ছোটবেলায় (মানে অত ছোটবেলায়ও আবার না) আমার বড় শখ হইছিলো রাস্তাফারিয়ান হয়ে যাবার। চেহারা-সুরতে এমনিতে ইথিওপিয়ানই লাগে, কাজেই হাইলে সেলাসিকে আব্বা ডেকে গন্জিকা সেবন করার পথে বাধা ছিলো না তেমন। (অবশ্য গন্জিকা সেবনের জন্য এরকন কোন অজুহাতের দরকার পড়ে নাই কখনো। )রাগ সঙ্গীত বুঝি না তেমন, রেগে ই শুনতাম। মাতা পিছে পিছে দৌড়াতেন বার্লি নিয়ে, আমি তখন মার্লি শুনতে ব্যস্ত। একদিকে আয়রন-লায়ন-জায়ন ব্যাবিলনের গুষ্ঠি উদ্ধারে রত, আর অন্য দিকে ডিও-মামস্টিন ব্যাবিলনের গেট নিয়ে গান ফেঁদে বসছে।
তা গান যাই শুনি না কেন, গান্জা সেবনে বাধা তো নাই। গাঁজা খাওয়া নিয়ে কাহিনীরও তো অভাব নাই। গাঁজাক্ষুরদের ( যারা গাঁজা খাবার পয়সা যোগাতে ক্ষুরহাতে জনগনের পকেটের বোঝা হালকা করে বেড়ায়) হাতে দুই-চারটা ঠেক খান নাই এমন পাব্লিকও বেশি নাই। আবার গান্জা আর ঠেক উভয়ই খেয়েছেন এমন মানুষও নেহায়েত কম না। আমি শেষোক্ততেই শক্ত হয়ে আছি। একবার তো এক ছিনতাইকারী পকেটে পুটলি ভর্তি গাঁজা দেখে মনানন্দে সেটা নিয়েই চলে গিয়েছিল মানিব্যাগে হাত না দিয়েই!
এসবের মাঝামাঝি কোথাও ঠেকে থেকে থেকে আর চুলেও ড্রেডলকস করা হলো না, বাংলা ভাষায় রেগে নিয়ে আসার স্বপ্নটাও কোথাও জানি ফ্লাশ হয়ে গেলো। এখন লুঙ্গিতে মালকোচা মেরে ভাতঘুমের জন্য প্রাণটা আইঢাই করে।
আমি আবার লুঙ্গির বেশ ভক্ত, এমন স্বাধীনতা দেয় আর কোন পোষাক? বাঙ্গালী জনসংখ্যা বেশি হবার পেছনে পোষাকের বড় ভূমিকা আছে, পুরুষ পরে লুঙ্গি আর নারী পরে শাড়ী, জনসংখ্যা না বেড়ে যাবে কোথায়? কথা সেটা না, কথা হলো আমার লুঙ্গিপ্রীতি নিয়ে। আমার এহেন ক্ষ্যাত অভ্যাসে বন্ধুমহল বড়ই বিরক্ত ছিলো। ম্যাট্টিক পাস করার পর ওদের কুমন্ত্রণায় পড়ে কিনে ফেললাম গোটা দুই পাতলুন এক্সপেরিমেন্টাল ভাবে। তা সেই পাতলুন গুলো এতই ঢোলা ছিলো যে বন্ধুমহল ওগুলোর নাম দিলো পাতলুঙ্গি। পাতলুঙ্গিতে বেশি সুবিধা করতে না পেরে ব্যাক টু দ্যা প্যাভিলিয়ন, মানে লুঙ্গিতে ফেরত।
মানুষের যেমন লাকি পেন, লাকি শার্ট থাকে, আমার তেমনি ছিলো একটা আনলাকি লুঙ্গি, আদর করে আমি ডাকতাম কুলুঙ্গি। আনলাকি এই জন্য যে বেহায়া এই লুঙ্গি পদে পদে আমাকে অপদস্থ করার কোন কমতি রাখে নাই। এর মহান কর্ম ছিলো খেতে বসেছি এমন সময় গেরো খুলে যাওয়া। এক হাতে লুঙ্গি সামলাতে সামলাতে দৌড় দিতাম হাত ধুয়ে, ধুয়ে দুই হাতে দিতাম আবার গিট্টু, আর এই গিট্টু আবার কিছুতেই খুলতে চাইতো না যখন বাইরে যাবার জন্য প্যান্ট পরবো। এসবই আমি মেনে নিয়েছিলাম, জীবনে চলতে গেলে অ্যাডজাস্ট করতে হয়, কিন্তু ঐ বেয়াড়া লুঙ্গির তাতেও কোন পরিতৃপ্তি হয় নাই! ব্যাডমিন্টন খেলতে গিয়ে একবার নিচ থেকে বেশ খানিকটা গেল ফেড়ে, আধুনিক স্কার্ট পরে জঙ্ঘা প্রদর্শন করতে করতে খেলা মাঝ পথে থুয়ে বাসায় ফেরত আসলাম। সেলাই করে আবার বেশ কাজ চালায়ে নিচ্ছিলাম, কিন্তু না, ভাগ্যে এ সুখ সইবে কেন? এই লুঙ্গি পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলাম জীবনের এক কলঙ্কজনক অধ্যায়ের পর। বাসায় সেদিন অনেক মেহমান, আমিও বেশ ডাঁটের সাথে ড্রইংরুমে বসে গল্প জুড়ে দিয়েছি সবার সাথে। হঠাৎ আম্মা ডাক দিলো ভিতর থেকে নাস্তা নিয়ে আসার জন্য। উঠতে গিয়ে আমার সাধের লুঙ্গি ফরফরাত করে ছিঁড়ে গেলো সবার সামনে, শুধু ইজ্জতটা বাদে বাকিসব সাফা-কিরকিরা। কাহিনী কি? না, চেয়ারের এক পাশে কবে কোন মুল্লুকে একটা পেরেক বের হয়ে ছিলো, পাজী লুঙ্গিটা সেই পেরেকে বেঁধে চেয়ার ছাড়তে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। আমি চেয়ারম্যান থেকে স্ট্যান্ডিংম্যান হব, এটাতে সে আমাকে সাথ দিলো না। এহেন মর্মান্তিক বেঈমানীর পর সে লুঙ্গি আর পরা চলে না। এখন বুয়া সেটা দিয়ে ঘর মোছে, পিচ্চি কেউ আসলে বাসায় আমি তাকে মেঝেতে মূত্রত্যাগ করতে বিশেষ উৎসাহিত করি, কারণ মোছা হবে তো আমার সেই লুঙ্গি দিয়েই। এখন বুঝুক আমার সাথে বেঈমানীর পরিনাম, হুঁ হুঁ বাবা।
-------------------------------
রাস্তাফারিয়ান আর হওয়া হলো কই? গাঁজার পাট চুকিয়ে দিয়েছি শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই - পছন্দ হয় নাই, লুঙ্গিটা অবশ্য এখনো পরি (দেঁতোহাসি)। কর্পোরেটিয়ান হয়ে এখন দিনাতিপাত করছি, ঘুম-অফিস-নেট/বই-ঘুম আর মধ্যে মধ্যে গানের ধিতাং-তিতাং শুনে শুনে বয়স বেড়ে যাচ্ছে। তাও এখনো চান্স পেলে বেরিয়ে পড়ি ছুটির দিনগুলায়, এদিক সেদিক থেকে ভারি বর্ষণ খুঁজে নিয়ে বেশ ভিজে নিই পুরো সপ্তাহের রসদ যোগাতে।
মন্তব্য
দারুন লাগলো, তবে নিদারুনরকমের তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে গেল। বেশি করে লেখেন মশাই, এতো ফাঁকি দেয়া অ্যালাউড না।
দুনিয়াটা পচুর গিয়ানজাম। বেশী লিখতে চাই, কিন্তু সময়ে কুলায়ে উঠতে পারি না। ভাগ ভাগ করে লিখতে হয়। অনেক ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
দারুন - দারুণ
নিদারুনরকমের - নিদারুণরকমের
আপনার কাছ থেকে পয়েন্ট নিতে বেশী মজা।
বাবামা স্কোর: ৯
বেশধারী বেশী'র বদলে অনেক অনেক বেশি নিয়ে কি আমি একটা পয়েন্ট যোগ করতে পারি?
আব জিগস।
বাবামা স্কোর: ১১ - ১ = ১০
ভুতুম, এর আগে একদিন শুধু আপনার 'নিক'এর প্রশংসা করা হয়েছিলো, লেখারটা বাদ পড়ে গিয়েছিলো। আজকে তাই ঘোষণা দিয়ে জানালাম - লেখা ভালো হয়েছে
বড়ই প্রীত হইলাম। ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
ব্যাপক হাসলাম। তয় কও কি মিয়া, তুমি গাঁজাখোর? ইসরায়েলরে তো ডাকন লাগে!!
আরে না সিরাত ভাই, গাজা ছাইড়া এখন পশ্চিম তীরে থাকি, ইস্রায়েল আসলে সেখান থেকেও তল্পিতল্পা গুটাতে হবে।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
- ছোটবেলায় লুঙ্গি পরে ঘুম দিয়ে সকালে উঠার পরে সেই লুঙ্গি আর খুঁজে পাওয়া যেতো না। কিংবা পেলেও আমার শরীর থেকে কম করে হলে সাড়ে তিন হাত দূরে অবস্থান ধর্মঘট করে বসে থাকতো ব্যাটা। তারপরেও বাটার চপ্পলের সাথে এই লুঙ্গিকেই সঙ্গী করে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গ উপভোগ করেছি। কেবল কোনো নারী সঙ্গ এলেই বঙ্গবীরের গণ্ডদেশে লোহিত সাগর এসে ভর করতো। সেই ভার কমাতে অবশ্য লুঙ্গির সঙ্গ ত্যাগ করে নিম্নদেশে আংরেজী সাহেবী পোষাক জড়াতাম, তাও আধেক! এই করে করে কবে যেনো পরাণের লুঙ্গিটা পোষাকপুরান হয়ে আন্তর্জাতিক গণ্ডি ছাড়িয়ে এখন ইয়োরোপের নামী শহরে এসে অবস্থান নিয়েছে। যত্রতত্র গিট্টু অবশ্য খুলে যায় নি, তবে গিট্টু লাগাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে বৈকি! শত না হলেও দশক সংখ্যক প্রশ্নবাণের সামনে পড়ে বুঝাতে হয়েছে, "জিনিষটা আসলে কী চীজ"! এখন মনের হরিষেই লুঙ্গি পরি, পরে ঘুরিও। ইচ্ছা আছে, কেবল হাইওয়েতে লুঙ্গি পরে গাড়ি চালানোর নিজ অভিজ্ঞতাকে ছাপিয়ে এই লুঙ্গি পরেই বিমান ভ্রমনের। বাকিটা পরওয়ারদেগারের মহান কৃপা!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
সকলে জোরেশোরে বলি আআআআআমিন।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
আপনার লুঙ্গির বেঈমানী দেখে আমি মর্মাহত। আমার এরকম একটা বেঈমান পলিয়েষ্টার লুঙ্গি ছিল ছেলেবেলায়, বাসায় কতবার যে গিট খুলে আমাকে বেইজ্জতি করেছে তার ইয়ত্তা নেই।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
লুঙ্গিরা এমনই হয়.... তক্কে তক্কে থাকে কিভাবে কাকে অপদস্থ করা যায়।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
প্রথম গাঁজা খাওয়া। আহ্, কী বলবো! খুব মজা পেয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল একটা সুখকর অনুভূতিতে ভেসে যাচ্ছি আমি।
প্রথমবার গাঁজা সেবন করে আমার অতীতের মুসলমানী ও ভবিষ্যতের কুলখানির ভাত বেরিয়ে আসতে চাইছিলো ,গন্ধটা এতই বিকট লাগছিলো। জিন্দেগীভর সিগ্রেট খাইলাম, কিন্তু গাঁজার গন্ধটা কেন যে প্রথম বার এমন লেগেছিলো কে জানে।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
দেখিস, একদিন আমিও...
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
মজারু !
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
ধন্যবাদ!
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
লেখার স্টাইলটা ভালো লাগলো। চালিয়ে যান, আমরা তো আছিই।
আপনারা আছেন বলেই চালায়ে যাচ্ছি।
ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
লালসালু উপনাসে রেল গাড়িতে উঠা নামার দারুণ বর্ণনা আছে ।.. ....'অনেকের অনেক সময় গলায় ঝোলান তাবিজের থোকাটা ছাড়া দেহে বিন্দুমাত্র বস্ত্র থাকে না শেষ পর্যন্ত। তারা অবশ্য বয়সে ছোকরা। বয়স হলে এরা আর কিছু না হোক শক্ত করে গিরেটা দিতে শেখে।'
আমাদের ভুতুমের অবশ্য বয়সের সে রকম ফেরের বালাই নাই।
লেখা ভাল লেগেছে।
হেহে। ঐ রেলগাড়িতে চড়তে গেলে আমার তাবিজটাও থাকতো না মনে হয়।
ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
মজার লেখা।
ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
নতুন মন্তব্য করুন