আমাজনকে নিয়ে বেশ কিছুদিন বসি-বসি করে বসা হচ্ছিলো না, মূল কারণ আলস্য। এর মধ্যে দুই-তিনটা ব্লগ শুধু ছবি দিয়েই সেরে দিয়েছি - সেও আলস্য দোষে। কিন্তু এইবার নামছি কোমরে কষি বাইন্ধা - আমাজন লিখাই ছাড়মু ইনশাল্লাহ!
গতলেখাটা লিখছিলাম আমাজন নদী আর বন নিয়ে। আর এই লেখাটা হলো ঐ নদী-বন এর বাসিন্দাদের নিয়ে। দিন-দুনিয়াতে যত মখলুকাত আছে, তার এক-তৃতীয়াংশ পায়া যাবেন এই অঞ্চলটা ভালো মত একটা ঘুল্লা দিলেই। আর আমাজনের কত অংশে এখনো অভিযাত্রী দলের পা পড়ে নাই, সেগুলাতে না জানি আরো কত কি আছে।
শুরুটা নদী দিয়েই হোক।
ইলেকট্রিক ইল এর নাম কে না শুনেছেন? তবে বাস্তবে কিন্তু এটা ইল নয়, ছুরিমাছ। এই মাছ এর বিস্ময়কর ক্ষমতা এর নাম থেকেই টের পাওয়া যায় - এটা ইলেকট্রিসিটি উৎপাদন করতে সক্ষম! ইলেকট্রিক ইল পাঁচশো ভোল্টের শক দিতে পারে চাইলেই। এই ইলেকট্রিক শক দিয়ে নিজেও শিকার করে, আবার শিকারীর হাত থেকে রক্ষাও পায়। কিন্তু এই বিদ্যুত আসে কোথ্থেকে? ইলের বিদ্যুত উৎপাদনের ব্যাপারটা অনেকটা আমাদের দৈনন্দিন ব্যাটারির মতোই। এর রহস্যটা আছে এই মাছের শরীর জুড়ে থাকা ইলেকট্রোসাইটিসে। ইলেকট্রোসাইটিস হচ্ছে এমন এক ধরণের কোষ যার এক পাশ ধনাত্মক আর আরেক পাশ ঋণাত্মক চার্জড। ইলেকট্রোসাইটিসগুলো সাজানো আছে এমন ভাবে যাতে এর মধ্য দিয়ে বিদ্যুত চলাফেরা করতে পারে। যখন সামনে কোন শিকার দেখে এই ইল, তখন কিছু আয়োনিত সোডিয়াম ছাড়ে এই ইলেকট্রোসাইটিসগুলোর মধ্য দিয়ে। আর এর ফলেই উৎপন্ন হয় বিদ্যুত। মজার একটা বিষয় হচ্ছে, ইলেকট্রিক ইল পাবেন শুধু মিঠা পানিতেই, কেননা লোনা পানিতে লবনের কারণে এই মাছের শর্ট-সার্কিট হয়ে যায়! এই দুনিয়া বড় বিচিত্র!
যদি জিজ্ঞাষা করে কেউ যে সবচেয়ে হিংস্র প্রাণী কি, এককথায় জবাব দেয়া দুষ্কর। তবে সবচেয়ে হিংস্র প্রাণীর ঝাঁক কোনটা প্রশ্ন করলে চোখ বন্ধ করে জবাব দিয়ে দিন পিরানহা। অবশ্য পিরানহা ঝাঁক বাঁধে আত্মরক্ষার স্বার্থে। সর্বভুক পিরানহার দাঁতগুলো দেখলেই বুঝবেন একে কেন হিংস্র বলছি। হাঙ্গর আর পিরানহার মধ্যে একটা ব্যাপারে মিল আছে, দুইজনই রক্তের গন্ধ পেলে একটা "ফিডিং ফ্রেন্জী"তে চলে যায়। সুতরাং ভাই ও বোনেরা, আমাজনে গেলে সাঁতার কাটতে না নামাটাই স্বাস্থ্যের জন্য উত্তম।
এবার আসা যাক সরীসৃপ-এ। দুনিয়ার সবচেয়ে বড় অ্যালিগেটর এর মধ্যে একজনের বসবাস আমাজন অববাহিকায়। ব্ল্যাক কাইমান নামের এই কুমির লম্বায় হতে পারে ৬ মিটারেরও উপরে, আর খাওয়ার বেলায় কোন বাছ-বিচার নাই, সবই খায়, এমনকি বাগে পেলে পুমা কি জাগুয়ারের উপরেও হামলা চালায়। নাম শুনেই বুঝতে পারতেছেন যে গায়ের রং টা কৃষ্ণই বটে।
তবে এই ব্ল্যাক কাইমানের চেয়ে অনেক পরিচিত নাম হলো অ্যানাকোন্ডা। তবে সিনেমায় যা দেখেছেন আসল অ্যানাকোন্ডার সাথে তার পার্থক্য ভালই। অ্যানাকোন্ডা আসলে কোন একটা নির্দিষ্ট সাপের নামই না, বরঙ্চ একটা গোত্রের নাম। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে কমন হলো ইউনেকটেস মরিনাস -সবুজ অ্যানাকোন্ডা। আমাজনের সবকিছুর সাথে তাল মিলিয়ে এটাও দুনিয়ার বিশালতম সর্পের মধ্যে এক্কেবারে আগের দিকে। অ্যানাকোন্ডা মূলত জলজ সাপ। পানিতে ভেসে বেড়ানোর সুবিধার জন্য এর চোখদুটো বেশ উপরের দিকে, কোন ভিডিও দেখলে দেখতে পাবেন যে পানির উপর থেকে বেশীরভাগ সময় শুধু চোখদুটোই চোখে পড়ে। মাটিতে এই সাপ বেশ ঠিলাঠালা হলেও পানিতে এর গতি দুর্দান্ত।
অ্যানাকোন্ডা মূলত নিশাচর শিকারী। আর শিকার করার ধরণটাও বিচিত্র। অ্যানাকোন্ডা কিন্তু মোটেই বিষধর নয়, কাজেই ছোবল-টোবলও মারে না। বরং শিকারকে পেঁচিয়ে ধরে শ্বাসরুদ্ধ করে মারে। শিকার পদ্ধতিতে এরই জাত ভাই বোয়া কন্সট্রিকটর। আসলে বোয়া একটা বড়সড় সর্পগোষ্ঠী। সব বোয়াই কন্সট্রিক্ট (চেপে ধরে) মারে, কিন্তু কেবল এই প্রজাতিটার নামের পরেই কন্সট্রিক্টর লাগনো হয়।
এবার একটু অন্যদিকে যাই, শাখামৃগের দিকে।পিগমি মারমোসেট আবার আমাজনের সাধারণ নিয়মটার উল্টো। যেখানে আমাজনের সবাই দুনিয়ার বড়সড় প্রাণীর মধ্যে পড়ে, সেখানে পিগমি মারমোসেট হলো দুনিয়ার ক্ষুদ্রতম বানর। এর শরীর গড়ে ৬ ইন্চির মতন, আর ওজন হরেদরে ১২০-১৪০ গ্রাম। ধরুন ৫-৭ টাকার বাদাম কিনলে যেই ওজন, তার সমান। এই স্বল্প ওজনের জন্য পিগমি পৌঁছে যেতে পারে গাছের একেবারে মগডালে। কিন্তু বারো হাত কাকুড়ের তেরো হাত বিচির মতন এর লেজের সাইজটা হলো শরীরের দ্বিগুণেরও বেশী। এই সাইজের জন্য এর ডাকনাম "পকেট মাংকি", "লিটল লায়ন"।
ব্রাম স্ট্রোকারের ড্রাকুলার কল্যানে ভ্যাম্পায়ার এর সাথে বাদুড়ের সম্পর্কের কথা সবাই জানেন। আমাজনে পাবেন এহেন পাজী বাদুড়দের, যাদের কাজ হচ্ছে রক্ত খেয়ে বেড়ানো। রাতের গহিনে এরা ঘুরে বেড়ায়, আর শিকারের সন্ধান পেলে এসে নামে তার পাশে। এরপর আস্তে করে ফুটো করে শিকারের চামড়ায়, রক্ত বের হওয়া শুরু করলে তা চেটে চেটে খায়। সুতরাং রক্তচোষা নামটা এদের জন্য উপযুক্ত নয়, বরং রক্তচাটা নামটাই সহীহ। ভ্যাম্পায়ার ব্যাটের লালায় এমন কিছু রাসায়নিক পদার্থ থাকে যার ফলে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না। তবে ভয় পাবার কিছু নেই, এরা খুবই কম রক্ত খায়, সুতরাং রক্তশূণ্যতায় মরার ভয় নেই। তবে রক্ত জমাট বাঁধার আগেই নদীতে নামেন স্নান করতে, তাহলে পিরানহার হাত থেকে বাঁচার উপায় নাই কোন।
এইবার আমাজনের রাজা, জাগুয়ারের পালা। জাগুয়ার হইলো একটু বড়সড় বিলাই। "ফেলাইন গ্রেস" বলে কথাটার উৎপত্তিই মনে হয়েছে জাগুয়ারের জন্য। এর নামটাও খুব যুতসই - পর্তুগিজ যেই শব্দ থেকে এসেছে জাগুয়ার নামটা, তার অর্থ হলো "দ্যা রিয়েল বিস্ট"। আর যারা তিন গোয়েন্দা পড়েছেন, তারা জানেন এর আরেক নাম হলো এল-টিগ্রে, দ্যা টাইগার। চিতাবাঘের সাথে দেখতে অনেক মিল থাকলেও জাগুয়ার আকারে আরেকটু বড় আর শক্তিশালী। সাধারণত বাদামি বা হলুদ রং এর হয় জাগুয়ার, তবে শুভ্র আর কালো রং এরও দেখা যায়, যদিও খুব দুর্লভ। এর চোয়াল কতটা শক্তি ধরে তার ধারণা পাওয়া যায় এর শিকারের ধরণ দেখে - জাগুয়ার হত্যা করে খুলির মধ্যে কামড় দিয়ে, এক কামড়ে খুলি ভেদ করে মগজে গিয়ে মারণাঘাত হানে। জাগুয়ার দৌড়াতে যেমন ওস্তাদ, তেমনি গাছে উঠতে আর সাঁতার কাটতেও। সুতরাং, এই এল-টিগ্রে তাড়া করলে পালানোর আশা ছাইড়া দিয়া চোখে পট্টি বাইন্ধা শেষ সিগারেটটা ফুঁকে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
আরো বাকি থেকে গেলো পশু-পাখির কথা। আর গাছপালা তো ধরলামই না এখনো। আরো লেখার ইচ্ছা থাকলো ভবিষ্যতে।
------------------------------------------------------------
তথ্যসূত্র:
উইকিপিডিয়া
অ্যানিমাল প্ল্যানেট
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক
ছবিসূত্র:
গুগল ইমেজ সার্চ
মন্তব্য
অবশ্যই লিখবেন ভুতুম। অপেক্ষায় থাকলাম পরের কিস্তির জন্য।
কিছু সিনেমায় দেখার এবং বইতে পড়ার সুবাদে, 'আমাজন' আমার কাছে খুব বিশাল এক আগ্রহের বিষয়বস্তু। কয়েক মাস আগেই আমি উইকি থেকে আমাজনের উপর আর্টিকেলটা পড়েছিলাম।
আপনার লেখা ভাল্লাগল।
অবশ্যই লিখব। ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
ভাল লেগেছে পড়ে।
আমাজন-২ পড়লাম, কিন্তু আমাজন-১ কই?
অপেক্ষায় থাকলাম পরের কিস্তির জন্য।
ধন্যবাদ। আসলে আমাজন-১ লেখার সময় আমি অ-যাচাইকৃত অতিথি ছিলাম। এখনো ঐ সময়ের লেখাগুলোর লিন্ক আমার বর্তমান অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়নাই। নিচের লিন্কে গেলে পাবেন আমাজন-১।
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/23925
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
ভালো হয়েছে।
...............................
নিসর্গ
ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
আহালে পিগমি মারমোসেট। কি কিউট।
ছবিগুলি যেমনে দেখাইছিলাম সেমনে ফরম্যাট করতা! ছবির পাশে অল্প লেখা দেখতে কেমন জানি লাগে মিয়া!
লিখতে থাকো! কমিক্স নিয়া লিখবা কবে মিয়া?? বিশাআআল একখান পোস্ট দাও স্ক্রীনশট মীনশট সহ!
ফরম্যাটিং করার ইচ্ছা ছিলো, কিন্ত ভুলে গেছিলাম। পরে সংরক্ষণ করার পর মনে হইছে।
লিখবো জরুর কমিক্স নিয়ে, যেকোনদিন হয়তো পেয়ে যাবেন।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
আমি ততোটা পশুপ্রেমী নই যদিও, তবু ভালোই লাগলো, বিশেষত ঐ পুঁচকি বান্দরগুলো। আমাজনের গাছপালা নিয়ে লেখাটার প্রতীক্ষায় রইলাম।
ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
আপনার লেখার স্টাইলটা দারুণ।
হাসতে হাসতে কাহিল হয়া গেলাম আমি
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
অজস্র ধন্যবাদ
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
আফসুস এত্তো দেরিতে পড়লাম
নতুন মন্তব্য করুন