সারপ্রাইজ

মর্ম এর ছবি
লিখেছেন মর্ম [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ১১/০২/২০১৪ - ৭:১০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

।।১।।

"কী কর, নানা? কী কর তুমি একা একা? ঘুম নাই?"

বাসার সামনে চৌকোনো খোপ খোপ গ্রিল দেয়া বারান্দার এক্কেবারে কোনাটায় ছোট্ট একটা কাঠের চেয়ার, কালো ভার্নিশ করা। পাশে একটা ছোট্ট গোল টেবিল। গ্রিল কেটে দুপুরের মায়া মায়া রোদ খোপ খোপ হয়ে বারান্দায় পড়ছে, অমনি পড়ছে টেবিলটাতেও। টেবিলে ছড়ানো ছিটানো রঙ, রঙ তুলি, সাইন পেন। নানান রঙের। আঁকার খাতা নিয়ে গভীর মনোযোগে কী আঁকছে তিয়ানা- অথবা লিখছে- হাতে রঙ লেগে আছে। কিছুক্ষণ গালে হাত দিয়ে ভেবে নিয়েছিল বোধ হয়- সবুজ ছাপ পরেছে সে খেয়াল নেই।

নানার ডাক শুনে ফিরে তাকালো একবার, আবার মুখ ফিরিয়ে নিল। কত কাজ, শেষ করতে হবে না!

"দেখি তো নানা, কী কর! দাও তো দেখি!"

নানা এগিয়ে আসেন নাতনীর দিকে। হাত বাড়ান টেবিলে!

"না! না! না!" রীতিমত আঁতকে ওঠে তিয়ানা, "দেখবা না! এইটা সারপ্রাইজ!"

নানা চোখ বড় বড় করেন শুনে। "তাই নাকি?"- হেসে জিজ্ঞেস করেন। "তা কার জন্য? আমার জন্য নাকি?"- হাত সরিয়ে এনে চুলগুলো এলোমেলো করে দেন একটু, গালের রংটা মুছে দেয়ার চেষ্টা করেন আলতো করে।

"বলা যাবে না! সারপ্রাইজ না!?" তিয়ানা চটপট জানায়। হাতের কাগজটা নিয়ে ওঠেও যায়, এখানে আর বসা যাবে না, সবাই খালি বিরক্ত করে! আর নানা বেড়াতে এলে এই চেয়ারে বসেই জামা-জুতো ছাড়েন, ও জানে। অন্যদিন হলে ও নানার পাঞ্জাবীর পকেটটা দেখে নিত একবার, বিস্কুট না চকলেট এলো, বুঝে নেয়ার ব্যাপার আছে। আজকে সেটাও করল না- সময় কোথায়!

।।২।।

'সারপ্রাইজ' শব্দটা তিয়ানা কিছুদিন আগে শিখেছে।

আব্বু গিয়েছিল কলকাতা, আপিসের কাজে। যাবার আগে জিজ্ঞেস করল- "বাবান! কী আনব বল তোমার জন্য?" কলকাতায় আনন্দ পাবলিশার্স আছে ও আগে থেকেই জানে, মাসে মাসে টিনটিন আর অ্যাসটেরিক্স আর শঙ্কু আর ফেলুদার যে রঙ্গিন কমিক্সগুলো বাসায় আসে তার মলাটে ঠিকানা লেখা থাকে। ও ওগুলোই বলেছিল আনতে।

তা আব্বু ফিরে এলো, কমিক্সসমেত। নতুন রঙ্গীন কমিক্স সব। আর বলল- 'মামনি, আরেকটা জিনিস আছে তো তোমার জন্য? নেবে না?"

তিয়ানা অবাক হল। আবার কী? কমিক্স তো পেয়েইছে! আব্বু এইবার আম্মুর দিকে তাকালো, আম্মু একটু হাসল আর গিয়ে রুমের কোনায় স্টিলের আলমিরা খুলে দাঁড়ালো- আর ডাকল চোখে চোখে- "এসো! নিজেই দেখে যাও!"

খালি পায়ে বিছানা থেকে নামতে যাচ্ছিল, আম্মুর ভ্রু কুঁচকে যেতে দেখে স্যান্ডেলটা পড়ে নিয়ে গেল আর উঁকি দিল ভেতরে- আর চোখগুলো বড় বড় হয়ে গেল ওর- একটা লাল রঙের স্কুল ব্যাগ,ওপরে টিনটিন আর কুট্টুসের ছবি, কুট্টুসের মুখে একটা বড়সড় হাড়! ও কবে থেকে চাইছে টিনটিন ব্যাগ, আব্বু বলেছে কিনে দেবে, দেয়নি। দৌড়ে এসে আব্বুকে জড়িয়ে ধরে ও, খুশিতে, "আগে তো বল নি?"- ঠোঁটজোড়া হাসিতে জিজ্ঞেস করে।

"সারপ্রাইজ!" আব্বু বলল তখন- "আগে জানলে এত ভাল লাগত? এত আনন্দ হত?" ব্যাগটা খুলে দেখাতে দেখাতে জিজ্ঞেস করল- "এখন বেশি ভাল লাগছে না?"

"হ্যাঁ!"- ও বলল ছোট্ট করে। কমিক্সগুলো ব্যাগে নিয়ে এরপর সবাইকে দেখাবে না শুধু ব্যাগটাই দেখাবে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সেটাই তখন ভেবে পাচ্ছে না তিয়ানা।

তবে, সেইদিন থেকেই ও জানে, সারপ্রাইজের চে ভাল কিছু হয় না!

।।৩।।

"কীকরকীক্করকীক্কর?!"

ইনানের গলা শুনতেই উবু হয়ে বসা থেকে এক পলকে দাঁড়িয়ে যায় তিয়ানা। "না না না না না না"- কী করবে ভেবে পায় না, তাড়াহুড়ো করে রং-এর টিউবগুলো সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে, তুলিটা হাত থেকে পড়ে যেতে ঝটপট তুলে নেয় আবার মেঝে থেকে- দুহাত উঁচু করে ধরে ইনানের হাতের নাগালের বাইরে- ও ততক্ষণে কাছে চলে এসেছে- ফ্রক ধরে টানছে- নেয়ার চেষ্টা করছে-

"দাওদ্দাওদ্দাওদ্দাও!"

কথা শিখেছে মাত্র ইনান। থপথপ করে হাঁটে আর কথা বলতে থাকে কেবল। এক কথা বার বার বলে। বলতেই থাকে।

"না না না না এটা না বাবু এটা না! তুমি আম্মু যাও!" তিয়ানা ওর মনোযোগ হাতের রঙ তুলি থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টাটা করে- "তুমি না ভাল! তুমি না লক্ষ্মী!"- আম্মুর বলা কথাগুলি চটপট বলে ফেলে।

বারান্দা থেকে এসে ও বসেছে ভেতরের টিভি রুমের মেঝেতে। আম্মু ঘুমাচ্ছে, ইনানও ঘুমাচ্ছিল, ঘুম ভেঙ্গে চলে এসেছে! আম্মুও ওঠে গেল নাকি! আয় হায়!

একেবারে বুক ধ্বক করে ওঠে ওর! আম্মু জেনে ফেললে কী করে হবে!

তিয়ানা দরজার দিকে চোখ রেখেই তাড়াতাড়ি রঙ আর তুলি নিয়ে টিভির ট্রলির নীচে লুকানোর চেষ্টা করে। ওখানে রেখে ঘুরতেই বোঝে কী বিশাল ভুলটা হয়ে গেছে এর মধ্যে-

"আমাত আমাত আমাত"- করছে ইনান- মেঝেতে বসে- হাতে একটা কাগজ-মুঠি করা- মুখে দেয়ার চেষ্টা করছে-

"আম-মু-উ-উ-উ!"- আর সইতে পারে না তিয়ানা, ওর সাধের কাজের এই দশা দেখে- ডুকরে কেঁদে ওঠে একদম-

আম্মু তাড়াতাড়ি এসে ইনানকে কোলে নেন। "কী হয়েছে?"- মেয়ের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে জিজ্ঞেস করেন- কান্নাকাটিকে সাংঘাতিক ভয় তাঁর- একজনের চোখে পানি দেখলে অন্যজনের কান্নাকাটি শুরু হয়- এদের সামলানো তখন দুরূহ ব্যাপার-

তিয়ানার তখন আর নড়াচড়ার অবস্থা নেই। চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে, মাঝে মাঝে কেঁপে উঠছে, আঁকাআঁকি করছিল বোঝাই যাচ্ছে- হাতের কালি গালে লেগে আছে, এখন আবার চোখ মোছার ফাঁকে চোখের উপরেও পৌঁছেছে- "আমার- " এই বলতেই আবার ঠোঁট ভেঙ্গে আসে। ওর চোখ ইনানের হাতের কাগজে।

এইবারে আন্দাজ হয় তাঁর, ছেলের হাত ছাড়িয়ে নেন কাগজটা- "আমাত আমাত আমাত" করে তীব্র প্রতিবাদ জানায় ইনান, আরো একবার- ছিঁড়ে নেয় একটা কোনা- মুখে পুরে দিয়ে একগাল হাসি দেয়-

"না না না না ওটা খেয়ো না-" কান্না ফেলে হা হা করে আসে তিয়ানা, ভাইয়ের জন্য তার অসীম টান- "ফেলে দাও ফেলে দাও!"- "আমাত আমাত আমাত" আবারো দাবী পরিস্কার করে ইনান।

"এই এই এই কী হয়েছে এখানে কী হয়েছে?"- ঘরে এসেই জিজ্ঞেস করেন নানা- দুই ভাই বোনের দিকে তাকান একবার, এরপর ওদের মায়ের দিকে-

আম্মুর হাতে ছেঁড়া কাগজটা, খোলা-

দুমরানো কাগজটা এগিয়ে দেন তিনি- নানান রঙ এ কতগুলো শব্দ লেখা, আলাদা আলাদা করে,

"শু ভ জ ন্ম দি ন, আ ম্মু!!!"

"এই জন্যেই তো বলি বাপ-মেয়েতে দুইদিন ধরে কী এত গুজগুজ ফুসফুস চলছে"- আম্মু নানাকে বলেন, "বিকেলে ফিরবে বলে ছুটির দিনে বেরিয়েছে আর মেয়ে এই নিয়ে ব্যস্ত!"

নানা মুখে হাসি ঝুলিয়ে নাতনীর দিকে চোখ ফেরান-

তিয়ানার মুখে এগাল ওগাল হাসি- হাতের চেটোয় ভেজা গাল আরেকবার মুছে নেয় ও- গালের সবুজ রঙ আরো একটু ছড়ায়- আম্মুর দিকে তাকাতেই শব্দ পেয়ে যায় খুঁজে-

"সারপ্রাইজ!"

[ফুটনোট ১।

এখন থেকে প্রায় এক যুগ বা তার চাইতে বেশি সময় চলে গেছে হয়ত। তখন সন্ধ্যার পর 'মাইক্রোসফট এক্সেল'-এর বদলে 'ডেনিস দ্য মেনিস', 'টম এন্ড জেরি', 'আঙ্কল স্ক্রুজ', 'মিকি মাউজ' দেখাটাই রুটিন ছিল। টিভির সামনে চেয়ার দুলিয়ে দুলিয়ে দেখার অভ্যাসে বাঁধা পড়ল হঠাৎ- কার্টুন দেখার বদলে একজন নতুন খেলা বের করলেন- চেয়ারে বসে আমাকে পা সোজা করে বসে বসে কার্টুন দেখতে হবে। এই সময়টায় তিনি কখনো একা, কখনো সাঙ্গপাঙ্গদ সমেত পা বেয়ে বেয়ে কোলে ঊঠবেন এবং ওগুলোকে 'স্লিপার' হিসাবে ব্যবহার করে পিছলে নামবেন। উঠবেন এবং পিছলে পড়বেন। ক্লান্তি না আসা প্পর্যন্ত এমন চলতেই থাকবে আর এ সময় মোটেই চেয়ার ছাড়া চলবে না।

এ লেখাটা যখন লিখছি তখন তিনি এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা পরের দিনের বাংলা দ্বিতীয় পত্রের বৈতরনী পেরনোর উপায় খুঁজে স্বপন দেখছেন হয়ত! তিয়ানা, ঋদ্ধ, ইউশা- তিনজন এইবার এস এস সি দিচ্ছে।

ত্রয়ীর প্রথমজন, তিয়ানার আজ জন্মদিন। বাকি দুইজনের জন্মদিন গেছে যথাক্রমে ডিসেম্বর আর জানুয়ারিতে!

এ লেখাটা এই 'থ্রি মাস্কেটিয়ার্স'-এর জন্য।

ফুটনোট ২।

গল্পের 'গল্প'টা- যদি বলি সত্য, তাহলে মিথ্যা হবে। আবার যদি বলি মিথ্যা, তাহলেও মিথ্যা হবে। কাজেই একে কেবল গল্পই বলি না হয়! হাসি ]


মন্তব্য

তিথীডোর এর ছবি

চমৎকার! চলুক

লম্বা বিরতির পর মিষ্টি একটা শিশুতোষ গল্প পড়লাম। বিশেষ করে টুকটাক কিছু ডিটেইলস চমৎকার লাগল।
পাঁচ তারা।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

মর্ম এর ছবি

আসলেই সময়টা যত সুন্দর, ততটা কি আর লিখে ফেলা যায়? খুব কঠিন, ঠিকঠাক ধরা খুব কঠিন।

সুচিন্তিত মন্তব্যের জন্য 'থ্যাংকু!' হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

দীনহিন এর ছবি

পারিবারিক স্নেহ সম্পর্কের এই লেখাগুলি খুব ভাল লাগে। কেমন একটা পবিত্রতার অনুভূতি ভর করে দেহ-মনে! এই আশ্চর্য সুন্দর পারিবারিক অনুভূতিগুলিই টিকিয়ে রেখেছে এই পৃথিবী!

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

মর্ম এর ছবি

এই ধরণের লেখা'য় স্মৃতিরা আটকে যায়, মাঝে মাঝে হারিয়ে ফেলা চোখের এক একটা ঝলক ফিরে আসে- কেউ, যিনিই হোন, যখন লেখেন, পড়তে তাই কখনো আমার দেরি হয় না। আরেকজনের চোখে চেপে একটু ঘুরে ফিরে দেখা যায় ফেলে আসা পৃথিবীটাকে হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

আয়নামতি এর ছবি

বিউটুন হইছে লেখা চলুক
তিয়ানার জন্য অনেক শুভকামনা থাকলো হাসি

মর্ম এর ছবি

শুভকামনা পৌঁছে দেয়া হবে হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

এক লহমা এর ছবি

খুব সুন্দর গল্প। পিচ্চিতোষ কি না জানি না, আমার খুব ভাল লেগেছে। (অবশ্য আমার পরিচিতরা কেউই মনে করে না আমার খুব একটা বয়স বেড়েছে। কেউই মনে করে না যে আমি একটা বুড়ো পিচ্চি ছাড়া আর কিছু। খাইছে )

তিয়ানাকে জন্মদিনের অজস্র শুভেচ্ছা।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

মর্ম এর ছবি

'ছোটদের' বলেন, 'শিশুতোষ' বলেন, 'পিচ্চিতোষ' বলেন আর যা-ই বলেই, এই ধরণের লেখার কোন তুলনা হয় না। তবে দুষ্প্রাপ্য, এই যা! এই সচলেই দেখেন, বাঘা বাঘা সব লিখিয়ে- কিন্তু 'নীড়পাতা' খুঁজে হাঁপিয়ে যেতে হয়, 'ছোটদের' জন্য কারো 'উপহার' দেখি না! আমরা কী এমন সচল চেয়েছিলাম ওঁয়া ওঁয়া

তিয়ানার শুভেচ্ছা যথাসময়ে পৌঁছে যাবে হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

অনেক দিন পরে পিচ্চিতোষ গপ্প নিয়ে এলেন - এত দেরী করে আসলে হপে? আপনার লাল খাতা কদ্দূর?

তিয়ানার জন্য আদর ও ভালোবাসা।

____________________________

মর্ম এর ছবি

লাল খাতা খোলা হয়নি অনেকদিন, আছে কি না খুঁজে দেখতে হবে!

তিয়ানার জন্য আদর পৌঁছে দেয়া হবে।

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আর সইয্য হৈলো না! আমি আর আমার পুত্র, আমরা, পরস্পরকে 'বাবান' বলে ডাকি। তার দেখাদেখি আমার ভাই-বোনদের সকল সন্তান আমাকে 'বাবান' বলে ডাকে।

একটু কটু কথা বলি। প্রথমত, এটা বড়দের গল্প হয়েছে, পিচ্চিতোষ নয়। এই গল্পটা আমাকে প্রচণ্ডভাবে স্পর্শ করবে, কিন্তু আমার পুত্রকে নয়। এর কনটেন্ট তার কাছে মনোগ্রাহী হবার কথা না। দ্বিতীয়ত, এটা কার চোখ দিয়ে দেখা হচ্ছে - লেখকের নাকি তিয়ানার? একেক জায়গায় একেক রকম মনে হয়েছে।

ভাষা যথারীতি চমৎকার! পিচ্চিতোষ গল্পের উপযুক্ত। ল্যাদাবাচ্চার মুখের ভাষাও ঠিক ঠিক প্রতিবর্ণীকরণ হয়েছে।

গ্রিল কেটে দুপুরের মায়া মায়া রোদ খোপ খোপ হয়ে বারান্দায় পড়ছে, অমনি পড়ছে টেবিলটাতেও।

-এই বাক্য পড়লেই পাঠক বাকি গল্প পড়তে উৎসাহী হয়ে পড়বেন।

ঠ্যাঙনোট খুব দরকারী ছিলো না। স্লিপারের গল্পটা আলাদা গল্প হিসেবে আসতে পারতো, আরো বিস্তারিতভাবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মর্ম এর ছবি

১। ঠ্যাংনোট না দিয়ে উপায় কোথায়?! ঠ্যাংনোটের 'তিয়ানা'-কে এই লেখা 'উপহার' দেব বলে, এখান থেকে এক চিমটি, ওখান থেকে দুই চিমটি নিয়ে গল্পের 'তিয়ানা'-কে তৈরি করতে হল!

২। স্লিপারের গল্পটা আলাদা গল্প হতেই পারে, পরে লিখলে কোথাও জুড়ে দিলেই তো হল, পুরনো যেন না লাগে সেইটুক খেইয়াল রাহতে হবে, এই যা বিপদ।

৩। কটু কথায় আসি। সেটাই বেশি জরুরি আসলে।

৩-ক।

প্রথমত, এটা বড়দের গল্প হয়েছে, পিচ্চিতোষ নয়।

এই নিয়ে দ্বিতীয়বার এই ধরণের মন্তব্য করলেন। কাজেই ভেবে দেখাটা জরুরি।

আমার সমস্যা হচ্ছে এ সময়কার আধুনিক পিচ্চিদের না চেনা। ওদের 'দেখা'র জন্য যতটুকু সময় কাছে থাকা দরকার সে সুযোগ আসলে হয় না। নিজে যেটুক দেখেছি, আর ছোট ভাইবোনদের যেমন দেখেছি তার উপর অনেকাংশে নির্ভর করতে হয়। আট-দশ বা কাছাকাছি বয়সে একটা সময় যায় যখন "আমি-যখন-পিচ্চি-ছিলাম"-ঘরানার কথাবার্তা বলার 'ব্যারাম' আমার চেনাজানা পিচ্চিদের দেখেছি, আমার অধিকাংশ লেখা আসলে সেইসব 'নস্টালজিক পিচ্চি'-দের জন্য। সচেতনভাবে লেখা হয় তা না, আপনার কথার প্রেক্ষিতেই ভাবছি, মনে হচ্ছে 'অবচেতনের ভাবনা'টা ওরকমই ছিল। একটা ব্যাপার নিশ্চিত, পড়ার প্রাথমিক অভ্যাসটা আগেই গড়া না থাকলে এই লেখা কোন 'পিচ্চি'রই ভাল লাগবে না।

আরো একটা ব্যাপার হতে পারে, শহুরে শিশুদের 'না চেনা'। কাজেই ওদিকটায় আস্তে আস্তে উন্নতি হবে হয়ত, চোখ-কান খোলা রাখার চেষ্টা করছি আর কি!

৩-খ।

দ্বিতীয়ত, এটা কার চোখ দিয়ে দেখা হচ্ছে - লেখকের নাকি তিয়ানার? একেক জায়গায় একেক রকম মনে হয়েছে।

আবার ফিরে পড়লাম। আমার ভুল না হলে ৩ নম্বর অংশের 'আম্মু ঘুমাচ্ছে', 'আম্মু এসে কোলে নিলেন'- এগুলোর জন্য মনে হচ্ছে গল্পটা তিয়ানা বলছে।

'আম্মু'র একটা 'নাম' থাকলে এ ঝামেলা হত না। নাম যেহেতু নেই, আর 'তিয়ানার আম্মু' বলাটা 'পাঠ-মধুর' ঠেকছিল না, 'তিয়ানা'র' শব্দটা তাই উহ্যই ছিল, আশা ছিল পাঠক ওটুক বুঝে নেবেন- সেই 'উপসংহার'-এ পৌঁছানোর জন্য 'সম্ভাব্য-সর্বোচ্চ-ভাষা-সতর্কতা'-ও গ্রহণ করা হয়েছিল, খানিক অসফলতা যে আছে সে তো পরিস্কার।

৪। পান্ডবদা, লেখায় আপনি এসে কমেন্ট করছেন এর দুটো দিক হতে পারে। ক। একই ঘরানার 'ভুল'-এ ভরা লেখা অসহ্য হয়ে উঠেছে- এগুলো হচ্ছে 'প্রচ্ছন্ন সতর্কবার্তা'। খ। লেখা 'ভাল' থেকে 'চমৎকার' হয়ে উঠতে আরও একটু সচেতনতা, আরো একটু মনোযোগ বাকি, পাঠক হিসেবে সেটা আপনি আশা করতে শুরু করেছেন।

কোনটা ঠিক বলা মুশকিল, দ্বিতীয়টা হলে সেটা যে কারো জন্যই তৃপ্তিদায়ক, আমিও মানুষ বৈ তো নই।

আপনার মনোযোগী মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞতা জানবেন।

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১. ঠ্যাঙনোট অ্যাভয়েড করার উপায় হচ্ছে প্রথম কমেন্টটা নিজে করে সেখানে গল্পবহির্ভূত বিষয়াদি জানিয়ে দেয়া।

২. স্লিপারের গল্প আসা উচিত। লেখক নিজে যে কাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র, সেই গল্প আরো সার্থকভাবে ফুটে ওঠার কথা।

৩(ক). এই সমস্যাটা আসলে বড় এবং কমন একটা সমস্যা। প্রচুর ছোটদের পত্রিকা ক্রমান্বয়ে যুক্ত হওয়া নতুন নতুন ছোট পাঠকদের ভাষা আর চাহিদা বুঝতে না পেরে এক সময় বন্ধ হয়ে গেছে। এর উদাহরণ আপনি একটু ভাবলেই পাবেন। এটা নিয়ে একবার কথা বলায় এক বন্ধ হয়ে যাওয়া পত্রিকার লোকজন আমাকে তুলোধুনো করেছিল। অনেক মুভিতে দেখবেন যে মানুষ যে হাইটের তার হাইট থেকে ক্যামেরা ধরে চারপাশের বিশ্বকে দেখানো হয়। এই ব্যাপারটা অনেকটা ঐ রকম। এর জন্য বাচ্চাদের সাথে নিয়মিত ঘনিষ্ঠভাবে মেশা ছাড়া উপায় নেই। এরা আগামী দিনের মানুষ তো, তাই এরা এত্তো ফাস্ট যে আমাদের মতো বুড়োরা তাল মিলিয়ে উঠতে পারি না। যেহেতু লেখার জন্য আপনি সাহিত্যের কঠিন একটা প্রকরণ বেছে নিয়েছেন তাই এই ব্যাপারে আপনার নিয়মিত খাটাখাটুনি করা ছাড়া উপায় নেই। আপনি যেখানেই আছেন, সেখানকার বাচ্চাদের সাথে নিয়মিত মিশুন তাহলে দেখবেন যে গল্প বের হবে তা পড়লে আমাদের বয়সী লোকদের গালে মাছি ঢুকবে।

৩(খ). একটা গল্প একবার পোস্ট করলেই তো আর শেষ নয়। এরপর মাজাঘষা চলবে। এক বছর পর নিজে ফিরে এসে এই গল্প পড়বেন, দেখবেন আরো যোগ-বিয়োগ করার স্কোপ পেয়ে যাবেন।

৪. ব্লগের মতো ইন্টারঅ্যাকটিভ মিডিয়াতে পাঠকের চুপ করে থাকার স্কোপ কম। লেখা ভালো লাগলে পাঠক হাততালি দেবে, ভালো না লাগলে তৎসম ভাষায় হোক আর দেশী ভাষায় হোক গালি দেবে। এটা সত্য যে, বেশিরভাগ পাঠক অথবা পাঠক বেশিরভাগ সময়ে এই কাজটা করেন না। কিন্তু যখন করেন তখন বুঝতে হবে মানের উৎকর্ষতায় বা নিকৃষ্টতায় লেখকের লেখা পাঠককে মন্তব্য করতে বাধ্য করেছে।

পুনশ্চঃ নিম্নমানের লেখা পুরোটা পড়ার মতো ধৈর্য্য বা সময় কোনটাই আমার নেই। সুতরাং সেখানে মন্তব্য করারও কোন ব্যাপার থাকে না। অবশ্য ঐসমস্ত লেখার কোনটা যদি 'দলছুট' মানের হয় তাহলে সেখানে মন্তব্য করি বটে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক
মনোবর

মর্ম এর ছবি

থ্যাংকিউ! আপনার গল্প নিয়মিত পড়ছি। আমার ধারণা 'হাচলত্বে'র অভিনন্দন জানাতে আপনার পোস্টে যেতে খুব বেশি সময় বাকি নেই। আগাম শুভেচ্ছা।

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

হাততালি খুব মজাস লাগল পড়তে মর্ম ভাই। পাঁচ তারা দাগালুম।
তিয়ানার জন্য শুভকামনা।
ভাল একজন মানুষ হয়ে উঠুক। হাসি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

অতিথি লেখক এর ছবি

সারপ্রাইজ যে পেলো সেতো আনন্দ পেলোই সেই সাথে আমাদের মতো বাকিরাও বঞ্চিত রইলোনা আনন্দের ভাগ থেকে।

গল্প ভালো লেগেছে। হাসি

ভালো মেয়ে

আশালতা এর ছবি

আমি অবশ্য বেশি খুঁটিয়ে পড়ি না। তবে পড়তে ভালো লেগেছে। ব্যাস, হাত্তালি। হাসি

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।