ঠিক দুপুর বেলাটায়, একদম ঠা ঠা রোদ যখন বাইরে, ঘরের ভেতর বনবন করে ঘুরতে থাকা পাখার হাওয়ায়ও হাঁসফাঁস লাগতে থাকে, ঘাড় এদিক ওদিক করে, শরীর এপাশ ওপাশ করেও যখন শান্তি আসে না মোটে- মিঁয়াও তখন আর গরম হজম করতে পারে না মোটে- “জান বেরিয়ে যাচ্ছে রে বাবা! ওফ কী গরম! ওফফফ!!- ছোট্ট লাফে বিছানার কোনে সাজানো বালিশ-টিলা থেকে নেমে আসে ও- “বাইরে যদি শান্তি থাকে কিছু!”
ঠিক দুপুর বেলাটায়, একদম ঠা ঠা রোদ যখন বাইরে, ঘরের ভেতর বনবন করে ঘুরতে থাকা পাখার হাওয়ায়ও হাঁসফাঁস লাগতে থাকে, ঘাড় এদিক ওদিক করে, শরীর এপাশ ওপাশ করেও যখন শান্তি আসে না মোটে- মিঁয়াও তখন আর গরম হজম করতে পারে না মোটে- “জান বেরিয়ে যাচ্ছে রে বাবা! ওফ কী গরম! ওফফফ!!- ছোট্ট লাফে বিছানার কোনে সাজানো বালিশ-টিলা থেকে নেমে আসে ও- “বাইরে যদি শান্তি থাকে কিছু!”
ঘরের কোনে যে ছোট্ট ঘরটা- কালো হয়ে থাকে সব সময়- কী ‘রুম’ যেন ওর নাম- ওখানটায় ঘুমানোর উপায় নেই কোন- কিন্তু পানি পাবার উপায় আছে। ঢুকতে গেলেই হল- পা ভিজে যায়- তা হোক- গলা ভেজাতে ঝামেলা হয় না কোন।
ওখানটায় ঘুরে বারান্দায় গিয়ে চার হাত পা ছড়িয়ে গড়িয়ে পড়লেই হল- “আহাহা!” বিকট গরম আর বিকট লাগে না, এলিয়ে দেয়া শরীর হালকা লাগতে থাকে, অদ্ভুত আরামে ল্যাজটা আপনাতেই নড়তে থাকে এদিক থেকে ওদিক, “কী ব্যামো রে বাবা! ঘুম আসে ক্যানো!?”- ভাবতে ভাবতেই চোখ বন্ধ হয়ে আসে মিঁয়াও-এর।
“মিঁ-ই-ই-ই-ইয়াঁওঁ”- পরিচিত গলার ডাকে ফিরে তাকায় মিঁয়াও; চোখের পাতা আস্তে খুলে আসে- কানদুটো শব্দের খোঁজে উৎকর্ণ হয়- টলমল পায়ে ভর করে উঠে দাঁড়াতেই আবার ““মিঁ-ই-ই-ই-ইয়াঁওঁ”- আরো কাছে, আরো পরিস্কার- ঘাড় ঘুরতেই চোখ চকমক করে ওঠে ওর- ল্যাজটা আপনাতেই একদম খাড়া হয়ে যায় আকাশ বরাবর- “মিঁ-ই—ই-ই-ওঁ”- উত্তর করতে করতেই নাক বরাবর হাঁটতে থাকে- “মা এসেছে মা এসেছে মা এসেছে”- একবার ফিরে তাকায় পেছনে- ওরই মতন ল্যাজ উঁচিয়ে আরো দুজন ছুটে আসছে- “মিঁ-ই-ই-ই-ইয়া-ইয়া-ও!”- “মিঁঅ”- বাহারি সব শব্দে পরিস্কার বোঝা যায় দুজনই বেশ খুশি! “আমি আগে আমি আগে আমি আগে!”- মিঁয়াও এক ছুটে মায়ের কাছটায় পৌঁছে যায়- বাকি দুজনও এসে পৌঁছায় তড়বড় করে- “মা জানো কী হয়েছে আজ-“ “এই তুই চুপ কর!” “না মা আমি বলি-“ তিনজন কিচমিচ করতে থাকে- “আমার কথাই শুনতে হবে, আমিই তো এলাম আগে!”- মিঁয়াও-এর গলায় ঝাঁঝ। “তিনজনই বল না বাবা, এক এক করে!”- মাথায় পিঠে জিহবা বুলিয়ে মা ওদের সামলানোর চেষ্টা করেন- এর মধ্যে দুজন কথা ভুলে ঢুঁ মারছে পেটে- ক্ষিদে পেয়েছে বুঝি- “পাগল এক একটা!”- হাল ছেড়ে দেন তিনি- শুয়ে পড়েন- “কী যে করিস তোরা! আর পারি না!” ওঁরা সবাই তখন ব্যস্ত- অত কথার সময় কোথায়!
মায়ের চোখ বন্ধ হওয়ার দুই মিনিটের মধ্যে মিঁয়াও-এর চোখ পড়ে সামনে- মায়ের ল্যাজটা- কেমন নড়ছে- ডানে যাচ্ছে, একটু আলতো ঢেউ খেলিয়ে উঠছে হাওয়ায়, একট ভেসে আবার নেমে আসছে- এবার বাম দিকটায়- আবার উঠছে- আবার নামছে- খাওয়া দাওয়া মাথায় উঠলো এইবার- চট করে ডানে তাকালো একবার- মায়ের চোখ বন্ধ এখনো- ঠোঁটের কোনে চেনা হাসির রেখা- দুপাশের গোঁফ কাঁপছে তিরতির করে- “ঠিক আছে সব ঠিক আছে!”- বাঁয়ে তাকালো এইবার- বুদ্ধু দুইটাই ব্যস্ত- ডানে বাঁয়ে তাকানোর সময় নাই ওদের- “বেকুব রে বেকুব পারলি না রে তোরা, আমিই আগে!”- দুইজনকেই মাড়িয়ে, মায়ের পেটে ঝাপিয়ে পিঠের ওপাশটায় পৌঁছে যায় মিঁয়াও- আর একটা লাফে কাছে পৌঁছে দুহাতে আঁকড়ে ধরে মায়ের ল্যাজ- মুখে রাজ্য জয়ের হাসি, মনে শিকার ধরার সুখ, আর বাকি দুজনকে হারিয়ে দেবার আনন্দ! “এইটাই ভাল!”- ল্যাজটা একটু নড়ে উঠতেই ছেড়ে দিয়ে আবার ধরে মিঁয়াও- দাঁত ধরে কামড়ে ধরার চেষ্টা করে ও- “ওওওওইঈ!”- মায়ের সাবধানবাণী কানে আসতেই দাঁত আলগা করে দেয়- “ওই বিদঘুটে পোকাগুলোর চেয়ে!”- মিঁয়াও ভেবে নেয়- “ওগুলো ভাল না একদম, দৌড়ে বেড়ায়!”- “আর তেড়েও আসে!”- ভাবতে চায় না এটা, তবু চলে আসে মনে- “পঁচা পোকা!- বিরক্তই হয় মিঁয়াও!
“আমিও খেলব, আমিও”- কোত্থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে মিইঁয়াও- ল্যাজে নয়, ওর উপরেই একদম- “এই পাজি! এই-“ মিঁয়াও রাগ দেখায় এইবার- মায়ের ল্যাজ ছেড়ে মিঁইয়াও-এর উপর ঝাঁপায় এবার, কানটা চেপে ধরার চেষ্টা করে পাজিটার- সেও কম না মোটেই- ক্যাঁক করে কামড়ে দেয় মিঁয়াও-এর ল্যাজে! “আমিও খেলব আমিও!”- কিছু বোঝার আগেই মিঁঅ লাফিয়ে পড়ে দুজনের উপর- “আমায় ব্যথা দিলি ক্যান!?”- মিঁয়াও আর মিঁইয়াও চেঁচায় একসাথে- চেপে ধরে মিঁঅকে- একদম মাটিতে- “মা মা দ্যাখো দ্যাখো মারছে আমায়-“ মিঁঅ কান্না জুড়ে দেয়। “এই ছেড়ে দে বলছি, ছেড়ে দে ওকে!”- মায়ের গলায় ধমকের সুর- “আমি কী করলাম, ও-ই তো”- মিঁইয়াও মায়ের দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করতে থাকে- মিঁয়াও তাকায় একবার মায়ের দিকে- দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে আবার হামলে পড়ে মায়ের ল্যাজে- “তোরা!”- মা হাল ছেড়ে দিয়ে শুয়ে পড়েন আবার- খুশিতে মিঁঅও লাফিয়ে মায়ের ল্যাজটা ধরার চেষ্টা করে- আর মিঁইয়াও মিঁয়াওয়ের ল্যাজে আছড়ে পড়তে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে ওর পেটে!
“ও-অ-অহ-হ-হ!”- ওঠে বসে মিঁয়াও, পেটটায় নজর বুলিয়ে নেয় একবার, ঠিক আছে তো! ডানে বাঁয়ে তাকায়, না কেঊ নেই তো- মিঁঅ নেই, মিঁইয়াও নেই, মা নেই!
“আবার স্বপ্ন!”- মন খারাপ হয়ে যায় ওর। হু হু করে ওঠে একদম। কেমন খালি খালি লাগে সব। মুখটা দুহাতে ল্যাজ গুটিয়ে একদম কুন্ডলী পাকিয়ে বসে এবার- দুপুরগুলো এজন্যই ভাল লাগে না ওর- “পাজী দুপুর!”- পুরনো দিনের মত আউড়ায় মিঁয়াও।
দুপুর পালায় না! ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে!
[ফুটনোট ১-
এই না লেখা গল্পটা মাথায় এসেছিল প্রায় বছর তিনেক আগে; তখন তূর্ণা নিশিথা’য় ঢাকা থে ব্রাহ্মণবাড়িয়া’য় ফিরছি মেজোমামা’র সাথে! তাঁকে গল্পের তিনটা চরিত্রের কথা শুনিয়েছিলাম, ব্যাস! এরপর মিয়াঁও সচলায়তনে চলে এসেছে আহ্লাদে ল্যাজ নাড়াতে নাড়াতে, কিন্তু সেই তিনজনকে নিয়ে আর কখনোই লেখা হয়নি! আজ হল!
ফুটনোট ২-
তিন মামা আমার। আশ্চর্যের ব্যাপার, তিনজন পৃথিবীতে এসেছেন একই মাসে- তারিখগুলো পর্যন্ত কেমন হিসেব করা- একজন ৭, একজন ১৭, আরেকজন ২৭। মাসটা জুন। মিঁয়াও, মিঁইয়াও আর মিঁঅ’র গল্প বলতে এসে ওঁদের কথা টানার মানে নেই কোন- তবে এ গল্পটা এ তিনজনের জন্য!]
মন্তব্য
মাস্টারক্লাস!
- বর্ণ
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
অনেকদিন ধরেই মিঁয়াওকে মিস করছিলাম, সেইরকম কামব্যাক।
মিঁয়াও, মিঁইয়াও, মিঁঅ আর মার জন্য ভালবাসা।
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
এতোদিন ধরে মিঁয়াওকে যে মনে করে রেখেছেন সেটাই তো বিশাল ব্যাপার।
অনেক অনেক ধন্যবাদ
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
আপনার মামাদেরকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। এত সুন্দর করে লিখেছেন এখন আমার মিঁয়াওদের জন্য খুব মায়া লাগছে।খুব ছোটবেলায় আমাদের বাসায় ছয়টা বাচ্চা বিড়াল ছিল, মা বিড়ালটা মারা গিয়েছিল বাচ্চাগুলা হবার সময়। আমরা তিনবোনে মিলে সারাদিন এদের পিছিনে লেগে থাকতাম,কিন্তু আস্তে আস্তে সবকটা বাচ্চা মরে গেল, কিযে ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলাম। এরপর থেকে বাবা আর বাসায় বিড়াল রাখতে দিতনা।
কী বলব, মিঁয়াওরা এ মায়া কাড়ার কাজটা আসলেই ভাল পারে, আদর কাড়াটাও
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
কতদিন পরে মিয়াও কে নিয়ে আসলেন সে খেয়াল আছে।
বিড়াল আমার সবসময়ই প্রিয়। আমার মেয়ের বয়স এক বছর এখনই সে বিড়ালের সাথে খেলতে চায়। বিড়ালপ্রেমী জিন্দাবাদ।
__________
সুপ্রিয় দেব শান্ত
তা অনেকদিন হল বটে- মিঁয়াও বড় কঠিন 'চীজ'- সহজে ধরা দেয় না!
আপনার মেয়েটির জন্য আদর, ও যদি কখনো এ 'মিঁয়াও'-এর পরিচয় পায়, আর পছন্দ করে, আর সেটা জেনে যাই কোনমতে, অসম্ভব রকম ভাল লাগবে- চুপি চুপি তার বিড়ালপ্রেমী বাবাকে এ কথাটা জানিয়ে রাখলাম
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
কি মায়া কাড়া লেখা !
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
কী আনন্দদায়ক মন্তব্য
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
মিয়াঁও এর স্বপ্ন স্বারথক হোক
শুভ কামনা ৩ মিয়াঁও র জন্যই। কষ্ট করে ওদের কাছে পৌঁছে দেবেন,প্লিস
দেখা পেলে অবশ্যই পৌঁছে দেয়া হবে
এতদিন পরে পড়ার জন্য
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
মিষ্টি গল্প, কিন্তু বেড়াল ভয় পাই।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
নতুন মন্তব্য করুন