আরেকটু কাছ থেকে দেখবে বলে সকালবেলায় ঊঠানে নামার নিষেধ ভুলে ও যেই না একটু উঠেছে কাঠের টুলটা থেকে, অমনি আম্মুর বিশাল চিৎকার-
“অন-তু-উ-উ-উ-উ-উ!!”
একটু ভড়কে গিয়ে চট কতে পেছনে তাকিয়ে দেখে ও- নাহ! আম্মু তো এ ঘরে নাই। শব্দ তো এলো ভেতরের রুম থেকে। হঠাৎ এমন ডাকের মানে কী?!
অন্তু ঝটপট আবার টুলে বসে পড়ে, একটু বোঝার চেষ্টা করে। এত লম্বা করে ‘তু-উ-উ-উ-উ’ বলার মানে নির্ঘাৎ রেগেছে, আদর করে ডাকলে অন্যরকম করে ডাক দেয় আম্মু, তখন ‘অ’-টা লম্বা হয়, তখন বলে, “অ-অ-অ-অ-ন-তু!”
এবার ও মনে করার চেষ্টা করে সকালে ঘুম ভাঙ্গার পর থেকে কী কী কাজ উলটা পালটা করেছে। আঙ্গুলে গুণে নেয় সে- এক, কুলি করেছে। দুই, চোখ ধুয়ে নিয়েছে। তিন, রাতের কাপড় বদলেছে। চার, নাস্তা করেছে। পাঁচ, নানার কাছে গিয়ে নিজের চকলেট বুঝে নিয়েছে। “সব ঠিক আছে”- মনে হতেই সবচেয়ে বড় ভুলটা মনে পড়ে- “দাঁত ব্রাশ করা হয় নাই!”
দাঁত ব্রাশ না করা কত বড় ভুল হল এটা চিন্তা করতে করতেই আবার আম্মুর ডাক-
“অ-ন-তু-উ-উ-উ-উ-উ-উ-উ-উ-উ!!!”
এবার আরো কাছ থেকে! এদিকেই আসছে না কি?! রাগ তো বেড়েছে মনে হচ্ছে!
অন্তু আর দেরি করে না, বারান্দার ডান দিকের দরজাটা দিয়ে তাড়াতাড়ি মামার রুমে ঢুকে পড়ে- পাশেই কোনার রুম থেকে তোয়ালেটা নিয়ে বাথরুমে ঢুকে পড়তে হবে গোসলের জন্য- এখন কোনমতেই আম্মুর সামনে পড়া চলবে না।
[***এখন ঘুম! রাত আড়াইটা বাজতে চলেছে। আর দেরি করা ঠিক হবে না, ঘুম দেয়া উচিত!! বাকিটা পরে লিখবো!!! ]
মন্তব্য
বেচারা অন্তু! সাত সকালে গোসল দিয়ে স্কুলে যাওয়াটা সত্যি ঝকমারি ব্যাপার আপনি নিজেই অন্তু নাকি? জলদি ঘুম যান। মায়ের পিট্টি তাহলে একটাও মাটিতে পড়বেনা লেখাটা ভালো লাগলো
অন্তু হই আর না হই সাতটায় চোখ থেকে ঘুম তাড়ানোর কসরতে নামতে হয় এইটুকু নিশ্চিত করতে পারি
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
'তোমায় দিলাম রোদের পিছু পিছু স্তব্ধ দুপুর, ফড়িঙ ধরার খেলা...
কান্না চেপে একা, অনেক দূরে দাঁড়িয়ে থাকা আমার ছেলেবেলা।।'
আহ.. শৈশব!
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
কিছু 'বেদানা' আজীবন মনে হয় একই রকম, সে বড়বেলাতেই হোক আর ছোটবেলাতেই হোক!
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
ঘ্যাচাং~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
তিথী'পু,
লাইন গুলি কপি করলুম।খোমাখাতায় দিবার মঞ্চায়!
ভাল থাইক,আপুনি..
আহ...কি অসম্ভব সুন্দর প্রত্যেকটা বর্ণনা! মুগ্ধ হয়ে পড়লাম....
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
হে মিঁয়াও, মুরগোট মানে কী? আর এখানে রম্যটা কোথায়? ওসব কথা বাদ দিলেও কাহিনী দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই পিঠটান দেবার মানে কী?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
মিঁয়াও যেমন মিঁয়াও, মুরগোট তেমন মুরগোট!
এ লেখায় 'রম্য' ট্যাগ দেয়াটা ঠিক হল কি না তা আমিও ভাবছি পরের পর্বটা পড়ে একটু জানাবেন আমায় ব্যাপারটা ঠিক হল কি না?! অমন হলে পরে আর এই ট্যাগ রাখবো না।
এবার 'সিরিকাস' কথা- 'পিঠটান' দেবার কারণ দুইটা-
১। হঠাৎ মনে হল লেখা অতি বড় হতে চলেছে, পাঠকের ধৈর্য থাকবে না পড়ার
২। রাত তিনটার দিকেও চোখ পিট পিট করতে থাকলে সকাল সাতটার রুটিন মানা মুশকিল হত
নীড় পাতা থেকে সরে গেলেই পরের অংশটুকু পোস্ট করে দেবার ইচ্ছে আছে
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
লাফাং, অতএব
ঘ্যাচাং~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
একী! সবে জমিয়ে বসলাম গল্পটা জানব বলে, আর অম্নি শেষ হয়ে গেল ? ভারী অন্যায়! ভারী অন্যায় !
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
একী আপু? কী বলেন, শেষ হবে কেন? এ কেবল 'অনভিপ্রেত গপ্পোবিরতি' যার জন্য লেখক মোটেই দায়ী 'নহে'!!
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
মুরগোট কী?
রম্য পাই নাই
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আপাতত পড়ার জন্য ধন্যবাদ!
পান্ডবদার সাথে আপনার প্রশ্ন মেলে, উত্তর ওখানেই দেবার চেষ্টা করেছি
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
তুমি বিশেষ ফাজিল হইয়াছ।
এতদিন আমার সহিত এইরূপ ঝামেলা করিতে,
এখন এখানে ও শুরু করিয়াছ!
তোমার স্বপনে মুরগটের মাতা হানা দিক!হুহ্.. :-@
মুরগট নামে কারুক্কে আমি চিনি নে, হুহ! ওর নাম 'মুরগোট'!
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
পরের পর্বের প্রতীক্ষায়.........
অনেক দেরি করে ফেললাম, সে জন্য আসলেই খারাপ লাগছে । আপনি এখানে দেখুন বরং
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
আমি আরো ভাবলাম মুরগি আর গোট মানে খাসীর মাংসের মিক্সড ঝোল জাতীয় একটা জম্পেশ রেসিপি পাওয়া যাবে।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
রেসিপি !! আমি কেবল চা রান্না করতে পারি
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
মনে অনেক প্রশ্ন আসলো। যেমন -
মিয়াঁও থেকে মুরগোট কেনু? তার থেকে জরুরি, মুরগোট কী? ইহারাই কি টবের ফাঁক দিয়া উঁকিঝুঁকি মারে? দীর্ঘদিন ডুব দিয়া থাকিয়া হঠাৎ মুরগোট লইয়া উদয় হইবার অর্থ কী? ইত্যাদি, ইত্যাদি...
'মুরগোট' পড়ে আমার অন্য একটা কথা মনে পড়লো, আমার ভাগ্নী তার মা'কে বলেছে, খোসা আলা মুরগি কিনে আনতে বাজার থেকে!! (পরে বোঝা গেল ইহা ছাল ছাড়ানো, কাটা-কুটা চিকিন নহে, আস্ত-জ্যান্ত পালক সমৃদ্ধ তরতাজা মোরগ হতে হবে) !
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
মুরগোট কী তাহা বলিবার চেষ্টা করিয়াছি, বুঝিয়া লউন
মিঁয়াও কোথাও পালাইয়া গিয়াছে, তাহাকে খুঁজিয়া পাইলেই ঘাড় ধরিয়া এখানে হাজির করিব এইরূপ অভিলাস, কী হয় তাহা দেখিব বলিয়া আমিও উদগ্রীব হইয়া অপেক্ষা করিতেছি
তাহাদের কথা কী বলিব, বেচারিরা আর 'খোসা-অলা মুরগি' দেখিবে কোথায়?!
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
তারপর কী হল ???
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
আশা করি এর মধ্যে জেনে গেছেন আপনিও, মানে যদি নতুন অংশটা পড়ে থাকেন!
সত্যি বলতে কি, দুটো পর্ব লেখার বিরতি এত বড় হয়ে যাবে জানলে সে রাতে অবশ্যই লেখা শেষ করেই উঠতাম!
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।
ইশ অন্তুর দুঃখের সাথে পুরোপুরি সহমর্মিতা প্রকাশ করবার আগেই শেষ হয়ে গেল...পরবর্তী পর্বের অধীর অপেক্ষায়
নতুন মন্তব্য করুন