অস্ত্রোপচার একটা হয়েছে বটে, সেটার ব্যথাও পুরোপুরি ভালো হয় নি এখনও, কিন্তু গুটলু আছে মহাসুখে! নিয়ম-নীতির কড়াকড়ি নেই। সারাদিন পড়ো পড়ো বলে চাপাচাপি নেই। কাজের মধ্যে এখন কাজ কেবল খাওয়া, ঘুম আর বাকি পুরোটা সময় গেম্স খেলা। অন্য সময় দিনে আধঘণ্টার বেশি কম্প্যুতে বসবার কথা কল্পনাও করতে পারে না সে। কিন্তু এখন! আহা!
গুটলুর মা-বাবা ভাবেন, আহারে, ছেলেটা এমনিতেই না জানি কত কষ্ট পাচ্ছে ব্যথায়, থাক, গেম্স-টেমসে একটু ভুলে থাক। কিন্তু বাটে পড়ি আমি। দুইদিন হয় নি নতুন জয়স্টিক কিনেছি। কিন্তু যেরকম জেহাদি জোশ নিয়ে গেমসের নেশায় মজেছে বালক, বুঝলাম, শহীদ হতে আর বেশি দেরি নাই জয়স্টিকটার। কিন্তু গৃহপতির কলিজার টুকরো সে। জয়স্টিক বাঁচাতে গিয়ে শেষে নিজেই মারা পড়ার ঝুঁকিতে যাবার কোন মানে তো হয় না!
অ্যাসাইনমেন্টের অনেকখানি এখনও কম্পোজ করা বাকি। দোস্তের থেকে ধার করে আনা ডিভিডিটাও দেখা হয় নি। বন্ধ ‘সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং’। কিন্তু আমার ভাগ্নে মহাশয়কে এতসব বোঝাবে, সেই সাধ্যি কার!
দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বিছানায় লম্বা হলাম।
পাশ ফিরে সারি নি, এরই মধ্যে ডাক পড়ল,
“মামাআআআআআ, অ্যাঁই মামা, আরে ওভার হয়ে গেল তো গেম, আসো না তাড়াতাড়ি!”
গেলাম।
বিকারহীনভাবে ভাগ্নে মহাশয় বলে গেল গড়গড় করে,
“কি পচা জয়স্টিক কিনলা এইটা! বস গুণ্ডার সাথে ফাইট হচ্ছে, এর মধ্যে আর কাজ করে না জয়স্টিক। আমার দুইটা লাইফ নাই হয়ে গ্যাসে!! এই জয়স্টিক বিনে ফেলো, যাও!! আর কী-বোর্ডের ফাংশন বলো!! তাড়াতাড়ি!!”
মানে জয়স্টিক ইতোমধ্যে শহীদ! সেটা নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা তো এর নাই-ই, উলটো...! ‘মামাবাড়ির আবদার’ শব্দগুচ্ছ যে কোন চরমতম মুহূর্তে একীভূত হয়েছিল, রাগে রি রি করতে থাকা দেহের সমস্ত অণু-পরমাণু দিয়ে তা অনুভব করে আমি শিহরিত হই।
কী-বোর্ডের ফাংশন বলে শেষ করেছি। আর ওমনি দুম করে কারেন্টটা গেল চলে। ছাদের তলার ফ্লোর, মেঘ-ফাটা রোদ্দুর-- তৎক্ষণাৎ ঘামতে শুরু করেও জীবনে প্রথমবারের মত লোডশেডিং জিনিসটাকে হঠাৎ কেমন আপন আপন মনে হয় আমার!
কিন্তু শেষ যে আসলে নতুন কিছুর শুরু! লোডশেডিংয়ের পর দুর্যোগ নামে সাধের মোবাইল ফোনটার ওপর। অত্যাচারে গেমস সব মুছে দিয়েছি আগেই। কিন্তু বিদ্যালয়গামী শিক্ষিত শিশু কেবল গেমস নিয়েই কেন পড়ে থাকবে!
মেসেজ বক্স খুলে বানান করে করে পড়তে শুরু করল সে-
“s, h, l, a, r, p, o… আরে মামা! এইটা কী লিখলা?!”
দুই ঘণ্টা বসিয়ে রেখে তারপর আসতে পারবে না জানিয়ে সেদিন একটা এসেমেস করেছিল ক্লাসমেট কমল। জবাবে লিখেছিলাম ‘শ্লার পো’। কিন্তু সেই জিনিস যে এই বান্দার হাতে পড়বে সেটা কে জানতো!
আমি লা-জওয়াব। কিন্তু তার প্রশ্নের ঝুলি তো আর শেষ হয় না। একটার পর একটা উদ্ভট প্রশ্ন। তারপর আরেকটা......
বিচ্ছুর জ্বালাতন কাঁহাতক আর সহ্য হয়! হঠাৎই বাঁধ গেল ভেঙ্গে।
“মোবাইল ধরেছিস কেন? রাখ এক্ষুনি! ফাজলামো খুব বেশি বেশি করছিস কিন্তু! অপারেশন একটা হয়েছে না? আরেকটা অপারেশন করায়া দিব! ইনজেকশনে আবার ভ্যাঁ ভ্যাঁ করবি-- ভালো হবে খুব! মোবাইল রাখ এক্ষুনি!”
বলেই বুঝলাম-- আবারও, আবারও সেই একই ভুল করে ফেলেছি। ছেলেটা ইঞ্জেকশন জিনিসটাকে যমের মত ডরায়। তুচ্ছতম কারণে নিষ্ঠুরতম এই অস্ত্রটাই আমি......
মুখে একটা টুঁ শব্দও করে না সে। মোবাইলটা আস্তে করে রেখে দেয় টেবিলে। তারপর গুটি গুটি পায়ে বেরিয়ে যায় রুম থাকে।
ঝাড়ি খেয়ে কাঁদার কথা ছিল ওর। কিন্তু চোখ ভিজে আসে আমার।
নাহ্, এভাবে চলে না! গায়ে শার্টটা চাপিয়ে আমি ছুট লাগাই দোকানে-- 'সাফারি' চকোলেটে মান ভাঙ্গাতে হবে এর!
[এই সিরিজের সমস্ত ঘটনা বা কাহিনী বাস্তব ও প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাপ্রসূত। তবে চরিত্রগুলো কাল্পনিক।]
মন্তব্য
আপনাকে কষে মাইনাচ, আর গুটলুরে এ-পিলাচ! ......
সচলে অনেক ভালো লাগার সিরিজ আছে, এরমধ্যে এটা একটা। আপনি এই দেরী করে একেকটা সিরিজ দ্যান কেন? আপনারে আরও মাইনাচ!
ডাকঘর | ছবিঘর
বেজায় চাপে আছি, তাপসদা! সময় পাই না এক, আর পেলেও ওভাবে গাঁথতে পারি না ঠিক। মন-মানসিকতাও থাকে না।
তবে এই মন্তব্যগুলো পাই বলেই সাহসে কুলোয় সিরিজ টানতে।
অনেক অনেক ভালো থাকুন!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ
আপনার গুটলুকে বেশ লাগে। আমার বোনের পিচ্চিটাকে আমরা সব গুটলা বলতাম কদিন আগে ও। কি যে মিস করি আমার বাবাটাকে, এই অগাষ্টে তিনে পা দিবে আমার বাবাটা।
এই 'মিস' জিনিসটা আসলে জ্বালায় বড্ড!
জন্মদিনের আগাম শুভেচ্ছা গুটলাকে, পৌঁছে দিয়েন।
আর গুটলু বেত্তান্তের গুটলু তো জাতির গুটলু দিদি, আমার একার না। নানা পর্বে গুটলু বিভিন্ন জন।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ
অনেক দিন পর গুট লুরে পাইলাম ।
আমি এটা পোস্ট করার পরই আপনার কথা খেয়াল হয়েছিল, জানেন!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ
গুটলু জিন্দাবাদ।
যান তাড়াতাড়ি চকোলেট কিনে আনেন আর পরের লেখাটায় হাত দেন।
ধনেপাতা নিন
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ
আমার ভাগ্নে হয়েছে বেশ ছোট তাই এখনও এগুলো শুরু হয়নি। বছর খানেক লাগবে । লেখা পড়ে এই অনুভূতিগুলোই বঝার চেষ্টা করছিলাম। ভাল লিখেছেন গুটলুর বেত্তান্ত।
আপনার ভাগ্নের কীর্তি-কাহিনী শোনার অপেক্ষায় রইলাম
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ
। আমার গুটলু ভাগ্নেটার কথা মনে পড়ে গেল। ফোনে যখন নতুন শেখা রাইম শোনায়, কি যে ভাল লাগে !
হুম্ম... এই অভিজ্ঞতাটা সত্যিই দারুন
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ
হা হা হা হা!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
পাঠ ও ভেটকির জন্য ধনেপাতা নিন, যাযাদি!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ
নতুন মন্তব্য করুন