প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যু দিবসে ৭১ টিভির একাত্তর মঞ্চের আলোচনা অনুষ্ঠানে মেজর জিয়াউদ্দিন (কর্নেল তাহেরের সাথে যার ফাঁসির আদেশ হয়েছিল কিন্তু পরে অবস্থার প্রেক্ষিতে তাঁর ফাঁসি রদ করা হয়) নামে একজন প্রাক্তন সেনা সদস্য এসেছিলেন। উনি বলছিলেন যে "শেখ মুজিব কে সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য মেরেছে তাঁর ব্যর্থতার জন্যে না, তাঁকে পছন্দ করত না সে জন্যে। সেনা বাহিনী স্যান্ডেল পড়া রাজনীতিবিদ দের কে অবজ্ঞার চোখে দেখত। রাজনীতিবিদরা এলাকার ছাপড়া চায়ের স্টলে চা খান...স্যান্ডেল পায়ে ধুলা মাখা পায়ে হেটে হেটে পাড়ার সবার সাথে হাত মেলান...এদেরকে সেনাবাহিনী তাচ্ছিল্যের চোখে দেখত।" কথা গুলো ভুলতে পারলাম না...কেমন যেন মনে গেঁথে গেল...মাথায় ঘুরতে থাকল। আবার ভারত পাকিস্তানের ইতিহাস টা মনে করার চেষ্টা করলাম............যা ভেবেছিলাম তাই। খাপে খাপে মিলে গেল। ৭১ পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনীতে যারা ছিল তারা কখনই সিভিল গভর্নমেন্টের অধীণে ছিল না। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান খমতা দখলের পর থেকে ৭১ পর্যন্ত পুরটা সময়েই ছিল সামরিক শাসন। আর্মিরা উর্দি আর ভারী বুট পরা রাষ্ট্রপ্রধান দেখে ও তার অধীনতায় থেকে অভ্যস্ত। সাধারন সুতী কাপড়ের পাঞ্জাবী আর স্যান্ডেল পরা আটপৌড়ে এক নেতাকে সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়কের উপর ওইসব তরুন আর্মি অফিসারদের নাখোশ থাকাটা তাই অস্বাভাবিক না। পাকিস্তান ফেরত একদল সেনাবাহিনী তাই শুরু থেকেই শেখ মুজিব সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত ছিল। সেই ক্ষোভ কে কাজে লাগিয়ে ফায়দা লুটেছে কয়েকজন আর্মি অফিসার এবং নিজেদের আক্রোশ থেকে করা মুজিব পরিবার নিধন কে শেখ মুজিবের ব্যর্থতার ফলাফল বলে চালিয়েছে দিয়েছে। আসলে তারা আবার আর্মি শাসনই বহাল করতে চেয়েছিল।
শুধু তাই না...জিয়াউর রহমানের সময়ে যত জন সেনা সদস্য খুন হয়েছেন তারা সবাই মুক্তিযুদ্ধের সাথে সম্পৃক্ত এবং বাংলার আলো হাওায় বেড়ে উঠা, অন্তত সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার আগ পর্যন্ত। খুন হওয়া এই সেনা সদস্যরা মনে প্রানে বাঙ্গালী ছিলেন। বিদ্রোহ দমন করে সেনাবাহিনী তে শৃঙ্খলা আর একাত্মতা আনার নামে খুন করা হয়েছে শুধু এই সব বাঙ্গালী মনা সেনা সদস্যদের।
ওইদিনের ওই আলোচনায় আসা অন্য একজন প্রাক্তন সেনা সদস্যের, যিনি জিয়াউর রহমানের অনুগত ছিলেন, আলোচনা থেকে আরেকটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে যায় আমার কাছে..."বাংলাদেশী" জাতীয়তাবাদের বিষয়টি। আমি এতদিন ভাবতাম বাঙালী জাতীয়তাবাদ বদলে দিয়ে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ আসলে করা হয়েছে "অ"বাঙ্গালী কে অন্তর্ভুক্ত করার জন্যে। কিন্তু ব্যাপারটির ব্যাপকতা/গভীরতা ঠিক অনুধাবন করতে পারি নাই। সেদিন বুঝলাম আসল ঘটনা। পাকিস্তান ফেরত যেসব সেনা সদস্য ও সরকারী অফিসার বাংলাদেশে ফিরেছিল তাদের অধিকাংশেরই বাংলা ভাষা, বাংলা কৃষ্টি কালচারে কোন সম্পৃক্ততা ছিল না, এই দলে জিয়াউর রহমান ও ছিলেন। সর্বোপরি বাঙালীত্ব নিয়ে তাদের মধ্যে কাজ করত একটা নাক শিটকান ভাব। সেই অবস্থা থেকে বের হবার জন্যে জিয়াউর রহমান বাঙ্গালী জাতীয়তা বাদ কে মুছে "বাংলাদেশী" জাতীয়বাদ প্রতিষ্ঠা করেন। পাকিস্তান ফেরত সেনা ও অফিসার তো বটেই, "বাংলাদেশী" জাতীয়তাবাদ বলবতের মধ্যে দিয়ে আসলে জিয়াউর রহমান নিজেকেই এই দেশে সম্পৃক্ত করেছেন। তিনি বাঙ্গালী হতে চাননি।
আসলে ১৯৭৫ এ মুজিব হত্যার মাধ্যমে সামরিক শাসনের আওতায় বাংলাদেশকে নিয়ে আসা, বাঙ্গালী থেকে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা, ইসলামকে রাজনিতীতে ঢোকানো এসব কিছুই করা হয়েছে পাকিস্তানের আদলে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার নামে; সেই সাথে খুশী করা হয়েছে পাকিস্তান ফেরত সেনাবাহিনীর সদস্যদের।
মন্তব্য
পুরা লেখাটা মনে হয় আসেনি
আমি খুবই দুঃখিত যে আপনার কাছে লেখাটির অসম্পূর্ণ লেগেছে সেজন্যে। কিন্তু আমি আসলে এটুকুই বলতে চেয়েছিলাম। ওই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমি সরাসরি কারো মুখ থেকে ৭ নভেম্বর ১৯৭৫ এর "তথাকথিত" বিরোধী গোষ্ঠীর কারো বক্তব্য শুনতে পেরেছিলাম। আমি আসলে খুব অবাক হয়েছিলাম এই পারস্পেক্টিভ শুনে এবং এক্সাক্টলি আমার যা অনুভুব হয়েছিল ঠিক ততটুকুই ঠিক সেভাবেই লিখলাম। আমার মনে এই তিনটা পয়েন্টে প্রশ্ন ছিল অনেকদিন ধরে...এখন বেশ পরিষ্কার। দুই একদিনের মধ্যে আরও একটি লেখা গুছিয়ে লেখতে পারার মত সময় বেড় করতে পারব বলে আশা করছি।
অনুষ্ঠানটা দেখেছি! মেজর জিয়াউদ্দিন যে কটা প্রশ্ন করেছেন, তার একটারও সদুত্তর দিতে পারেননি জেড এ খান। অনুষ্ঠানে জেড এ খানসহ আরেক জিয়াভক্ত ছিলেন, যারা জিয়াকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের রূপকার বা সার্কের স্বপ্নদ্রষ্টা, বাইরের দেশে, বিশেষ করে, ইসলামি বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উন্নত করার নায়ক ইত্যাদি ইত্যাদি পরিচিত বিশেষণে স্তুতিগান করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু জিয়ার রাবার স্ট্যাম্প পার্লামেন্ট, সামরিক পোশাকে ক্ষমতায় আরোহণ ইত্যাদির কথা না বলেও যদি ধরে নেয়া হয়, বহুদলীয় গণতন্ত্র বলতে জিয়াভক্তরা বাকশালী ব্যবস্থার বিলুপ্তি বুঝিয়ে থাকেন, তাহলেও কিন্তু জিয়াকে সে কৃতিত্ব দেয়া যায় না। জিয়াউদ্দিন বলছিলেন, বিএনপি যে অর্থে 'বহুদলীয় গণতন্ত্রের' সংজ্ঞায়ন করে, সে অর্থে সে কৃতিত্বের দাবিদার আসলে খুনি মোস্তাকই। তাছাড়া, জিয়া কি করে বহুদলীয় গণতন্ত্রের দাবীদার হন যখন সে অন্যায্যভাবে সব পোস্ট ধরে রাখেন আর পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে ক্ষমতাবান রাষ্ট্রপতি বানিয়ে ফেলেন নিজেকে? বা, উনি কি করে সেনাবাহিনীর ভিতর শৃঙ্খলা আনলেন যখন অসংখ্য ক্যু হয় এবং অসংখ্য সেনা অফিসারকে মেরে ফেলা হয়? উল্লেখ্য, জেড এ খান এগুলোর কোন উত্তরই দিতে পারেননি! কিন্তু স্তব-গীতি গেয়েই যাচ্ছিলেন পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ গুছিয়ে লেখার জন্যে। আমার কাছেও ঠিক একই রকম লেগেছে। মনে হয়েছে জিয়াউর রহমান ভক্ত যে দুজন এসেছিলেন তারা জিয়ার শুধু স্তুতি করতেই এসেছিলেন। তাদের কাছে যদি জিয়াউদ্দিনের করা প্রশ্ন গুলোর উত্তর নাই ই থাকে তাহলে তারা কিসের ভিত্তি তে এতোদিন ধরে জিয়ার পক্ষে এই সব প্রচারনা চালালেন? হয়ত নিজেদের কিছু স্বার্থ ছিল। আমি জানি না আসল উত্তর পাব কিনা তাদের মুখ থেকে কখনো কিন্তু আশা করি এই প্রজন্ম উত্তর গুলো খুজবে। আবারো ধন্যবাদ আপনাকে।
[রিপিট কমেন্ট হলে ডিলিটযোগ্য]
আপনার লেখাটার মূল বক্তব্যের সাথে সহমত।
"সেনা বাহিনী স্যান্ডেল পড়া রাজনীতিবিদ দের কে অবজ্ঞার চোখে দেখত। রাজনীতিবিদরা এলাকার ছাপড়া চায়ের স্টলে চা খান...স্যান্ডেল পায়ে ধুলা মাখা পায়ে হেটে হেটে পাড়ার সবার সাথে হাত মেলান...এদেরকে সেনাবাহিনী তাচ্ছিল্যের চোখে দেখত।" - এই মনোভঙ্গির উত্তরসূরী মনোভঙ্গির সাথে আমি বেশ পরিচিত। 'ব্লাডি সিভিলিয়ান' কথাটার উৎপত্তিও বোধহয় এখানেই। পাকিস্তানের শাসন-ব্যবস্থাটাই ছিল (এবং আছে) একটা কিম্ভূতুড়ে সামন্ত-মিলিটারি ককটেল - সিভিলিয়ান আম মানুষকে এরা কখনই পুরো মানুষ হিসেবে সম্মান করত না। এদের মননের পরতে পরতে ছিল বিকট সামন্তবাদী শ্রেণীচেতনা। তার উপরে বাঙালির প্রতি প্রবল বর্ণ বিদ্বেষও এর সাথে যোগ দিয়েছিল। এই মনোভাবের যে কিছুটা হলেও তৎকালীণ বাঙালি সেনা অফিসারদের মধ্যে সংক্রমিত হবে, তা বোধহয় খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু তাই বলে কি,
- এই ধরণের কোন ঢালাও মন্তব্য করা যায়? আপনার কাছে কি কোন প্রমান বা পরিসংখ্যান আছে - নিজের ব্যক্তিগত প্রেজুডিস, এনেকডোটাল উদাহরণ বা সাব্জেক্টিভ মতামত বাদে - যে এদের একটা সংখ্যালঘু বা ক্ষুদ্র অংশ নয় বরং -- অধিকাংশেরই বাংলা ভাষা, বাংলা কৃষ্টি কালচারে কোন সম্পৃক্ততা ছিল না.... সর্বোপরি বাঙালীত্ব নিয়ে তাদের মধ্যে কাজ করত একটা নাক শিটকান ভাব??? কারন, তা না হলে আনফর্চুনেটলি এটা একটা ঘৃণ্য বর্ণবাদী-টাইপ মন্তব্য হয়ে যায়। আমি নিজ দেশেরই স্বদেশবাসীর মধ্যে একটা কাল্পনিক শ্রেণী বা জাত সৃষ্টি করে তাদের উপর আন্দাজি স্বজাতিদ্রোহী-টাইপ একটা কলঙ্ক লেপন করাকে প্রচণ্ড রকম অপছন্দ করছি। এমনিতেই আমাদের মধ্যে অনেক বাস্তব বিভাজন আছে, এখন তার উপর আবার শাকের আঁটির মত কিছু কাল্পনিক বিভাজনও এর সাথে যোগ করাটাকে একেবারেই অনাকাঙ্খিত মনে হয়। আমার ভুলও হতে পারে, হয়ে থাকলে ক্ষমাপ্রার্থী কঠিন মন্তব্যের জন্য, তবে আশা করি প্রমান ও পরিসংখ্যান দিয়ে ভুলটা ভেঙে দিবেন (বিশেষ করে সিভিলিয়ান অফিসারদের ক্ষেত্রে)।
আরেকটা প্রশ্ন। একেবারের গোঁড়ার প্রশ্নই। "পাকিস্তান ফেরত" চিজটি কি? এটা কি মানবজাতি বা বাঙালি জাতির মধ্যে আলাদা কোন প্রজাতি? কেউ পাকিস্তানে গিয়ে ফিরে আসলেই স্বয়ংক্রিয় ভাবে "বাংলা ভাষা, বাংলা কৃষ্টি কালচারে কোন সম্পৃক্ততা ছিল না.... সর্বোপরি বাঙালীত্ব নিয়ে তাদের মধ্যে কাজ করত একটা নাক শিটকান ভাব" - হয়ে যাবে? তাহলে এই একই কথা, আজ যে লক্ষ লক্ষ বাঙালি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছেন শিক্ষা বা কর্মসূত্রে, তাঁদের বেলায় প্রযোজ্য হবে না কেন একই রকম 'ঢালাও' ভাবে? বিশেষ করে যেখানে আমরা জানিই যে - এই সচলায়তনেরই কিছু পোস্টের বরাতে - যে এদের মধ্যেও এমন বেশ কিছু লোক আসলেই আছেন। খুব ভাল ভাবেই আছেন। তাহলে কি আপনার ভাষায় বলব - 'অধিকাংশ' প্রবাসীই....? বা অধিকাংশ প্রবাসী সচল-সদস্যই....? আর হ্যাঁ, এই "পাকিস্তান ফেরত"-রা কে? এরা কি মঙ্গলগ্রহ থেকে পড়েছেন? (দুঃখিত, কিন্তু আপনার মন্তব্যের টোনটা খানিকটা ঐ রকমই)। এরা কি বাঙালি না? তারা কি এই দেশে জন্মাননি বা এদেশের জল-হাওয়ায় বড় হননি জীবনের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ? স্রেফ সরকারি চাকরি-সূত্রে বদলি/পোস্টিং হয়ে বা প্রশিক্ষনার্থে অল্প কিছু সময় তথা সুনির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য তৎকালীন পশ্চিম-পাকিস্তানে তাঁদের যেতে হয়েছিল বলে তাঁদের 'অধিকাংশের' মাথাতেই স্বজাতি-বিদ্বেষীর কলঙ্ক-তিলক দাগিয়ে দিতে হবে? তাহলে আজ আমাদের পররাষ্ট্র দপ্তরের যেসব কর্মকর্তারা পাকিস্তানে বাংলাদেশ দূতাবাসে বদলি সূত্রে কর্মরত (এবং যারা গত ৪০ বছরে কোন না কোন সময় কর্মরত ছিলেন), তারা যখন দেশে ফিরে আসবেন তখন তাদের আমরা কি বলে ডাকব? 'পাকিস্তান ফেরত'? যাদের বাংলা ভাষা, বাংলা কৃষ্টি কালচারের সাথে কোন সম্পৃক্ততা নেই এবং বাঙালীত্ব নিয়ে যাদের মধ্যে কাজ করে একটা নাক শিটকান ভাব ? ভবিষ্যতে যদি তাদের (বা অন্য বিভাগের কর্মকর্তাদের) কখনও পোটেনশিয়ালি শত্রুভাবাপন্ন কোন দেশে কর্মসূত্রে যেতে হয়, তখন তাদের কি বলা যাবে? 'অমুক-দেশ ফেরত' যারা কিনা স্বজাতিবিদ্বেষী? এর শেষ কোথায়?
****************************************
আপনাকে ধন্যবাদ গুরুত্বপূর্ণ দিকের প্রতি আলোকপাত করায়। শুধু একটা কথা জিজ্ঞাসা করার আছে আপনাকে ...আপনি যে বলেছেন আপনি আমার "আন্দাজি স্বজাতিদ্রোহী-টাইপ একটা কলঙ্ক লেপন করাকে প্রচণ্ড রকম অপছন্দ" করছেন"...কেন? আমার বাবা মা দাদা নানা এবং তাদের পূর্ব পুরুষরা নিজেদের কে "বাঙ্গালী" মনে করে...কলমের খোঁচায় যখন তাঁদের এথনিসিটি বদলে দিয়ে জিয়াউর রহমান "বাংলাদেশী" করে দিলেন... সে বিষয়েও কি আপনার একই রকম "কলঙ্ক লেপন" টাইপ ফিলিং কাজ করে? পূর্ব পাকিস্তানের যারা পাকিস্তান থেকে আলাদা হবার জন্যে যুদ্ধ করেছিল তারা "বাংলাদেশ" নামের একটি রাষ্ট্রের নাগরিক হবার জন্যে সংগ্রাম করেছিলেন ... এথনিসিটির বদলে ফেলতে নয়। জন প্রতিনিধিত্ত হীন এক সামরিক সরকার কর্তৃক এথনিক পরিচয় বদলে দেয়ায় কি তাদের প্রতি সুবিচার করা হয়েছে? আমেরিকা বা ইউরোপের কোন দেশে যদি কেউ ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনার কেউ নাগরিকত্ব নেয় তাহলে সিটিজেন হিসাবে সে নতুন দেশটার নাম বললেও রেইস বা এথনিসিটি হিসাবে কিন্তু ল্যাটিনোই বলে নিজেকে। সামরিক এক সরকার কেন জনমত যাচাই না করে এত বড় একটা ব্যাপার কলমের খোঁচায় পরিবর্তন করে দিল তা বলতে পারেন? কে চেয়েছিল এই পরিবর্তন জিয়াউর রহমানের কাছে? সাধারন জনগন? না। কারন তখন তিনি দল ই গঠন করেন নি...জনগনের কাছেও আসেন নি। তাহলে কার জন্যে করলেন...কার দাবী পূরণে? বাঙ্গালী হিসাবে এথনিক পরিচয় কে সম্মানের চোখে দেখালে কেন এই পরিবর্তন? প্রশ্নের উত্তরের মধ্যেই আছে আমার প্রতি আপনার করা "কঠোর" মন্তব্যের জবাব (যদিও আমার কাছে আপনার মন্তব্য কে কঠিন মনে হয় নি... স্বাভাবিক রিয়াকশান ই মনে হয়েছে)।
ভূখন্ড ভিত্তিক এথনিসিটি যদি চান তাহলে আর সিটিজেন সীপ এবং এথনিসিটি আলাদা করার কি দরকার? এথনিসিটি উল্লেখই করা হয় "রুট" বা "শেকড়" বোঝানোর জন্যে। নাগরিকত্তের পরিবর্তনে যেন শেকড়ের পরিচয় হারিয়ে নয়া যায় সেজন্যে। তাই বাঙ্গালী বাদ দিয়ে নাগরিকত্ব আর এথনিসিটি দুটোই বাংলাদেশী করার কারন কি বলে মনে করছেন আপনি? যদি বলেন যে "পাকিস্তান থেকে ফিরে আসা সামরিক ও বেসামরিক অফিসার রাও বাঙ্গালী এথনিসিটির প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন, পাকিস্তানে পোস্টেড থাকার পরও তাঁদের বাঙ্গালী মনোভাব সমুন্নত ছিল...তাহলে তো বলব জিয়াউর রহমান আরো মারাত্মক কাজ করেছেন। একমাত্র উনার নিজের ইচ্ছা চরিতার্থ করার জন্যে উনি আমাদের এথনিসিটি পালটে দিয়েছেন।
আপনাকে ধন্যবাদ গুরুত্বপূর্ণ দিকের প্রতি আলোকপাত করায়। শুধু একটা কথা জিজ্ঞাসা করার আছে আপনাকে ...আপনি যে বলেছেন আপনি আমার "আন্দাজি স্বজাতিদ্রোহী-টাইপ একটা কলঙ্ক লেপন করাকে প্রচণ্ড রকম অপছন্দ" করছেন...কেন? আমার বাবা মা দাদা নানা এবং তাদের পূর্ব পুরুষরা নিজেদের কে "বাঙ্গালী" মনে করে...কলমের খোঁচায় যখন তাঁদের এথনিসিটি বদলে দিয়ে জিয়াউর রহমান "বাংলাদেশী" করে দিলেন... সে বিষয়েও কি আপনার একই রকম "কলঙ্ক লেপন" টাইপ ফিলিং কাজ করে? পূর্ব পাকিস্তানের যারা পাকিস্তান থেকে আলাদা হবার জন্যে যুদ্ধ করে ছিল তারা সংগ্রাম করেছিলেন "বাংলাদেশ" নামের একটি রাষ্ট্রের নাগরিক হবার জন্যে...তাদের এথনিসিটি বদলে ফেলতে নয়। জন প্রতিনিধিত্ত হীন এক সামরিক সরকার কর্তৃক এথনিক পরিচয় বদলে দেয়া কি তাদের প্রতি সুবিচার করা হয়েছে? আমেরিকা বা ইউরোপের কোন দেশে যদি কেউ ব্রাজিল বা আরজেন্টিনার কেউ নাগরিকত্ব নেয় তাহলে সিটিজেন হিসাবে সে ওই নতুন দেশের নাম বললেও রেইস বা এথনিসিটি হিসাবে কিন্তু ল্যাটিনোই বলে নিজেকে। সামরিক এক সরকার কেন জনমত যাচাই না করে এত বড় একটা ব্যাপার কলমের খোঁচায় পরিবর্তন করে দিল তা বলতে পারেন? কে চেয়েছিল এই পরিবর্তন জিয়াউর রহমানের কাছে? সাধারন জনগন? না। কারন তখন তিনি দল ই গঠন করেন নি...জনগনের কাছেও আসেন নি। তাহলে কার জন্যে করলেন...কার দাবী পূরণে? বাঙ্গালী হিসাবে এথনিক পরিচয় কে সম্মানের চোখে দেখলে কেন এই পরিবর্তন? প্রশ্নের উত্তরের মধ্যেই আছে আমার প্রতি আপনার করা "কঠোর" মন্তব্যের জবাব (যদিও আমার কাছে আপনার মন্তব্য কে কঠিন মনে হয় নি... স্বাভাবিক রিয়াকশান ই মনে হয়েছে)।
ভূখন্ড ভিত্তিক এথনিসিটি যদি চান তাহলে আর সিটিজেন সীপ এবং এথনিসিটি আলাদা করার কি দরকার? এথনিসিটি উল্লেখই করা হয় "রুট" বা "শেকড়" বোঝানোর জন্যে। নাগরিকত্তের পরিবর্তনে যেন শেকড়ের পরিচয় হারিয়ে না যায় সেজন্যে। তাই বাঙ্গালী বাদ দিয়ে নাগরিকত্ব আর এথনিসিটি দুটোই বাংলাদেশী করার কারন কি বলে মনে করছেন আপনি? যদি বলেন যে "পাকিস্তান থেকে ফিরে আসা সামরিক ও বেসামরিক অফিসার রাও বাঙ্গালী এথনিসিটির প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন, পাকিস্তানে পোস্টেড থাকার পরও তাঁদের বাঙ্গালী মনোভাব সমুন্নত ছিল"...তাহলে তো বলব জিয়াউর রহমান আরো মারাত্মক কাজ করেছেন। একমাত্র উনার নিজের ইচ্ছা চরিতার্থ করার জন্যে উনি আমাদের এথনিসিটি পালটে দিয়েছেন।
এথনিসিটি না ন্যাশনালিটির কথা হচ্ছে? জিয়া এথনিসিটি পালটে দিয়েছিলেন এইটা কোথায় পেয়েছেন? এথনিসিটি কি পালটানো যায়?
..................................................................
#Banshibir.
আপনি ঠিক ধরেছেন। এথনিসিটি পালটানো যায় না। এজন্য ন্যাশনালিটি না বলে ইচ্ছা করেই এথনিসিটি বলেছি যেহেতু ন্যাশনালিটির আক্ষরিক বাংলা শব্দটির ব্যাবহার কে প্রশ্ন বিদ্ধ করা হয়েছে। আর আবিধানিক ভাবেই ইংরেজীতে ন্যাশনালিটি কথাটির প্রতিশব্দ এথিনিসিটি। ন্যাশনালিটি বা জাতীয়তা বাদ কথাটির ব্যাবহার কে এমন ভাবে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে যেন, যেমন একটি জাতীয় ফুল, একটি জাতীয় ফল, একটি জাতীয় পশু ইত্যাদি একটি একটি করে আছে, তেমনি একটি "জাতীয়তা" থাকতে হবে এবং সেটি হল বাংলাদেশী। ব্যাপারটি এমন না মোটেই। একটি দেশে অনেক জাতি স্বত্বা থাকতে পারে কিন্তু তার পরেও তারা সবাই ওই দেশের নাগরিক হিসাবে সমান রাজনৈতিক সুবিধা ভোগ করবে। বাহান্ন্র ভাষা আন্দলন থেকে শুরু করে ঊনসত্তরের গন আন্দলোন সবই ইস্ট পাকিস্তানের জনগন করেছিল বাঙালী হিসাবে ... "বাংলাদেশী" হিসাবে না...কারন তখন বাংলাদেশের কনসেপ্ট ই ছিল না ... আমরা বাঙ্গালীরা আমাদের পাকিস্তানের নাগরিক হিসাবে ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে চেয়েছিলাম...জানতাম না যে ন্যায্য অধিকারের বদলে আমাদের উপর নির্মম হত্যা যজ্ঞ চালিয়ে আমাদের কে স্বাধীন একটি দেশ গঠন করতে বাধ্য করা হবে। সহজ কথায়..... আমরা একেক সময়ে একেক দেশের নাগরিক হিসাবে ছিলাম ঠিকই কিন্তু আমরা বরাবর বাঙ্গালী জাতি ই ছিলাম। এখন হঠাত করে যদি আমাদের বাঙ্গালী অস্তিত্বকে হঠিয়ে নাগরিক আর জাতি দুই হিসাবেই আমাদের কে বাংলাদেশী বলা হয় তাহলে বাঙ্গালী হিসাবে আমাদের অর্জনের ইতিহাস থেকে কি আমরা সরে যাই না?
যেসব জাতি একটি দেশের নাগরিক ই ছিল বরাবর, তাদের ন্যাশনালিটি আর নাগরিকত্ত একই হয় সাধারনত। কিন্তু আমাদের মত যারা একসময় মোঘল সাম্রাজ্য, তারপর ব্রিটিশ সাম্রাজ্য, এরপর পাকিস্তানের নাগরিক ছিলাম, তাদের জন্যে ন্যাশনলিটির পরিচয় টি অক্ষুন্ন থাকা তাই খুবই জরুরী।
দুর্ভাগ্য জনক হলেও সত্যি যে কাগজে কলমে কোথাও আর আমাদের বাঙ্গালী কথাটির সাথ যোগ নাই...নাগরিক আমরা মাত্র ৪২ বছর আগে তৈরী একটি দেশের; জাতি আমরা "বাংলাদেশী" যার জন্ম আরো পরে। যেন বাঙ্গালী জাতির অর্জন গুলোর অংশীদার আমরা না। যেন আমরা হঠাত করে জন্ম নেয়া "বাংলাদেশী" জাতি যার কোন অতীত ইতিহাস নাই।
জিয়া এথনিসিটি পালটে দিয়েছিলেন এইটা কোথায় পেয়েছেন? রেফারেন্স দিন।
..................................................................
#Banshibir.
লেখক তো তার প্রতি মন্তব্যে বলেছেন, এথনিসিটি বলতে উনি ন্যাশনালিটিকেই বুঝিয়েছেন, আর আভিধানিকভাবেই এথনিসিটি ন্যাশনালিটির প্রতিশব্দ বলেও দাবী করছেন উনি। সেক্ষেত্রে আপনার মন্তব্যে করা ''এথনিসিটি না ন্যাশনালিটির কথা হচ্ছে?'' প্রশ্নটির উত্তরও উনি দিয়েছেন মনে হয়। তাহলে পুনরায় ''জিয়া এথনিসিটি পালটে দিয়েছিলেন এইটা কোথায় পেয়েছেন?'' প্রশ্নটির কারণ কি? বরং, ''জিয়া ন্যাশনালিটি পালটে দিয়েছিলেন এইটা কোথায় পেয়েছেন?'' এমন প্রশ্ন করলে তা একটা নতুন প্রশ্ন হতে পারত!
..................................................................
#Banshibir.
সিনোনিমস এ দেখুন দয়া করেঃ http://www.synonyms.net/synonym/nationality। ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর ভাবে ব্যাখ্যা করে বলার জন্যে। আমি ন্যাশনালিটির অর্থের অক্সফোর্ড ডিকশানারী লিঙ্ক টা দিচ্ছিঃ http://oxforddictionaries.com/us/definition/american_english/nationality
গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সকারের সংবিধান নামক বইটি পরুন। কোন সালে এবং কার কর্তৃক সংবিধানে বাঙ্গালী থেকে বাংলাদেশী জাতিসত্তা হিসাবে আমাদের কে প্রতিষ্ঠিত করা হল তা জানুন। আর এথিনিসিটি আর ন্যাশনালিটির কনফিউশান দূর করতে ডিকশানারি দেখুন। ধন্যবাদ।
অক্সফোর্ড ডিকশানারীঃ http://oxforddictionaries.com/us/definition/american_english/nationality
আপনি প্রথমে বলেছেন "কলমের খোঁচায় যখন তাঁদের এথনিসিটি বদলে দিয়ে জিয়াউর রহমান "বাংলাদেশী" করে দিলেন" ইত্যাদি। এখন বলছেন রেফারেন্স সংবিধান। সংবিধানে জিয়া এথনিসিটি পালটে দিয়েছিলেন বলা আছে? নাকি ন্যাশনালিটি? আই রিপিট, এথনিসিটি, না ন্যাশনালিটি? আই রিপিট এগেন, এথনিসিটি না ন্যাশনালিটি?
উত্তর দেবেন এই ফর্মেঃ
সংবিধানে বলা আছে জিয়া _______________ বদলে দিয়েছেন।
শুধু এই এক লাইন।
..................................................................
#Banshibir.
নিকট প্রতিশব্দ আছে, দূরবর্তী প্রতিশব্দও আছে। 'এথনিসিটি' শব্দটি ন্যাশনালিটি'র নিকট না দূর প্রতিশব্দ- এমন প্রশ্ন তোলা যেতেই পারে, এমনকি এটি আদৌ প্রতিশব্দ কিনা, সে প্রশ্নও করা যেতে পারে।
কিন্তু লেখক তো বলছেন, উনি এথনিসিটিকে প্রতিশব্দই ভেবেছেন, এবং আর তাই আপনার আদেশাত্মক প্রশ্নের এক লাইনের উত্তর যদি হয়,
সংবিধানে বলা আছে জিয়া এথনিসিটি বদলে দিয়েছেন।,
তাহলে উনি তো এটাই বলতে চাইলেন যে, জিয়া ন্যাশনালিটি বদলে দিয়েছেন, তাই না?
আপনার আদেশ-ধর্মী প্রশ্নের উত্তরে আরও বলা যায়, ধরুন আমরা জানি, হেফাজত আমাদের জাতীয় সঙ্গীত বদলে দিতে চায়। এখন একজন আম-পাঠক হিসেবে আমি বললাম, হেফাজত আমাদের প্রাণের সঙ্গীত বদলে দিতে চায়। এখন আপনি যদি প্রশ্ন করেন, রেফারেন্স চাই, রেফারেন্স, সেক্ষেত্রে কোন রেফারেন্স সত্যি দিতে পারব না, কারণ আমরা আম-আদমিরা রেফারেন্স ছাড়াই অনেক কথা বলে ফেলি, লেখকদের মত গাদা গাদা রেফারেন্স থাকে না বলেই তো আমরা আম-আদমি।
... আমি আপনার মত এক কথায় সব কিছু বুঝে যাই নয়া কিম্বা আমাকে কেউ এককথায় কিছু বুঝিয়ে দিলেই তা মেনে নেই নয়া। আমি একটু তলিয়ে দেখি। সুতরাং আপনার মনের মত এক কথায় আমার উত্তর হবে না এটাই স্বাভাবিক। তাও আপনার মত করেই বলছিঃ সংবিধানে বলা আছে জিয়া _জাতিপরিচয়__বদলে দিয়েছেন।
জাতীয়তা বদলে দিয়েছেন। এর মানে আপনি বুঝতে না পারলে আপনার সমস্যা। ফুলস্টপ।
..................................................................
#Banshibir.
আপনি কি আমার মন্তব্যটি ঠিকমত পড়েও দেখেননি?!
আমি কি বিষয়ে মন্তব্য করলাম, আর আপনি কি বিষয়ে প্রতিমন্তব্য করছেন দেখে একেবারেই তব্দা খেয়ে গেলাম! আগামাথা কিছুই খুঁজে পাচ্ছি না! আমার মন্তব্যের কোন জায়গায় আমি জিয়াউর রহমানের কলমের এক খোঁচায় বাঙালির এথনিসিটি বদলে দেয়ার সমর্থন করেছি বা আদৌ এ প্রসঙ্গে কোন কথা বলেছি বলুন তো? তাহলে আমার মন্তব্যের সাথে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে আপনি প্রতিমন্তব্যে এত বাগ্বিস্তার করছেন কেন আমার বলা মূল বিষয়ে কিছু না বলে? আমি কিন্তু আপনার লেখা থেকে সরাসরি কোট করে অত্যন্ত স্পেসিফিক একটা বিষয়ে সম্পূর্ণ প্রাসঙ্গিক একটা মন্তব্যই করেছিলাম। কিছু প্রশ্নও করেছিলাম। কিন্তু আপনি সে বিষয়ে কোন জবাব না দিয়ে সম্পূর্ণ অন্য বিষয়ে ব্যপক বাক্যবিস্তার করছেন, যার সাথে আমার প্রশ্নের কোন সম্পর্ক নেই।
নাকি আপনার দু'টি ভিন্ন ইস্যুর মধ্যে, মুড়ি-মিছরির মধ্যে - পার্থক্য করার ক্ষমতাটুকুই আসলে নেই? কিম্বা, রাজনীতিবিদরা টেলিভিশনের টক-শোতে এসে বেকায়দা প্রশ্নের মুখে সুকৌশলে চট করে প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে অন্য প্রসঙ্গ বা ইস্যুতে চলে গিয়ে ব্যপক বাগবিস্তার করতে করতে মূল প্রশ্নটা ধামাচাপা দিয়ে দিতে চান - সেই রকম কোন কৌশল অবলম্বন করছেন আমার প্রশ্নটা খুব ভাল করে বুঝা সত্ত্বেও (বা ফলেই) ? আমি জানি না, এবং লক্ষ্যহীণ এলোমেলো ও বিভিন্ন ধরণের ভুল "ধারণা আর যান্ত্রিক সরলীকরণে পূর্ণ" প্রতিমন্তব্যটি পড়ার পর জানার আর আগ্রহও বোধ করছি না। তবু আপনি যেহেতু আমার মূল প্রশ্নটিকে তার নিজস্ব মেরিটে বুঝতে পারেননি বা বুঝেও বুঝতে চাচ্ছেন না, তাই সেটা আবারও স্মরণ করিয়ে দেই। জিয়াউর রহমানের কীর্তিকাহিনির মধ্যে (তাছাড়া এ সম্পর্কে আমরা খুব ভাল ভাবেই অবগত আছি) প্রশ্ন ও তার উত্তরটি ধামাচাপা না দিয়ে, শুধু ও স্পেসিফিকালি এটার উত্তর দিলেই চলবে -
------------------------------------------------------------------
কিছু অতিরিক্ত ও খুচরো মন্তব্য ও প্রশ্ন --
১। জিয়াউর রহমান কস্মিনকালেও কলমের এক খোঁচায় আমাদের "এথনিসিটি" পালটে দেননি। চাইলেও পারতেন না। তার চৌদ্দ পুরুষেরও সেই ক্ষমতা ছিল না। কলম কেন, বাংলাদেশের সমস্ত কামান-বন্দুক সহযোগেও না। তবে তিনি তো কিছু একটা পাল্টেছিলেনই। কিন্তু সেটা কি? যে জিনিষটা পাল্টেছিলেন তার সাথে "এথনিসিটি"-র পার্থক্যটা জানেন? এগুলি একটু জেনে লিখলে ভাল হয় না?
২। আমরা জানি ৭১-এ বাঙালি রাজাকার-আলবদর-আল শামস-শান্তিকমিটি ও এদের ছাত্র/যুববাহিনির ও অন্যান্য অক্সিলিয়ারি ফোর্সের নিরঙ্কুষ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই (সম্ভবত প্রায় সবাইই?) তৎকালীণ পূর্ব-পাকিস্তানের মূল ভুখণ্ডেই বসবাসকারী বা অবস্থানকারী ছিল, আপনার ভাষায় 'পাকিস্তান ফেরৎ' ছিল না । তাহলে কি আপনারই যুক্তি অনুসরন করে বলা যাবে - সে সময়ে পূর্ব-পাকিস্তানের মূল ভুখণ্ডে অবস্থানকারী সাড়ে সাত কোটি বাঙালিই, বা নিদেনপক্ষে তাদের অধিকাংশই রাজাকার-আলবদর-আল শামস দেশদ্রোহী বেইমান ছিলেন? আপনার কথার মানে কিন্তু তাই দাঁড়ায়।
৩। "আমার বাবা মা দাদা নানা এবং তাদের পূর্ব পুরুষরা নিজেদের কে "বাঙ্গালী" মনে করে..." - আপনার কি ধারণা, তৎকালীণ পশ্চিম পাকিস্তানে (এবং সেটা স্বদেশই ছিল ৭১-এর আগ পর্যন্ত) ৭১-পূর্বকালেই জীবন-জীবিকা সূত্রে যাওয়া, সাময়িক ভাবে আটকা পড়া ও পরে ফিরে আসা অজস্র বাঙালি আসলে বাঙালি ছিল না? তারা নিজেদের "বাঙ্গালী" মনে করত না? সব 'হিরোজ' (নাকি 'সুপারন্যাচারাল'?) ছবির 'শেইপ-শিফটারের' মত ছদ্মবেশী পাকিস্তানি শয়তান বা জাদুকর ছিল আসলে - বাঙালি সেজে ধোঁকা দিয়ে আমাদের দেশে ঢুকে পড়েছে? তারা কেউ আসলে আমাদের কারও 'বাবা মা দাদা' বা কোন রকম আত্নীয়-স্বজন ছিল না?
৪। আপনার কি ধারণা পাকিস্তান কোন কামরুপ-কামাক্ষ্যা বা অডিসির সার্সি-দ্বীপ জাতীয় রহস্যময় ব্ল্যাক-ম্যাজিক বা ডাইনির দেশ , যেখানে কেউ পাড়া দেওয়া মাত্রই নিজের সারাজীবনের আত্নপরিচয় ও বাঙালিত্ব যাদুমন্ত্রবলে বেমালুম ভুলে গিয়ে কামরুপ-কামাক্ষ্যা বা সার্সির ভেড়ার মত ছুমন্তরে কোন 'পাকিস্তানি ভেড়া' বা জোম্বিতে পরিণত হয় অবধারিত ভাবে?
৫। আপনি কি নিশ্চিত করে বলতে পারবেন আপনার তথাকথিত 'পাকিস্তান ফেরৎ'-দের মধ্যে আপনার বাবা মা দাদা নানা এবং তাদের পূর্ব পুরুষরা [যারা] নিজেদের কে "বাঙ্গালী" মনে করে, তাদের চেয়েও বড় নিজেদের বাঙালি মনে-করনেওয়ালা ও বাংলা-প্রেমিক, বাঙালি কৃষ্টি ও কালচার প্রেমিক ও তাতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা বাঙালিত্বে-গর্বিত, দেশপ্রেমিক, ৫২-র ভাষা-সংগ্রামী, মুক্তিযোদ্ধা, ইত্যাদিরা ছিলেন না?
৬। আপনি কি জানেন পাকিস্তানে আটকা-পড়া শত-শত (নাকি হাজার-হাজার? ঠিক জানি না) বাঙালি বেসামরিক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পাকিস্তান সরকারের পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে ওদেশেই থেকে যাওয়ার অপশনের পাছায় লাথি মেরে দেশের মায়ায়, টানে ও আনুগত্যে বন্দীত্ব ও গৃহবন্দীত্ব বরণ করেছিলেন মৃত্যুর আশঙ্কা নিয়ে এবং যাদের অনেকেই সুযোগ পাওয়া মাত্রই বন্দী অবস্থা থেকেই পরিবার সুদ্ধ পাক-আফগান সীমান্তের বা খাইবার পাসের ভয়ঙ্কর ও ল'লেস 'দুর্গমতম গিরি কান্তারতম মরু'-র হাজার-হাজার ফুট উঁচু, পদে পদে মৃত্যুফাঁদ পাতা, রুক্ষ, দুর্গম, পাথুরে, অগ্নিতপ্ত পর্বতশিরার মধ্য দিয়ে কিলবিল করা খুনি সীমান্তরক্ষী, আর্মি, মরুদস্যু, ডাকাত ও চোরাকারবারিদের ধাওয়া ও গুলি খেতে খেতে জীবনবাজি রেখে দেশে ফিরে এসেছিলেন? কেউ সফল হয়েছিলেন, কেউ কেউ আবার ধরাও খেয়েছিলেন? আরও বহু বাঙালিও এভাবে নিছক দেশের টানে ফিরেছিলেন জীবনবাজি রেখে নিরাপদে ওখানেই দালালি করে থেকে না যেয়ে বা সবকিছু 'ঠাণ্ডা' হওয়ার সুবিধাবাদীসুলভ অপেক্ষা না করে, এবং দেশে ফিরে কিছু না জেনেই আন্দাজি ব্লগিং করেননি বা কোন কাল্পনিক গোষ্ঠিকে ডেমোনাইজ করেননি বরং অনেকে সাফার করেছেন আরও দীর্ঘকাল নানাভাবে? জানেন কি যে, সম্ভবত বেশির ভাগ সেনা অফিসারও বন্দী হয়েছিলেন, তবে কেউ কেউ পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধও করেছেন বা আসতে গিয়ে মারা পড়েছিলেন? এই স-ম-স্ত মানুষগুলি কি তাহলে সবাই স্বজাতি-বিদ্বেষী - বাংলা ভাষা, বাংলা কৃষ্টি কালচারের সাথে কোনরকম সম্পৃক্ততাহীণ ও বাঙালীত্ব নিয়ে নাক শিটকানেওয়ালা?! একটা জিনিষ কি জানেন, কঠিনতম বাস্তবের সাথে সরাসরি ও সশরীরে সাক্ষাৎ মুখোমুখি হওয়া বা মোকাবেলা করা এক জিনিষ, আর শান্তিকালীণ সময়ে ভাল করে না-জেনে এসি রুমে বসে বসে একাধিক নিক নিয়ে বহু বছর পরে অতীতের নিজের না-দেখা আবেগময় একটা ইস্যুর ছত্রছায়ায় নিরাপদে কাল্পনিক কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিষোদগার বা চরিত্রহনন করা আরেক জিনিষ। আমাদের সবার না হলেও অন্তত অধিকাংশেরই "বাবা-দাদা-নানা-পূর্বপুরুষ" ইত্যাদির মধ্যে কেউ না কেউ মুক্তিযোদ্ধা, ভাষাসৈনিক, আদর্শবাদী মহৎ বিপ্লবী, বা অন্য কোন গৌরবোজ্জ্বল কীর্তির অধিকারী পাওয়া যাবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে এইসব কীর্তির কৃতিত্ত্ব কিন্তু আসলে তাদেরই, আমাদের নয়। আমরা তাদের কীর্তিতে তাদের প্রতি আপ্লুত, কৃতজ্ঞ, অণুপ্রাণিত ইত্যাদি হতে পারি বটে, কিন্তু সেই ফুটানিতে খৈ-এর মত ফুটতে ফুটতে 'আমার বাপ-দাদা এই এই করেছে, তোমার বাপ-দাদা কি করেছে' এই জাতীয় নিম্নরুচির এটিচ্যুড নিয়ে কোন স্বকপোলকল্পিত শ্রেণীর বিরুদ্ধে বিষোদ্গারের তরোয়াল খুলে ঝাপিয়ে পড়ার আগে আমাদের আসলে জিজ্ঞাসা করা উচিৎ - আমরা নিজেরা আসলে দেশ, দশ ও মানবতার জন্য কি ও কতটুকু করেছি বা করছি। সুর্যের চেয়ে বালুর তাপ বেশি হওয়াটা অন্তত মানুষের ক্ষেত্রে মোটেই ভাল লক্ষণ নয়।
৭। কিছু অতি কঠিন প্রত্যক্ষ বাস্তব অভিজ্ঞতার কারনে খানিকটা আবেগাক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ ও বোধহয় অনেকখানি অসংযত দু'টি মন্তব্য করে ফেললাম। সেজন্য সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। তবে হ্যাঁ, পোস্ট-লেখকের কাছ থেকে আমার প্রশ্নগুলির সরাসরি, প্রসঙ্গ-নিবদ্ধ ও দ্ব্যররথহীণ উত্তর পেলে ভাল লাগবে। এ প্রসঙ্গে এই আমার শেষ মন্তব্য। ধন্যবাদ।
****************************************
আমি আপনার কমেন্ট শুধু পড়িই নাই, বেশ গুরুত্বের সাথেই জানার আগ্রহ নিয়ে পড়েছি। আর পড়েছি বলেই আমাদের এথনিসিটি "বাঙ্গালী" নিয়ে কথা গুলো বলেছি। আমি এথনিসিটি আর ন্যাশনালিটি কি তা জানি, বুঝি। কেন ন্যাশনালিটি না বলে এথনিসিটি বলেছি তার ব্যাখ্যা উপরের একটি কমেন্টের উত্তরে এই মাত্র লিখেছি। আপনার জন্যে আবার দিচ্ছিঃ
"আপনি ঠিক ধরেছেন। এথনিসিটি পালটানো যায় না। এজন্য ন্যাশনালিটি না বলে ইচ্ছা করেই এথনিসিটি বলেছি যেহেতু ন্যাশনালিটির আক্ষরিক বাংলা শব্দটির ব্যাবহার কে প্রশ্ন বিদ্ধ করা হয়েছে। আর আবিধানিক ভাবেই ইংরেজীতে ন্যাশনালিটি কথাটির প্রতিশব্দ এথিনিসিটি। ন্যাশনালিটি বা জাতীয়তা বাদ কথাটির ব্যাবহার কে এমন ভাবে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে যেন, যেমন একটি জাতীয় ফুল, একটি জাতীয় ফল, একটি জাতীয় পশু ইত্যাদি একটি একটি করে আছে, তেমনি একটি "জাতীয়তা" থাকতে হবে এবং সেটি হল বাংলাদেশী। ব্যাপারটি এমন না মোটেই। একটি দেশে অনেক জাতি স্বত্বা থাকতে পারে কিন্তু তার পরেও তারা সবাই ওই দেশের নাগরিক হিসাবে সমান রাজনৈতিক সুবিধা ভোগ করবে। বাহান্ন্র ভাষা আন্দলন থেকে শুরু করে ঊনসত্তরের গন আন্দলোন সবই ইস্ট পাকিস্তানের জনগন করেছিল বাঙালী হিসাবে ... "বাংলাদেশী" হিসাবে না...কারন তখন বাংলাদেশের কনসেপ্ট ই ছিল না ... আমরা বাঙ্গালীরা আমাদের পাকিস্তানের নাগরিক হিসাবে ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে চেয়েছিলাম...জানতাম না যে ন্যায্য অধিকারের বদলে আমাদের উপর নির্মম হত্যা যজ্ঞ চালিয়ে আমাদের কে স্বাধীন একটি দেশ গঠন করতে বাধ্য করা হবে। সহজ কথায়..... আমরা একেক সময়ে একেক দেশের নাগরিক হিসাবে ছিলাম ঠিকই কিন্তু আমরা বরাবর বাঙ্গালী জাতি ই ছিলাম। এখন হঠাত করে যদি আমাদের বাঙ্গালী অস্তিত্বকে হঠিয়ে নাগরিক আর জাতি দুই হিসাবেই আমাদের কে বাংলাদেশী বলা হয় তাহলে বাঙ্গালী হিসাবে আমাদের অর্জনের ইতিহাস থেকে কি আমরা সরে যাই না?
যেসব জাতি একটি দেশের নাগরিক ই ছিল বরাবর, তাদের ন্যাশনালিটি আর নাগরিকত্ত একই হয় সাধারনত। কিন্তু আমাদের মত যারা একসময় মোঘল সাম্রাজ্য, তারপর ব্রিটিশ সাম্রাজ্য, এরপর পাকিস্তানের নাগরিক ছিলাম, তাদের জন্যে ন্যাশনলিটির পরিচয় টি অক্ষুন্ন থাকা তাই খুবই জরুরী।
দুর্ভাগ্য জনক হলেও সত্যি যে কাগজে কলমে কোথাও আর আমাদের বাঙ্গালী কথাটির সাথ যোগ নাই...নাগরিক আমরা মাত্র ৪২ বছর আগে তৈরী একটি দেশের; জাতি আমরা "বাংলাদেশী" যার জন্ম আরো পরে। যেন বাঙ্গালী জাতির অর্জন গুলোর অংশীদার আমরা না। যেন আমরা হঠাত করে জন্ম নেয়া "বাংলাদেশী" জাতি যার কোন অতীত ইতিহাস নাই। "
আশা করব আপনি এটা ধরতে পেড়েছেন যে আমাদের মত যেসব জাতি বহু দেশের নাগরিক ছিল তাদের জন্যে ন্যাশনালিটি হচ্ছে তাদের এথনিক পরিচয় টিই। তাই জিয়াউর রহমানের কলমের খোঁচায় আমাদের বাঙ্গালী থেকে বাংলাদেশী করে ফেলাটা আমাদের এথনিসিটির উপরই হস্তক্ষেপ। কাগজে কলমে আমাদের পরিচয় এখন শুধুই বাংলাদেশী, বাঙ্গালী নয়।
এবার আসি আপনার করা মূল প্রশ্নে যে আমি কিসের ভিত্তিতে বললাম ৭১ এর পর পাকিস্তান ফেরত সেনা সদস্য বা অফিসারদের অধিকাংশেরই (সংখ্যায় অল্প বলছি না কেন তা আপনার প্রশ্ন) বাংলা ভাষা, বাংলা কৃষ্টি কালচারে কোন সম্পৃক্ততা ছিল না। আমি বলেছি আমার নিজের জানা থেকে। সেনাবাহীনীর যেসব সদস্যরা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ "বাঙ্গালী" বলে "পরিসংখ্যান" দ্বারা প্রমানিত (বিবিসি বাংলার দুইমাস ব্যাপী সারা বিশ্বে চালানো জরিপ অনুযায়ী) ব্যক্তিত্ব শেখ মুজিব কে হত্যা করে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চেতনা স্যেকুলারিজম কে পায়ে দলে সদর্পে ঘোষণা করে যে "আজকে থেকে এই দেশ ইসলামিক রিপাবলিকান অফ বাংলাদেশ"; যারা পরবর্তী কালে অতি গৌরবের বাঙ্গালী ন্যাশনালিটিকে মুছে ফেলে অদ্ভুত এক বাংলাদেশী ন্যাশনালিটি দাঁড় করায়; সেনাবাহিনীর যেসব সদস্যের প্ররোচনায় কর্নেল তাহেরের মত বাঙালীকে সমবেত ডিসিশানে ঠান্ডা মাথায় খুনের পরিকল্পনা করে; যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ যার যাত্রা শুরু ৮ পাউন্ড নিয়ে সেরকম একটি নবজাতক দেশে ফিরে যেসব সেনা সদস্য পাকিস্তানের মত সুবিধা আর অস্ত্র নাই বলে গোটা সেনাবাহিনীকে খেপিয়ে তুলেছিল ...তাদের সংখ্যা অতি অল্প বলতে চান আপনি? কোন ভাবে কি তাদেরকে "বাঙালী" মানসিকতার বলা যায়? এ পর্যন্ত যে কয়টা ইতিহাসের বই পড়েছি বা আলোচনা শুনেছি সেগুলো তা বলে না। আপনার কাছে এমন কোন পরিসংখান থাকলে দেবেন প্লীজ। আমি নিজেও আমার এই ভুল ভাঙ্গাতে চাই। আমি চাই এটা বিশ্বাস করতে যে স্বাধীনতার পরে পাকিস্তান থেকে ফিরে এসে বাংলাদেশের সেনা বাহিনীতে যোগ দেয়া অধিকাংশ সদস্য মনে প্রানে বাঙ্গালী ছিল...তাদের প্ররোচনায় বাঙ্গালী মুক্তিযদ্ধা সেনা কর্মকর্তা দের হত্যা করা হয় নি, বাঙ্গালী ন্যাশনালিটির পরিবর্তন করা হয় নি।
আপনি যেরকম ব্যক্তিগত ভাবে জানা কিছু ঘটনার উদাহরন টেনে পাকিস্তানে কর্মরত অফিসারদের জীবন বাজী রেখে বাংলাদেশে ফেরার গল্প বলেছেন ঠিক একি ভাবে আমি শুধু আমার পরিচিতই শ'খানেকের উপরে অফিসারদের উদাহরন দিতে পারব যারা পাকিস্তান থেকে ফেরার পর কতটা আফসোস নিয়ে দিন পার করেছেন। স্বাধীনতা উত্তর কালে জন্ম নেয়া ছেলে মেয়ে দেরকেও তারা বাংলাতে কথা শেখান নাই, তাদের ছেলেমেয়েরা জাহানারা ইমাম কে ন্যাকা আর ঢঙ্গী বলে মন্তব্য করেছে একাত্তরের দিন গুলি বইটি পড়ার পর, তাদের বাসাতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোন বই নেই, এই ৪২ বছর পরে এসেও তাদের স্ত্রী রা মুক্তিযুদ্ধের যৌক্তিকতা খুঁজে পান না, তাদের ছেলে মেয়ে রা পাকিস্তানি বিয়ে করেছে বাবা মার পাকিস্তান প্রীতি তে উদবুদ্ধ হয়ে...এবং আরও আরও অনেক।
যাইহোক, আমার এই লেখাটার উদ্দেশ্য কাউকে আঘাত করা ছিল না। আপনাকে যদি না জেনে আঘাত করে থাকি তাহলে আসলেই আমি ক্ষমা চাইছি। ৭১ মঞ্চের ওই অনুষ্ঠানের পর আমার উপলব্ধি টাই লিখতে চেয়েছিলাম। আপনি আপনার কমেন্টে লিখেওছিলেন যে আপনি আমার লেখার মূল বক্তব্যের সাথে একমত। আপনার আর আমার দ্বিমতের যে জায়গাটি "অধিকাংশ" তা আমার সরিয়ে নিতে আপত্তি নাই কারন তাতে মূল বক্তব্যের কোনো হের ফের হবে না।
আপনার কথা গুলো পড়ার পর আসলেই মন খারাপ হয়েছে আমার...অনেকের অনেক বড় বড় অবদান আর আত্মত্যাগের হাজারো ঘটনা আমরা জানি না। আপনার কাছ থেকে এমন না জানা অনেক বীরগাথা ভবিষ্যতে আশা করব ব্লগ আকারে।
ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনার ত্যানা-প্যাঁচানো উত্তরে আবারও মন্তব্যঘরে ঢুকতেই হল। আপনি আবারও সেই একই রকম পিছলানো উত্তর দিচ্ছেন, কথার ফেনায় আড়াল করতে চাচ্ছেন যথাযথ উত্তরের অভাব। বুঝাই যাচ্ছে আমার মূল প্রশ্নের সদুত্তর আপনার কাছে নেই।
১। ....হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ "বাঙ্গালী" বলে "পরিসংখ্যান" দ্বারা প্রমানিত (বিবিসি বাংলার দুইমাস ব্যাপী সারা বিশ্বে চালানো জরিপ অনুযায়ী) ব্যক্তিত্ব শেখ মুজিব কে হত্যা....
শেখ মুজিব হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ "বাঙ্গালী" কি শ্রেষ্ঠ বাঙালী না, সেই প্রমান বা পরিসংখ্যান আপনার কাছে কে চেয়েছে? এটা তো আমার প্রশ্নের উত্তর হল না। আমি অন্য বিষয়ে পরিসংখ্যান চেয়েছিলাম। আপনি আমাকে ঠিক কত জন বা কত শতাংশ পাকিস্তান ফেরৎ বাঙালির বাংলা ভাষা, বাংলা কৃষ্টি কালচারে কোন সম্পৃক্ততা ছিল না.... সর্বোপরি বাঙালীত্ব নিয়ে তাদের মধ্যে কাজ করত একটা নাক শিটকান ভাব - ধানাই-পানাই বাদ্দিয়ে এই সহজ উত্তরটি দিন গ্রহণযোগ্য পরিসংখ্যান সহযোগে। এক বিষয়ের পরিসংখ্যান দিয়ে আরেক বিষয় প্রমান হয় না, এটা কি আপনি বুঝেন না?
২। আপনি আরও লিখছেন --
"সেনাবাহীনীর যেসব সদস্যরা শেখ মুজিব কে হত্যা করে.... মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চেতনা স্যেকুলারিজম কে পায়ে দলে.... যারা পরবর্তী কালে অতি গৌরবের বাঙ্গালী ন্যাশনালিটিকে মুছে ফেলে সেনাবাহিনীর যেসব সদস্যের প্ররোচনায় কর্নেল তাহেরের.... যেসব ..." ইত্যাদি ইত্যাদি....।
-- এই যেসব আর যারা-রা কারা? ঠিক কয়জন? সন্দেহ নয়, হার্ড এভিডেন্সের ভিত্তিতে? তারা সমগ্রের ঠিক কত শতাংশ? এরা অল্প কি বেশী সেকথা তো আমি জানতে চাইনি! আমি চেয়েছি পরিসংখ্যান, টোটালের শতাংশ! এই পরিসংখ্যানভিত্তিক শতাংশ ছাড়া আপনার ব্যক্তিগত টুইস্টেড 'অধিকাংশ'-তত্ত্ব কিছুতেই প্রমানিত হয় না। সংখ্যা লাগবে ভাই, সংখ্যা! আপনার ভিত্তিহীণ ব্যক্তিগত মতামতের কোন দাম নাই আমার কাছে।
৩। আপনি উত্তরে খালি সেনাবাহিনির কথায় আলোচনা সীমাবদ্ধ করে ফেলেছেন, অথচ মূল লেখায় কিন্তু ঠিকই বেসামরিক জনগনকেও দাঁড় করিয়েছিলেন আপনার অভিযোগের কাঠগড়ায়। আর এরাই কিন্তু পাকিস্তান-ফেরৎদের বিশালতম অংশ, যার তুলনায় সেনা-সদস্যের সংখ্যা নিতান্তই মাইক্রোস্কপিক হওয়ার কথা। আমিও বিশেষভাবে এই সিভিলিয়ানদের কথাই জানতে চেয়েছি উপ্রের মন্তব্যে। সেনাবাহিনিকে ডিফেণ্ড করার কোন আগ্রহ নেই আমার। সুতরাং আপনাকেও এদের ব্যাপারেই আসলে উত্তর করতে হবে। আপনাকে গ্রহণযোগ্য পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে বলতে হবে, এদের ঠিক কত জন ও কত শতাংশের বাংলা ভাষা, বাংলা কৃষ্টি কালচারে কোন সম্পৃক্ততা ছিল না.... সর্বোপরি বাঙালীত্ব নিয়ে তাদের মধ্যে কাজ করত একটা নাক শিটকান ভাব ! আবারও, এই পরিসংখ্যানভিত্তিক শতাংশ ছাড়া আপনার ব্যক্তিগত 'অধিকাংশ'-তত্ত্ব কিছুতেই প্রমানিত হয় না। সংখ্যা লাগবে ভাই, সংখ্যা! এবং সমগ্রের প্রেক্ষিতে সঠিক শতাংশ। আপনার ভিত্তিহীণ ব্যক্তিগত 'স্পিনের' কোন দাম নাই আমার কাছে।
৪। "আপনি যেরকম ব্যক্তিগত ভাবে জানা কিছু ঘটনার উদাহরন টেনে".... জ্বি না, আমি ব্যক্তিগত ভাবে জানা কোন ঘটনার উদাহরন টেনে কোন কিছু দাবী করিনি। আমি শুধু প্রশ্ন করেছি। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সাথে আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কোন তুলনাও করিনি। আমার মুখে আপনার কথা ভরে দিয়েন না। এই প্রসঙ্গে আমার কোন আবেগ থাকলেও (শুধু এটুকুই বলেছি, কোন উদাহরণ দেই নি), আমি আপনাকে স্রেফ একটা মূল ও কয়েকটা অপেক্ষাকৃত গৌণ - নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন করেছি। এটুকু বাদে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে কোন ভাবেই বেশি ভ্যালিড নয় (যদি দুটোই সত্য হয়)। আমি বা আপনি ব্যক্তিগত ভাবে কি জানি বা না জানি, সেটা একটা পাব্লিক ফোরামের বিতর্কে নিতান্তই অপ্রাসঙ্গিক। এটা তো শুধু আমি-আপনি পড়ছি না, অন্যরাও পড়ছেন। এই অন্যরা কিভাবে জানবেন আমাদের দাবীগুলি আসলেই সত্য, আমাদের জানা তথ্যগুলি আসলেই সঠিক এবং সেগুলি সঠিকভাবেই জানা? এবং সেই নিতান্তই স্বঘোষিত জানার ভিত্তিতে আপনি বা আমি যে সিদ্ধান্ত বা অনুসিদ্ধান্তে পৌঁছুচ্ছি, তাতে আসলেই বৈধভাবে বা পদ্ধতিগতভাবে পৌঁছুনো যায়? মোদ্দা কথা ব্যক্তিগত এনেকডোটাল উদাহরণ দিয়ে এ কাজ হবে না। নিরপেক্ষ সূত্র থেকে গ্রহণযোগ্য পরিসংখ্যান চাই। আপনার-আমার ব্যক্তিগত দাবী না। এজন্যেই আমার মূল প্রশ্নের শুরুতেই স্পষ্ট ভাবে বলে দিয়েছিলাম - "...নিজের ব্যক্তিগত প্রেজুডিস, এনেকডোটাল উদাহরণ বা সাব্জেক্টিভ মতামত বাদে..."।
৫। এথনিসিটি/ন্যাশনালিটি/জাতীয়তাবাদ নিয়ে আমি আপনার সাথে আরেক দফা কোন ধোয়াঁটে পিচ্ছিল তর্কে লিপ্ত হতে চাই না। শুধু বুঝলাম আপনি নিজের দেয়া রেফারেন্সই পড়ে বুঝতে পারেন না, সুতরাং তর্ক করা বৃথা।
৬। আমি আপনার সাথে এথনিসিটি/ন্যাশনালিটি থেকে শুরু করে জিয়া বা অন্য কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কীর্তিকলাপ হয়ে আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বা এনেকডোটাল উদাহরণ - এসব কোন বিষয়েই আর আলাপ করতে চাচ্ছি না। আপনি শুধু এবং শুধুমাত্র আমার মূল প্রশ্নের স্পেসিফিক উত্তর দিন বিশেষ করে সিভিলিয়ানদের প্রসঙ্গে - নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য, প্রকাশিত পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে। ধন্যবাদ।
****************************************
এই ব্লগটি লেখাই হয়েছে একটি চ্যানেলে প্রচারিত অনুষ্ঠানের প্রেক্ষিতে। এই পোস্টে যা বলা হয়েছে তা সবই ঐ অনুষ্ঠানে বলা বক্তব্য। এর জন্য আবার নতুন করে কি রেফারেন্স লাগবে? পারলে অনুষ্ঠানটির রেকর্ড যোগাড় করে দেখেন এবং বিএনপিসহ, পাকিস্তান ফেরত এবং পাকিস্তানপন্থীদের দালালী একটু কম করেন। অনেক তো হল, এখন আর এই সব ফালতু , গায়েবী //অধিকাংশ//কে বাঙ্গালী হিসাবে দেশের মানুষের সামনে দাড় করানো বন্ধ করেন ( এটা বললাম এই জন্য যে আপনি সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছেন অযথা পরিসংখ্যান ও শতাংশের হিসাব চেয়ে)
ঐ বিশেষ বাক্যটির ক্ষেত্রে লেখক যা বলেছেন নিজের বয়ানেই বলেছেন, নিজের বিশ্বাস সম্পর্কেই বলেছেন। সুতরাং এর দায়িত্ব তারই। তাই প্রামাণ্য রেফারেন্স লাগবেই, নয়তো ভুল স্বীকার করতে হবে। এটা এমন কিছু লজ্জার বিষয় না, মানুষের বোঝার ভুল হতেই পারে। উনি পরিসংখ্যানের রেফারেন্স দিতে পারলে আমিও নির্দ্বিধায় নিজের ধারণা সংশোধণ করে নিব। তবে আপনাকে প্রমান করতে হবে "বিএনপিসহ, পাকিস্তান ফেরত এবং পাকিস্তানপন্থী" এর সবকটি সমার্থক শব্দ, অন্তত ১ম ও ৩য়টির সাথে ২য়টি।
একজন দেশদ্রোহী রাজাকারকে হোয়াইটওয়াশ করার ঘৃণ্য অপপ্রয়াসকে আমি যতটুকু ঘৃণা করি, একজন নির্দোষ, নিরপরাধ স্বদেশবাসীকে অন্যায়ভাবে দেশদ্রোহী সাজানোর জঘন্য প্রয়াসকেও আমি ততটুকুই বা তার চেয়েও বেশি ঘৃণা করি। এটুকুই আমার সব কথার সার কথা, এবং লেখকের বক্তব্যে আপত্তি। এইটুকু বিবেক, বা সভ্যতার মূলনীতি যদি আপনার বোধগম্য না হয়, সেক্ষেত্রে আপনার মত লোককে 'বাঙ্গালী' নামধারী কুলাঙ্গার ছাড়া আর কিছুই আমার পক্ষে গণ্য করা সম্ভব না। 'বাঙালী' হতে হলে আগে 'মানুষ' হতে হয়, মানুষ না হয়ে বাঙালী হওয়া যায় না। আর মানুষ হওয়ার অন্যতম অপরিহার্য মৌলিক বা প্রাথমিক শর্ত হচ্ছে - নিরপরাধ মানুষের 'বিমানবিকীকরণ' না করা। সুতরাং আগে মা্নুষ হন, তারপর বাঙালীত্ব ফলায়েন!
আমার সম্পর্কে যেসব বিশেষন প্রয়োগ করলেন সে সম্পর্কে কিছুই বলব না। ভিত্তিহীণ অনুমান বা কল্পনার বদলে ফ্যাক্ট জানতে চাইলে যে ফ্যাক্ট ছাড়া আর কারও 'দালালী' করা হয়, তা এই প্রথম শুনলাম। বুঝাই যাচ্ছে আপনার তোতাপাখির মত ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে তোতাপাখির মতই অত্যন্ত লিমিটেড একটা অর্থবোধহীণ ভোকাবুলারি ছাড়া -- কিছু না বুঝে দু'চারটা মুখস্থ করা বুলি বা গালি ছাড়া - আর কিছুই সঞ্চিত নেই। সেগুলিই মনে হয় পাভলভিয়ান পরীক্ষার কন্ডিশন্ড রিফ্লেক্সের মত যত্রতত্র ছিটকে বেরিয়ে আসে। কি আর করা যাবে, এটা আপনার দোষ না! বিধাতার দোষ।
****************************************
১, "অধিকাংশ" শব্দটার অর্থ জানার চেষ্টা করেন তাহলেই শতাংশের হিসাব পেয়ে যাবেন। সাধারন বাংলা শব্দের অর্থ জানেন না অথচ এসেছেন শতাংশের হিসাবে পাকিস্তান ফেরতদের বাঙ্গালী মনস্কতার প্রমান চাইতে।
২, ব্লগ মানেই নিজের উপলব্ধি আর অভিজ্ঞতার কথা থাকবে তাতে...এর বৈশিষ্ট্যই হল যে এটা এনেকডোটাল...সুতরাং আগে জানেন ব্লগ কি। ব্লগ সম্পর্কে আপনার জ্ঞ্যান তো দেখি হেফাজতের হুজুরদের মত "ব্লগ দিয়া ইন্টারনেট চালায়" টাইপ।
৩, নিজেই নিজের মন্তব্য কে "খুচরো" বলে উল্লেখ করে "কামাক্ষ্যা বা অডিসির সার্সি-দ্বীপ জাতীয় রহস্যময় ব্ল্যাক-ম্যাজিক বা ডাইনির দেশ" ইত্যাদি রূপকথা মার্কা কথার ফুল ঝুরিতে ভরিয়ে তুলে আমাকে বলছেন ত্যানা প্যাচানি। সেলুকাস তুমি কোথায়? !!!!!!
৪, পাকিস্তান ফেরত বাঙ্গালীদের মধ্যে "অধিকাংশ" নাকি "গুটি কয়েক" নাক শিটকানো বাঙ্গালী ছিলেন এই নিয়ে লিখে ঝড় তুলে ফেললেন কিন্তু পাকিস্তান ফেরত কারা এইটারই ধারণা নাই আপনার !!! বাংলা ভাষায় বহুব্রীহি সমাস বলে একটা ব্যকারনিক কন্সেপ্ট আছে...পাকিস্তান ফেরত ব্যাপারটাও বহুব্রীহি সমাস সিদ্ধ। প্রচলিত নিয়মে এর অর্থ যে কোন মানুষের যে কোন সময়ে পাকিস্তানে গিয়ে ফিরে আসা হলেও আসলে বোঝানো হয় একটা নির্দিষ্ট গ্রুপ কে। বাংলাদেশে অসংখ্য ব্লগে আছে এরা কারা, কত জন, কোন সময়ে কি পরিস্থিতিতে ফিরে এসেছেন। একটু পড়ে নিন। জেনে নিন।
৫, নিজে গায়ে পরে লাগতে এসে আবার গায়ের জোড়ে মানব না টাইপ রাগ দেখানোর কায়দা টা পাকিস্তানের কাজ কারবার ই মনে করিয়ে দেয়। আমি খুব স্পস্ট ভাবেই বলেছি যে ৭১ মঞ্চের ওই আলোচনা অনুষ্ঠানের বক্তাদের কথায় আমার কি উপলব্ধি হয়েছে সেটাই আমার লেখার ভিত্তি। আপনার যদি কোন অমত থাকে তা প্রকাশ করুন। উপযুক্ত যুক্তি না দেখাতে পেরে যে শুধু শুধু পরিসংখ্যান পরিসংখ্যান করে লাফালাফি করছেন তা অতন্ত্য বিরক্তিকর। আপনি নিজেই আমার এই উপলব্ধি মূলক লেখাকে "বিতর্ক" নাম দিয়ে কিসের দাম আপনার কাছে আছে আর কিসের দাম নাই তা বোঝাচ্ছেন আমাকে। আশ্চর্য!!!!
৬, আপনি আমাকে ভাই ডাকা শুরু করলেন কেন? ফালতু সেন্টিমেন্টাল মার্কা কথা বলার কি মানে? কিসের ভিত্তিতে আমি আপনার ভাই?
৭, পরিসংখ্যান দিয়ে দেশপ্রেম বা দেশপ্রেমিক তৈরী করা যায় না। চার লাখ পাকিস্তান ফেরত অফিসার আর আটাশ হাজার বাঙ্গালী পাক সেনা সদস্য ৭৩-৭৪ সালে বাংলাদেশে ফিরেছিল। ফেরার পর যে ধরনের ক্রাইসিস তৈরী হয়েছে তাতে এ ধারনাই হয় যে তারা বাংলার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল না। আপনি দ্বিমত পোষণ করলে তার পক্ষে স্পেসিফিক যুক্তি দেবেন, পরিসংখ্যান নয়।
আবারো একটি বস্তুনিষ্ট সংক্ষিপ্ত ইতিহাস......................ভালো লাগলো।।
ধন্যবাদ।
ইতিহাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে অত্যন্ত অবহেলা ভরা লেখা - ধারণা আর যান্ত্রিক সরলীকরণে পূর্ণ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আমি অবহেলা ভরে লিখি নাই। খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি উপলব্ধির থেকে লিখেছি। আপনার কাছে অবহেলা যুক্ত মনে হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করছি।
সাইফুজ জামান
রাজনীতিবিদদের সম্পর্কে একটা অবজ্ঞার ভাব যে পাকিস্তানী সামরিকতন্ত্রে ছিল এবং তার উত্তরসূরী বাংলাদেশের সেনাশাসকদের মধ্যেও তার রেশ রয়ে গিয়েছিল এটা ঠিক। পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থানরত দুচারজনের আচরণে একটা হামবড়া ভাব হয়তো বা ছিল, যেমনটা এখনও কিছু প্রবাসী বাঙালীর মধ্যে দেখা যায়- মুই কি হনু রে! তবে পশ্চিম পাকিস্তানের সকল বাঙালীদের মধ্যে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি অবজ্ঞার ভাব ছিল, ঢালাওভাবে এ কথা গ্রহনযোগ্য নয়।
বাংলাদেশী জাতীয়তার যারা ধারক ও বাহক, তাদের অনেকের বক্তব্য থেকে দেখেছি এর স্বপক্ষে দুটি কারন বেশ জোরালোভাবে উল্লেখ করা হয়-
১। বাংলাদেশে বাঙালী ছাড়াও চাকমা, গারো, সাঁওতাল ইত্যাদি আরো বেশ কয়েকটি অবাঙালী এথনিক গ্রপের জনগন বংশ পরম্পরায় বসবাস করে, সুতরাং সকলকে একই জাতীয়তাবাদের ছাদের নিচে নিয়ে আসার জন্য বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ।
২। বাঙালী শুধু বাংলাদেশেই বসবাস করে না, ভারতেরও কয়েকটি রাজ্যে তাদের বসবাস। বাংলাদেশের বাঙালিদের সাথে যাতে করে ভারতীয় বাঙালিদের গুলিয়ে ফেলা না হয়, সে কারনেই আমাদের জন্য বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ।
বলাই বাহুল্য, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ উপরোক্ত দুটো কারনের কোনটিরই যুক্তিগ্রাহ্য সমাধান নয়। প্রথম সমস্যাটি এথনিক পরিচিতির বিষয়ে, ন্যাশনালিটির নতুন পরিচয় দেশের সকল মানুষের এথনিক আইডেন্টিটি সম্পর্কে পরিস্কার কোন ধারনা সৃষ্টি করতে পারে না। দ্বিতীয় সমস্যাটির সুরাহা করতে গিয়ে একে তো আমাদের ঐতিহ্যিক যোগসূত্র মুছে ফেলার একটা অপচেষ্টা করা হয়েছে, এ ছাড়া আমাদের জাতিসত্বাকে একটা ভঙ্গুর ও অনিশ্চিত পরিস্থিতির সম্মূখীন করেছে। বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছে ১৯৭১ সালে, এরপরে সাতাত্তর সাল থেকে আমরা বাংলাদেশী। তাহলে আমাদের বাপ-দাদা, যাদের সাতাত্তর সালের আগে মৃত্য হয়েছে তাদের জাতীয়তা কি আমাদের থেকে ভিন্ন ছিল? কেন? অথবা ভবিষ্যতে ইতিহাসের আর এক ক্রান্তিকালে পশ্চিমবাংলা, আসাম ও মেঘালয়ের বাংলাভাষী অঞ্চল বাংলাদেশের সংগে একীভূত হয়ে নতুন একটি দেশের অভ্যুদয় হয়, তাহলে কি আমাদের জাতীয়তা বাঙালী হয় যাবে? কিংবা যদি দুর্বুদ্ধি ও দুর্ভাগ্যের কারনে পাকিস্তানের সাথে আবার আমরা মিলে মিশে এক দেশ হয়ে যাই, তাহলে কি আমাদের জাতীয়তা আবার পাকিস্তানী হয়ে যাবে? জাতীয়তা কি এরকম একটা ভঙ্গুর তামাশার বিষয়?
আব্দুল্লাহ এ.এম.
এইসব প্রশ্নই দেখিয়ে দেয়, 'বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ' কোন ন্যাচারাল জাতীয়তাবাদ নয়, দুষিত রাজনীতির কারখানায় যার জন্ম, রাজনৈতিক ফায়দা তোলা ছাড়া যার আর কোন উদ্দেশ্য নেই!
সহমত।
একাত্তর মঞ্চের ওই অনুষ্ঠানে উল্লেখ্য জিয়াউর রহমান পন্থী বক্তা বলছিলেন যে সেনাবাহিনীর মধ্যে একতা আনতেই পরিবর্তন করা হয়েছে বাঙালী পরিচয় কে। এটা হতেই পারে যে হয়ত মাত্র কয়েকজনের অতি আগ্রহের কারনেই এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।
ধন্যবাদ আপনাকে জাতি গত পরিচয় কে পালটে "বাংলাদেশী" করে ফেলার পেছনে লোক দেখানো যুক্তি গুলোর অসারতা খুব স্পষ্ট করে বলার জন্যে।
আমি নিজেও এত গুলো বছর শুধু দেখেই গেছি। এই প্রথম বলতে শুরু করলাম।
আপনাকে আনেক শুভেচ্ছা , সত্য কথা বলার চেষ্ঠা করার জন্য যদিও …..
অনেকে হয়ত গোস্সা হবেন , হয়রানি করার চেষ্টা করবেন তাতে পিছু হটার কিছু নাই
অনেক গফ লেখকের মন্তব্য দেখে অবাক লাগে আসলেই
ধন্যবাদ। পিছু হঠার পথ নাই, তাই বাধ্য হয়েই সামনে চলা।
বাঙালি যার খাই তারেই পরে লাথাই ।।।
হক কথা।
নতুন মন্তব্য করুন