বাংলাদেশে একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। ২০০৮ সালে নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছর ২৪ শে জানুয়ারীতে। নির্বাচন কালীন সরকার ব্যাবস্থা কেমন হবে তা এখনও নিশ্চিত ভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে নির্বাচন কালীন সরকার কেমন হওয়া উচিৎ সে ব্যাপারে মতভেদ আছে। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার বলছে তারা সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন প্রক্রিয়া পরিচালনা করবে এবং নির্বাচনের সময় দেশ পরিচালনার জন্য একটি সর্ব দলীয় সরকারের রূপ্রেখা প্রস্তাব করেছে। অন্যদিকে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ জোট বলছে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনের প্রশ্নই আসে না, এমনকি সর্বদোলীয় সরকারের অধীনেও তারা নির্বাচনে যাবে না কারণ ৯৫ থেকে ৯৯ ভাগ জনগন মনে করে বর্তমান সরকারের লোক জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী পদ মর্যাদায় থাকলে ভোট চুরি করবে আর তাই এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তার ফলাফল যে শুধু জনগন মেনে নিবে না তা নয়, নির্বাচনই প্রত্যাখ্যান করবে। সরকার বা বিরোধীদল তাদের দৃষ্টি কোন থেকে নানান কিছু বলতেই পারে। কিন্তু আসলে জনগন কি বলছে বা ভাবছে?
এ ব্যাপারে একটি জরীপের ফলাফল হাতে আসল। "ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল" নামে একটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের করা জরীপ। এই সংগঠনটি ত্রৈমাসিক হিসাবে জনজরীপ করছে। ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের করা জুলাই ২০১৩ জরীপের আংশিক ফলাফল মিঃ ডেভিড বার্গম্যান নিউএজ পত্রিকাতে রিপোর্ট আকারে প্রকাশও করেছেন যেখানে তিনি দেখিয়েছেন এই মুহুর্তে (জুলাই, ২০১৩) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ৪৩ শতাংশ মানুষ বিএনপি তে, ৩২ শতাংশ মানুষ আওয়ামীলীগে, ৩ শতাংশ মানুষ জাতীয় পার্টিতে আর ১ শতাংশ মানুষ জামাতে ইসলামীর পক্ষে ভোট দিবে; ১৯ শতাংশ মানুষ এখনও তাদের ভোট সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্ত নেয় নি। আমার এই লেখাটি ওই একই জরীপের বাকি অংশের ফলাফলের উপর ভিত্তি করে লেখা। এবছর জুলাই মাসে চালানো এই জরীপে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ২৫১০ জন মানুষকে র্যা ন্ডমলি সিলেক্ট করা হয়েছে তাদের মতামতের জন্যে; মুখোমুখি প্রশ্নের মাধ্যমে উত্তর গুলো জানা গেছে (জরীপ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ও জরীপের পুরো ফলাফল দেখতে http://di-bangladesh.com/DPR%20Nationwide%20Survey%20July%202013.pdf ক্লিক করুন)।
এই ফলাফল জুলাই, ২০১৩ এর, যখন কথা হচ্ছিল যে সরাসরি আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে এবং সরকার প্রধান থাকবেন শেখ হাসিনা। এরপর তো আওয়ামীলীগ সেই অবস্থান থেকেও সরে এসে সর্বদলীয় নির্বাচন কালীন সরকারের প্রস্তাব করেছে এবং এখন শোনা যাচ্ছে যে শেখ হাসিনা নিজেও নির্বাচন কালীন সরকারের প্রধান থাকবেন না। কিন্তু তারপরও আসুন দেখি যখন সরাসরি আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা হচ্ছিল তখনও আসলে মানুষ নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপার কতটা আশা বাদী বা হতাশ ছিল? আসলেই কি ৯৫ থেকে ৯৯ ভাগ মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলে মনে করে?
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের এর এই জুলাই, ২০১৩ সালের জরীপ মতে বাংলাদেশের ৪৩ শতাংশ জনগন মনে করছে বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন হওয়া উচিত। নির্বাচন কালীন সরকার কেমন উচিত সে বিষয়ে ৬ শতাংশ জনগনের কোন প্রেফারেন্স নেই। সেই দিক থেকে দেখলে (৪৩ যোগ ৬ =) ৪৯ শতাংশ জনগন বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে আপত্তি করছে না। চিত্র ১ এ জরীপের ফলাফল দেয়া হল। এই ফলাফলের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে বিরোধীদলের আন্দলন, জনসভা, হরতাল সহ নানান কর্মসূচী পালনের পরও এপ্রিল মাসের জরীপের তুলনায় জুলাইতে তত্তাবধায়ক সরকারের পক্ষে জনসমর্থন কমেছে।
চিত্র ১ ফলাফলঃ বর্তমান সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে আপনার সমর্থন আছে কি নেই? (সূত্রঃ ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশঃ http://di-bangladesh.com/sbo/)
জরীপের অন্য প্রশ্নের ফলাফলে এটিও উঠে এসেছে যে নির্বাচনী সহিংসতার কথা মাথায় রাখলেও এই সরকারের অধীনে ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তার ব্যাপারে ৪৭ শতাংশ মানুষ নিশ্চিন্ত বা সেফ ফিল করেন। তার চাইতেও বড় কথা ৫১ শতাংশ জনগন মনে করে যে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তাদের ভোট কেউ চুরি করবে না অর্থাৎ তারা যে প্রতীকে তাদের ভোটটি দেবেন তাতে সরকার কোন হস্তক্ষেপ করবে না বা ইচ্ছা মত ফলাফল পালটে দেবে না (চিত্র ২)।
চিত্র ২ ফলাফলঃ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে আপনি কি i) ভোট দিতে নিরাপদ বোধ করবেন? ii) আপনার ভোট চুরি হবে বলে মনে করেন? (সূত্রঃ ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশঃ http://di-bangladesh.com/sbo/)
সবচাইতে আশ্চর্য জনক জরীপ ফলাফল টি এসেছে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারবে কিনা সেই প্রশ্নের উত্তরে। ৫২ শতাংশ মানুষ মনে করছে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারবে আর ১৩ শতাংশ মানুষের এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য নেই। সেদিক থেকে মাত্র ৩৪ শতাংশ মানুষ মনে করে বর্তমান সরকার নির্বাচন কমিশন কে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে দেবে না।
চিত্র ৩ ফলাফলঃ বর্তমান সরকারের অধীনে থেকে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কি আগামী সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ ভাবে অনুষ্ঠানে সক্ষম হবে? (সূত্রঃ ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশঃ http://di-bangladesh.com/sbo/)
উপরের ফলাফল গুলো আমার কাছে অতি গুরুত্বপূর্ন মনে হয়েছে একারণে যে এই একই জরীপের ফলাফলে দেখা যায় যে জরীপে অংশগ্রহনকারী ২৫১০ জনের মধ্যে মাত্র ৩২ শতাংশ মানুষ বলেছেন যে তারা আওয়ামীলীগের পক্ষে ভোট দেবেন। সেই হিসাবে আওয়ামীলীগ ছাড়া অন্য দলে ভোট দেবেন এমন ১৭ শতাংশ মানুষেরও বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে আপত্তি নেই। শুধু তাইই না, আওয়ামীলীগকে ভোট না দেয়ার দলেরও একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ মনে করে যে এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেও নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে পারবে এবং কোন রকম ভাবে ভোট চুরি হবে না।
বিএনপি সমর্থিত ১৮ দলের, স্পেশালি খালেদা জিয়ার তাই আসলেও ভেবে দেখা উচিৎ তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীর প্রতি জনসমর্থন সত্যিকার অর্থে কতটুকু। আসলেও কি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় ? এই জরীপের হিসাব অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে বিএনপিতে ভোট দেয়ার ব্যাপারে মনস্থির করে ফেলা অনেকেই মনে করে যে বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেও তাদের দেয়া ভোটটি চুরি হবে না আর নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারবে। সেক্ষত্রে, র্নিবাচন কালীন সরকার বিষয়ে শেখ হাসিনার দেয়া সর্বদলয়ীয় সরকারের প্রস্তাবকে পাশ কাটিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার দেয়া এক অবাস্তব (৯৬-২০০১ এর উপদেষ্টা নিয়ে) নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা এবং সেই তত্ত্বাবধায়কের দাবী আদায়ে জ্বালাও পোড়াও হরতাল কর্মসূচীতে আসলেও কত শতাংশ মানুষ সমর্থন করছে?
(ডেমোক্রেসী ইন্টারন্যাশনালের পরবর্তী পোল রেজাল্ট প্রকাশ হবে নভেম্বর, ২০১৩ এর শেষে)
মন্তব্য
ইন্টারেষ্টিং ষ্টাডি। পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ!
আমেরিকান স্টাডিগুলা দুইমুখী সাপের মতো; যেদিক ইচ্ছা সেদিক ঘোরানো যায়
০২
আম্রিকা স্টাডি করে এদিকে বলছে আওয়ামীলীগ ভালো অন্যদিকে মাথায় তেল দিচ্ছে বিএনপিকে
গতকালের ইনকিলাব পত্রিকার প্রশ্ন ছিল "সরকার বিএনপিকে ছাড়াই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিকল্পনা করছে। আপনি এ পরিকল্পনা সমর্থন করেন কি?" উত্তরে ৫১% মানুষ উত্তর দিয়েছে "হ্যাঁ"/ তাই শুধু ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল, জনকন্ঠ, মতিকন্ঠ বা বাংলানিউজ২৪ না, এখন দেখছি ইনকিলাবের জরীপেও মানুষ যে জ্বালাও পোড়াও চাচ্ছে না, তা উঠে আসছে...দরকার হলে বিএনপি কে ছাড়া ইলেকশানের মানুষ পক্ষপাতি মানুষ।
হাহা জরিপে বিশ্বাস করলে তো আলুর জরিপেও তখন বিশ্বাস করতে হবে।
যে সব পত্রিকা বা অর্গানাইজেশানের জরীপে বিএনপি এগিয়ে আছে ব্যাপক ভাবে সেসব পত্রিকা বা অর্গানাইজেশান নির্বাচন কালীন সরকারের ব্যাপারে কি বলছে আমি শুধু তাইই দেখার চেস্টা করছি। আলুর জরীপ কি বলেছে তা এখনও দেখা সুযোগ হয়নি। তবে শুনেছি আলুর জরীপে নাকি দল বেধে জামাতের অনলাইন এক্টিভিস্ট রা ভোট দেয়। তবু যখন উল্লেখ করলেন সেটাও দেখব। ধন্যবাদ।
জরিপ এর মৌসুম চলছে এখন, ১৬ কোটি মানুষের দেশে হাজার দুই মানুষ কে জিজ্ঞেস করে বলে দেওয়া হয় দেশের ৯০% এটা চায়, আবার আরেক পক্ষ বলছে ৮০ % মানুষ ওটা চায়। প্রথম আলু এই কানামাছি খেলা শুরু করেছে, এখন ইনকিলাব ও নেমেছে এইসব খেলায়। কয়েকদিন পর বাকি পত্রিকাগুলো নামবে। আমার কাছে কোনটাই গ্রহন যোগ্য মনে হয় না। এগুলো সুবিধাভিত্তিক দলীয় জরিপ ছাড়া কিছু নয়।
যে লোকটি রিক্সা চালিয়ে, হোটেলে কাজ করে, কিংবা দিনমুজুরি করে সংসার চালাচ্ছে তার কাছে এইসব অর্থহীন, সে এগুলো নিয়ে কখনো ভাবে না। জীবনের কঠিক কষাঘাতে যেখানে জীবন জর্জরিত সেখানে কি উপায়ে নির্বাচন হবে সেটা নিয়ে তার ভাবনা নেই। তাদের ভাবনা হলো ভোট আসলে ভোট দিবো, সে জানে ভোট দিলেই যে তার ভাগ্যের খুব একটা পরিবরর্তন হবে তা না। আর খুব বেশি দরিদ্র যারা তারা ওই ৫০০-১০০০টাকার কাছে নিজের ভোটটা বেঁচে দিবে এই হলো ভাবনা, এই হলো ভোটাধিকার। দেশে এখনো নিম্ন আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি, অথচ তাদেরকে এইসব জরিপে রাখা হয় না। তাই নির্বাচন নিয়ে এইসব জরিপ সুবিধাবাদী আর দলীয় এজেন্ডা প্রকাশের নাম মাত্র শুধু।
যারা শুধু সক্রিয় রাজনীতির সাথে জড়িত এবং সেই রাজনীতি থেকে কোন না কোন উপায়ে সুযোগ সুবিধ প্রাপ্ত কিংবা আশাবাদী তারাই মাত্র নির্বাচন কোন উপায়ে হবে সেটা নিয়ে ভীষন চিন্তিত। এদের বাইরে অধিকাংশ জনগন এটা নিয়ে খুব বেশি উদিগ্ন নয়, আমাদের মতো মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষগুলো চায় শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে এবং ক্ষমতার হস্তান্তর দেখতে। চাওয়া এইটুকু, সেটা তত্ববোধক হোক কিংবা নির্দলীয় সরকারের অধীনে হোক কোন আপত্তি নেই।
মাসুদ সজীব
এই জরিপের সবচেয়ে ইন্টারেষ্টিং তথ্য আছে পৃষ্ঠা ১৬ তে, যেখানে ২০০৮ এর নির্বাচনে ভোট প্রদানকারীদের বর্তমান অবস্থান দেখানো হচ্ছে। প্রথম observation হলো জামাতের নিজস্ব ভোট ব্যাঙ্কে ধস নেমেছে এ বছরের জানুয়ারির পর থেকে। জানুয়ারিতে যেখানে জামাতের আগের ভোটারদের ৮২ শতাংশই জামাতে ভোট দেবে বলে ঠিক করে রেখেছিল, পর পর দুটি জরিপে সেটা নেমে এসে ঠেকেছে ৫৭ শতাংশে। অবশ্য জোটগত হিসেবে ১৮ দলের এতে কোনো সমস্যা হবে না, কারণ জামাতের ছুটে যাওয়া সমর্থকেরা ভোট দিবে বি এন পি কেই। সুতরাং শাহবাগ আন্দোলন ও যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায়ে জামাতের যথেষ্টই ক্ষতি হয়েছে, কিন্তু বি এন পির ঘরে লাভের গুড় গেছে বলে মনে হচ্ছে।
জুলাই তে আওয়ামী লীগের ২০০৮ এর সমর্থকদের মধ্যে কেবল ৫৫% আওয়ামী লীগকে ভোট দেবেন বলে ঠিক করে রেখেছেন, আর undecided আছেন ১৬% আওয়ামী ভোটার। আপাতদৃষ্টিতে খুবই নিরাশাব্যাঞ্জক মনে হলেও অন্যভাবে চিন্তা করলে আওয়ামী লীগের জন্য এপ্রিল থেকে জুলাই মাস পজিটিভ কিছু বিষয় নিয়ে এসেছে। প্রথমত এপ্রিল মাসের লীগের undecided ভোটার দের মধ্যে প্রায় এক তৃতীয়াংশ জুলাই এর মধ্যে মনস্থির করে ফেলেছেন, এবং এদের সিংহভাগই আওয়ামী লীগে ভোট দানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে পূর্বের আওয়ামী সমর্থকদের মধ্যে ৬% আবার আওয়ামী লীগে ভোট দেবেন বলে ঠিক করেছেন, আর ২% এর ভোট বি এন পির ঘরে যাবে। এই ট্রেন্ড অব্যাহত থাকলে শেষ পর্যন্ত গতবারে আওয়ামী লীগের ভোটদান কারীদের প্রায় ৭০% শেষ পর্যন্ত নৌকায় ভোট দিতে যাচ্ছে, আর প্রায় ৩০% এর ভোট যাচ্ছে ১৮ দলের বাক্সে।
অন্যদিকে গতবার যারা বি এন পি কে ভোট দিয়েছিল, তাদের ৮৯% ইতোমধ্যেই বি এন পি কেই আবার ভোট দেবেন। মাত্র ৭ শতাংশ বি এন পি ভোটার এখনো মনস্থির করেননি। সুতরাং বি এন পির জন্য বর্তমান জনপ্রিয়তার লেভেল খুব বেশি বাড়ানোর স্কোপ খুব এক টা নেই। আওয়ামী লীগের জন্য গতবারের ভোটারদের আবার ফিরিয়ে আনাটাই এখন চ্যালেঞ্জ।
এই চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে আওয়ামী লীগ কি পারবে ? অনেকাংশেই নির্ভর করছে আওয়ামী লীগের স্ট্রাটেজির উপরে। জরিপের ফলাফলে স্পষ্ট তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আওয়ামী লীগের সমর্থন অনেক কম। প্রথম বারের ভোটাররা মাত্র ২৯ শতাংশ ভোট দেবে আওয়ামী লীগকে, আর ৪৬ % বি এন পি কে। বাংলাদেশে এই প্রথম ভোটাররা সব সময়ই সরকারবিরোধী ভোট দেয়, যার কারণে প্রতিবারই সরকারী দল পরাজিত হয়। এই ট্রেন্ড বন্ধ করতে তরুণ কেন্দ্রিক নির্বাচনী প্রচারণা, যাতে অনলাইন প্রচার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, আওয়ামী লীগের জন্য crucial হতে যাচ্ছে। প্রচারের জন্য অর্থনীতির উপর জোর দিতে হবে আর রাজনৈতিক সহিংসতা কমানো জরুরি। কারণ এই জরিপেই দেখা যাচ্ছে দেশের প্রায় ৬২-৬৪% মানুষ মনে করে দেশের অর্থনীতি আগের তুলনায় অন্তত খারাপ হয়নি, অর্থাৎ অর্থনৈতিক ভাবে দেশ নিয়ে এত বিরাট অংশ সন্তুষ্ট। মূলত অর্থনীতি বহির্ভূত কারণেই এদের মাত্র অর্ধেকের সমর্থন পাচ্ছে আওয়ামী লীগ। আর হরতাল, ভাংচুর যাই হোক না কেন, দোষ মানুষ সরকারকেই দেয়, কারণ ৭৪% মানুষই মনে করছে অতিরিক্ত হরতাল দেশকে ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে কিন্তু মাত্র ২৪% বি এন পি কে দায়ী করছে, আর ৮২% ই সরকারকে দায়ী করছে (পৃষ্ঠা ৩). আশা করি আওয়ামী গোঁড়া সমর্থকেরা জরিপ গুলোকে আক্রমন না করে যৌক্তিক দৃষ্টিতে বিশ্লেষণ করে দেখবেন কিভাবে এ তথ্যকে কাজে লাগানো যায়, কারণ এই জরিপেই দেখা যাচ্ছে মাত্র ২০ শতাংশ মানুষ শেষের ৫ বছরের বিশ্লেষণ করে ভোট দেয় আর ৬৪% দেয় নির্বাচনী প্রচার শুরুর পর থেকে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত অবস্থা বিশ্লেষণ করে। জিততে হলে বুঝতে হবে।
"বাংলাদেশে এই প্রথম ভোটাররা সব সময়ই সরকারবিরোধী ভোট দেয়, যার কারণে প্রতিবারই সরকারী দল পরাজিত হয়। " - এইটার কারণ কি?
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
আমার মনে হয় তরুণ প্রজন্ম ভোট দেয়ার সময় immediate past কেই শুধু judge করতে পারে। বাংলাদেশের সব সরকারই বিভিন্ন কাজে অকাজে মানুষকে ত্যক্ত করে, তরুণ প্রজন্মের অতীত অভিজ্ঞতা নেই বলে সে শুধু সদ্যাতীত সরকারকেই দোষারোপ করে। প্রবীনেরা পক্ষান্তরে যে দলে আগে ভোট দিয়েছেন, সেই দলকে তুলনামূলকভাবে বেশি আঁকড়ে রাখতে চান। সুশাসন প্রতিষ্ঠা হলে সরকারবিরোধী এই মনোভাব কমানো
সম্ভব।
কারন হল সরকারের নেতিবাচক বিষয়গুলো সহজে তাদের দৃষ্টিগোচর হয় মিডিয়ার কল্যানে এবং বিরুদ্ধবাদী জনশ্রুতিতে, ইতিবাচক বিষয়গুলো খুব কমই আলোচনায় আসে। তারা দলটির অতীতের অবদান কিংবা সুকৃতি সম্পর্কেও তেমন অবগত বা মোহাবিষ্ট থাকে না। বলতে গেলে একটি দলের উপর বিরক্ত হয়ে অন্য দলটির বিষয়ে তেমন কিছু বিবেচনা না করেই তাকে ভোট দিয়ে বসে এবং অচিরেই মোহভঙ্গ ঘটে।
এই কথাটির সাথে আমি পুরোপুরি একমত নই। নতুন ভোটার রা কাকে ভোট দিবে তা অনেকটাই নির্ভর করে পারিবারিক রাজনৈতি বিশ্বাসের উপর, ১৮-১৯ বছর বয়সে কেউ রাজনৈতিক ভাবে তেমন একটা জ্ঞান রাখে না। রাজনৈতিক জটিল হিসাব নিকাশও তারা বুঝেনা। তাদের বেশির ভাগি আশে পাশের বড়দের শুনা কথায় আস্থা রাখে এবং সেটাকে সত্য মেনে নিজের বিশ্বাস গড়ে তুলে। তাই তাদের রাজনৈতিক সচেতনতা কিংবা ভালোলাগা মন্দ লাগা বেশির ভাগি পরিবার এবং বন্ধু বান্ধবের উপর নির্ভশীল। যে ব্যক্তি কট্টর আওয়ামিলীগ করে তার সন্তান নুতন ভোটার হলেও বিএনপিকে ভোট দিবে না, আবার বিএনপির কট্টর ভক্তের সন্তান ও ঠিক তেমনি প্রথম ভোট টা আওয়ামিলীগকে দিবেনা। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশ্বাস বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এখনো পারিবারিক কেন্দ্রিক, সেটা গ্রাম পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি।
জয় পরাজয় নির্ধারন করে দেয় আসলে ভাসমান ভোটার। ভাসমান ভোটার কারা?
যারা কট্টর কোন দলের সাপোর্ট করে না এবং যাদের মতামত নির্ভর করে সমসাময়িক দুই রাজনৈতিক দলের কর্মকান্ডের উপর তারাই আসলে ভাসমান ভোটার। আর এই কর্মকান্ডকে পদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে এসে মতামত গঠন করে দেয় টেলিভিশন আর পত্রিকা। বাংলাদেশের মিড়িয়াগুলো সরকারের সমালোচনায় সবসময় মুখর থাকে। সেই তুলনায় বিরোধী দল নিয়ে তাদের লেখালেখি কিংবা প্রচার কম, ফলে সরকারের কোন ভুল কিংবা খারাপ কাজ নজর এড়িয়ে যায় না। ফলে ভাসমান ভোটার গুলো সরকার বিরোধী হয় এবং তাদের সন্তানরাও সরকার বিরোধী হয় পারিবারিক বিশ্বাসের সূত্র ধরে।
আওয়ামিলীগের ভোট কমেছে কেন? কমেছে আসলে ভাসমান ভোটার। কিছু ব্যতিক্রম বাদে কট্টর আওয়ামিলীগ আওয়ামিলীগই থাকবে সারা জীবন। একথা বিএনপির ক্ষেত্রেও সত্য। আওয়ামিলীগের ভোট কমার অনেক কারন থাকেতে পারে, কিছু পদ্মা সেতু-হলমার্ক-সোনালি ব্যাংক দুর্নিতি, ছাত্রলীগের বেপরোয়া টেন্ডারবাজি, সীমান্তে হত্যা, বিশ্বজিৎ, সাগররুনি হত্যার বিচার ব্যর্থতা, শেয়ার বাজার লুটপাট, ধর্মীয় অপপ্রচার ইত্যাদি। তবে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা ছিলো বিএনপি জামাতরে মিথ্যে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলা। বাংলাদেশের মিড়িয়া এখনো বিএনপি জামাত পন্থিদের দখলে, তারাই আসল ব্যবধানটা গড়ে দিয়েছে। ভাসমান ভোটার রা এই মিড়িয়া দ্বারা দারুন ভাবে প্রভাবিত হন। এবং এইবার সেটাই হয়েছে, তাই গতবারের আওয়ামি ভোটারের মাত্র ৫৫% ভোটার আগের বিশ্বাসের সাথেই আছে আর বাকীরা ভাসমান ভোটার যারা মিড়িয়া দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আওয়ামিলীগ থেকে নিজেদের আস্থা তুলে নিয়েছে।
মাসুদ সজীব
আপনার কথা সত্যি, নতুন ভোটার দের অনেকেই পারিবারিক বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই ভোট দেয়। কিন্তু তার পরও নতুন ভোটারদের মাঝেই সরকারবিরোধী ভোটের অনুপাত অন্যদের তুলনায় বেশি থাকে। এই জরিপেই যদি দেখেন, পঞ্চাশোর্ধ ভোটারদের মধ্যে আওয়ামী লীগ পাচ্ছে ৩৬% আর বি এন পি পাচ্ছে ৩৯%। এদের সন্তানেরা (১৮-২৩) এর বেলায় কিন্তু আওয়ামী লীগ পাচ্ছে ২৯%, আর বি এন পি ৪৬%। তার মানে দাঁড়াচ্ছে আওয়ামী পরিবারেরও অনেক নতুন ভোটার বি এন পি কে ভোট দিতে যাচ্ছে। কোথায় যেন পড়েছিলাম পর পর তিন বার যে লোক একই দলকে ভোট দেয়, সে সারাজীবনই সেই দলকে ভোট দেবে। এ হিসাব যেহেতু নতুন ভোটারদের ক্ষেত্রে খাটেনা, ভোট দানের সময় সদ্যাতীত সরকারবিরোধী মনোভাব নতুন ভোটারদের প্রভাবিত করে।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
জনগণ তত্তাবধায়ক চায় কিনা সেটা জিজ্ঞেস করেনি?
নতুন মন্তব্য করুন