২৬ শে মার্চ ১৯৯৬ সালে ৩০০ আসন ধারী বিএনপি সংসদে একটি বিল এনে একরাতে পাশ করিয়ে ফেলে যাতে বলা হয় কোন রাজনৈতিক দলে অফিসিয়ালি নাম নেই (যাদের কে বলা হয়েছে নির্দলীয়) এবং মানসিক ভাবে কোন রাজনৈতিক দলের প্রতি সহানুভূতিশীল নয় (যাদেরকে বলা হয়েছে নিরপেক্ষ) লোকজন দিয়ে নির্বাচন কালীন একটি প্রেক্ষাপট তৈরী করা হবে। এক্ষত্রে নির্দলীয় মানুষ খুঁজে পাওয়া গেলেও বাংলাদেশে নিরপেক্ষ মানুষ খুঁজে পাওয়া সম্পর্কে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তাঁর এপিক কথাটি বলেছিলেনঃ বাংলাদেশে একমাত্র শিশু ও পাগল ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয় (আমি ব্যাক্তিগত ভাবে এই মহান বানীটির খুব ভক্ত কারন দেশ নেত্রী এদেশের মানুষের মনজগতের কারসাজি যতটা ভাল করে বুঝেন, জননেত্রী সেই এঙ্গেল থেকে বুঝেন না বলেই মনে করি)
এরপরের ঘটনা বুঝতে আমাকে ব্যাপক সাহায্য করেছে ২০০৬ সালে দেশ নায়ক তারেক জিয়ার একটি ভিডিও ক্লিপ (লেখার শেষে) যেখানে আওয়ামীলীগের তত্ত্বাবধায়ক ব্যাবস্থা সংস্কারের দাবীর ব্যাপারে দেশ নায়ক বলেনঃ তারা তো ৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল তারা তখন পরিবর্তন করল না কেন? কেন তারা আমাদের কাছে দাবী করে? তারা যদি এতই পরিবর্তন চায় তাহলে তারা এটাকে তাদের মেনিফেস্টো তে ঢুকাক। তারা যদি কখনও ক্ষমতায় আসতে পারে তাহলে তারা তাদের মত করে পরিবর্তন করে নিবে। আমাদের কাছে খালি দাবী করে কেন বারবার? আমরা তো যা করার করেই দিয়েছি।" দেশ নায়কের পরামর্শেই কিনা কে জানে আওয়ামীলীগ তাদের নির্বাচনী মেনুফেস্টোতে স্পষ্ট ভাবে লিখে দিল যে নির্বাচন কালীন সরকার ব্যাবস্থাকে পরিবর্তন ও পরিমার্জন করা হবে।
দেশ নেত্রীর "শিশু ও পাগল" তত্ত্বের পর দেশ নায়কের এই কথা টি যে "তারা যদি কখনও ক্ষমতায় আসতে পারে" আবার আমার কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ন মনে হয়েছিল।
১৫ ফেব্রুয়ারীর ইলেকশানের মাধ্যমে ৩০০ আসন ধারী বিএনপি সরকার বিরোধীদল হীন সংসদে এমন ভাবে ১৩ তম অধ্যাদেশ পাশ করিয়েছে যা কিনা নজির বিহীন কারন এতে যেমন নির্বাচনকালীন সরকারের কোন সম্যসীমা বেধে দেয়া নেই ঠিক তেমনি তারা যদি ক্ষমতা না ছাড়েন তাহলে সেটাকে সামরিক অভ্যুথান বা ক্যু ও বলা যাবে না কারন তা সংবিধান দ্বারা সিদ্ধ। যাইহোক সদ্য অবসরে যাওয়া বিচারপতির চাকূরীর বয়স বাড়িয়ে নিজেদের মনের মত লোককে তত্ত্বাবধায়ক প্রধান করার "মৌ-দূদী" প্ল্যান যখন কাজ করল না তখন ওই ১৩ অধ্যাদেশ বলেই বিএনপির প্রেসিডেন্ট ইয়াজুদ্দীন সাতটি ধাপ অতিক্রম করে নিজেই তত্ত্বাবধায়ক প্রধান হয়ে গেলেন...প্রেসিডেন্টের সর্বময় ক্ষমতার প্রয়োগ ঘটাতে দ্বিধা করলেন না। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা দিয়ে দিলেন এবং দেশ নায়ক তারেক রহমান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতও হয়ে গেলেন। একটা বিষয় উল্লেখ্য যে বিএনপি যখন ইয়াজুদ্দিন কে প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দেয় তাও একটি ব্যাক আপ চিন্তা থেকেই দেয় কারন ইয়াজুদ্দিন বিএনপি বা আওয়ামীলীগের বা অন্য কোন দলে নাম লেখানো লোক নয়। একারনে ইয়াজুদ্দিন যখন তত্ত্বাবধায়ক প্রধান হয়ে গেলেন নিজেই তাতে তিনি সংবিধানের মধ্যেই ছিলেন "নির্দলীয়" হিসাবে।... এরপর তো নানান ঘটনা। আওয়ামীলীগ কে ২৬৭ আসন দিয়ে দেশের মানুষ সরকারে বসিয়ে দিল।
এখন আসা যাক দেশ নায়কের সেই মহান উক্তি "যদি কখনও ক্ষমতায় আসতে পারে তাহলে তারা তাদের মত করে পরিবর্তন করে নিবে। আমাদের কাছে খালি দাবী করে কেন বারবার?" এই ব্যাপারে আওয়ামীলীগ কি করল সেই প্রসঙ্গে। না আওয়ামীলীগ কিছুই করে নি। ২০০০ সালে দায়ের করা একটি রীটের রায় (যাতে বলা হয়েছেঃ 13th amendment unconstitutional এবং Keep judges out of caretaker government) অনুযায়ী ব্যাবস্থা গ্রহন করেছে।
চুল উড়ে যাওয়া ঘটিত জ্বালাময়ী বক্তব্য যে জনসভায় দিয়েছেন তাতেই শুনলাম দেশনেত্রী আদেশ দিয়েছেন ২৬৭ আসন ধারী আওয়ামীলীগ সরকারকে যে "তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল আনুন এবং যেহেতু আপনাদের দুই তৃতীয়াংশ আসন আছে তাই নিজেরাই পাশ করুন। আমরা বিল আনব না।" আমার দেখার ইচ্ছা আওয়ামীলীগ কি করে ...দেশ নেত্রীর ইচ্ছা অনুযায়ী বিল এনে পাশ করে নাকি দেশ নায়কের কথা মত নির্বাচন কালীন সরকার বিষয়ে নিজেরা সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা কি করবে (যা তারা সংবিধান মোতাবেক নিয়েছে বলেই বলছে)।
মন্তব্য
তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুটা এমন একটা অবস্থায় আছে যে, কিছু বলা মুশকিল। বাংলাদেশের রাজনীতিতে পারষ্পরিক বিশ্বাস নেই- এটা বহু পুরোনো কথা। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ‘সামনে ভীষণ অন্ধকার’ এ কথাটাই সম্ভবত যথার্থ। হাইকোর্টের রায়ের অবজারভেশনে দুই মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক রেখে নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করার মা্ধ্যমে এই পদ্ধতি তুলে দেয়ার যে কথা ছিল তা করলেই সম্ভবত আওয়ামী লীগ ভালো করতো। সেক্ষেত্রে বিএনপির সামনে আক্ষরিক অর্থেই আন্দোলনে যাওয়ার কোনো পথ থাকতো না। সরকার পতনের আন্দোলনে যেতে হলে তাকে জনস্বার্থের বিভিন্ন বিষযকে সামনে নিয়ে আসতে হতো। এ ছাড়াও যুদ্ধাপরধীদের সমর্থক ও পৃষ্ঠপোষক দল হিসেবে তার অবশিষ্ট মুখোশটাও খসে পড়তো অবলিলায়। যা নিসন্দেহে আওয়ামী লীগেরই পক্ষে দাঁড়াত। কিন্তু তা না করে, তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুটিকে বিএনপির হাতে তুলে দিয়ে আওয়ামী লীগ দুর্ব
ল রাজনীতির পরিচয় দিয়েছে। এটা আমার অভিমত।
ভেতর থেকে ক্ষয়ে যাওয়া দল বিএনপিকে নিঃশেষ করে দেয়ার সব রকম পথ খোলা ছিল এই সরকারের সামনে। সে পথে পূর্নাঙ্গভাবে না হেঁটে এমন একটা পথে লীগ হাঁটলো যাতে দেশের সেই চিরাচরিত দ্বিদলীয় বৃত্ত না ভাঙ্গে। একই কথা প্রযোজ্য জামাতকে নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রেও। আসলে বিএনপি-জামাতের মতো কট্টরপন্থি দল না থাকলে আওয়ামী লীগের উদারনৈতিক খোলসটা খসে পড়ে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ব্যার্থতার কথা স্বীকার করেও এই অভিযোগ আওয়ামী লীগকে করা যায়।
দেশের মানুষের ঐতিহ্য অনুযায়ী তারা আবারো সম্ভবত মূদ্রার ওপিঠ দেখতে চাইবে। সিটি কর্পেোরেশন নির্বাচন দেখে অন্তত তাই মনে হলো। কিন্তু নির্বাচন হওয়ার আগেই যাবতীয় সংকটের মুখোমুখি আমরা হতে পারি। ভাগ- বাটোয়ারা নিয়ে কামড়াকামড়ি আবারো দেখতে হবে এটা নিশ্চিত। সেখানে সামরিক বাহিনী কি ভূমিকা নেয় তাও দেখার বিষয়। বাতাসে নানান কথা শোনা যায়। এসবই সংশয়ের কথা। কিন্তু সবকিছুর উর্দ্ধে, সবচেয়ে বড় সংশয় হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি। এর কি হবে? এই সরকার যাওয়ার আগেই এর ভবিষ্যত নিশ্চত করা যায় কিভাবে তা ভাবাটা জরুরী। বিএনপি যদিও বলেছে তারা এই প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখবে। কিন্তু সংকট আপিল বিষয়টি নিয়ে। ইতিহাস বলে এর আগে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার নিয়েআমাদের একেকজন বিচারক ক্রমাগত বিব্রত হয়েছেন। এক্ষেত্রেত আরো ভয়াবহ কিছু ঘটতে পারে।
যা হোক লেখা ভালো লেগেছে। বড় মন্তব্য করে ফেল্লাম। আসলে নানান শঙ্কা ঘুরছে মাথার ভিতরে। সুযোগ পেয়ে বলে ফেল্লাম।
স্বয়ম
স্বয়ম ভাইয়ের সাথে সহমত অনেকাংশে।কিন্তু ভাই মিথ্যে আর গুজবের রাজনীতি যারা করে তাদের অপকৌশলের সাথে লড়াই করা কঠিন।এর জন্যে অনেক প্রজ্ঞা লাগে,যা বর্তমান আওয়ামিলীগের মাঝে নেই।তত্ত্বাবোধক সরকার এর দাবি মেনে নিলেও তাদের নিত্য নতুন অপপ্রচার আর গুজব বন্ধ হতো না।যেমন এর আগে গুজব ছড়ানো হতো আওয়ামিলীগ আসলে মসজিদে আযান দেওয়া যাবে না,দেশ ভারত হয়ে যাবে সহ আরো অনেক কিছু।বিএনপির রাজনীতির মূল টনিক হলো মিথ্যাচার আর ধর্মকে ব্যবহার।এইবার ও তারা সেটা করেছে সফল ভাবে,হেফাজতকে দিয়ে।প্রথমে শাহবাগের আন্দোলনকে নাস্তিকদের আন্দোলন বলে প্রচার চালালো।ওরা জানে শুধু প্রচার চালালে হবে না,প্রমানও কিছু করতে হবে।তাই ব্লগার রাজীব কে মারলো।এতোজন থাকতে রাজীবকে মারলো কারন ওরা রাজীবের ধর্ম বিরোধী কিছু লেখা পেল।এটাকে আমার দেশ লাইম লাইটে আনলো।সহজ চোখে বিষয়টাকে সহজ মনে হলো এটা কিন্তু দীর্ঘ দিনের প্ল্যান মাফিক।এবং শুধু দুই একজনের মাথা থেকে এমন সুচারো বুদ্ধি আসেনি কি করে এতো বড় একটা আন্দোলনকে কলংকিত করা যায়।
আর জনগনের কথা বলছেন বাঙালি জনগনের মূল সমস্যা হলো ধর্ম আর অন্ধ ধর্মান্ধতা।তারা আর কিছু না বুঝুক ধর্মটা বুঝে।দেশের কোটি কোটি টাকা যে মেরে খায় সেও তাদের চোখে ভালো মানুষ সে যদি লোক দেখানো নামাজ পড়ে,বছরে বছরে হজ্বে যায়।তাই রাজাকরের সঙ্গ,রাজাকারের পৃষ্ঠপোষককারীদেরও তাদের খারাপ লাগেনা কারন তারা আস্তিক।তারা বছর বছর হজ্ব করে।রাজাকার দেখলে সেইসব বাঙালির ঘৃনা জাগে না,আক্রোশ হয়না।৪২ বছর আগের প্যাচাল এখন টেনে দেশকে পিছিয়ে দিয়ে কি লাভ,এগুলো করলে দেশ পিছিয়ে যাবে এই হলো শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত বেশি ভাগ বাঙালির দর্শন।এদেরকে আপনি কি বুঝাবেন?এই জন্যে এক মনিষী বলেছিলেন গনতন্ত্র যখন অশিক্ষিত মানুষের কাছে যায় সেটা স্বেরাতন্ত্র থেকে ও খারাপ ফল বয়ে আনে।
আওয়ামিলীগ অনেক কিছুই করতো পারতো,করেনি।তারাও খাটি মুসলমান হতে আর খাটি মুসলমানদের ভোট পেতে ১৫তম সংশোধনী এনেছে।পরিক্ষীত আর তুলনামূলক ভালোদেরকে দূরে রেখে শেখ হাসিনা তোষামোদ কারীদেরকে মন্ত্রিসভায় স্থান দিয়েছে।এক আবুল তাদের কাছে দেশের চেয়ে বড় হয়ে দাড়িয়ে ছিলো,তাই নিল্লর্জ ভাবে তার সাফাই গেয়েছেন সবাই।তাদের লাগাম বিহীন কথাবার্তা দলকে ঢুবিয়েছে।আওয়ামিলীগ ও রাজাকার এর বিচার কে রাজনৈতিক করে ফেলেছে।এটাকে আবারো ভোট চাওয়ার মূলা বানাবে ভেবেছিলো।তাই শেষ সময়ে এসে এর বিচার কাজ আর বিচারের পক্রিয়ার মাঝে অনেক ক্রটি রেখেছিলো।এই জন্যে ৫ইমে শাহবাগের গনজাগরনের জন্ম হয়েছিলো।
রবীনন্দ্রনাথের বহুকাল আগের একটা কথা দিয়ে ইতি টানি ”সাত কোটি সন্তানের মুগ্ধ জননী বাঙালি করে রেখেছো মানুষ করোনি”।এটা আমার কাছে চির সত্য মনে হয় এখনো।
গুরুত্বপূর্ণ অবজার্ভেশন। তবে স্বয়ম ভাইয়ার সাথে অনেকাংশে একমত। আওয়ামী লীগের উচিত ছিলো কোর্টের রায়টাকে পুরোপুরি ফলো করা- আরো দুই টার্ম তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখা যেতে পারতো। এমনিতেই বিএনপি আন্দোলনের টপিক পাচ্ছিল না, এই ইস্যুটা আলীগ হাতে ধরে তুলে দিয়েছে।
-নিয়াজ
নতুন মন্তব্য করুন