-তোমাকে তো আজকাল পাওয়াই যায় না। ফোন ত করোই না আমি করলেও ধরনা। মোবাইল বাজতেই থাকে। কি করছ আজকাল?
-ক্লাস থাকে। সামনে পরীক্ষা...তার মধ্যে চলছে শাহবাগ...এই জন্যেই আরকি।
-শাহবাগে যাও তুমি?
-যাই তো। না গেলে কি ভাবে হবে? যুদ্ধপোরাধীদের পার পেয়ে যেতে দেয়া যাবে না।
এই হল আমার মেডিকেলে পড়ুয়া ছোট ভাইয়ের অবস্থা। সে রাজাকারের বিচারের দাবীতে শাহবাগ যায়। স্লোগান দেয়।
ওর আরেকটা পরিচয় ছোট্ট করে বলে রাখি.....ও একজন কোরআন এ হাফেয। সমস্ত কোরআন শরীফ বুকে ধারণ করেই সে শাহবাগে যায় এবং "ফাঁসি চাই" বলে স্লোগান দেয়।
-শাহবাগে নাকি অনেক আজেবাজে কিছু হয় আর মানুষ নাকি শব ফটোশপে বসানো?
-কে বলল উল্টাপাল্টা?
-ফেসবুকে দেখি আর আমার দেশের মাহমুদুর রহমানের টেলিফোনের লিক হওয়া কথায় জানলাম।
-আমি তো অতসব জানিনা। যতটুকই সময় পাই শাহবাগে যেয়ে স্লোগান দিয়ে আসি। আমি তো ওখানে লাখ লাখ মানুষ দেখি মহাসমাবেশে। ফেসবুক দেখার সময় ও পাইনা।
-শাহবাগে নাকি অনেক আজেবাজে কিছু হয় আর মানুষ নাকি শব ফটোশপে বসানো?
-কে বলল উল্টাপাল্টা?
-ফেসবুকে দেখি আর আমার দেশের মাহমুদুর রহমানের টেলিফোনের লিক হওয়া কথায় জানলাম।
-আমি তো অতসব জানিনা। যতটুকই সময় পাই শাহবাগে যেয়ে স্লোগান দিয়ে আসি। আমি তো ওখানে লাখ লাখ মানুষ দেখি মহাসমাবেশে। ফেসবুক দেখার সময় ও পাইনা।
-এখন যে শুনছি শাহবাগ রাজনৈতিক কাজে ব্যাবহার করছে সরকার? মূল যে আন্দোলন "রাজাকারের ফাঁসি চাই" সেখান থেকে নাকি সরে গিয়ে শুধু জামাতে ইসলামী কে ব্যান করাই মূল লক্ষ্য এখন?
-তাতে আন্দোলনের দাবী সরে গেল কিভাবে? জামাতে ইসলামী তো রাজাকারেরই দল। সেই দলের ও ফাঁসি চাই। মানে সেই দলেরও বাতিল করণ চাই।
-কিন্তু পত্রপত্রিকা এবং ফেসবুকের মানুষ জন তো বলছে যে রাজাকার কম বেশী সব দলেই আছে। কিন্তু তাহলে কি সব দলকেই বাদ দিতে হবে?
-তুমি কোন পত্রিকা পড় আর তোমার বন্ধু এখন কারা তা তো আর আমি জানিনা কিন্তু আমি তো দুই একটা বাদে সব পত্রিকাকেই পসিটিভ খবর ছাপতে দেখছি। জামাতের যে দুই একটা পত্রিকা আছে তারা তো নিজেদের পক্ষে বলবেই। ওগুলো পোরনা। তাইলেই হবে। এখন বলি জামাত কেন বাতিল করা দরকার সেই কথা। যেই দলের শীর্ষ নেতাদের অধিকাংশই গনহত্যা, গনরেইপ, লুণ্ঠনের মত অপরাধের দাগী আসামী সেই দল কে কিভাবে রাজনীতি করতে দেয়া যায়? তুমি কি ডাকাতের একটা দলকে রাজনীতি করার লাইসেন্স দিবা?
-তা দেব না। কিন্তু জামাতের সবাই তো আর যুদ্ধাপরাধী নয়।
-ঠিক যে সবাই নয়। কিন্তু জামাতের প্রতিটা সদস্য তাদের দাগী আসামী নেতাদের বাচানোর জন্যে কাজ করে যাচ্ছে। যা বলা হচ্ছে তাইই করছে মাছি মারা কেরানীর মতো।
-নেতা দের বাঁচানোর জন্যে কাজ করাতো খারাপ না, তাই না?
-তা ঠিক। কিন্তু যেরকম ভাবে মিথ্যাচার করছে তাতেই ত বোঝা যায় যে গলদ আছে। যেমন ধর শাহবাগে কি হয় এটা নিয়ে তো তুমিই বললা অনেক রকম কথা ছরাচ্ছে। তারপর ধর ব্লগার রাজিবের ব্যাপারটা। একটা ছেলে কে ঘোষণা দিয়ে খুন করা হল এবং তার অতীত কে হাতিয়ার বানানো হল শাহবাগ আন্দলনের বিরুদ্ধে। জামাত যদি বলত যে “রাজিব কে খুন করা হয়েছে তার ইসলাম বিদ্বেষী কার্যকলাপের জন্যে” তাহলে নাহয় কিছু মুসল্লীর সহানুভুতি পেত তারা কিন্তু জামাত এটা কে “শাহবাগ বিরোধী প্রপাগান্ডা” বানিয়ে ফেলল এবং এইটা কে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালে ব্যাবহার করল। তাহলে কিভাবে তাদের এই রকম “নেতা বাঁচানো” উদ্দেশ্য সৎ হয়? তার চেয়েও বড় কথা গোলাম আযম সহ অন্যান্যরা তো স্বঘোষিত যুদ্ধাপরাধী। তাদেরকে বাচানোর চেষ্টা করা মানে “অনৈতিকতা” কে প্রশ্রয় দেয়া। ইসলামে অনৈতিকতার কোনো স্থান নাই। গনহত্যা আর রেপিস্ট দের শাস্তি “মৃত্যুদণ্ড”/ দেশে ইসলামিক আইন থাকলে বলতাম “পাথর নিক্ষেপে” মৃত্যুদণ্ড কিন্তু যেহেতু বাংলাদেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা আছে তাই ভদ্র ভাবে বলছি “ফাঁসি” চাই। এই ব্যাপারে কারো সন্দেহ বা দ্বিমত থাকার কথা না।
-সন্দেহ না থাকলেও নতুন করে সন্দেহ তৈরি করা হচ্ছে। আওয়ামীলীগের স্বার্থ উদ্ধার হবে রাজাকারের বিচারে এই ভেবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে জনমত তৈরী করছে। ট্রাইবুনাল কে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
-করতে দাও। কারন যারা বলছে এই শাহবাগ তাদের অস্তিত্বের প্রশ্নে আঘাত হেনেছে। মিথ্যা দিয়ে কি আর এই যুগে জনতার দাবী কে ভুলানো যায়? তবে আমার দাবী একটাই। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি এবং সেই সাথে জামাত নিষিদ্ধকরণ।
-জামাত কে নিষিদ্ধ করা টা তো সবাই রাজনৈতিক মনে করছে।
-রাজনৈতিক দৃষ্টিকোন তো থাকতেই পারে কিন্তু আমি জামাতের নিষিদ্ধকরণ চাই অন্য কারনে। এই দলে যখন সদস্য হিসাবে রিক্রুট করা হয় কাউকে তখন তো তাকে ধর্ম প্রচারের কথা বলেই দলে টানা হয়। এরপর আস্তে আস্তে বোঝানো হয় দেশ ধর্মহীন হয়ে যাচ্ছে তাই ধর্মের নামে যুদ্ধ করতে বলা হয়। কিন্তু জামাতের প্রায় সব লিডার যেহেতু দাগী আসামী সেহেতু তাদের আসল কাজ হয়ে দাঁড়ায় লিডারদের হয়ে প্রপাগান্ডা চালানো। একটু একটু করে মিথ্যা বলতে বলতে তারা একসময় মিথ্যা টাকে রীতিমতো সত্য বলে বিশ্বাস করতে শুরু করে। শেষমেষ নিজের বলা কথাকে ডিফেন্ড করাই হয়ে দাঁড়ায় মুখ্য। আসলে যেই দলের কোন সাফল্যের ইতিহাস নাই এবং যারা ইতিহাসে সব সময় পরাজিত সেই দলের সদস্যদের নিজের দলকে মহান করে তুলতে মিথ্যার পর মিথ্যা ছাড়া কি উপায়? মিথ্যা কে প্রতিষ্ঠিত করতে যেয়ে একসময় জঙ্গি রুপ ধারণ করে। সমাজ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় আর তারপর একমাত্র পরিচয় হয়ে যায় জামাত শিবির। অথচ শুরুটা কিন্তু হয় ধর্ম চিন্তা থেকে কিন্তু একসময় যেয়ে দুনিয়ায় ও কিছু পায় না আর পরকাল তো শেষই মিথ্যা কে সত্য বানাতে যেয়ে।
-এভাবে কখনও ভেবে দেখিনি
-এটাই ভাবার সময়। জামাত শিবিরের মানুষদের সাহায্য দরকার। এদের অবস্থা ড্রাগ এডিক্টদের মত। চিকিৎসা দরকার। কিন্তু অবাধ ড্রাগস এর মধ্যে রেখে যেমন ড্রাগ এডিক্টদের দের চিকিৎসা করে ভাল করা যায় না, তেমন জামাত-শিবির সংগঠনকে বহাল রেখে এতে তরুণদের রিক্রুট বন্ধ করতে পারা যাবে না। কিন্তু যদি এদের টপ লিডারদের বিচার করে জামাত কে যদি নিষিদ্ধ করা হয় তাহলে সেটা প্রকারন্তরে এই সংগঠনের কর্মীদের পরকালের জন্যে মঙ্গল জনক হবে। যারা অলরেডি এডিক্ট তাদের ভাল বুঝে শুধরানোর দায়িত্ব যেমন পরিবারের কর্তার নিতে হয় তেমনি জামাত-শিবির কর্মীদের ইহকাল আর পরকালের দায়িত্ব কিন্তু সরকার আর সাংসদদের নিতে হবে। জামাত-শিবির নামের সংগঠনটি নিষিদ্ধ করতে হবে সরকারেরই।
-কিন্তু সবাই কি এই যুক্তি মানবে?
-তারা মানবে না যাদের কাছে জামাত-শিবির লাভের বস্তু। ধর যারা ড্রাগ ডিলার তারা কি আর চাইবে ড্রাগ এডিক্ট রা সুস্থ হোক?
-কিন্তু জামাত-শিবির নিষিদ্ধ হলে এর কর্মী বাহিনী কই যাবে? তারা তো আর গায়েব হয়ে যাবে না। তারা তো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েই যাবে। তখন?
-যারা আসলেই ইসলামের জন্যে জামাত-শিবির করে তারা আরেকটা সংগঠন তৈরী করে ইসলাম প্রচার করবে। ইসলাম প্রচার করতে যে জামাত-শিবির নামই লাগবে এমন তো না। তাতে এদের সুবিধাই হবে। এই সব দাগী আসামী নেতাদের বাঁচানটাই একমাত্র লক্ষ্য থাকবে না। আর যারা তারপরও জামাত-শিবির করে নৈরাজ্য করবে তারা তো আসলে সন্ত্রাসী। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারটা শেষ হতে দাও, দেশ থেকে সব সন্ত্রাসী দূর করব ইনশাআল্লাহ্। ইসলাম কিন্তু আপু শান্তির ধর্ম তা সব সময় মনে রেখ।
মন্তব্য
যুক্তিগুলো খুবই সুন্দর হয়েছে।
দেশে গিয়েছিলাম অল্পদিনের জন্য। শাহবাগ সহ বিভিন্ন জেলায় তরুনদের জয় জয়কার।
তবে বাইরে থেকে আমরা জামাত সম্পর্কে যা জানি তা দেশের মানুষ এতো ভালো করে জানে না। পরিচিত অনেকেই তর্ক করতে আসলে জিজ্ঞেস করলাম সাইদীর অডিও শুনেছো? সবারই উত্তর ছিলো না। খুবই অবাক হলাম। এইসব অডিও মসজিদের মাইকে ফ্রি প্রচার করা উচিত।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
ধন্যবাদ। সত্যি বলেছেন। "প্রচারেই প্রসার"...একারনে বিবেকবান মানুষের বিবেকের তাড়না জাগ্রত করণে সাইদীর ওয়াজ ফ্রি শোনানোর বিকল্প নাই।
জামাতিরা ইসলাম প্রচার করে নাকি????!!!!
সুবোধ অবোধ
মুখে তো তাই বলে। আর তাইতেই তো সরল বাংলাদেশিরা কুপোকাত।
তাতো বটেই; এবং এটা কিন্তু মনে রাখা দরকার জামাত সেসময় অখণ্ড পাকিস্তানের নামে গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন চালিয়েছে কিন্তু তাদের সাংগঠনিক সিদ্ধান্তেই। ফলে সংগঠন ইটসেলফ সরাসরিই যুদ্ধাপরাধী।
লেখালেখি চলুক
সৈকত
অফটপিকঃ আপনার নিকটাকি বাংলায় পরিবর্তন করা যায় না? সচলায়তনের বাংলা সংস্করণে ইংরেজী হরফের নিক দেখতে কেমন জানি বিদঘুটে লাগছে।
জামাত শিবির নিশিদ্বের কুনু বিকল্প নাই।
নতুন মন্তব্য করুন